প্রতীকী ছবি
বিশ্ববিদ্যালয় যেন শিক্ষার্থীর খুনের কারখানা হয়ে না ওঠে
শাহেদ কায়েসপ্রকাশিত : মার্চ ১৯, ২০২৪
সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার সব কাজ করে দেবে সবসময় এ আশায় না থেকে আসেন আমরা নিজেরাই উদ্যোগ নিই। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করুক। সেইসঙ্গে নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। আসেন, আমাদের মেয়েদের পাশে আমরা দাঁড়াই। তাদের আত্মরক্ষার পথ বলে দিই। যেসব অন্যায়, অবিচার ও নির্যাতন তাদের প্রতি ঘটছে, সেসব ফেসবুকে কিংবা সেটা সম্ভব না হলে স্থান ও তারিখ এবং সেসব ইতর সহপাঠী ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষার্থী ও নির্যাতক শিক্ষকদের নামসহ সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত ডায়েরিতে লিখে রাখতে বলি।
আর এই সমস্ত বিষয়গুলো পরিবারকে, কাছের বন্ধুদের জানিয়ে রাখতে বলি। এতে দুটি কাজ হবে। এক. কিছুটা হলেও মেয়েটি মানসিক প্রেশার থেকে মুক্তি পাবে। দুই. ভবিষ্যতে এই ডায়েরি ক্রিমিনাল শিক্ষক ও সহপাঠীদের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে থেকে যাবে। এখানে উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেক ভালো শিক্ষক আছেন, যারা প্রকৃত অর্থেই শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হয়ে ওঠেন, তাদেরও নিজেদের ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নানা অনাচারের বিষয়গুলো নজরে এলে ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়ার কথা ভাবতে হবে।
পাশাপাশি আরেকটি কাজ করা যায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, সহপাঠী কিংবা অন্যদের দ্বারা যৌন ও মানসিক নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ভিউ করে, ইনভেস্টিগেশন করে ডকুমেন্টেশন তৈরি করা যায়। এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সহপাঠী ও শিক্ষকদের যে কোনো মানসিক কিংবা যৌন নির্যাতন স্পষ্ট মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এখানে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভূমিকা রাখতে পারে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, নারীপক্ষ, নাগরিক উদ্যোগ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ কিংবা অন্য কোনো মানবাধিকার সংগঠন এই উদ্যোগটি নিতে পারে।
আত্মহত্যার সংখ্যাটা এত বেশি কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে! এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। কারণ অনুসন্ধান করতে হবে এবং এর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন শিক্ষার্থীদের জন্য খুনের কারখানা হয়ে না ওঠে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও নিরাপত্তা সর্বাগ্রে। যারা অবন্তিকাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে, ওর প্রতি অবিচার করেছে, ওর এই ছোট্ট জীবনটা বিষিয়ে তুলেছিল, সেই অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
লেখক: কবি, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকার কর্মী