মাদকাসক্তি: যুব সমস্যা যখন জাতীয় সমস্যা
ইসমাইল হামিমপ্রকাশিত : জুলাই ২৯, ২০২০
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী মাদকের যে বিস্তার এবং সামাজিক পরিসরে তার যে প্রভাব, তা অত্যন্ত ভয়াবহ। আধুনিক সমাজের মানুষদের সমস্যা বহুমাত্রিক। তন্মধ্যে যুবক-তরুণদের মাদকাসক্তির বিষয়টি নতুন বাস্তবতা হিসেবে হাজির হয়েছে পুরো বিশ্বে। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এই সমস্যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি আকারে। বাংলাদেশও এর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। পৃথিবীতে নানা গবেষণা হচ্ছে এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে। গবেষকরা তথ্য ও তত্ত্বের সমন্বয়ে বিষয়টিকে উপলব্ধিযোগ্য করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাস্তবতাকে বুঝতে তাদের এই গবেষণা পদ্ধতি পুরোপুরি সহায়ক নয়। তাই আমি এই লেখায় দেখাবো, তথ্য-তত্ত্ব ও সত্যের সমন্বয়ে কিভাবে এই সমস্যার কারণগুলোকে চিহ্নিত করতে হয় এবং এর প্রতিকার-প্রতিরোধে বাস্তব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, অনেকগুলো গবেষণালব্ধ তথ্যকে এই লেখায় আমি ইচ্ছেমতো ব্যবহার করলেও পুরো আলোচনায় একটা ভিন্ন ধরনের গবেষণাকেই মূলত প্রাধান্য দিয়েছি। আমার এই বিবেচনা কতটুকু সঠিক কিংবা বেঠিক সেটা এই লেখা শেষপর্যন্ত পড়লেই বুঝা যাবে। আর এই রচনার উদ্দেশ্য মূলত মাদকাসক্তির কার্যকারণ এবং এর প্রতিকার-প্রতিরোধের গতিপথকে আবিষ্কার করা। সচেতন পাঠকদের পাঠের শুরুতেই রচনার এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া জরুরি। আশা করি, ভূমিকার পরিবর্তে আমার এই কথাগুলো মূল আলোচনা পড়ার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে।
মাদকাসক্তির কার্যকারণ
মাদক সম্পর্কে প্রচলিত যে ধারণার কথা আমরা জানি, সেটা অনেকটা মাদকের রাসায়নিক প্রভাবের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ মাদক মানুষকে রাসায়নিক দাসে পরিণত করে। রাসায়নিক উপাদান মানুষকে এমনভাবে দখল করে নেয় যে, কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তির পক্ষে মাদক সেবন বন্ধ করে দেয়াটা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হয়। এই ধারণার পশ্চাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে মস্তিষ্কের উপর মাদকের জৈবরাসায়নিক প্রভাবের ধারণা এবং একইসঙ্গে মানবশরীরের উপর মাদকের যে ক্ষতিকর প্রভাবগুলো আছে, সেগুলোর ব্যাখ্যায় শুধুমাত্র ফার্মাকোলজিক্যাল কম্পনেন্ট বা ঔষধি উপাদানের ফলাফল বিশ্লেষণকে বিবেচনায় রাখা হয় বলে। কার্যত এই ধারণাগুলো সত্য হলেও আসলে প্রকৃত বিষয়টিকে পুরোপুরি জানতে-বুঝতে, ব্যাখ্যা করতে ধারণাগুলো যথেষ্ট নয়। তাই মাদকাসক্তির মূল কারণকে শনাক্ত করতে আমাদের প্রাসঙ্গিক আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা প্রয়োজন।
মানব ইতিহাসে মাদকাসক্তির বিষয়টি কোন পর্যায়ে বিস্তার লাভ করেছে, সেটা খুঁজে বের করতে গিয়ে কানাডার বৃটিশ কলম্বিয়ার সাইমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রুস দেখলেন, মানুষকে যতবার তার বন্ধন থেকে ছিন্ন করা হয়েছে, ঠিক ততবারই মাদকাসক্তির প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। তার ভাষ্যমতে, ডিজলোকেশন বা স্থানচ্যুতির একটা অনুভূতি মানুষকে মাদকাসক্তির দিকে নিয়ে যায়। এই স্থানচ্যুতি কেবল স্থানিক নয় বরঞ্চ কালিক প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন সমাজ-সংস্কৃতির মানুষদের জন্য তা ভিন্নভাবে হতে পারে। ব্রুস উদাহরণ দেন, উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের কাছ থেকে তাদের ভূমি ও সংস্কৃতি কেড়ে নেয়া হলো—তারা গণহারে অ্যালকোহল আসক্তিতে পড়ল। আঠারো শতকে দরিদ্র ইংরেজদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে অজানা-অচেনা শহরে পাঠানো হলো আর তারা জিন ক্রেইজে আক্রান্ত হলো। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে আমেরিকার গ্রামীণ অঞ্চলের বাজার ও ভর্তুকি হ্রাসের সাথে বাড়ল মেথাস্ফিটামিন (ইয়াবা) আসক্তি।
সুতরাং ব্রুস মনে করেন, আজকের দিনে মাদকাসক্তি বিস্তারের কারণ হলো, অতিব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী বা হাইপারইন্ডিভিজুয়ালিস্টিক, আতঙ্কিত ও সংকটগ্রস্ত এই সমাজ বেশিরভাগ মানুষকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মানুষ এই একটানা বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্তি খোঁজে। আসক্তির মধ্যেই তারা সাময়িক মুক্তি খুঁজে পায়। কারণ এর মাধ্যমে সে তার অনুভূতিগুলোর হাত থেকে মুক্তি পায়, অনুভূতিগুলো ভোঁতা করে ফেলে এবং একটা পরিপূর্ণ জীবনের বদলে নেশাগ্রস্ত জীবন খুঁজে পায়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ব্রুসের এই পর্যবেক্ষণ খুবই প্রাসঙ্গিক। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের মাদকগ্রহণকারীদের সিংহভাগই বয়সে যুবক-তরুণ। যার মধ্যে আবার বেকার আর ছাত্রদের সংখ্যায় বেশি। আমরা আমাদের চারপাশে একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাব, আমাদের যুব সমাজে বিদ্যমান মাদকাসক্তির কারণগুলো ব্রুসের চিহ্নিত কারণগুলোর চেয়ে অভিন্ন নয়। বিশেষ করে তার ‘অতিব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী’ ‘আতঙ্কিত’ ও ‘সংকটগ্রস্ত’ শব্দগুলো যেন আমাদের যুব সমাজের মাদকাসক্ত হওয়ার মনস্তাত্ত্বিক দিকটিকেই উন্মোচন করছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মাদকাসক্ত সমাজের জন্য ব্রুসের এ কথাগুলো সত্য।
তাই মোটাদাগে বলা যায় যে, মাদকাসক্তির জৈবরাসায়নিক ভিত্তি মানুষের মাদকাসক্ত হওয়ার মূল কারণ নয়। তাহলে মূল কারণ কী? মাদকাসক্তির কারণ নানাভাবে হাজির আছে আমাদের সমাজে। বলা চলে, পরিবেশই সেখানে প্রধান উদ্দীপক হিসেবে কাজ করছে। তাই পরিবেশকে কেন্দ্রে রেখে কারণগুলোকে পর্যায়ক্রমে সূচিত করলে আমরা এর একটা সর্বজনীন চিত্র পাব। যেটা আমাদের মাদকাসক্তির মূল কারণকে বুঝে উঠতে সাহায্য করবে।
মাদকাসক্তির পরিবেশগত কয়েকটি কারণ
মানুষের ব্যক্তিত্বের সাথে মাদকাসক্তির সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ মাদকের ব্যবহার যেমন ব্যক্তির আচরণকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। ঠিক তেমনি মাদকদ্রব্য ব্যবহারের প্রতি ব্যক্তিত্বের কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যও ব্যক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই দেখা যায়, ব্যক্তিত্বজনিত নানা মানসিক সমস্যা ভুগছে এমন ব্যক্তিদেরই মাদক গ্রহণের প্রবণতা তূলনামূলক বেশি। আর কে না জানে, ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বিকাশে মূল ভূমিকা পালন করে তো এই পরিবেশই। এক্ষেত্রে জিনগত প্রভাব খুব অল্পই থাকে।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের নানাবিধ অনুসঙ্গ জড়িয়ে আছে এই মাদকাসক্তির পেছনে। যেখানে বলা হচ্ছে— সঙ্গদোষ, পারিবারিকভাবে আরোপিত মানসিক চাপ ও সমাজে বিদ্যমান প্রতিযোগিতার দর্শন যুব সমাজকে মাদকদ্রব্য গ্রহণের প্রতি উৎসাহিত করছে। এসবের সাথে পরিবেশগত আরো একটি কারণ ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আর সেটা হলো মাদকের সহজলভ্যতা। এই সহজলভ্যতা শুধুমাত্র বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। অন্যদিকে আবার আন্তর্জাতিক মাফিয়াগোষ্ঠী আর সাম্রাজ্যবাদী শাসকেরা এই সমস্যাকে আরো ঘনীভূত করতে সদা তৎপর। কেননা এর সাথে যুক্ত রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক অর্থনীতি। মোটকথা, পরিবেশে মাদকব্যবসায়ীরা এমন এক কৃত্রিম বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলেছে, যা মাদকের বিস্তারে প্রতিনিয়ত পুষ্টি যোগাচ্ছে। তাই এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে আমাদের সবাইকে যার যার স্থান থেকে সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মাদকের এই সর্বনাশী আগ্রাসনের মোকাবিলায় সামগ্রিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
যুব সমাজের একটা বড় অংশের কাছে ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এসব ছাড়া যেন পার্টি-আড্ডার জমেই না। অনেকেই আবার এটাকে স্রেফ বিলাসিতা হিসেবেই নেয়। কিন্তু এই বিলাসিতা যে একসময় তাদের আসক্তিতে পরিণত হয়, সেটা খুব কম যুবক-তরুণেরাই বুঝতে পারে। কিন্তু তাদের এই বোধ আদতে তখন আর কোনো কাজে আসে না। কেননা তাদের আসক্তি ঐ সময়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, এর থেকে বেরিয়ে আসাটা তাদের জন্য রীতিমতো দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে ওঠে। বর্তমান সময়ে নাটক কিংবা সিনেমা দেখে না এমন যুবক-তরুণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর বটে। আর এই নাটক-সিনেমায় মাদককে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, দর্শক মানসে তার প্রতিক্রিয়ায় যে অভিঘাতের সৃষ্টি হয়, তা নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর। যেখানে মাদককে দেখানো হয় আনন্দ আর ফূর্তির উপলক্ষ হিসেবে, নিজের একাকিত্বকে উপভোগ্য করে তুলার উপায় হিসেবে কিংবা কখনো কখনো ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির দিশা হিসেবে। আর এটা করা হয় উদ্দেশ্যমূলকভাবে। রীতিমত প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে। এক্ষেত্রে আবার সেন্সরশিপ নামে কর্তৃপক্ষের অদ্ভুত এক মাদকবিরোধী সার্কাসও আমরা দেখি!
আর এমন একটা পরিবেশে বসবাস করে মাদকমুক্ত সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা আমাদের যুবক-তরুণদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশের জন্য বড়ই কঠিন! মাদকাসক্তির কার্যকারণের পরিবেশীয় গুরুত্ব কি তা বুঝতে মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রুসের করা একটা পরীক্ষার কথা এখানে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিষয়টি বাস্তবিক অর্থে কেমন তা ব্যাখ্যা করতে ব্রুস ইঁদুর নিয়ে একটি পরীক্ষা করেন। উদ্দেশ্য ছিল মাদকাসক্তির ফার্মাসিউটিক্যাল থিওরির পক্ষে যেসব প্রমাণ পাওয়া যায় তার সত্যতা যাচাই করা। প্রচলিত এসব প্রমাণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইঁদুর নিয়ে করা কিছু জনপ্রিয় পরীক্ষা। যেখানে দেখানো হয়েছে যে, মাদকের রাসায়নিক তাড়না একটি ইঁদুরকে এতটাই কাবু করে ফেলে যে, আমৃত্যু ইঁদুরটি মাদকের সেই প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারে না। বদ্ধ খাঁচায় থেকে ক্রমাগত মাদক সেবনের ফলে একপর্যায়ে ইঁদুরটি মৃত্যুবরণ করে।
ব্রুসের কাছে এই পরীক্ষা অস্বাভাবিক মনে হলো। তাই তিনি পরীক্ষাটি একটু ভিন্নভাবে করতে চাইলেন। ব্রুস একই পরীক্ষা করলেন দুইভাবে। তিনি পরীক্ষার জন্য দুটি ক্ষেত্র তৈরি করলেন। যেগুলোর পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থাৎ প্রথম ক্ষেত্রে ইঁদুরকে তিনি প্রচলিত পরীক্ষার মতো নিঃসঙ্গ রাখলেন। সাথে দিলেন শুধু মাদকদ্রব্য। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রকে তিনি বানালেন ‘র্যাট পার্ক’। একটা ইঁদুরের সম্ভাব্য যতরকম চাহিদা থাকতে পারে, ব্রুস সেই চাহিদা পূরণের সবরকম বন্দোবস্ত করলেন সেখানে। ফলাফলও পেলেন হাতেনাতে।
ব্রুস শুধু ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়েই ক্ষ্যন্ত হননি। মানুষের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা কতটুকু কার্যকর সেটাও তিনি খতিয়ে দেখেছেন। আর সেটা করেছেন ভিয়েতনাম যুদ্ধ ফেরত মাদকাসক্ত মার্কিন সৈনিকদের অবস্থাকে পর্যবেক্ষণ করে। এই সবকিছু জেনে ব্রুস একটা তত্ত্ব দাঁড় করাতে শুরু করেন— যে তত্ত্ব মাদকাসক্তি সম্পর্কে আমাদের এযাবৎ যত ধারণা আছে তার বিপরীত শিক্ষা দেয় কিন্তু একমাত্র এর মাধ্যমেই বাস্তব অভিজ্ঞতার ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হবে। যদি আপনার পরিবেশ ইঁদুরের ঐ র্যাট পার্কের মতো হয়— নিরাপদ ও সুখী একটি সমাজ যেখানে স্বাস্থ্যকর বন্ধন তৈরি ও আনন্দদায়ক কর্মকাণ্ড করা যায়, তাহলে আপনার মাদকাসক্ত হওয়ার বিশেষ কোনো ঝুঁকি থাকবে না। আপনার পরিবেশ যদি ইঁদুরের খাঁচার মতো হয়, যেখানে আপনি নিঃসঙ্গ, ক্ষমতাহীন ও উদ্দেশ্যহীন— তাহলে আপনার ঝুঁকি থাকবেই।
মাদকাসক্তি প্রতিকার-প্রতিরোধের গতিপ্রকৃতি
মাদকাসক্তি প্রতিকার-প্রতিরোধের আলোচনার ক্ষেত্রে আমি মূলত দুটি দিককে বিবেচনার কেন্দ্রে রেখেছি। ১. ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ। ২. রাষ্ট্র। আশা করি এই বিবেচনা আমাদের মাদকাসক্তি প্রতিরোধের গতিপ্রকৃতি বুঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
মাদকাসক্তি প্রতিকার-প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের মূল প্রবণতাগুলো যেমন হতে পারে— মাদকাসক্তি একটি ক্রনিক রিলাপসিং ডিসঅর্ডার। এটি যেহেতু মস্তিষ্কের রোগ। তাই এর চিকিৎসাও হতে হবে সেভাবে। অর্থাৎ এর চিকিৎসা হবে বহুমাত্রিক, সমন্বিত আর দীর্ঘমেয়াদী। শুধুমাত্র সাধারণ ওষুধের সাহায্যে এই রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই এর পাশাপাশি মাদকাসক্ত ব্যক্তির মানসিক চিকিৎসাও সমানভাবে জরুরি। যেটা শুরু হতে পারে ব্যক্তিগতভাবে কিংবা পারিবারিকভাবে। পরবর্তীতে পুনঃআসক্তি প্রতিরোধ প্রোগ্রামের মাধ্যমে অথবা গ্রুপ থেরাপি/থেরাপিউটিক কমিউনিটি, মোটিভেশন এনহেন্সমেন্ট থেরাপি ইত্যাদির সাহায্যও নেয়া যেতে পারে।
আমরা জানি, মাদকাসক্তি একটি প্রতিরোধযোগ্য ব্যাধি। তাই এটির প্রতিরোধে ব্যক্তি থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সবাইকেই যার যার ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করা চাই। মাদকাসক্তি নিরাময়ে একটি পরিবার যেভাবে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে, তেমনিভাবে এর প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে। দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। কারণ এইরকম ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়াটা পোক্ত হওয়া চাই। কেননা এতে আলাপ-আলোচনাটা খোলামেলাভাবে করা যায়। সমস্যার গভীরতা ও গুরুত্ব নিরূপণ করা যায়। যার কারণে মাদকাসক্ত ব্যক্তির তত্ত্বাবধান করতে সুবিধা হয় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। এছাড়াও মাদকাসক্তি নিরাময়ে নতুন করে পারিবারিক রীতি-রেওয়াজ প্রতিষ্ঠা করতে, প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে এই পারিবারিক গঠনতন্ত্র ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। যুব সমাজের একটা বড় অংশ মাদকবিষয়ক প্রাথমিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যেহেতু এখান থেকেই লাভ করে। তাই স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের একটা নির্দিষ্ট সময় নজরদারিতে রেখে, তাদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ-বিশ্লেষণ পূর্বক কারো আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে কর্তৃপক্ষের সেই অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আন্তরিক ও উদ্যোগী হতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মাদকবিরোধী মনোভাব তৈরি করতে হবে। শুধু মাদক নয়, এরকম যেকোনো ধরণের হঠকারী-আত্মঘাতী বিষয়ে তারা যাতে ‘না’ বলতে শেখে, সেই বিষয়েও তাদের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। একইসঙ্গে সমাজ-ধর্মের প্রতি ব্যক্তি মানুষের যে দায়বদ্ধতা, তার যথোপযুক্ত শিক্ষাও তাদের দিতে হবে। সর্বোপরি বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সমাজে মাদকবিরোধী গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর শেষোক্ত এই কাজটা করতে হবে সবাইকেই।
যুব সমাজকে মাদকাসক্তির হাত থেকে মুক্ত করতে চাইলে আমাদের কাজ শুরু করতে একদম প্রথম থেকেই। শৈশব-কৈশোর থেকেই। যারা এই সময়টাতে বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হয়, সেটা হতে পারে যেকোনো ধরনের শারীরিক-মানসিক কিংবা যৌন নির্যাতনের ঘটনা। এবং এটা হতে পারে পরিবারের কোনো সদস্য দ্বারা, নিকটাত্মীয় দ্বারা অথবা বহিরাগত-অপরিচিত কারো দ্বারা। গবেষণা বলছে, শৈশব-কৈশোরে যারা এই ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাই পরবর্তীতে মাদকের দিকে ঝুঁকে গেছে। ধীরে ধীরে এবং একটা সময় মারাত্মকভাবে। তাই আমাদের অবিভাবকদের এইসব ব্যাপারগুলো যাতে না ঘটে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এরপরও যদি এরকম কোনো ঘটনা কারো সাথে ঘটে যায় তাহলে তার জন্য যথাযথ বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আবশ্যিকভাবে। এতে ভবিষ্যতে ভিক্টিমের মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকিটা কমে যাবে। একইসঙ্গে শৈশব-কৈশোরের শারীরিক-মানসিক পরিবর্তনজনিত নানা আচরণগত জৈবিক সমস্যাবলি। যেমন— কনডাক্ট ডিজঅর্ডার, অপজিশনাল ডিফায়ান্ট ডিজঅর্ডার, অতিচঞ্চলতা রোগ ইত্যাদির লক্ষণ ও তার মনোদৈহিক প্রভাব সম্পর্কে অবিভাবকদের অল্পবিস্তর ধারণা থাকাটা বাঞ্ছনীয়। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তির দীর্ঘ মেয়াদে বাধ্যতামূলক মাদকসেবি হওয়ার সম্ভাবনা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কমে যায়।
রাষ্ট্রে বিদ্যমান প্রতিরোধের চেহারা
মাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের যে অনন্ত যুদ্ধ; তা মূলত প্রকারান্তরে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। আর এই জনগণ যে আসলে গরীব জনগণ সেটা তো বলাই বাহুল্য। মাদকের বিস্তার রোধে যেসব রাষ্ট্রীয় তৎপরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার সম্ভাবনা ও পরিণতি কেমন হতে পারে তার নমুনা আমরা নিকট অতীতেই দেখেছি। তারপরও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টা পুরোপুরি বুঝা সম্ভব না। তাই মাদক নির্মূলে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলোর যে তৎপরতা এবং এক্ষেত্রে তাদের সফলতা-ব্যর্থতার ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সেই অনুযায়ী উত্তরণের পথ ও পন্থা আমাদের নিজেদেরকেই তৈরি করতে হবে কিংবা খুঁজে নিতে হবে। আর এই কাজ যেহেতু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর, তাই মাদক পাচার ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে এদেরকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সক্ষমতা-কার্যকারিতা-বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে যথেষ্ট মনোযোগী হতে হবে।
এছাড়া শুধুমাত্র রাষ্ট্রের মাদক বিরোধী ইমেজ তৈরি করতে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সেইসব দেশের অন্ধ অনুকরণ আমাদের জাতীয় জীবনে কি ভয়াবহ ভোগান্তি ও বিপদ ডেকে আনতে পারে তা কলম্বিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে সহজেই অনুমেয়। এখানে কলম্বিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সিজার গ্যাভিরিয়ারের বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য, আসলে আমরা বিশ্বাস করি না যে, সামরিক সরঞ্জাম, পুলিশি নিপীড়ন আর বড় বড় জেলখানার মাধ্যমে মাদক সমস্যার সমাধান করা যাবে। জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার উন্নয়ন, দুর্নীতি—বিশেষত অর্থপাচারবিরোধী পদক্ষেপ আরও শক্তিশালীকরণ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগের মাধ্যমেই প্রকৃতপক্ষে মাদকের চাহিদা ও সরবরাহ কমানো যেতে পারে।
তাই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সত্যিকার অর্থে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে হলে রাষ্ট্রের সরকারকে এক্ষেত্রে সৎ হতে হবে। মাদক নির্মূলে সরকারের সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। তবেই জনমানসে শান্তি ফিরবে। নিরপরাধ মানুষদের ভোগান্তি কমবে। একই প্রেক্ষাপটে হাজির থাকা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডসহ সাধারণ মানুষদের উপর আরো যেসব রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালু আছে তা হ্রাস পাবে। রাষ্ট্র মাদক নির্মূলে সমর্থ হবে।
মাদকাসক্তি নিরাময়ে ধর্মীয় বিবেচনা
ফিতরাতের কারণে মানুষের মনে ধর্মের একটা আধ্যাত্মিক প্রভাব সর্বদা ক্রিয়াশীল। যেকোনো মানুষের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি তার আত্মিক প্রশান্তিরও প্রয়োজন হয়। তাই মাদকাসক্তি নিরাময়ে অন্যান্য চিকিৎসার সাথে ধর্মীয় বিবেচনাও গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ধর্মীয় প্রভাব পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। মাদকাসক্তি প্রতিকারে ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকা প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে স্মরণ করা যেতে পারে। প্রাক-ইসলামি যুগে আরবীয় সংস্কৃতিতে মদ্যপান স্বাভাবিক ছিল। এমনকি ইসলামের প্রাথমিক যুগেও তা বৈধ ছিল। মাদক বিষয়ক আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার পরম্পরা খেয়াল করলে এবং একইসঙ্গে আয়াতগুলোর শব্দাবলি, বাক্যের ভঙ্গিময়তা আর অর্থের দিকে একটু লক্ষ্য করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ মানুষের উপর মাদকের যে প্রভাব তার সাথে রাসূলুল্লাহকে (সা.) প্রাথমিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন এভাবে—
তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। আপনি বলুন, এ দুটির মধ্যে রয়েছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য কিছুটা উপকার। তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বেশি। (সূরা বাকারাহ্ ২১৯)
মাদক প্রধানত মস্তিষ্কের সেই অংশের (অগ্রমস্তিষ্ক) উপরই প্রভাব বিস্তার করে, মস্তিষ্কের যে অংশ মানুষের চিন্তা, বুদ্ধি, ইচ্ছাশক্তি, উদ্ভাবনীশক্তি প্রভৃতি উন্নত মানসিক বোধের নিয়ন্ত্রণ করে। তাই দেখা যায়, যেসব মানুষ কোনো নির্দিষ্ট উপলক্ষে তথা অনিয়মিতভাবে মাদক গ্রহণ করে তাদের মস্তিষ্ক একটা নির্দিষ্ট সময় পর মাদকের সেই প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারলেও মাদকাসক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে মস্তিষ্ক সেই প্রভাব কাটিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে না। ফলে মস্তিষ্ক তার নির্ধারিত কাজ যথাযথভাবে করতে সমর্থ হয় না। তাই এক পর্যায়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মহান আল্লাহ মাদকের এই ভয়াবহতা ও তার নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ যুগপৎভাবে আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যেভাবে— শয়তান চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে, অতএব তোমরা কি (এসব) ছাড়বে? (সূরা মায়িদাহ্ ৯১)
মাদকাসক্তি প্রতিরোধেও ইসলামের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মাদককে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে ইসলামের পর্যায়ক্রমিক অবস্থান পর্যবেক্ষণ করলেই আমরা দেখতে পাবো, ইসলামি শারীয়াহ্তে মাদক সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করার ক্ষেত্রে মানুষের স্বভাবজাত বিষয়গুলোকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। অর্থাৎ মাদকের ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সর্বপ্রথম সবাইকে জানানো হয়েছে। সকলের সম্যক অবগতির পরই পরবর্তীকালে চূড়ান্ত বিধান দেওয়া হয়েছে তথা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ঘৃণ্য বস্তু হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে মাদকের যেকোনো ব্যবহার কতোটা নিকৃষ্টতর কাজ, নিম্নোক্ত হাদিস থেকেই তা বোধগম্য হওয়ার কথা। এই প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে— আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন— মদ যে ব্যক্তি পান করে, যে তা পান করায়, যে তা বিক্রি করে, যে তা ক্রয় করে, যে তা তৈরি করায়, যে তা তৈরি করে, যে তা বহন করে, যার জন্য তা বহন করা হয় এবং মূল্য ভক্ষণ করে, সকলের প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা অভিশাপ দেন। (সুনানে আবু দাউদ ৫০৯১)
মোদ্দাকথা, মাদকাসক্তির প্রতিকার-প্রতিরোধে ইসলামি পথ ও পন্থা অনুসরণ করা গেলে তথা মানুষের সাথে ধর্মের আধ্যাত্মিক সংযোগ ঘটাতে পারলে কিংবা তাদের মাঝে ধর্মীয় চেতনা সৃষ্টি করতে পারলে নিঃসন্দেহে সার্বিকবিচারে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হবে।
বাংলাদেশের যুব সমাজের মাদকাসক্তির কারণ ও প্রতিকারের বিষয়ে ধারণা পেতে এই দীর্ঘ আলোচনা যথেষ্ট হবে বলে মনে করি। প্রেক্ষিতে যেহেতু বাংলাদেশ তাই মাদক বিষয়ে বর্তমান বিশ্বের সাম্প্রতিক স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করাটা বাহুল্য বলেই মনে হয়েছে। বিশ্ববাস্তবতা বুঝতে আলোচনটা যদিও যুক্তিযুক্ত ছিল। এক্ষেত্রে তাই শুধুমাত্র ইঙ্গিত দিয়েছি।
অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যায় জর্জরিত তৃতীয় বিশ্বের একটি ক্ষুদ্রতম দেশ বাংলাদেশ। আর যেহেতু একটি দেশের যুবক-তরুণরাই সে দেশের মূল চালিকাশক্তি। সেহেতু বলা যায়, দেশের এই যুবক-তরুণদের হাতেই আমাদের ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। এবং একইসাথে দেশের সম্পদ-সাহস-অর্জন ও সঞ্চয়। দেশ ও জাতি গঠনে এদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই এই যুবশক্তির মাদকের অন্ধকারে বিলীন হয়ে যাওয়াটা মোটেও কাম্য নয়। সুতরাং সার্বিকভাবে পতনোন্মুখ এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আশু বিপদ থেকে বাঁচাতে, একটুখানি আলো অথবা মুক্ত বাতাসের খোঁজ দিতে আমাদের সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।