বুড়োদের উচিত বাচ্চাদের থেকে শিক্ষা নেয়া
শাহরুখ পিকলুপ্রকাশিত : আগস্ট ০১, ২০১৮
স্কুলের কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের দ্বারা আন্দোলন চলছে। ঢাকা অচল। তাদের কোমল মনে এর দীর্ঘমেয়াদী ফল যে ভালো হবে না, তা বলাই বাহুল্য। এত লম্বা সময় তাদের রাস্তায় থাকা ও আন্দোলন করা— তাদের স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধির অন্তরায় হতে পারে। একপর্যায়ে তারা উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যাবে। কেউ কেউ এরই মধ্যে হয়েছেও।
সাধারণ মানুষের সমবেদনা এখনো তাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু সবাইকে এই ঢাকার জ্যাম ঠেলেই কোনোক্রমে কাজকর্ম করতে হয়। এতে তাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে। তখন সম্পূর্ণ ব্যাপারটা এই কোমলমতি কিশোরদের মনে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে, যা থেকে তারা সমাজের প্রতি আরো বিতৃষ্ণা হয়ে যাবে। এতে তাদের হতাশা বাড়বে।
তাদের পূর্বসূরী `নির্লজ্জ`, `স্বার্থপর` ও `মেরুদণ্ডহীন` প্রজন্মের উচিত, এই আন্দোলনক এগিয়ে নিয়ে সমাজের ঘৃণ্য ও গৎবাঁধা এ পরিবর্তনের সুযোগ গ্রহণ করা। বাচ্চাদের থেকে বুড়োদের শিক্ষা নেয়া। কিন্তু কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের এই ক`দিনের উদ্যমে, তাদের অবরোধ-বিক্ষোভে সরকার বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।
গৎবাঁধা বিএনপি-জামায়াত বলে এই আন্দোলনকারীদেরকে এখন আর গালি দেয়ার কোনো সুযোগ তাদের থাকছে না। দুর্ঘটনার পরবর্তী দিনগুলোতে পুলিশের মারমুখি রূপের যেসব ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তাতেও সরকারের অস্বস্তি বেড়েছে। কোনো এক মন্ত্রীর ‘ক্যাবলা হাস ‘ ম্লান হয়ে গেছে। সে এখন মাফ চাইতে ব্যস্ত।
সড়কমন্ত্রী যে কিছুটা চোখ রাঙিয়ে তাদের ক্লাসে ফেরত যেতে বলেছিলেন, তার আজকের ভাষাতে একটা নমনীয় ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আজ সাংবাদিকদের সামনে খুব নরমভাবে কথা বলতে দ্যাখা গেছে। এখান থেকে একটা জিনিস আবার প্রতীয়মান হলো যে, দেশের সরকারি দল বলেন বা মূল বিরোধী দল, উভয় অংশই বুড়ো ভামে ভরা। তাদের শরীরে এতই স্নেহজাতীয় পদার্থ জমেছে যে, সেই `স্নেহ` হারানোর ভয়ে তারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন না।
সবার বিভিন্ন রকমের ব্যবসা বা তদসংক্রান্ত `কাজ` আছে। বিরোধী দল শুধু যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় যেতে চায়, আর ক্ষমতার `মধু` খেতে চায়, জনগণের কপালে যে লাউ সেই কদু! আর পারে টিভিতে এসে অতীত নিয়ে টক-শোতে পান চিবিয়ে কে কবে কী করেছিল, তা নিয়ে আজাইরা প্যাঁচাল পাড়তে। ব্যস, ওখানেই শেষ।
একটা জিনিস বেশ বোঝা যাচ্ছে, ছাত্র-ছাত্রী ও আপামর জনগণ অচিরেই `সদাহাস্য` মন্ত্রীর পদত্যাগ নইলে অপসারণ চাইবে। তা যান না আপনি, নিজের বাসায় বসে যত ইচ্ছে কেলাই-কার্তিক বনে থাকুন। সঙ্গে শিক্ষা, অর্থ ও আরো কয়েকজনকে নিতে পারেন কীনা দেখেন।
সরকারকে অবশ্যই বিআরটিএ-কে নিয়ে ভাবতে হবে। এটাকে মাইক্রোস্কোপের নিচে দিয়ে দেখতে হবে। বিভিন্ন গণপরিবহনের ফিটনেসের কী অবস্থা, তা আমি নিজে জানি। কারণ আমি গাড়ি চালাই্, শহরে কম কিন্তু শহরের বাইরে বেশি। `মুমূর্ষু` গাড়িগুলো কীভাবে বছরের পর বছর রাস্তায় থাকে, তা সত্যিকারের জনগণের কল্যাণে চিন্তা করে তলিয়ে দেখতে হবে। আর, কারণ জানলে এর প্রতিবিধান করতে হবে।
সড়ক-মহাসড়কে যে ব্যাপক চাঁদাবাজি হচ্ছে, সেই বিশাল অংকের টাকা কোথায় যাচ্ছে তা সবাই জানে, কিন্তু ওটা যেন ধর্তব্য নয়! কোনো অন্যায় বা অবিচার একটা দেশের নিয়ম হতে পারে না। যে দেশে এত বড় জনসংখ্যায় এত এত বেকার, সেদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রাইভারের অভাব কেন থাকবে? তাড়াহুড়ো করে ঘাতক ড্রাইভারের জন্য ফাঁসির শাস্তি দেয়ার আইন পাস করে এ আগুন নেভানোর চেষ্টা হবে তালি মারার মতো পদক্ষেপ।
দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সব সময় একটা `doubt` থাকে, সেটা ভুলে গেলে চলবে না। ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা ছুরি, বন্দুক, শ্বাসরোধ বা গাড়ি দিয়েও করা যায়। তবে এরজন্য যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা আমাদের পেনালকোডে এরই মধ্যে রয়েছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, পরিবহণ সেক্টরের এই হাল বহু দশকের দুর্নীতি, অবহেলা, দায়িত্বহীনতা, দায়বদ্ধতার অভাব, মালিকের লোলুপ দৃষ্টি এবং সহজে আইনকে পাস কাটানোর সংস্কৃতি থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
এ খাতকে একটা নিয়মের মধ্যে পুরোপুরি আনা হয়তো কোনোদিনও আর সম্ভব হবে না। কিন্তু এই বল্গাহীন অরাজক অবস্থার রাশ টেনে ধরা এখন সময়ের দাবি। এ নিমিত্তে দুর্ঘটনায় নিহতের স্বজন বা আহতদের মানবিক ও সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ দানে মালিকপক্ষকে বাধ্য করতে হবে। অবশ্যই তা দোষ প্রমাণের পর এবং দ্রুত। ওই আল্লাহর ওয়াস্তে বিশ হাজার টাকার খয়রাতি সাহায্যের রেওয়াজকে উপড়ে ফেলতে হবে। তবেই একজন মালিক বাসের চাবিটা একজন আনকোরা, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অর্বাচীন ছোকরার হাতে দিতে দ্বিধা করবে।
গতানুগতিক মামলাকে কেউ আর এখন ভয় পায় না। মামলা ঝুলে থাকতে থাকতে একদিন পচে গলে শিঁকে ছিঁড়ে চিরতরে মাটিচাপা পড়ে যায়। তাই মালিকের `মানিব্যাগ` ধরে টান দিতে হবে। অর্থবিয়োগের থেকে বড় ভয় আর কিছুতে নেই। অর্থহানির সম্ভাবনা মানুষকে নিয়মের মধ্যে আসতে বাধ্য করে।