মাসুদ পথিক
মাসুদ পথিকের ৩ কবিতা
প্রকাশিত : নভেম্বর ০৪, ২০২৩
তোমার সুগন্ধ
তোমার মুখ, তোমার চোখ আর চুলের সুগন্ধ
আমার আত্মায় লেগে আছে মৃত্যু
তৈরি হচ্ছে যৌন অবদমন
আমি নদীতীরে বসে আছি গায়ে কাদা মেখে
তুমি আসবে কলস কাখে
তুলে দেবে আমার হাতে বিরহ অঙ্কিত রুমাল
আমি কবিতায় তুলে আনি তোমার সব বিহেভিয়ার
তোমার চলনভঙ্গি
মৃত্যু তোমার গোপন অ্যাক্সপ্রেশনগুলিও লোভনীয়
নদীর ঢেউয়ের মতো দেহ দোলা
শব্দ, অক্ষর আর বাক্যরা ছোট মাছ
নেচে ওঠে, উজিয়ে আসে লেখার খাতায়
সিনট্যাক্স জুড়ে ভালোবাসার যত স্রোত
জানি, তুমি-ই জগতের শেষ নদী, আমৃত্যু
আমি এইসব ভিজুয়াল লিখে রাখি কবিতার নামে
অবহেলিত জীবনে মৃত্যুর এমন সৌকর্য
অমলিন,
তো, তোমার ভেজা দেহের ঘ্রাণ ধরে রাখি
তুলে আনি কাদা মাখা আমার আত্মায়, মৃত্যু!
তোমার ফেলে যাওয়া পায়ের ছাপ
নদীর ঘাটে, কেন ভাবি না!
পড়ে আছে দৃশ্য ও কাব্যের কামুক কবর, আজও
বেদনার বাড়ির ঘাটে বসে আছে লোকটি
বসে আছে লোকটি, বেদনার বাড়ির ঘাটে, যদি
বেদনা এই ঘাটে আসে যদি
দেখা হবে, পুনরায়
মুহূর্ত যায়, দিন, চলে আসে রাত্রি
ক্ষত-বিক্ষত দেহের মনের গ্লানি বুকে বয়ে যায় নদী,
কলকল
অনেকেই নদীর ঘাটে আসে চাহিদা মতো, ফিরেও যায়
বসে আছে লোকটি বেদনার বাড়ির পেছনে, এই
প্রতীক্ষার পথ, ঘাট, শুকে শুকে মুতে হয় নিরুদ্দেশ
বেগানা কুকুর
দূর, নদীতে বয়ে চলে বেদনার ভার বুকে, লঞ্চ নৌকা
বেদনার স্বামী বিষাদ, বাজারের থলে হাতে ঢুকে যায় বেদনার বাড়ি
বেদনার ছোট মেয়েটির নাম কষ্ট
আমাকে দেখিয়ে সে-ও লজেন্স চুষে চুষে ফিরে যায় ঘরে
বেদনার বুড়ো মা, স্বপ্ন
স্বপ্ন লাঠি ভর দিয়ে হেঁটে এসে দাঁড়ায় ঘাটে
কিছু দীর্ঘশ্বাস রেখে ফিরে যায়, কোথাও
এইখানে, বেদনার আপক্ব কৈশোর, যৌবনের অবদমন কিছু
অসুখি জীবনের র`মেটার পড়ে আছে
হৃদয় ও শরীরের অক্লান্ত ঘাম, আর কলরব
লোকটি বসে আছে, এখনো, মৃত নক্ষত্র বুকে জড়িয়ে
আর ঘাটের কাদায় শুয়ে আছে কাদা হয়ে
পাশের দুটি নদীতে কেবলি কেঁপে কেঁপে যায় জল,
বুকে সুগভীর ইতিহাস, কলকল।
হারালাম কবর, গন্তব্যের সবটুকু ভূমি
জনশূন্যে, কবরকে একা পেয়ে আমি কবর হয়ে গেলাম
চুপিচুপি
কবরের ভেতর পেলাম দুজন নারীকে, বিরহ ও বেদন
দুপাশে দুজন নারীকে নিয়ে সংসার শুরু করি
দেখতে শুরু করলাম কবরের চোখ দিয়ে পৃথিবীকে,
সবই নতুন লাগছে
ধনী ও গরিবে পার্থক্য থাকছে না
ভাবি, কত বৈপরীত্যে ঠাসা কবর ও পৃথিবী!
কবর হয়েই মৃত বাবা ও সন্তানকেও পেয়ে গেলাম
কিন্তু ওরা আমাকে চিনতে পারলো না!
অথচ মায়া ও ভাগ্যের খোরাকি ভেবে ভেবে তাদের জন্য কেঁদে মরেছি রাতদিন
তারা প্রতিরাতে বাড়ি না-ফিরলে
ভাতের থালা হাতে বসে থাকতো কে?
অপেক্ষায় মায়াবি ভাত, গুচ্ছগুচ্ছ ফুলের মতো ফুটতো সংসারে!
কবরে অনেক কিছু ফেস করে করে ক্লান্ত যখন
পেয়ে গেলাম শূন্যতাকে
দেখি, ওর মৃত দেহে কিলবিল করছে কিরা আর কোলাহল
আর প্রেম অনাবৃত মাংসের দলার মতো ছড়িয়ে সর্বত্র
যখন কবর ও পৃথিবীর যোগসূত্র নিয়ে ভাবছি ততক্ষণে
দেখি গ্রহের পুঁজিবাদী ব্যবসায়ীরা পৌঁছে গেছে এখানেও
কিনে নিলো তারা আমার কবরের সবটুকু মাটি... একাকিত্ব!
আমি হারালাম বাস্তু, সংস্থান, তথাপি বিরহ ও বেদন, বউ দুটো!
গন্তব্যের সবটুকু ভূমি, মূলত আমার আমি।