মাকে নিয়ে বিপুল জামানের কয়েক টুকরো গল্প

প্রকাশিত : মে ১১, ২০২০

এক.
রমজান মাস। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইফতারে বসেছেন পরিবারের কর্তা। যতই ইফতারের সময় এগিয়ে আসছে পরিবারের কর্তা আর কর্ত্রীর চোখ জলে ভরে উঠছে। ছেলেমেয়েরা জানে, রমমজান মাসেই তাদের দাদি মারা যান। প্রতি ইফতারের আগে বাবা আর মাকে এভাবে কাঁদতে দেখে। বয়স্ক মানুষ দুজন অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে ভাবছেন, যখন মা বেঁচে ছিলেন তখন কত না কষ্ট করেছেন তারা সবাই। আজ মায়ের দোয়ায় এত স্বচ্ছলতা, কিন্তু এসব মা দেখে যেতে পারেননি। এই রোজার মাসেই দেহত্যাগ করেছেন। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন।

দুই.
দেশে যে অল্প কয়েকটি বৃদ্ধাশ্রম আছে `নীড়` তাদের একটি। আনোয়ারা বেগম এখানেই আছেন দু’বছর থেকে। তার খারাপ লাগে না। এখানে সবাই সমবয়সী। গল্পে, কথায় সময় ঠিক চলে যায়। গাজীপুরে তার নিজস্ব বাড়ি আছে। দেখাশোনার লোকও আছে। তার দুই সন্তান, দুজনেই বিদেশে থাকে। মাঝে মাঝে আসে ওরা। দেশে ফিরে আসবে ভেবে এতদিন আগলে রেখেছিলেন সব। যখন বুঝলেন ওরা স্থায়ীভাবে আর কখনো ফিরবে না, তখন তিনি ছেলেদের বুঝিয়ে বললেন যে, তিনি বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে চান। ছেলেরা আধুনিক। তারা বুঝলো তাদের মায়ের একাকিত্ব। বাড়ি, জায়গা জমির দেখাশোনার বন্দোবস্ত হওয়ার পর চলে এলেন `নীড়` এ। ছেলে, বৌ, নাতি-নাতনিদের সাথে কথা হয় কয়েকদিন পর পর। মোবাইলে, ভিডিও কলে। তিনিও এখানে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। সময় একরকম চলে যায়। তবুও মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়েই যায়। তখন অন্যরা তাকে সঙ্গ দেয়। যেমনটি তিনি অন্যদের সুখে দুঃখে সাথে থাকেন। এই `নীড়` এ তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের সহায়।

তিন.
সকালে মা ব্যস্ত থাকে বলে তখন আর ফোন করা হয় না। লাঞ্চ আওয়ারে ফোন দেয় রুবাই, কেমন আছ মা? টিফিন দিয়েছে?
দেবে, একটু পর। তুই কেমন আছিস?
তোমার এখন চাকরি করার কি দরকার? আল্লাহর রহমতে চলছে তো আমাদের। আর এইটা বেসরকারি স্কুলের চাকরি।
সেই জন্যেই তো কেউ গা করে চাকরিটা করে না। আর ছেলেমেয়েগুলো পড়ে বিপদে। আমি লেগে আছি বলেই এনজিওটা চলে যাচ্ছে না এখনও। আমি চলে গেলে ওরাও চলে যাবে। গরিবের ছেলেমেয়েগুলো আর লেখাপড়া শিখতে পারবে না।

এসবই পুরোনো কথা। বারবার হয়েছে এসব কথা ওদের দুজনার মাঝে। শেষ অস্ত্র না ছাড়লো রুবাই, তাই বলে তুমি নিজের ছেলের কথাও ভাববে না? মাও বরাবরের মতো ঠেকিয়ে দিলেন এ অস্ত্রটাও, আমার কি একটা সন্তান রে, এইসবগুলোও তো আমার সন্তান! তোকে তো বড় করে দিয়েছি, এদের বড় করতে হবে না?

রুবাই হয়ত এই কথাটি শুনতেই প্রতিদিন ফোন করে। ওর ভাবতে ভালো লাগে ও এমন এক মায়ের সন্তান।

চার.
সামনে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা। সাব্বিরের মা স্যারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাব্বিরের সামনে পেছনে কার কার সিট পড়েছে। আরমান আর তুলিপ। পরদিন সাব্বিরকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়ে আরমান আর তুলিপকে ডেকে ওর মা বললেন, তোমরা তিনজন একসাথে থাকবা। তোমাদের সিট একসাথে পড়েছে না!

আরমান আর তুলিপ প্রথমে কিছু বোঝেনি। কিন্তু প্রতিদিন সাব্বিরের সাথে সাথে আরমান আর তুলিপের জন্যেও টিফিন নিয়ে আসা, ছুটির দিনে ক্লাসের অন্যদের বাদ দিয়ে শুধু আরমান আর তুলিপকে দাওয়াত দিতে শুরু করায় ক্লাসে অন্যদের মধ্যে এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও হাসাহাসি শুরু হয়ে গেল। ক্লাসে সাব্বির তাই আজকাল খুব চুপচাপ থাকে। সব বুঝেও মাকে কিছু বলতে পারে না। অবশেষে এগিয়ে আসে কাছের বন্ধু হাসিব। ক্লাসের সবাইকে বুঝিয়ে বলে যে, এসব ঠাট্টা তামাশার কথা সাব্বিরের আম্মুর কানে গেলে তিনি কষ্ট পাবেন। তাছাড়া সাব্বির তো তাদের সেই আগের বন্ধুই আছে। অবশেষে সাব্বির আবার ক্লাসের সবার সাথে সমানভাবে মিশতে পারে। যদিও প্রতিদিন মা আরমান আর তুলিপকে ডেকে ডেকে যখন কথাবার্তা বলেন তখন সাব্বির খুবই অস্বস্তি বোধ করে, সাথে আরমান আর তুলিপও।

পাঁচ.
একটা ভলান্টারি অর্গানাইজেশনের ওয়ার্কশপ চলছে। পার্টিসিপেন্টের সংখ্যা অনেক। লিফটের জন্য সবাই অপেক্ষা করলে ভিড় হয়ে যাবে বড় ধরনের। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, সামর্থ্যবানরা সিড়ি দিয়েই যাবে। বয়স্ক আর অসুস্থরা লিফটে যাবে। লিফটটা নিয়ন্ত্রণের জন্যে একজন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছে। একজন সুস্থ গর্ভবতী নারী লিফটের জন্য লাইনে দাঁড়ালেন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি গর্ভধারণ করছেন। শরীরের মধ্যপ্রদেশ ইষৎ স্ফীত। উনি যেন কারণ দর্শানোর জন্যই বললেন, আমি অসুস্থ তো। তাই লিফট ব্যবহার করতে হবে।

নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবক স্মিত হেসে সায় দিলেন। তারপর ইতস্তত করেও শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললো, কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো?
জ্বী, বলেন।
গর্ভাবস্থাকে অসুস্থতা বলবেন না দয়া করে। এই অসুস্থতার জন্য অনেকেই সৃষ্টিকর্তার কাছে কান্নাকাটি করছেন। কিন্তু আশাপূরণ হচ্ছে না।

গর্ভবতী নারী কথাটি বুঝলেন। বললেন, ঠিক বলেছেন ভাই। আর নিজেকে অসুস্থ বলবো না। আসলে এর থেকে বড় সুস্থতা আর হতে পারে না।

ছয়.
কারো মা যে তাদের ছেড়ে চলে যেতে পারে তা জসিম জানতে পারে রিপনের মায়ের চলে যাওয়ার খবরে। আর মা চলে যাওয়াটা যে খুব লজ্জাজনক ব্যাপার সেটাও তখনই জানতে পারে। রিপনের বাবা ঘরের বাইরে বের হন না, রিপন বের হয় না, রিপনের বোনও বের হয় না। জসিম, রিপন, সুমন, মিথুন আরো কয়েকজন কাছাকাছি বয়সের ছোট ছোট ছেলে একসাথে খেলে। জসিমের থেকে রিপন বয়সে কিছুটা ছোট। ছোট হলেও রিপনের স্কুলের যাওয়ার বয়স হয়েছে দু`তিন বছর আগেই। কিন্তু রিপন স্কুলে যায় না। কিভাবে যাবে ওরা তো গরিব, ওর বাবা ভ্যান চালায়। ভ্যান চালায় যার বাপ তার সাথে মিশতে নেই তা জানা নেই জসিমের। জসিমের সাথে তাই রিপনের ভালোই খাতির। খেলতে আসে না দেখে জসিম তাই রিপনের খোঁজে যায় জসিম। রিপন তাকে মাঠে যেতে বলে। খুব দুঃখিত স্বরে বলে, আমার মা কালরাতে চলে গেছে।

কিভাবে গেছে, কেন গেছে, কোথায় গেছে, তারাও মায়ের সাথে যায়নি কেন সেসব কথা জিজ্ঞেস করতে পারলো না জসিম রিপনের কাছে। রিপনের নিচু স্বর, লজ্জাবনত চাহনি আর বেদনাহত মুখ দেখে বুঝলো মা চলে যাওয়া নিশ্চয়ই খুব দুঃখের ব্যাপার। কিন্তু তার থেকে আরো বেশি লজ্জার। কেন লজ্জার সে কথা কাউকে জিজ্ঞেসও করেনি জসিম। কারণ ছোট্ট মাথায় এতটুকু বুঝেছিল, এটা কথা কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয় না। আর জিজ্ঞেস করলেও কেউ সত্যি কথা বলবে না।

সাত.
প্রতিদিন দুপুরবেলা আজহার স্যার বাড়িতে যান ভাত খেতে। মা ভাত রান্না করে বসে থাকেন তার জন্যে। না, তিনি নিজের বাড়ি থাকেন না। থাকেন বাড়িতে ১৮ কি.মি. দূরে শহরে। গ্রামে বাচ্চাদের লেখাপড়া  হবে না বলে বৌয়ের চাপে শহরে বাসা ভাড়া বাস করতে হয়। তিনি গ্রামের কাছাকাছি একটা মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল। তার ইচ্ছে ছিল না বাড়ি থেকে দূরে, মায়ের থেকে দূরে শহরে বাস করার। মা-ই বুঝিয়েছেন, ছেলেমেয়ের ভালোর জন্যে মা`রা ওই রকম জিদ একটু করে। কিছু হবে না, তুই যা।

মায়ের কণ্ঠে প্রশ্রয়ের সুর। মা`রা যে সন্তানের জন্যে সব করতে পারে তার প্রমাণ তো তারই মা। বাবা খুব অল্প বয়সে মারা যান। বিঘের পর বিঘে জমি থাকলেও চাষ করার লোক ছিল না। সবাই ধান্দায় ছিল নিরুপায় হয়ে মা কবে জমিগুলো বেঁচতে চাইবেন আর তারা সস্তায় কিনতে শুরু করবে। মা অবশ্য সেই ফাঁদে পা দেননি। নিজেই কোদাল দিয়ে জমি তৈরি করেছেন, ধান লাগিয়েছেন, কেটেছেন, ঘরে এনেছেন, সেদ্ধ শুকনো করেছেন। জমির আইল ঠিক রাখতে সীমানায় খেজুর গাছ লাগিয়েছেন। সেগুলো বাঁচাতে বালতি বালতি পানি বয়েছেন বছরের পর বছর। এভাবে কষ্ট করে মানুষ করেছেন। সেই মায়ের থেকে দূরে থাকতে হয় এখন তাকে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সাংসারিক শান্তির জন্যে মা সেটাও মেনে নেন। প্রতিদিন মাকে দেখতে তাই আজহার স্যার দুপুরের খাওয়াটা মায়ের সাথে সেরে নেন। আজো মায়ের কাছে তিনি সেদিনের ছোট্ট ছেলেটা। ভাত নিয়ে বসে থাকেন তার জন্যে।

আট.
রাজধানী শহর ঢাকা। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা। সন্ধ্যা। খেয়াল না করলেও চোখে পড়বে দিনের এই সময়ে, এই স্থানে বিভিন্ন বয়সী নারীদের ইতস্তত চলাফেরা। এই নারীদের একজন শাহনাজ আরা। নাম তার আরো আছে। কখনও তার নাম কাজল, দেশের বাড়ি পাবনা। কখনও তার নাম সুমাইয়া, দেশের বাড়ি ফরিদপুর। কখনও নাম পারভীন, দেশের বাড়ি মানিকগঞ্জ। মুখে যা আসে বলে দেয়। পুরোনো কেউ কেউ অবশ্য নাম ধরে ডাকলে সে সেই নামেই সাড়া দেয়। পরিচিত মানুষের মতো কাছে এসে বলে, কি খবর? ভালো! আর নাম নিয়ে কেউ বেশি মাথা ঘামায়ও না। অত সময় বা ইচ্ছে কারো থাকে না। মধ্যকার দূরত্বটুকু অতিক্রম করতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় কাটাতেই এই কথোপকথন। বছর দেড়েক সে রাস্তায়। দু`বছর যাবত তার চাকরি নেই। মাস ছয় চলার পর নিরুপায় হয়ে লাইনে নামা। সপ্তাহে তিন দিন বের হলেই চলে।

অনেকক্ষণ ধরে হাঁটাহাঁটি করেও এখনও কিছু হয়নি। সামনে রোজিনা একজন লোকের সাথে কথা বলছে। কিছুদূরে একটা সাদা রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। শাহনাজ ওরফে কাজল ওরফে পারভীন চোখ ফিরিয়ে নিল ওদিক থেকে। কাস্টমার বার কয়েক তাকিয়েছে ওর দিকে। রোজিনার কাস্টমার যদি ভেগে ওর কাছে চলে আসে তবে চুলোচুলি হয়ে যাবে একখান। রোজিনার মাথা গরম। না, কাস্টমার না, রোজিনাই এগিয়ে আসছে, এই যাবি তুই, দুইজন লাগবে। তোরে খুব পছন্দ। সারারাত।
না। তুই জানিস না আমি সারারাত যাই না?
জানি। ওরা কইতে কইলো। কইলো টাকার নাম শুনলে নাকি সবাই যায়। পাঁচ করে দেবে।
দিক, যাব না।
আমি তো জানি তুই যাবি না। যাই, বলি তুই যাবি না। অন্য কাউরে ফিট করতেছি। এরা আবার টাউট। সরাসরি না শুনলে জেদ চেপে যায়।

রোজিনা কি বলল জানে না শাহনাজ। কিন্তু কোন ঝামেলা করলো না লোকগুলো। এখানকার সবাই জানে শাহনাজ কখনো সারারাতে যায় না। যত টাকায় দিক না কেন। ঘরে দুটো বাচ্চা রেখে এসেছে সে।

নয়.
ঘরে ঢুকেই বৌয়ের দিকে ইশারা করলো আবির। বৌ ইশারায় জানালো টিভি দেখছে। পা টিপে টিপে গিয়ে চোখ ধরলো পেছন থেকে। যার চোখ ধরা হলো সে এই খেলার মধ্যে গেল না একটুও।
চোখ থেকে হাত সরিয়ে বলল, ইউ আর লেট!
সরি, সরি, সরি।
ইউ ওলওয়েজ সে দ্যাট।
বাট আই য়্যাম রিয়েলি সরি।
ইউ ডিজার্ভ এ প্যানিশমেন্ট।
অ্যান্ড হোয়াট ইজ দ্যাট? প্লেয়িং ফার্স্ট এন্ড ফিউরিয়াস?
ইয়েস!

আমাদের মা বেটার হাসি হাসি মুখ দেখে ওর মা বলল, আমার ধারণা তোমাদের এই দেরি করে বাসায় আসা, মুখ গোমড়া করে থাকা, বিচার শালিস সবই ভিডিও গেম খেলার অজুহাত।
আমরা দুজন সমস্বরে, ইউ আর ওয়েলকাম!

দশ.
আফসান চৌধুরী ইদানীং প্রায় সময়ই  অফিসের অন্য কাজ ফেলে নিজের পার্সোনাল ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকেন। নিজেকে রিলাক্স রাখার চেষ্টা করেন। ডাক্তার বলে দিয়েছে কোন রকম আগ্রহের আতিশয্য সীমার উপর মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। কিন্তু তিনি যতই ক্যাজুয়াল থাকার চেষ্টা করেন না কেন সীমা টেন্সড থাকেই।
হ্যালো!
বলো, কি করো?
শোনো, তুমি এখন আসতে পারবা?
কেন? দুষ্টুমি করার ইচ্ছা নাকি?
একটু রসিকতা করে পরিবেশটা ইজি রাখতে চান। কিন্তু তার ইন্দ্রিয় টান টান হয়ে আছে।
উফ, তুমি না দিন দিন ফালতু হয়ে যাচ্ছো! আসো!

ফোন রেখে দিয়েছে সীমা। এই সংবাদের জন্যে তিনি অপেক্ষা করছেন। এটাই হতে পারে সীমাকে আটকে রাখার শেষ সুযোগ। তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে এলেন। এই অফিসের কিছুই তার জন্যে আটকে থাকবে না। এটা তার নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিন বছর ধরে এমন ভাবে গড়ে তুলেছেন যে, তার শারীরিক উপস্থিতি ছাড়াও যেন সাবলীলভাবে চলতে পারে। তিনি সীমাকে যথেষ্ট সময় আর সঙ্গ দেয়ার জন্যেই এ ব্যবস্থা করেছেন ডা. সিনহা`র পরামর্শে। নিয়ম মেনে খাওয়া, নিয়ম মেনে শোয়া, নিয়ম মেনে ব্যায়াম, এমনকি নিয়ম মেনে প্রেম। তাদের নয় বছরের বিবাহিত জীবনে সন্তান আসেনি। আর এই হতাশা সীমাকে নিয়ে গেছে হতাশা, আত্মবিশ্বাসহীনতা আর জীবনের প্রতি আকর্ষনের তলানিতে।

মনোচিকিৎসকের মতে একটি বাচ্চার উপস্থিতি সীমাকে অফুরন্ত প্রাণচাঞ্চল্যে ভরিয়ে দিতে পারে আবার। তিন বছরের সাধনার ফল দেখা গেছে গত ছয় মাসে। সীমার ক্যারিং ক্যাপাবিলিটি স্ট্যাবল দেখা গেছে। আফসান চৌধুরীর স্পার্ম কাউন্টও নরমাল। ডাক্তার বলেছিলেন প্যাশেন্স রাখেন। যেকোন মাসে সুসংবাদ পাবেন। প্রথম কয়েকটি মাস চরম অপেক্ষার পর সীমা অনুভব করতো সে আবারো ভেসে যাচ্ছে রক্তে। এবার মিস করেছে। কিন্তু দুজনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর দু`টো দিন দেখবে। উত্তেজনা ভালো ব্যাপার নয়। আট বছর আগের মিসক্যারেজের কথা ওরা কেউ ভোলেনি। তারপর দুজন ছিটকে পড়েছিল দুদিকে। বিস্তর ক্ষত আর ক্ষয়ের পর হুশ ফেরে নিজেদের। তারপর আবার একত্রে এই সাধনা পথ পাড়ি দেয়া। ওরা এখন জানে যা-ই হোক না কেন দু`জন দু`জনের সহায় তারা। তবে আবার হারানোর বেদনা ওরা কেউ চায় না। তাই নিজেদের খুব সামলিয়ে সামলিয়ে রাখছে।

আফসান সোজা চলে এলেন বেডরুমে। এখানে থাকার কথা। ঘরে ঢুকে ডাকলো, সীমা! বাথরুম থেকে উত্তর এলো, এদিকে এসো! ভিতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি যেন হারিয়ে ফেললেন আফসান। সীমা আফসানের হাত দুটো ধরে বলল, ইটস পজেটিভ!
ইউ হ্যাভ ডান ইট!
উই হ্যাভ ডান ইট!
ইউ আর প্রেগন্যান্ট?
উই আর প্রেগন্যান্ট!
থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ!

মুখ ভেসে যাচ্ছে চোখের পানিতে সীমার, আফসানের। সীমা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, ইউ আর ওয়েলকাম, এন্ড থ্যাংক ইউ!
ওয়েল, কনগ্রাচুলেসন্স মাম্মি!
ইয়াহ, কনগ্রাচুলেসন্স ড্যাডি!