মাসুদ পথিক
মাসুদ পথিকের পাঁচটি কবিতা
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২০
হিংসুক ও নিন্দুক
আর, আমি জলে নামলাম, কুমির ও মাছেরা করলো তাড়া
আমি আকাশে উড়লাম, পাখিরা করলো সীমানা ছাড়া
ফেসবুকে ঢুকলাম, নিন্দুকেরা বললো, এটা আমাদের পাড়া
আমি শূন্যতায় ঢুকলাম, দেন,
সজনেরা আমাকে করলো ঘরছাড়া
ইদানীং, তাছাড়া
লোকে আমার কবরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলে,
কাপুরুষেরাই কেবল যায় অকালে মারা
প্রশ্ন-বায়োলজি
হিজল ও নির্জন প্রশ্নেরা বেড়ে উঠছে আমাদের সম্পর্কের মধ্যবিন্দুতে, মাঠে।
কচি শস্যের মতো দুলছে প্রশ্নের জিভ,
উত্তর সমাজে এই নিয়ে হচ্ছে ভীষণ ক্ষোভ।
এইসব, বুনে চলে গেছে অরণ্যের দিকে যে সময় ঋষি,
তার ধ্যান ছড়িয়ে পড়েছে রক্ত মাংসের কানাগলিতে।
তো, আমিও, পালিয়ে এসেছি বিরহের উঁচুনিচু ঘরে
তবুও ট্যাবুর শেয়ালগুলি করেই চলেছে তাড়া
সারারাত গাইছে বিধি ও পরিধির গান।
অনুভূতি হিয়োমাসে লকলক বাড়ছে হিজল ও নির্জন প্রশ্ন
কেবল এই প্রেম কাঁপিয়ে যাচ্ছে যুবতী মাঠ।
দূরে, মোহন বাঁশি বাজায় এক কামুক নক্ষত্র
আর শস্যের ক্ষেত নাচিয়ে শূন্যতায় করে স্বমৈথুন; তখন কি
তুমি খুব কাঁদছো, বন্দি গৃহকোণে?
অতএব ভাবি, রাধা কার? প্রশ্নের না উত্তরের। কেবল ভাবি!
আমি বিলুপ্ত বক
আর, ভালো থাকুক রাত
ভালো থাকুক আঘাত
ভালো থাকুক আর্তনাদ
ভালো থাকুক অপবাদ
আমি কেবল বিষাদ
তীর বিদ্ধ নিষাদ
পাখি গেছে উড়ে
নীড় ভেঙেচুরে
ভালো হোক তার
ব্যথা নেই যার
আমি মরি বারবার
প্রেমের এপার ওপার
তবু, ফিরে আসে রাত
ছেঁড়া তার প্রভাত
পথে পথে পালক
আমি বিলুপ্ত এই বক
এখনো ক্ষুধা বিজয়ী
ধরা যাক, হাঁটছি, একা। অথবা কাউকে খুঁজছি। ধরা যাক, কোনো প্রিয় মানুষ। নয়তো অতীতে লীন হয়ে যাওয়া প্রিয় অসুখ।
হাঁটছি, মাঠের মধ্য দিয়ে, আলপথ। দূরে, সূর্য, অস্ত যাবে। হাঁসের দল বাড়ি ফিরছে, আল চিরে। মানে কাছেই জলাশয়, মুছে যাওয়ার অপেক্ষায়।
আমি হাঁটছি, খুঁজছি কী যেন। প্রিয় মানুষ? শূন্যে লুকিয়েছে যে, তার চিন্তা ছিঁড়ে বৃষ্টি এলো নেমে।
অন্ধকার এসেছে পৃথিবীতে, প্রতিদিনের মতো। দাঁড়িয়ে পড়েছি হঠাৎ একটা খড়ের ঢিবির উপর। মানে এবারও ক্ষেতে ক্ষেতে ধান ফলেছিল, প্রচুর।
ধানক্ষেত! আমার নেই। ফলে গোলাও নেই গৃহে। তোমার বিয়ে হয়ে গেছে বেশ ক`বছর, পাশের গ্রামে। গ্রাম ঘেঁষে একটি নদীও আছে। যাইনি কোনোদিন, ডুবে যাওয়ার ভয় নেই যদিও।
দাঁড়িয়ে আছি, আমি। তোমার বাবা ফিরছে হাট থেকে, রসগোল্লার হাড়ি হাতে। ফিরেও তাকায়নি আমার দিকে। পানমুখে তার, আমি দেখেছি তার বিজয়ীর হাসি।
আমি কখনো জয়ী নই। তবুও খুঁজি প্রিয় অনুভব। কেবল খুঁজছি আজও, তাকে।
দূর থেকে, কেউ ডাকছে, আয় চই চই, আয় আয়। হাঁসগুলোরে। সে হয়তো নিঃসঙ্গ কোনো মা, বৃদ্ধ।
এখন, চাঁদ উঠেছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি। ধীরে ধীরে কেউ এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, ছায়া— আমারই।
তারপর আমি, ছায়া ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেলাম। ক্ষুধা এমনই যে
প্রেমের চেয়ে খাদ্যের তীব্রতা বেশি অনুভূত।
আমি এখন শুয়ে আছি, মাঠের মাঝে। হাঁসগুলো ফিরে গেছে বাড়ি।
এরপর, তারপর আমি এক মহান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি...।
কেননা আমার নেই কোনো বাড়ি। কেননা আমি জীবনের জমিন বরাবর এক দীর্ঘ দাঁড়ি, আল।
ধরা যাক, আমি মরে ভূত হয়ে গেছি, তাই শূন্যতায় এমন পাড়ি। আর
ধরো, আমি হাঁসের দলের এক হাঁস, দলছুট। মা ডাকছে পথ চেয়ে...
আয় চইচই, আয়...আয় বাপ...চইচই
অণুজীব
১.
তো, বৃষ্টি কামড়ে ধরেছে রোদ্দুরের কচি স্তন
কেননা ছায়াপথে বেড়াতে গেছে দুজনের মন
২.
ভাবছি, ঘরের এক কোণে
দুটি নদীকে পুষবো
নদীতে খেলবে প্রিয় বেদনা মাছ
দেন, আমিও ডুবে মরবো
৩.
সংসারি, জৈব-নদীর কূলে ভেসে ভেসে যায় ঢেউ
সকলেই নাইতে নামে, মে-বি জল চেনে না কেউ
৪.
কোটি গোলাপের মাঝে টিকে থাকা এক নিরীহ কাঁটা
প্রেমিকের হাত থেকে বাঁচতে কাঁদছে, বুক ফাঁটা
৫.
বিরহ আমার একান্ত গোপন বউ
প্রেম তুমি বৃথায় কবুল কবুল কও