স্তালিন নাটকের একটি দৃশ্য
মঞ্চনাটক ‘স্তালিন’ এর ইতিহাস বিকৃতির প্রসঙ্গে
নুরুন্নবি শান্তপ্রকাশিত : জুন ১৩, ২০১৯
মঞ্চনাটক ‘স্তালিন’ এ ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনেছে দর্শকের একটি অংশ। নাটকটি আমিও দেখেছি। নাটকটির নির্দেশক কামালউদ্দিন নীলু ভাইকে নাটক শেষে বলেছিলাম, বিপ্লব গাথার প্রায় ৩০ বছর পর স্ট্যালিন দেখে একটি ট্রান্সফরমেশন মনে হচ্ছে। হতেই পারে। রাজনৈতিক রূপান্তর ব্যক্তি বা সংগঠনের তো হতেই পারে। তাকে দমন করতে হবে কেন! এনজিও বলে কটাক্ষ করেত হবে কেন। সমালোচনা হোক নাটকের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে। নাটক বন্ধের দাবি করতে হবে কেন! আমরা হয়তো ভুলে যাচ্ছি যে, এই উপমহাদেশে বামপন্থিদের অন্ধত্ব ও গোঁড়ামি তাদেরই কাল হয়েছে।
আমার তরুণ বয়সের একটা অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল। একদিন ট্রেনে চেপে ঢাকা আসার পথে উইলি ব্রান্ট কমিশের রিপোর্টটা পড়ছিলাম। হঠাৎ আমার পাশে বসা কমরেড রেগে গিয়ে বললেন, এসব বাজে জিনিসে মন না দিয়ে মার্কসবাদ পড়ো। এমনতর ছোট অন্ধত্বের নমুনা থেকে বড় বড় নমুনাও মানুষ দেখেছে। জ্ঞান ও তথ্যের দুয়ার এখন উন্মুক্ত। সত্য বের হবেই, তা স্ট্যালির পক্ষে বা বিপক্ষে যেদিকেই যাক না কেন। সমাজতন্ত্র নামক জুজুর ভয় এখনও পায় বিশ্বপুঁজিবাদ, একথা সত্য। কিন্তু পার্টি-আমলাতন্ত্র গড়ে তোলা ও বিরোধীদের কঠোর হাতে দমনে স্ট্যালিনের পারঙ্গমতাকে অস্বীকার করি কিভাবে?
শিশু সোভিয়েতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালে সুরক্ষার দাবিদার একাই স্ট্যালিন সেকথা সত্য বলা আরেক ধরনের অন্ধত্ব। পুনর্গঠনবাদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্ট্যালিনের অবদান কে অস্বীকার করতে পারে? কিন্তু স্ট্যালিনের হাতে তৈরি দুর্ভেদ্য পার্টি ব্যুরোক্রেসিরই তো শেষ পরিণতি হচ্ছে, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত বিধ্বংসী গ্লাসনস্ত। তিনিই শিখিয়েছেন তার অনুসারীদের অন্তরালের রাজনীতি। রাজনৈতিক ইতিহাস আবেগ সর্বস্ব হলে ক্ষতি হয় সমাজতান্ত্রিক দর্শনের। স্ট্যালিনের সমালোচনাকারীদের জবাব শুধু মাত্র স্ট্যালিনকে মহিমান্বিত করে করা ঠিক হবে না বা একটি নাটক বর্জনের ডাক দিয়ে করা সমিচীন হবে না।
নবপ্রজন্ম দেখুক, লেখা হোক নানামুখি তথ্য নিয়ে সেই সময় ও কালকে, তবেই চিন্তা ও বিবেচনার উঠোন তৈরি হবে। পুঁজিবাদকে যেমন শত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হচ্ছে টিকে থাকার জন্য, তেমনি সমাজতান্ত্রিক মতবাদকেও তাই করতে হবে। মনে রাখা জরুরি, ব্যক্তি যখন একাই প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠতে চায় তখনই স্বৈরতন্ত্রের জন্ম হয়। স্ট্যালিন, মাও সবাই একই কাজ করেছেন। পুঁজিবাদী দেশে দেশে এখনও একই চর্চা চলছে। বাম রাজনৈতিক দলগুলিও একই চর্চা জারি রেখেছে। এই চর্চায় ডান-বাম একাকার। বর্তমান সময়ে সমাজতন্ত্র যদি শ্রমজীবী শ্রেণির কথা বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের ধ্বজা ওড়ায় বা প্রলেতারিয়েত একনায়কত্বের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে তবে হবে বহুজন বর্জিত।
লেখক: কবি