
ভারতে ছড়াচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষ, হুমকিতে কাশ্মীরিদের জীবন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : এপ্রিল ২৭, ২০২৫
কয়েকদিনে ভারতের নানা জায়গায় কাশ্মীরিদের হেনস্তা, মারধর এমনকি হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় পড়তে হচ্ছে মূলত কাশ্মীরি ছাত্র-ছাত্রীদের যারা অন্যান্য রাজ্যে পড়াশোনা করছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও কাশ্মীরিদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা হচ্ছে।
কাশ্মীরি ছাত্রদের সর্বভারতীয় সংগঠন জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, হেনস্তার ভয়ে অনেক কাশ্মীরি ছাত্র-ছাত্রী কয়েকদিন ধরে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছে। একই সঙ্গে মুসলমান-বিরোধী ঘৃণাও ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক ও গণমাধ্যমে।
পহেলগামের হামলার জন্য ভারত সরকার পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে। তাই ভারতের মানুষদের মধ্যেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। নানা জায়গায় পাকিস্তানের পতাকাও পোড়ানো হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সামনে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ২৬টি পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছেন। আবার ত্রিপুরার আগরতলাতেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়েছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা ভিডিও দেখা যাচ্ছে যেখানে রাস্তায় মানুষের চলাচলের পথে পাকিস্তানের পতাকা সাঁটিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে তার ওপর দিয়েই মানুষ হাঁটতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও দেখা গেছে, উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের এক ব্যক্তি যিনি নিজেকে হিন্দু নামধারী একটি সংগঠনের নেতা বলে দাবি করছেন এবং বলছেন যে, কাশ্মীরিদের দেরাদুনের যেখানেই দেখা যাবে, অবশ্যই তাদের ব্যবস্থা হবে। কয়েকজন কাশ্মীরি ছাত্রকে শহর ছাড়তে হুমকিও দিচ্ছেন তিনি।
জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক নাসির খুয়েমি বলেন, “দেরাদুনের ঘটনায় যাদের হুমকি দিতে দেখা গিয়েছিল, তাদের আটক করা হয়েছে বলে সেখানকার পুলিশ আমাকে আশ্বস্ত করেছে। তবুও ঘটনা তো ঘটেই চলেছে। এই আটক হওয়ার ঘটনাটা জানতে পারলে ছোটখাটো ওই সব সংগঠনগুলো সচেতন হবে কিনা, জানি না।”
তিনি আরও বলেন, “সারা দেশ থেকেই কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীরা হেনস্তা-হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানাচ্ছেন। তারা একটি বিশেষ হেল্পলাইনও খুলেছেন। দেরাদুন, চণ্ডীগড় ও প্রয়াগরাজের মতো বড় শহরসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৮টি গুরুতর মারধর, হুমকি ও হেনস্তার ঘটনা হয়েছে। এছাড়া অসংখ্য ঘটনার খবর আসছে সারা দেশ থেকে যেখানে আমাদের রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা হেনস্তা বা হুমকির শিকার হওয়ার কথা জানাচ্ছেন।”
নাসির খুয়েমি কথায়, “পহেলগামের হামলার পরে এমনিতেই পরিস্থিতি তেতে আছে। তার ওপরে কাশ্মীরি ছাত্রদের হয়রানির এসব ঘটনা প্রকাশ করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে সরকারের একটা আশঙ্কা আছে। তাই একটা প্রশাসনিক চাপ আছে ঘটনাগুলো প্রকাশ না করার। আমরা চেষ্টা করছি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাদের মাধ্যমে যাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি নিজে বেশ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য পুলিশ মহানির্দেশকের সঙ্গে কথা বলেছি। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। আর আমাদের ছাত্রছাত্রীদের বলেছি তারা যেন বেশি মুখ না খোলে, কোনো রাজনৈতিক কথাবার্তা বাইরে না বলে। বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকতেও পরামর্শ দিয়েছি।”
নাসির খুয়েমি বলেন, “নিরীহ কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের হেনস্তা হতে হবে, মার খেতে হবে, কাশ্মীরের পর্যটন ভেঙে পড়বে, ভারতের সমাজ ভাগ হয়ে যাবে– আসলে এটাই তো চেয়েছিল পড়শি দেশ।” সূত্র: বিবিসি বাংলা