মাসুদ খান
মাসুদ খানের দুটি ছড়া
প্রকাশিত : নভেম্বর ১২, ২০২১
হালকা-হালকা রসিক হাওয়া
দাদি, ওই যে দ্যাখো মেঘের ভেতর একটা ছেলে পানশি বায়
দাদি তখন দাওয়ায় বসে আপনমনে পান চিবায়।
উঠান-কোণে বরই গাছে ঝিলকে ওঠে আলোকলতা
দাদিকে সে বলছে চুপে, “ছাড়ো ওসব বালক-কথা
আকাশে তো মেঘই শুধু, হালকা-পলকা পালক যথা”।
বাড়ির বেড়াল মিঁয়াও বলে ত্বরিত তাকায় ওপর দিকে
লাল মোরগও চায় আকাশে বাঁকিয়ে রাঙা টোপরটিকে।
পানশি-টানশি কিচ্ছু তো নেই, দাদির কাছে সালিশ মানে
পায়রা শালিক বাস্তুবানর... এরাও একই নালিশ আনে।
চশমা খুলে দাদি বলে, “নাতি রে তোর মানছি কথা
আকাশ আছে, মেঘও আছে, কিন্তু তোর সে পানশি কোথা?
সমস্ত দিন ব্যস্ত থাকিস আউল কথায়, ফাউল কাজে
এ জন্যে সব প্যাঁচ লেগে যায়, কাক-শালিকে কাউল বাজে।
সবাই খ্যাপা তোর ওপরে ছেলে-বুড়ো নির্বিশেষে
বারী ঠ্যাটার ঝাড়ি খেয়ে সোজা হয়ে ফিরবি শেষে।”
একটু দূরে উঠানজুড়ে হো-হো হাসির অট্টরোল
উঁচু থেকে চিল ভাবছে কিসের এত হট্টগোল!
জগৎজুড়ে রসিকতার রেশমরঙিন বাতাবরণ
নীল আকাশও রসিক হলো ছুড়ে ফেলে সাত-আবরণ।
ভাবুক
বিশাল ভাবুক এক আবদুল জাব্বার
এ জগতে কত কিছু আছে তার ভাববার।
তাই খুব ভাবে থাকে, মাঝে-মাঝে ভাব নেয়
ভাবনার জাল বোনে, ছেঁড়া জালে গাব দেয়।
যদি বলো, “কেন শুধু ধূর্তরা জিতে যায়,
নিরীহরা কেন বাঁধা ফাঁস-লাগা ফিতেটায়?
ধনী কেন আরো ধনী, অসাধুর পোয়াবারো!”
জাব্বার ভেবে বলে, “নিশ্চয়ই দোয়া কারো।”
এবছর বৃষ্টিটা কেন এত জোরদার?
“আকাশটা হয়ে গেছে টুটাফাটা ফোরফার,”
ভেবে বলে ভাবুকজি, “আর নয় ছাড়াছাড়ি,
মেরামতে নভোচারী পাঠাচ্ছে তাড়াতাড়ি।”
ঘুরেফিরে যদি দেখা হয়ে যায় আরবার
বলে ওঠে জাব্বার, “দেখেছো কী কারবার!
প্রমাণিত হয়ে গেল পৃথিবীটা গোলাকার।”
রেডিমেড উত্তরে ভরা থাকে ঝোলা তার।
আজ দেখি নেই তার কোনোরূপ ভাবলেশ
মনে হয়, ভাবনার জালে-দেওয়া গাব শেষ।