বাইবেলের গল্প

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯

ঈশ্বর সৃষ্টির কাজ শুরু করেন

আমাদের কাছে উত্তম যা-কিছু রয়েছে, সেগুলোর সমস্তই ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। তিনি সূর্য সৃষ্টি করেছেন, যেন আমরা দিনের বেলা আলো পাই এবং চাঁদ ও তারা সৃষ্টি করেছেন, যেন আমরা রাতের বেলাও কিছুটা আলো পাই। আর আমাদের বসবাসের জন্য ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।

তবে, ঈশ্বর প্রথমেই সূর্য, চাঁদ, তারা ও পৃথিবী সৃষ্টি করেননি। তুমি কি জান, প্রথম সৃষ্টি কী ছিল? ঈশ্বর প্রথমে তাঁরই মতো ব্যক্তিদের সৃষ্টি করেছিলেন। আমরা এই ব্যক্তিদের দেখতে পারি না, ঠিক যেমন আমরা ঈশ্বরকেও দেখতে পাই না। বাইবেলে এই ব্যক্তিদেরকে স্বর্গদূত বলা হয়েছে। ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে স্বর্গে বাস করার জন্য এই স্বর্গদূতদের সৃষ্টি করেছিলেন।

ঈশ্বর সবচেয়ে প্রথমে যে-স্বর্গদূতকে সৃষ্টি করেছিলেন, তিনি ছিলেন একজন বিশেষ ব্যক্তি। তিনি ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র ছিলেন এবং সেই পুত্র তাঁর পিতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে অন্যান্য সব কিছু সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরকে সূর্য, চাঁদ, তারা ও সেইসঙ্গে আমাদের পৃথিবী সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছিলেন।

তখন এই পৃথিবী কেমন ছিল? শুরুতে এই পৃথিবীতে কেউ বাস করতে পারত না। পুরো পৃথিবীতে এক বিশাল মহাসাগর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কিন্তু, ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন পৃথিবীতে মানুষ বাস করে। তাই, তিনি আমাদের জন্য বিভিন্ন কিছু প্রস্তুত করতে শুরু করেছিলেন। তিনি কী করেছিলেন?

একেবারে প্রথমেই, আলো প্রয়োজন ছিল। তাই ঈশ্বর পৃথিবীকে আলোকিত করার জন্য সূর্য থেকে আলো সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি আলোকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছিলেন, যেন দিন ও রাত উভয়ই হতে পারে। এরপর, ঈশ্বর মহাসাগরের জলের মধ্য থেকে ভূমিকে ওপরে উঠিয়েছিলেন।

প্রথমে ভূমির ওপর কিছুই ছিল না। তুমি এখানে যে-ছবিটা দেখতে পাচ্ছ, ভূমি দেখতে ঠিক সেইরকমই ছিল। কোনো ফুল অথবা গাছপালা কিংবা পশুপাখি ছিল না। এমনকী মহাসাগরের মধ্যে কোনো মাছও ছিল না। পৃথিবীকে মানুষ ও পশুপাখির বেঁচে থাকার উপযোগী করে সত্যি সত্যিই সুন্দর করে তোলার জন্য ঈশ্বরের আরও অনেক কাজ করা বাকি ছিল।

যিরমিয় ১০:১২; কলসীয় ১:১৫-১৭; আদিপুস্তক ১:১-১০.

পৃথিবীতে দৈত্যাকৃতি ব্যক্তিরা

তোমার দিকে যদি এমন কেউ এগিয়ে আসত, যে তোমার ঘরের ছাদের সমান লম্বা, তাহলে তুমি কী চিন্তা করতে? এই ব্যক্তি নিশ্চয়ই একটা দৈত্য! একটা সময়ে পৃথিবীতে সত্যি সত্যিই দৈত্যাকৃতি ব্যক্তিরা ছিল। বাইবেল দেখায় যে, তাদের বাবারা ছিল স্বর্গের দূতেরা। কিন্তু, কীভাবে তা হতে পারে?

মনে করে দেখো, এক মন্দদূত শয়তান, সমস্যা সৃষ্টি করায় ব্যস্ত ছিল। এমনকী সে ঈশ্বরের দূতদেরকেও মন্দদূতে পরিণত করার চেষ্টায় ছিল। একটা সময়ে, এই স্বর্গদূতদের মধ্যে কেউ কেউ শয়তানের কথা শুনতে আরম্ভ করেছিল। তারা সেই কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল, যা ঈশ্বর তাদেরকে স্বর্গে করতে দিয়েছিলেন। আর তারা পৃথিবীতে নেমে এসেছিল এবং নিজেদের জন্য মানবদেহ তৈরি করে নিয়েছিল। তুমি কি জান, কেন?

বাইবেল আমাদের বলে যে, এর কারণটা হল ঈশ্বরের এই পুত্রেরা পৃথিবীতে সুন্দরী নারীদের দেখে তাদের সঙ্গে বসবাস করতে চেয়েছিল। তাই, তারা পৃথিবীতে এসে এই নারীদের বিয়ে করেছিল। বাইবেল বলে যে, সেটা ভুল কারণ ঈশ্বর স্বর্গদূতদেরকে স্বর্গে বসবাস করার জন্য সৃষ্টি করেছিলেন।

এই স্বর্গদূতদের ও তাদের স্ত্রীদের যে-বাচ্চা হয়েছিল, সেই বাচ্চারা আলাদা ছিল। প্রথমে হয়তো তাদেরকে খুব বেশি আলাদা বলে মনে হয়নি। কিন্তু, তারা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে এবং শক্তিশালী হতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা দৈত্যাকৃতি ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিল।

এই দৈত্যাকৃতি ব্যক্তিরা মন্দ ছিল। আর তারা যেহেতু অনেক বড়ো ও শক্তিশালী ছিল, তাই তারা লোকেদের আঘাত করত। তারা অন্য সকলকেও তাদের মতো মন্দ হওয়ার জন্য জোরাজুরি করত।

যদিও হনোক মারা গিয়েছিলেন কিন্তু তখন পৃথিবীতে একজন ভালো ব্যক্তি ছিলেন। এই ব্যক্তির নাম নোহ। তিনি সবসময় সেই কাজই করতেন, যা ঈশ্বর তাকে করতে বলতেন।

একদিন ঈশ্বর নোহকে বলেছিলেন যে, সমস্ত মন্দ লোককে ধ্বংস করার জন্য তাঁর সময় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, ঈশ্বর নোহ, তার পরিবার এবং অনেক পশুপাখিকে রক্ষা করতে যাচ্ছিলেন। চলো আমরা দেখি যে, ঈশ্বর কীভাবে তা করেছিলেন।

আদিপুস্তক ৬:১-৮; যিহূদা ৬.

একটি সুপুত্র এবং অন্যটি মন্দ

এখানে কয়িন ও হেবলকে দেখো। তারা দুজনেই বড়ো হয়ে গিয়েছে। কয়িন একজন কৃষক হয়েছেন। তিনি শস্য, ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদন করেন।

হেবল একজন মেষপালক হয়েছেন। তিনি মেষশাবকদের যত্ন নিতে পছন্দ করেন। মেষগুলো বেড়ে ওঠে আর তাই খুব শীঘ্র হেবলের এক বড়ো মেষপাল হয়ে যায়। তিনি সেই পালের দেখাশোনা করতেন।

একদিন কয়িন ও হেবল ঈশ্বরের জন্য উপহার নিয়ে আসে। কয়িন নিজের উৎপাদিত কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আসেন। আর হেবল তার পালের সবচেয়ে ভালো মেষটা নিয়ে আসেন। যিহোবা হেবলকে ও তার উপহার দেখে খুশি হন। কিন্তু, তিনি কয়িনের প্রতি খুশি ছিলেন না আর তাই তার উপহারও তাঁকে খুশি করে না। তুমি কি এর কারণটা জান?

এই কারণে নয় যে, হেবলের উপহার কয়িনের উপহারের চেয়ে ভালো। বরং, এর কারণ হল হেবল একজন ভালো মানুষ।তিনি যিহোবাকে ও তার ভাইকে ভালোবাসেন। কিন্তু, কয়িন হলেন মন্দ; তিনি তার ভাইকে ভালোবাসেন না।

তাই, ঈশ্বর কয়িনকে বলেন যে, তার আচরণ পরিবর্তন করা উচিত। কিন্তু, কয়িন তা শোনেন না। ঈশ্বর হেবলকে বেশি পছন্দ করতেন বলে তিনি অনেক রেগে যান। তাই, কয়িন হেবলকে বলেন, ‘চলো আমরা মাঠে যাই।’ সেখানে তাদের চারপাশে যখন কেউ ছিল না, তখন কয়িন তার ভাই হেবলকে আঘাত করেন। তিনি তাকে এত জোরে আঘাত করেন যে, হেবল মারা যান। কয়িন যা করেছেন, সেটা কি একটা সাংঘাতিক কাজ ছিল না?

যদিও হেবল মারা গিয়েছেন কিন্তু ঈশ্বর তাকে এখনও মনে রেখেছেন। হেবল একজন ভালো ব্যক্তি ছিলেন আর যিহোবা এইরকম ব্যক্তিদের কখনোই ভুলে যান না। তাই, একদিন যিহোবা ঈশ্বর হেবলকে আবারও জীবনে ফিরিয়ে আনবেন। সেই সময়ে হেবলকে আর মারা যেতে হবে না। তিনি এই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবেন। হেবলের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারাটা কি এক দারুণ বিষয় হবে না?

কিন্তু, ঈশ্বর কয়িনের মতো ব্যক্তিদের পছন্দ করেন না। তাই, কয়িন তার ভাইকে হত্যা করার পর, ঈশ্বর তাকে তার পরিবারের বাকি সদস্যদের কাছ থেকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিয়ে শাস্তি দিয়েছিলেন। কয়িন যখন পৃথিবীর আরেক প্রান্তে বাস করার জন্য চলে গিয়েছিলেন, তখন তিনি তার সঙ্গে তার এক বোনকে নিয়ে গিয়েছিলেন আর এই বোনই তার স্ত্রী হয়েছিলেন।

পরবর্তী সময়ে কয়িন ও তার স্ত্রী সন্তানের জন্ম দিতে শুরু করেছিল। আদম ও হবার অন্যান্য ছেলে-মেয়েও বিয়ে করেছিল এবং তাদেরও সন্তান হয়েছিল। খুব শীঘ্র পৃথিবীতে অনেক লোক হয়ে গিয়েছিল। চলো আমরা তাদের মধ্যে কয়েক জনের বিষয়ে শিখি।

আদিপুস্তক ৪:২-২৬; ১ যোহন ৩:১১, ১২; যোহন ১১:২৫.

একজন সাহসী পুরুষ

পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশই কয়িনের মতো মন্দ কাজ করত। তবে, তাদের মধ্যে একজন পুরুষ আলাদা ছিলেন। তিনি হলেন হনোক নামের এই পুরুষটি। হনোক একজন সাহসী পুরুষ ছিলেন। যদিও তার চারপাশের লোকেরা অনেক মন্দ কাজ করছিল কিন্তু হনোক ঈশ্বরের সেবা করে যাচ্ছিলেন।

তুমি কি জান, কেন তখনকার লোকেরা এত মন্দ কাজ করত? একটু চিন্তা করে দেখো তো, কে আদম ও হবাকে ঈশ্বরের অবাধ্য হতে এবং ঈশ্বর তাদেরকে যে-ফল খেতে বারণ করেছিলেন, তা খেতে প্ররোচিত করেছিল? হ্যাঁ, সে ছিল একজন মন্দদূত। বাইবেলে তাকে শয়তান বলা হয়েছে। আর সে সকলকে মন্দ ব্যক্তিতে পরিণত করার চেষ্টা করছে।

একদিন, যিহোবা ঈশ্বর হনোকের মাধ্যমে লোকেদের কাছে এমন কিছু বলেন, যা তারা শুনতে চায়নি। সেটা ছিল: ‘ঈশ্বর একদিন সমস্ত মন্দ লোককে ধ্বংস করতে যাচ্ছেন।’ এটা শুনে লোকেরা সম্ভবত অনেক রেগে গিয়েছিল। তারা হয়তো হনোককে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। তাই, ঈশ্বর যা করতে যাচ্ছেন, সেই বিষয়ে লোকেদের কাছে বলার জন্য হনোককে অনেক সাহসী হতে হয়েছিল।

ঈশ্বর হনোককে সেই মন্দ লোকেদের মাঝে অনেক বছর ধরে বেঁচে থাকতে দেননি। হনোক মাত্র তিন-শো পঁয়ষট্টি বছর বেঁচে ছিলেন। কেন আমরা বলছি যে, “মাত্র তিন-শো পঁয়ষট্টি বছর”? কারণ তখনকার লোকেরা এখনকার লোকেদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল এবং আরও বেশি দিন বেঁচে থাকত। যেমন, হনোকের ছেলে মথূশেলহ নয়-শো উনসত্তর বছর বেঁচে ছিলেন!

যাইহোক, হনোকের মৃত্যুর পর লোকেরা দিন দিন কেবল আরও মন্দই হতে থাকে। বাইবেল বলে যে, ‘তাদের সমস্ত চিন্তাই শুধু মন্দ ছিল’ এবং ‘পৃথিবী হিংস্রতায় পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।’

তুমি কি জান, তখন যে-সমস্ত কারণে পৃথিবীতে এত সমস্যা ছিল, সেগুলোর মধ্যে একটা কী? এর কারণ হল শয়তানের হাতে মানুষকে দিয়ে মন্দ কাজ করানোর একটা নতুন উপায় ছিল। এর পরের গল্পে আমরা সেই বিষয়ে শিখব।

আদিপুস্তক ৫:২১-২৪, ২৭; ৬:৫, ১১-১৩; ইব্রীয় ১১:৫; যিহূদা ১৪, ১৫.

প্রথম রংধনু

তুমি কি জান, নোহ ও তার পরিবার জাহাজ থেকে বের হয়েই সবচেয়ে প্রথমে কোন কাজটা করেছিল? তিনি ঈশ্বরের উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করেছিলেন অথবা বলতে পারো এক উপহার দিয়েছিলেন। তুমি নীচের ছবিতে তাকে সেটা করতে দেখতে পাচ্ছ। ঈশ্বর মহাপ্লাবন থেকে তার পরিবারকে রক্ষা করেছেন বলে নোহ তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য এই পশুগুলো উপহার হিসেবে উৎসর্গ করেছিলেন।

তোমার কি মনে হয় যে, যিহোবা এই উপহারের জন্য খুশি হয়েছিলেন? হ্যাঁ, তিনি খুশি হয়েছিলেন। আর তাই তিনি নোহের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি আর কখনো এই জগৎকে জলপ্লাবন দ্বারা ধ্বংস করবেন না।

খুব শীঘ্র ভূমি শুকিয়ে গিয়েছিল আর নোহ ও তার পরিবার জাহাজের বাইরে এক নতুন জীবন আরম্ভ করেছিল। ঈশ্বর তাদেরকে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং বলেছিলেন: ‘তোমাদের অবশ্যই অনেক সন্তান হবে। তোমাদের সংখ্যা অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পুরো পৃথিবীতে মানুষ বাস করে।’

কিন্তু পরে, যখন লোকেরা সেই মহাপ্লাবনের কথা শুনবে, তখন তারা হয়তো ঠিক একইরকম জলপ্লাবন আবারও ঘটবে বলে ভয় পেতে পারে। তাই, ঈশ্বর এমন কিছু দিয়েছিলেন, যা লোকেদেরকে তাঁর এই প্রতিজ্ঞার বিষয়ে মনে করিয়ে দেবে যে, তিনি আর কখনো পুরো পৃথিবীতে জলপ্লাবন আনবেন না। তুমি কি জান, তাদের সেই বিষয়ে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি কী দিয়েছিলেন? সেটা ছিল এক রংধনু।

বৃষ্টির পর যখন রোদ ওঠে, তখন আকাশে প্রায়ই রংধনু দেখা যায়। রংধনুতে নানারকম সুন্দর রং থাকে। তুমি কি কখনো রংধনু দেখেছ? তুমি কি ছবির রংধনুটা দেখতে পাচ্ছ?

ঈশ্বর এই কথা বলেছিলেন: ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি, পৃথিবীর সমস্ত মানুষ ও পশুপাখি আর কখনো জলপ্লাবন দ্বারা ধ্বংস হবে না। আমি মেঘে আমার রংধনু দিলাম। আর যখনই রংধনু দেখা যাবে, তখনই আমি এটা দেখব ও আমার এই প্রতিজ্ঞা স্মরণ করব।’

তাই, যখনই তুমি কোনো রংধনু দেখবে, তখন তা তোমাকে কোন বিষয়টা মনে করিয়ে দেবে? হ্যাঁ, ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞা যে, তিনি আর কখনো মহাপ্লাবন দ্বারা এই জগৎকে ধ্বংস করবেন না।

আদিপুস্তক ৮:১৮-২২; ৯:৯-১৭.

লোকেরা এক উচ্চদুর্গ নির্মাণ করে

অনেক বছর কেটে গিয়েছে। নোহের ছেলেদের অনেক সন্তান হয়েছে। আর তাদের সন্তানরা বড়ো হয়ে গিয়েছে এবং তাদেরও অনেক সন্তান হয়েছে। অল্পসময়ের মধ্যেই পৃথিবীতে অনেক লোক হয়ে যায়।

এই লোকেদের মধ্যে একজন ছিলেন নোহের নাতির ছেলে নিম্রোদ। তিনি একজন মন্দ লোক ছিলেন আর তিনি পশুপাখি শিকার করতেন ও সেইসঙ্গে মানুষদেরও হত্যা করতেন। এ ছাড়া, নিম্রোদ অন্য লোকেদের ওপর শাসন করার জন্য নিজেকে একজন রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ঈশ্বর নিম্রোদকে পছন্দ করতেন না।

সেই সময়ে, সমস্ত লোক একটা ভাষায় কথা বলত। নিম্রোদ তাদের সবাইকে একসঙ্গে রাখতে চেয়েছিলেন, যাতে তিনি তাদের ওপর শাসন করতে পারেন। তাই তিনি কী করেছিলেন, তা কি তুমি জান? তিনি লোকদেরকে একটা বিরাট নগর ও এর মধ্যে এক উচ্চদুর্গ নির্মাণ করতে বলেছিলেন। এই ছবিতে দেখো, তারা ইট তৈরি করছে।

যিহোবা ঈশ্বর এই নির্মাণকাজ দেখে খুশি হননি। ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন লোকেরা পুরো পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বাস করে। কিন্তু, লোকেরা বলেছিল: ‘চলো! আমরা একটা নগর আর সেইসঙ্গে এমন এক উচ্চদুর্গ নির্মাণ করি, যেটার চূড়া একেবারে আকাশকে ছুঁয়ে যাবে। তাহলে আমরা বিখ্যাত হয়ে যাব!’ লোকেরা ঈশ্বরের জন্য নয় বরং নিজেদের জন্য সম্মান নিয়ে আসতে চেয়েছিল।

তাই, ঈশ্বর লোকেদের সেই দুর্গ নির্মাণের কাজ থামিয়ে দিয়েছিলেন। তুমি কি জান, তিনি কীভাবে তা করেছিলেন? এমন কিছু করেছিলেন, যার ফলে হঠাৎ করেই লোকেরা কেবল একটা ভাষার পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছিল। নির্মাণকারীরা তখন আর একে অন্যের ভাষা বুঝতে পারছিল না। এই কারণেই তাদের নগরের নাম হয়েছিল বাবিল, যার অর্থ “ভেদ।”

লোকেরা তখন বাবিল থেকে চলে যেতে শুরু করেছিল। একই ভাষায় কথা বলত এমন লোকেরা একসঙ্গে বসবাস করার জন্য পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে চলে গিয়েছিল।

আদিপুস্তক ১০:১, ৮-১০; ১১:১-৯.

যে-যমজ ভাইয়েরা বিপরীত স্বভাবের ছিল

এখানে যে-দুই বালককে দেখা যাচ্ছে, তারা একেবারে বিপরীত স্বভাবের, তাই না? তুমি কি তাদের নাম জান? শিকারি বালকটি হচ্ছে এষৌ এবং যে মেষের যত্ন নিচ্ছে, সে যাকোব।

এষৌ এবং যাকোব হচ্ছে ইস্‌হাক ও রিবিকার যমজ সন্তান। বাবা অর্থাৎ ইস্‌হাক, এষৌকে অনেক পছন্দ করতেন কারণ এষৌ ভালো শিকারি ছিলেন এবং তিনি পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে আসতেন। কিন্তু রিবিকা, যাকোবকে ভালোবাসতেন কারণ যাকোব চুপচাপ ও শান্ত স্বভাবের ছিলেন।

তাদের ঠাকুরদাদা অব্রাহাম তখনও জীবিত ছিলেন আর তার কাছ থেকে যিহোবার বিষয়ে শুনতে যাকোব কতটা পছন্দ করত, তা আমরা নিশ্চিতভাবেই কল্পনা করতে পারি। অবশেষে অব্রাহাম এক-শো পঁচাত্তর বছর বয়সে মারা যান আর তখন এই যমজ সন্তানদের বয়স পনেরো বছর।

এষৌর বয়স যখন চল্লিশ বছর, তখন তিনি কনান দেশের দু-জন মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। এই কারণে ইস্‌হাক ও রিবিকা অনেক দুঃখ পেয়েছিল কারণ সেই মেয়েরা যিহোবাকে উপাসনা করত না।

তারপর, একদিন এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল, যেটার কারণে এষৌ তার ভাই যাকোবের ওপর প্রচণ্ড রেগে যান। সেই সময়টা এসে গিয়েছিল, যখন ইস্‌হাক তার বড়ো ছেলেকে আশীর্বাদ করবেন। যেহেতু এষৌ যাকোবের চেয়ে বয়সে বড়ো ছিলেন, তাই এষৌ সেই আশীর্বাদ লাভ করার আশা করেছিলেন। কিন্তু, এষৌ এর আগেই সেই আশীর্বাদ লাভ করার অধিকার যাকোবের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তা ছাড়া, যখন এই দুই বালকের জন্ম হয়েছিল, তখন ঈশ্বরই বলে দিয়েছিলেন যে, যাকোব আশীর্বাদ লাভ করবে। আর সেটাই হয়েছিল। ইস্‌হাক তার ছেলে যাকোবকে আশীর্বাদ করেছিলেন।

পরে, এষৌ যখন সেই বিষয়টা জানতে পেরেছিলেন, তখন তিনি যাকোবের ওপর খুবই রেগে যান। এষৌ এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, তিনি বলেন তিনি যাকোবকে হত্যা করবেন। রিবিকা যখন এই বিষয়টা শুনেছিলেন, তখন তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। তাই, তিনি তার স্বামী ইস্‌হাককে বলেন: ‘যদি যাকোবও কোনো কনানীয় মেয়েকে বিয়ে করে, তাহলে আমার বেঁচে থেকে কী লাভ।’

তখন ইস্‌হাক তার ছেলে যাকোবকে ডেকে বলেছিলেন: ‘তুমি কোনো কনানীয় মেয়েকে বিয়ে কোরো না। এর পরিবর্তে, তুমি হারণে তোমার দাদু বথূয়েলের বাড়িতে যাও। তার ছেলে লাবনের কোনো মেয়েকে বিয়ে করো।’

যাকোব তার বাবার কথা শুনেছিলেন এবং সঙ্গেসঙ্গে হারণের উদ্দেশে দীর্ঘযাত্রা শুরু করেছিলেন, যেখানে তার আত্মীয়স্বজন বসবাস করত।

আদিপুস্তক ২৫:৫-১১, ২০-৩৪; ২৬:৩৪, ৩৫; ২৭:১-৪৬; ২৮:১-৫; ইব্রীয় ১২:১৬, ১৭.

জ্বলন্ত ঝোপ

মোশি তার মেষদের জন্য ঘাস খুঁজতে খুঁজতে বহু দূরের হোরেব পর্বতে উপস্থিত হয়েছেন। সেখানে তিনি একটা জ্বলন্ত ঝোপ দেখতে পান, তবে সেটা পুড়ে যাচ্ছে না!

‘খুবই অদ্ভুত ঘটনা,’ মোশি ভাবতে থাকেন। ‘আমি আরও কাছে গিয়ে আরও ভালো করে দেখব।’ তিনি যখন এগিয়ে গেলেন, তখন ঝোপের মধ্য থেকে একটা কণ্ঠস্বর শোনা যায়: ‘আর কাছে এসো না। তোমার চটি খুলে ফেলো, কারণ তুমি যে-স্থানে দাঁড়িয়ে আছ, সেটা পবিত্র ভূমি।’ আসলে ঈশ্বর একজন স্বর্গদূতের মাধ্যমে কথা বলছিলেন। তাই মোশি তার মুখ ঢেকে ফেলেন।

তখন ঈশ্বর তাকে বললেন: ‘আমি মিশরে আমার প্রজাদের কষ্ট দেখেছি। তাই, আমি তাদের মুক্ত করতে যাচ্ছি আর আমার প্রজাদের মিশর থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য আমি তোমাকেই পাঠাব।’ যিহোবা তাঁর প্রজাদের সুন্দর কনান দেশে নিয়ে আসবেন।

কিন্তু, মোশি বললেন: ‘আমি তো সামান্য একজন মানুষ। আমি কীভাবে তা করতে পারি? আর ধরো আমি গেলাম। ইস্রায়েলীয়রা আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কে তোমাকে পাঠিয়েছে?” তখন আমি কী বলব?’

‘তুমি এই কথা বলবে,’ ঈশ্বর উত্তর দেন। ‘যিহোবা, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্‌হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর তোমাদের কাছে আমাকে পাঠিয়েছেন।’ যিহোবা আরও বললেন: ‘আমার এই নাম অনন্তকালস্থায়ী।’

‘কিন্তু ধরো, আমি যখন তাদের বলব যে, তুমি আমাকে পাঠিয়েছ, তখন তারা যদি বিশ্বাস না করে,’ মোশি উত্তর দেন।

‘তোমার হাতে ওটা কী?’ ঈশ্বর জিজ্ঞেস করলেন।

মোশি উত্তর দেন: ‘লাঠি।’

‘ওটা মাটিতে ফেলে দাও,’ ঈশ্বর বলেন। মোশি যখন তা করেন, তখন সেই লাঠিটা একটা সাপ হয়ে যায়। এরপর যিহোবা মোশিকে আরেকটা অলৌকিক কাজ দেখালেন। তিনি বললেন: ‘তোমার হাত জামার ভিতর বুকের ওপর রাখো।’ মোশি তা-ই করলেন আর যখন তিনি তার হাত আবার বের করে আনলেন, তখন দেখলেন তার হাত তুষারের মতো সাদা হয়ে গিয়েছে! হাতটা দেখতে এমন মনে হয়েছিল যেন কুষ্ঠ নামে খারাপ রোগ হয়েছে। আর এরপর, যিহোবা মোশিকে তৃতীয় আরেকটা অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা দিলেন। অবশেষে তিনি বললেন: ‘যখন তুমি এই অলৌকিক কাজগুলো করবে, তখন ইস্রায়েলীয়রা বিশ্বাস করবে যে, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি।’

তারপর, মোশি বাড়ি ফিরে গেলেন এবং যিথ্রোকে বললেন: ‘আমার আত্মীয়রা কেমন আছে, তা দেখার জন্য দয়া করে আমাকে মিশরে ফিরে যেতে দিন।’ তাই যিথ্রো মোশিকে বিদায় জানালেন আর মোশি তখন মিশরে ফিরে যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করলেন।

যাত্রাপুস্তক ৩:১-২২; ৪:১-২০.

‘আমার বাইবেলের গল্পের বই’ থেকে পুনর্মুদ্রণ করা হলো