বিজ্ঞান লেখক আবদুল্লাহ আল-মুতীর আজ জন্মদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০১, ২০২৫

বিজ্ঞান লেখক আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিনের আজ জন্মদিন। সিরাজগঞ্জ জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি তার জন্ম। বাবা শেখ মইন শরফুদ্দিন ও মা হালিমা শরফুদ্দিন। পাঁচ ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মুতী সবার বড়।

১৯৪৫ সালে ঢাকার মুসলিম হাই স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন (এখনকার এসএসসি পরীক্ষা) পরীক্ষায় কলকাতা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে ১১তম স্থান নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে আইএ পাশ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

পদার্থ বিদ্যায় সম্মানসহ স্নাতক হন ১৯৫২ সালে। বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়তার কারণে এই সময় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণি লাভ করলেও পরের বছর প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।

এরপর শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে শিক্ষায় এমএ এবং ১৯৬২ সালে পিএইচডি লাভ করেন। তার কর্মজীবন শুরু হয় রাজশাহী কলেজে শিক্ষক হিসেবে। ১৯৭৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব হিসেবে তিনি যোগ দেন। তারপর শিক্ষা প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরু দায়িত্ব পালন করেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৮৬ সালে। তার প্রকাশিত বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা ২৭, অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০, সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০। এছাড়া কিছু পান্ডুলিপি রয়েছে, যার অনেকগুলো এখনও অপ্রকাশিত।

রেডিও ও টিভিতে তার উপস্থাপিত অনুষ্ঠান বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল। তিনি লেখালেখি শুরু করেন ছাত্রজীবন থেকেই। বিজ্ঞানের জটিল ও সূক্ষ্ম বিষয়কে সহজ ভাষায় সর্বজনবোধ্য করে তোলার জন্য তার দক্ষতা ও সাফল্য ছিল তুলনাহীন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য অঙ্গণে অজস্র সংগঠন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন আমৃত্যু।

১৯৪৭ সালে মুকুল ফৌজ আন্দোলনে যোগ দিয়ে পরবর্তী বছরে ‘মুকুল’ নামের কিশোর পাক্ষিক পত্রিকা বের করেন। কেন্দ্রীয় কচি কাঁচার মেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ইত্তেফাক, আজাদ, মোহাম্মদী পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। জাতীয় শিশু-কিশোর সংস্থাসহ নানা সংঠনের উপদেষ্টা ছিলেন। এছাড়া তিনি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ (১৯৮৮-৯০), বাংলা একাডেমি (১৯৮৬-৯০) ও বিজ্ঞান শিক্ষা সমিতিতে।

এছাড়া তিনি আরো যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রধান উপদেষ্টা, প্রথম ঢাকা মহাকাশ উৎসব "বেক্সিমকো স্পেসফেস্ট ১৯৯৬`, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের দশম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি (১৯৯৮), উপদেষ্টা, দ্বিতীয় ঢাকা মহাকাশ উৎসব ‘স্পেসফেস্ট ১৯৯৯’। প্রধান উপদেষ্টা, ঢাকা প্রস্তাবিত স্পেস সেন্টার, উপদেষ্টা, মেঘনাদ সাহা বিজ্ঞান তথ্যকেন্দ্র ও গ্রন্থাগার (১৯৯৭-৯৯)। জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা সংস্কার ও আধুনিকরণের কর্মকান্ডে তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থেকে উজ্জ্বল অবদান রেখে গেছেন।

বাংলাদেশের বিজ্ঞান লেখকদের মধ্যে তিনিই একমাত্র ইউনেস্কো কলিঙ্গ পুরস্কার লাভ করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে, সাগরের রহস্যপুরী, এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে, রহস্যের শেষ নেই, আবিষ্কারের নেশায়, বিজ্ঞান ও মানুষ (১৯৭৫), জানা-অজানার দেশে (১৯৭৬), সাগরের রহস্যপুরী (১৯৭৬) প্রভৃতি। ১৯৯৮ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।