বাংলাদেশের নাট্যচর্চা ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক
রাহমান চৌধুরীপ্রকাশিত : নভেম্বর ৩০, ২০২৪
নাট্যচর্চায় শিল্পকলার ভূমিকা কী হবে সেটা বুঝবার আগে বাংলাদেশের নাট্যচর্চার চেহারাটা বুঝে নেওয়া দরকার। বাংলাদেশের যে নাট্যচর্চা নিয়ে এত আস্ফালন হচ্ছে, এতটা হৈ চৈ চলছে, সুনির্দিষ্টভাবে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, এই নাট্যচর্চা কার স্বার্থে? বায়ান্ন-তিপান্ন বছরের নাট্যচর্চা কি জনগণের পক্ষে ছিল, নাকি শাসকদের সেবা করেছে? তিপান্ন বছর বাদ দেওয়া যাক, পনেরো বছরের নাটক নিয়েই আলোচনা করা যাক। নাট্যচর্চা কার পক্ষে কাজ করেছে? নাটক কি সরকারের পদলেহন করেছে, নাকি জনগণের সংগ্রমের অংশ ছিল?
যদি এই নাটক জনগণের সঙ্গে না থাকে তাহলে এই নাট্যচর্চার পক্ষে জনগণের দাঁড়ানোর দরকার কী? জনগণের টাকায় এইরকম নাট্যচর্চার দরকার কী? যে নাটক জনগণের সঙ্গে ছিল না, জনগণ সেই নাটকের সঙ্গে থাকবে কেন? যে নাটক জনগণের পক্ষে না থেকে লুটেরাদের পক্ষে থাকে, বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের সেবা করে; জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজেদের ভাগ্যের উন্নতি করে, সেই নাটক বন্ধ হয়ে গেলে কি যায় আসে? প্রধান প্রশ্নটা হলো, বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগণের মধ্যে থেকে কয়জন এই দলগুলোর নাটক দেখে?
সবাই খুব ভালো করে জানে যে, বাংলাদেশে মঞ্চ নাটক দেখতে খুব বেশি লোক যায় না। নাট্যদলগুলোরই বক্তব্য এটা, নাটকের দর্শক নেই। নাটক করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতি প্রদর্শনীতে লোকসান হয় তাদের। ব্যস, দেখাই যাচ্ছে নাটকের দর্শক নেই। নাটকের দর্শক থাকলে কারো কাছে হাত না পেতে দর্শকের কাছে টিকিট বিক্রি করেই নাট্য প্রদর্শনী চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারের কাছে হাত পাততে হতো না। দর্শক নেই কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর দীর্ঘ হবে। শুধু এটুকু বলা যায়, মঞ্চায়িত নাটক বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দর্শককে আকৃষ্ট করতে পারে না।
কারণ তা আসলে বেশির ভাগ সময়ে নাটকই হয়ে উঠতে পারে না। নাটক নিয়ে যাদের গর্বের শেষ নেই তাদের কাছে জিজ্ঞাসা, মঞ্চ নাটকের দর্শক আসলে এই ঢাকা শহরে কতজন? যদি অতিরঞ্জিতভাবে ধরে নেওয়া হয়, শিল্পকলা একাডেমিতে বছরের প্রতিদিন ১০০০ দর্শক নাটক দেখছে, তাহলে কী দাঁড়ায়? নাটক দেখে মাত্র ৩৬৫০০০ দর্শক। মানে বছরে চার লক্ষের কম। বহু দর্শক একই নাটক বহুবার দেখে আবার এই দর্শকরাই বছরে তিন চারটা প্রদর্শনী দেখে। বছরে একজন দর্শক যদি ৪টা দলের ৪টা নাটক দেখে, তাহলে ঢাকা শহরের নাটক দেখার মূল দর্শক সংখ্যা খুব বাড়িয়ে বললে একলক্ষের কম।
সত্যিকার হিসেবে এটা পঞ্চাশ-ষাট হাজারের বেশি হবে না। ঢাকা শহরের লোক সংখ্যা কত? দুই কোটির বেশি। যার অর্থ দাঁড়ায় তার মধ্যে ১ শতাংশ লোকও নাটক দেখে না। তাহলে মাত্র এই ১ শতাংশেরও কম দর্শকের জন্য জনগণের এই করের টাকা খরচ করা কেন? শিল্পকলা একাডেমির বাৎসরিক ব্যয় কত? বছরে চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার বা এক লক্ষ লোকের পিছনে এই টাকাটা খরচ করার ফায়দা কি তবে? নাটক মঞ্চায়ন করে সত্যিকার অর্থে ১৮ কোটি জনগণের লাভ কি হয়?
নাটক করে বাংলাদেশের জন্য কী সম্মান বয়ে এনেছেন নাট্যজগতের লোকরা? বাংলাদেশের মঞ্চের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের কারো লেখা নাটক কি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বা বিশ্বসাহিত্যে স্থান পেয়েছে? এমন তথ্য আছে কি এই নাটকগুলো বিশ্বমানের? প্রাচীন গ্রীসের নাটক, শেক্সপিয়ারের নাটক, গলসওয়ার্দি, ইবসেন, ব্রেশট প্রমুখের নাটক বিশ্বসাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সেইসব নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। দুই হাজার বছর আগের লেখা প্রাচীন গ্রীসের নাটক এখনো সমান তালে মঞ্চস্থ হচ্ছে। বাংলাদেশের কারো নাটক কি তা পেরেছে, সেই সম্মান অর্জন করতে?
নাটক লেখা হবার ক’বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের নাট্যকারদের সেই সব নাটকের মৃত্যু ঘটে? পাশ্চাত্যের নাটক সারা বিশ্বে মঞ্চস্থ হচ্ছে, মানুষ পাঠও করছে; এমন মানের নাটক কি আছে বাংলাদেশে? প্রাচীন গ্রীসের নাটক আজও মঞ্চস্থ হয় সারাবিশ্বে, ইবসেন, আর্থার মিলার, গলসওয়ার্দি, শেক্সপিয়ার ব্রেশটের লেখা নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে দুনিয়া জুড়ে। বাংলাদেশের কারো ক্ষেত্রে কি এমনটা ঘটেছে বা ঘটার সম্ভাবনা আছে? বাংলাদেশে কি দশ বিশ বছর পার হলে আর তাদের নাটক মঞ্চস্থ করে কেউ, নাকি কেউ নাম জানে? দু’একটা ব্যতিক্রম ছাড়া নিজের দলের বাইরেই এসব নাটক মঞ্চস্থ হয় না। হলেও তা রচনার ত্রিশ বছর পর আর জনসমক্ষে আলোচিত হতে দেখা যায় না।
স্বাধীনতার পর পর যারা নাট্যকার হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাঁদের সেই সময়ের নাটক কি এখন মঞ্চস্থ হয়? তাদের আর কারো রচনা বা নাটকগুলো কি সাহিত্যজগতে স্থান করে নিতে পেরেছে? সেলিম আল দীন নামান্য কিছুটা পেরেছেন মাত্র। বাকিদের কারো নাটক গুরুত্ব পায় কি? মানুষ কি সেগুলোর নাম স্মরণ করতে পারে? নাট্যকর্মীরাই সবাই জানে তাদের রচিত সব নাটকের নাম? নাট্যচর্চা বা নাট্য আন্দোলন বিচার হবে কী দিয়ে? গায়ের জোরে নাকি কর্ম দিয়ে? নিজেকে কেউ একজন নাট্য ব্যক্তিত্ব বলে পরিচয় দিল বা তার অনুসারীরা তাঁকে বিরাট নাট্যকার কিংবা নাট্য নির্দেশক বা নাট্যব্যক্তিত্ব বললেই সেটা মেনে নিতে হবে? নাকি সামগ্রিকভাবে তার কাজ দিয়েই তাকে বিচার করতে হবে?
দু’একটা ব্যতিক্রম বাদ দিলে বাংলাদেশের নাট্য ব্যক্তিত্বরা কি এমন মহান কর্ম রেখে গেছেন, যার কারণে মানুষ তাদের বছরের পর বছর স্মরণ করবে? মৃত্যুর দশ বছরের মধ্যে এদের আর খোঁজ থাকবে না এমন বড় মাপের লোক ওনারা।
কর্ম দিয়ে বিচার করলে বাংলাদেশে কে সেই নাট্যব্যক্তিত্ব যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সর্বক্ষেত্রে? নাট্যকলা বা নাটক প্রথমত একটা শিল্পকলা ও একটা মতাদর্শ। য়্যারিস্টটল নাটক নিয়ে আলোচনা করেছেন দু হাজার বছর আগে যা আজকেও নাট্যকলার ক্ষেত্রে আলোচিত। পরে এমিল জোলা, রম্যাঁ রল্যাঁ, ব্রেশট সহ বহুজন বহুরকম মতাদর্শ সামনে এনেছেন। সকলেই তারা নানারকম মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন। নাট্য মঞ্চায়ন নিয়ে বহুরকম বিতর্ক চলছে। বাংলাদেশে সেই ব্যক্তিটি কে যার এসব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ও লেখালেখি আছে?
যিনি হুঁ হ্যাঁ না করে নাট্যচিন্তার জগতে প্রতিটি প্রশ্ন নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য রাখতে পারেন। ধরা যাক বাংলার উৎপল দত্তের কথা। যিনি নাটক লিখেছেন, নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন, নাটকে অভিনয় করেছেন, নাটকের পত্রিকা প্রকাশ করেছেন, নাট্যতত্ত্ব নিয়ে বহু বাস্তবসম্মত গ্রন্থ রচনা করেছেন, জনগণের সঙ্গে আবার মাঠে-ময়দানে রাজনীতি করেছেন। যার বহু কর্ম বা প্রযোজনা বাংলা মঞ্চ নাটকে মাইল ফলক হয়ে আছে। আমাদের নাট্যজগতে এমন দিকপাল বা নাটক নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবার মতন কেউ আছেন কি?
বহু মানুষ উৎপল দত্তের রচনা পড়েই নাটক কী তা সহজে বুঝতে পারে। তিনি শুধু একজন নাট্যব্যক্তিত্ব নন, বড় মাপের একজন শিক্ষক এবং একজন বিপ্লবী রাজনীতিক। সেইরকম মানুষের পিছনে টাকা ঢাললে পুরো জাতি উপকৃত হয়। কারণ তার নাটক ও নাট্য সম্পর্কিত রচনা পাঠ করে, তার অভিনয় দেখে বা শুনে বহু কিছু শিখবার আছে। বহুকাল মানুষ শিখবে তার রচনা থেকে, কর্ম থেকে। শুধু নাটক সম্পর্কে নয়, জনগণের প্রতি নাট্যকর্মীর দায় কী সেটাও জানতে পারবে।
প্রাচীন গ্রীসের সকল নাট্যকার, প্রাচীন রোমের নাট্যকার সেনেকা, শেক্সপিয়ার, ইবসেন, ব্রেশট এরা শুধুমাত্র নাট্যকার নন, এক একজন দার্শনিক। বাংলাদেশে তেমন কেউ আছেন? দার্শনিক বা দর্শন ছাড়া কি কোনো আন্দোলন হয়? বাংলাদেশে এই যে নাট্য আন্দোলন বলে একটা কথা আছে সেটাই বা আসলে কী জিনিস? কারো কাছে কি তা পরিষ্কার? খুব বড় বড় কথা হয় এই আন্দোলন নিয়ে, আসলে তারপর ঘটে কী? নাট্য আন্দোলনের নামে এইসব হচ্ছে আসলে অন্ধকে উচ্চ আদালত দেখানো। সত্যি বলতে যে দেশে নিয়মিত নাটকই হয় না, সেই দেশে নাট্য আন্দোলনটা কী বস্তু?
কারো কি সেটা বুঝিয়ে বলবার ক্ষমতা আছে? এই নাট্য আন্দোলটা আসলে কীসের জন্য? এই তথাকথিত আন্দোলনের লক্ষ্যটা কী? কাদের বিরুদ্ধে কোন সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এই নাট্য আন্দোলন? বাংলাদেশের রাজধানীতে এবং সারাদেশে বছরে কয়টা নাটকের প্রদর্শনী হয় এরা কি নিজেরা তা বলতে পারবে? কয়টা দল নাটক করে এবং কী নাটক করে সে পরিসংখ্যান কি আছে তাদের কারো কাছে? সত্যি কি নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন হয় এই দেশে? নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন বলতে আসলে কী বোঝায়?
আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তথাকথিত কিছু দল মাঝে মধ্যে যেসব নাটক মঞ্চস্থ করে সেগুলোকে কি নাটক বলা যাবে? নাটক, নির্দেশনা, অভিনয়, উচ্চারণ, পাত্রপাত্রীদের কণ্ঠ প্রক্ষেপন মিলিয়ে কি সেগুলোকে নাটক বলে বিবেচনা করা যায়? ধরে কি নিতে হবে এই নাটকগুলোই মঞ্চায়ন করার জন্য এই নাট্য আন্দোলন? আর সেইসব দলের এইসব নাট্য প্রতিভারাই হচ্ছে সেই আন্দোলনের সদস্য?
যুক্তরাষ্ট্রের ব্রডওয়ে, লণ্ডনের ওয়েস্ট অ্যান্ড এ চল্লিশটার মতন করে নাট্যালয় রয়েছে। এই আশিটির মতন নাট্যালয়ের প্রতিটিতে সপ্তাহের ৬ দিনে ৮টি করে প্রদর্শনী হয়। সপ্তাহে একদিন বন্ধ থাকে। সেখানে কোনো একটি নাটক একনাগাড়ে ২৭ বছর ধরে মঞ্চস্থ হয়েছে। কোনো নাটক পঁয়ষট্টি বছর ধরে চলছে। সবগুলো প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ থাকে দর্শকে, অনেক নাটক দেখার জন্য দুমাস থেকে ছয় মাস আগে প্রবেশপত্র কিনে রাখতে হয়। সেখানে বছরের পর বছর ধরে ধ্রুপদী নাটক মঞ্চস্থ হয়, সঙ্গীতবহুল নাটক হয়; নতুন নাট্যকারদের রচিত নাটকও মঞ্চস্থ হয়। কিন্তু কখনো তারা বলে না তারা নাট্য আন্দোলন করছে।
অথচ তারা সত্যিই নিয়মিত নাটক করছে। নাটক করা নিয়ে তাদের সামান্য আস্ফালন নেই। বাংলাদেশের নাট্যজগতের আন্দোলনকারীরা নাটক করছে না, কিন্তু বলে থাকে যে নাট্য আন্দোলন করছে। নাটক বাদ দিয়ে নাট্য আন্দোলন! বাহ! ব্রডওয়েতে এবং লন্ডন ওয়েস্ট এন্ড-এ, দুই জায়গাতেই বছরে ষোল হাজারের বেশি প্রদর্শনী হয়। বহু এলাকা আছে সেখানে আরো নাটক মঞ্চায়নের। ব্রডওয়ের একদা একটা দলের নাম ছিল "গ্রুপ থিয়েটার"। নাটক করে যারা সুনাম অর্জন করেছিল কিছুটা। কিন্তু দলটা টেকেনি বেশি দিন।
বাংলাদেশ এখন বুঝে না বুঝে সেই "গ্রুপ থিয়েটার" নামটা কেনাবেচা করছে। যদি ব্রডওয়েতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, গ্রুপ থিয়েটার চর্চা কী বা গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন কী, প্রশ্নটা শুনে তারা হা করে তাকিয়ে থাকবে। বহু সময় চলে যাবে তাদেরকে বোঝাতে গ্রুপ থিয়েটার নাট্যচর্চা কী আর গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন কী। `মা জানে না মামার বাড়ির খবর`, জানে কেবল বাংলাদেশের নাট্যদলের নেতারা; নাটক ছাড়াই যারানাট্য আন্দোলন করে চলছে বছরের পর বছর ধরে। বর্তমান সরকার বা এই দেশের জনগণ এই রকম ধোঁয়াশে, অকার্যকর এবং জনবিচ্ছিন্ন বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি করা নাটকের পিছনে টাকা ঢালবে কেন? সরকার এ রকম নাটককে পৃষ্ঠপোষকতা দেবে কেন? বৃহত্তর জনগণের যে নাট্যচর্চায় অংশগ্রহণ নেই, যে নাট্যচর্চা তাদের পক্ষে নয়, সে নাটক হলো কি না হলো তাতে জনগণের কী আসে যায়? নাটক করে যদি জনগণের স্বার্থরক্ষা না হয়, তাহলে কেন নাটকের পিছনে সরকার টাকা খরচা করবে? কী কারণে বা কোন যুক্তিতে? টাকাটা তো জনগণের।
জনগণের মাথায় কাঠাল ভেঙে নাটক করে বিগত সরকারের কিছু লাভ হয়েছিল সেটা সত্যি। কারণ নাটকের জগতের লোকরা নাট্যচর্চার নামে বিগত সরকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে। সরকারকে টিকিয়ে রাখতে নানা কর্মকাণ্ড করেছে। বিগত সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য নানারকম দায়িত্ব পালন করেছে নাট্যচর্চার নামে। সরকারের চাটুকারি করেছে, সরকারের উন্নয়নের গল্প বলেছে। নাটকের কাজ কি জনগণের টাকা ব্যয় করে সরকারের চাটুকারি করা? জনগণের টাকায় বিগত সরকার নাট্য দলগুলোর সেবা পেয়েছে। দলগুলোও নানারকম আর্থিক সুবিধা নিয়েছে। যারা নেয়নি, তাদেরকে এ আলোচনায় রাখছি না। কিন্তু জনগণের টাকা খরচ করে ১৮ কোটির মধ্যে ১২ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকরা কি পেয়েছে?
এটা কি হতে পারে একটা রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য বা একটা সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য নাট্যচর্চার নামে কতগুলো টাকা ব্যয় করতে হবে জনগণকে? ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ তা করতেই পারে, তাতে আপত্তি করার কিছু নেই। বিশেষএকটি রাজনৈতিক দল তার দলের টাকায় নাট্যদল পুষতেই পারে, কিন্তু জনগণের টাকায় এসব করা একটা অপরাধ। শিল্পকলা একাডেমিতে এরকম ভয়াবহ সব অপরাধ হয়ে এসেছে গত ১৫ বছর ধরে। কিন্তু কারো সাহস হয়নি তার বিরুদ্ধে কথা বলার।
বিভিন্ন নাট্যদল বা তাদের কর্মীরা লিখেছে ফেসবুকে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জামিল আহমেদ সম্পর্কে। শিল্পকলার মহাপরিচালক জামিল আহমেদকে বিগত সরকারের আমলে বিশ লাখ, পঁচিশ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে নাটক করার জন্য। প্রশ্ন কি কারণে তা দেওয়া হয়েছিল? তাকে এত বেশি টাকা বা একসঙ্গে অনেক দিন মিলনায়তন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কী কারণে? নাটকের কোন স্বার্থে? বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় তার সংগ্রামটা কী? তার অবদান কী? যে কারণে সেই কেবল এই অধিক পরিমাণ টাকা পাবে? সেটা কোন্ নিয়মে?
যারা বছরের পর বছর ধরে নাটক করছে, সেই দলগুলো না পেলে জামিল আহমেদ পাবেন কোন্ শর্তে? নাটকের কয়টা প্রদর্শনী করেছে সে এই টাকার বিনিময়ে? কজন দর্শক দেখেছে তার নাটক? সেই নাটক মঞ্চায়নে জনগণের কী লাভ হয়েছে? জামিল আহমেদের এই নাটক দেখে দর্শকের অনুভূতি কী? মঞ্চে লম্ফঝম্প করা নাটক নয়। নাটকটা দর্শকের মনঃপূত হলে নাটকগুলোর অনেক প্রদর্শনী হতো, কয়েক বছর ধরে চলতো। দর্শকের চাহিদা থাকতো। জামিল আহমেদের মঞ্চায়িত নাটকের কি সেই দর্শক চাহিদা ছিল? নাটক মঞ্চায়নের পর জামিল আহমেদ কি তখন সেই টাকার হিসাব দিয়েছে? শিল্পকলার কাগজপত্র অনুসন্ধান করে দেখা হোক, সেই টাকার হিসাব আছে কিনা। কত টাকা কীভাবে খরচ করেছেন তিনি, তার হিসাব চাইবার অধিকার আছে সকলের। যদি তিনি সৎ লোক হন সবার আগে সেই হিসাবগুলো দেবেন।
জামিল আহমেদ বিগত সরকারের সুবিধাভোগী। কিন্তু এই সরকারের আমলেও সুবিধা পেয়েছেন ও নিয়েছেন। সুবিধা পেয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হয়েছেন। যদি তার আত্মসম্মানবোধ থাকতো, ন্যায়বোধ থাকতো তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার তাঁকে এই দায়িত্ব দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করতেন। তিনি বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছিলেন না। বরং সরকার এবং লিয়াকত আলি লাকীর সঙ্গেই ছিলেন। যখন ৩ আগস্ট সামরিক বাহিনী হাসিনার পিছন থেকে সরে দাঁড়ায়, জামিল তখন বুঝতে পারেন এই হাসিনা সরকার টিকবে না। সেই দিন রাত্রেই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
বিগত সরকারের পতন হয়। কিছু লোক যারা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ঠিকই, কিন্তু নিজেদের স্বার্থে আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ও শহিদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে জামিল আহমেদকে শিল্পকলার পরিচালক করার জন্য ওকালতি করেন। পিছন থেকে ছুরি মারেন আন্দোলনকে। জামিল আহমেদ নির্দ্বিধায় এই সুযোগটা লুফে নেয়। নাটকের লোকরা মনে করেন, বিরাট মহান কাজ করে ফেলেছেন তারা। জামিল শিল্পকলার মহাপরিচালক হয়ে তাদের সব সমস্যার সমাধান করে তাদের স্বার্থে মঞ্চনাটকে বিপ্লব আনবেন।
বিগত সরকারের পক্ষের বিপুল সংখ্যক নাট্যকর্মী ও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কিছু নাট্যকর্মীর আহুত সভায় জামিল বলেন, আমি শিল্পকলার ডিজি হলে মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবো। কিন্তু জামিল সেদিন নিজের দৌড় জানতেন না, মামনুর রশীদ নিজেও সেসময়ে তার প্রকৃত অবস্থাটা বুঝতে পারেননি। জামিল শিল্পকলায় যোগদান করে এখানে হাসিনার সমর্থকদের নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু মামুনুর রশীদকে নিয়ে আপত্তি ওঠে আন্দোলনকারীদের মধ্যে। তাঁদের প্রশ্ন, পুরো সময়টা যে হাসিনা সরকারের দালালী করেছে তার জায়গা হয় কী করে শিল্পকলায়। হাসিনার পতনের পর যিনি আনুতপ্ত হননি, বরং তিনি বিগত সরকারের লোক রয়ে গেছেন। ফলে মামুনকে নিষিদ্ধ করা হলো।
স্বভাবতই জামিল আহমেদের মুখোস এবার বের হলো। জামিলের কোনটা দরকার শিল্পকলার চেয়ার, নাকি মামুনুর রশীদের সঙ্গে তার পুরানো সখ্যতা রক্ষা করা। হাসিনার পক্ষের শক্তি জামিল যখন হাসিনার দুর্দিন দেখে কেটে পড়েছিলেন, তার কাছে নীতি আশা করা যায় না। এটা স্পষ্ট সে ব্যক্তিগত সুবিধাই চাইবে। ফলে মামুনুর রশীদকে শেষ পর্যন্ত জামিলকে বলতে হলো, আপনি কিছু দিন নাটকে অভিনয় করা থেকে বিরত থাকুন। মামুনুর রশীদ ক্ষুব্ধ, তা ফাঁস করে দিলেন। মহান জামিল আর মহান মামুনুর রশীদের চিন্তার দৌড় বুঝতে কারো অসুবিধা হলো না। সবার এখন তাই মাথা গরম! হাসিনার পক্ষের একজন লোক যদি সুবিধা নিতে এই সরকারের কোনো পদে বসে, শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি এমনই হবার কথা। সকলের পূজনীয় মহান জামিল আহমেদ এখন সকলের শ্লেষের পাত্র, অতিলোভে কখনো কখনো এমনটাই হয়। জামিল অন্যায় সুবিধা নিতে অভ্যেস্ত সেটা আগেই জানা গিয়েছিল, যখন লাকির মতন দুর্নীতিবাজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি বহু টাকা নিয়ে নাটক করেছেন। কিন্তু নাট্যকর্মীরা বহুকাল সেই জামিলের পূজা দিয়ে এসেছেন।
শিল্পকলার মহাপরিচালক মামুনুর রশীদকে যে কথাটা বলেছে, সেটা শত্রু হিসেবে বলেননি। বলেছেন মামুনুর রশীদের বন্ধু হিসেবে। কারণ নিজে বিগত সরকারের পক্ষে থেকে বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হলেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনার বাইরে গিয়ে মামুনুর রশীদকে নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষমতা জামিল আহমেদের নেই। নিজের চাকরিটাই তার নড়েবড়ে। জামিল যদি পদ বা ক্ষমতালোভী না হতেন, চাকরিটা ছেড়ে দিতেন। সমস্যার সেটা ছিল সহজ সমাধন। হয়তো একটা সময় আরো অসম্মানিত হয়ে চাকরিটা ছাড়তেও হতে পারে তাঁকে, সকল দিকের ক্রোধের শিকার হয়ে । ভিন্ন দিকে জামিল আহমেদ মামুনুর রশীদকে যা বলেছেন, সেটা মামুনুর রশীদের কর্মফল। জামিল কেন, অন্য মহাপরিচালকরাও তাই করতেন। মামুনুর রশীদকে বলতেন, এখন আপনি মঞ্চের অভিনয় থেকে দূরে থাকুন। মামুনুর রশীদের পাওনা এটা। কারণ এটা তো স্পষ্ট, মামুনুর রশীদ জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন, ফলে বর্তমান সরকার তার জন্য লালগালিচা নিয়ে সম্বর্ধনা দিতে বসে থাকবে না।
মামুনুর রশীদ সেটা আশাই বা করেন কী করে? মামুনুর রশীদ অসম্মানিত হলেন নিজের লোভে, ঠিক যেমন জামিল। মামুনুর রশীদ বিগত সরকারের সময় নেতা ছিলেন, এবারেও এই সময়ে সুযোগ বুঝে নেতা হতে চাইলেন। এই সরকারের কাছে সুবিধা নিতে চাইলেন। তিনি লোভ না করে চুপচাপ থাকলেই পারতেন। বহুজন কিন্তু তাই আছেন। বর্তমান সরকার কেন মামুনুর রশীদকে জায়গা দেবে, তিনি কি তাদের বন্ধু? মামুনুর রশীদ সাহেবরা কি তাদের সময় বিরোধী পক্ষকে জায়গা দিয়েছিলেন? বিগত সরকার যখন জাতীয়তাবাদী দলকে নির্বাচন করতে দেয়নি, সেই দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে, কারাগারে পাঠিয়ে যা খুশি করে; মামুনুর রশীদের তখন ভূমিকা কী ছিল?
হাসিনাকে খুশি রাখতে তিনি তখন মুহাম্মদ ইউনূসকে সুদখোর বানিয়ে নাটক লিখেছেন, হাসিনা সরকারের কাছ থেকে লিয়াকত আলীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। নাটক করার জন্য শিল্পকলা থেকে টাকা পেয়েছেন। মামুনুর রশীদ শিল্পকলা থেকে টাকা নিয়ে নাটক করেছেন এটা দোষের কিছু নয়। নাটক করার জন্য টাকা তিনি নিতেই পারেন। কিন্তু তিনি নিজেকে একজন নাট্যকার দাবি করেও হাসিনা সরকারের অন্যায় ও লুটপাটের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। মামুনুর রশীদকে ভিসা দেওয়া বন্ধ করেছিল ভারত সরকার। কারণ তিনি বাংলাদেশের অভিনেতাদের সুযোগের প্রশ্নে ভারতের অভিনেতাদের বাংলাদেশে আসা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ভারত সেজন্য তাঁকে ভিসা দেওয়া বন্ধ করলো।
বহু বছর তিনি ভারতের ভিসা পাননি। পরে কারো দয়া নিয়ে ভারতের ভিসা পেলেন মাত্র এক বছর আগে। তিনি কি জনগণের পক্ষে ছিলেন নাট্যজগতের লোক হিসেবে? যদি থাকতেন, তাহলে নিশ্চয় আজ লালগালিচা সম্বর্ধনা পেতেন। কিন্তু গত ১৫ বছর তিনি বিশেষ দলের এবং বিশেষ সরকারের চাটুকারিতা করেছেন। তিনি হাসিনার হত্যাযজ্ঞের সময় পর্যন্ত প্রতিবাদ না করে হাসিনার পক্ষে ছিলেন। পরেও কখনো হাসিনার এইসব কর্মের সমালোচনা করেননি। নিজের কর্মের জন্য অনুতপ্ত হননি। তাহলে আন্দোলনকারী বর্তমান তরুণ সমাজ কী কারণে তাঁকে সম্মান দেখাবে? তিনি সেটা আশা করেন কী করে? তিনি নাটক করেছেন, নিজের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের জন্য। মুখে বড় বড় বুলি আওড়ালেও তার মতাদর্শ বলে কিছু ছিল না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মতাতর্শের নামে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন তারা অনেকে মিলে।
বিগত সরকারের আমলে শিল্পকলায় নাটকের নামে যে নানান অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা নাটকের লোকরাই চিৎকার করে দু’তিন বছর ধরে বলেছে। তৎকালীন মহাপরিচালক লাকির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন নিয়ে বিতর্ক-বিরোধ ছিল। পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশ বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সদস্য দলের মধ্যে কজন নিয়মিত নাটক করে? কজন আছে যাদের বছরে ১টা প্রদর্শনী আছে। গ্রুপ থিয়েটার এই শব্টাই অর্থহীন অসঙ্গত, কেউ জানে না গ্রুপ থিয়েটার ব্যাপারটা কী? কিন্তু গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন বানানো হয়েছে, কিছু লোক নেতা সেজে বাকিদের উপর ছড়ি ঘুরাবার জন্য। সদস্য দল আছে কয়েকশো, নাটক করে না কিন্তু গ্রুপ থিয়েটার ফেডারশনের সদস্য। সবটাই নাট্যচর্চার নামে ধান্ধাবাজি। ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধুরাম সর্দার।
সব নাট্যনেতারা লাকির পদলেহন করেছে, তার অপরাধের একটা বিচার করার বা অন্যায়ের প্রতিকার করার সাহস হয়নি কারো? এখন তাদের কণ্ঠে উচ্চস্বরে কত চিৎকার? যতসব বেড়ালের কণ্ঠে বাঘের হুঙ্কার। সবার হুঙ্কার দেখা আছে লাকির আমলে। লাকি ও গ্রুপ থিয়েটারের তখনকার কমিটির অন্যায় সহ্য করতে না পেরে যখন ঢাকা থিয়েটার নিজের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে, তখন মামুনুর রশীদসহ সকলের ভূমিকা কী ছিল? বাকিরা কি তখন লাকির অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন? যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভিতর দিয়ে লাকির পতন হয়েছে, ওনাদের হঙ্কার আস্ফালন বেড়েছে। সবাই এখন ফেডারেশনের নেতা হবার জন্য নীতি বিসর্জন দিয়ে হামলে পড়েছেন। মামুনুর রশীদ তার অন্যতম একজন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন না হলে কি লাকি ক্ষমতা ছাড়তো? মামুনুর রশীদ কি ফেডারেশনের হয়ে আস্ফালন করতে পারতেন তখন লাকির সামনে দাঁড়িয়ে?
নাট্য ইতিহাস নিয়ে আলোচনা আরম্ভ করলে সবার মুখোস খসে পড়বে। কিন্তু মৃত অশ্বদের নিয়ে খুব মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। মানুষ আস্ফালন করে টিকে থাকতে পারে না। ইতিহাস কীভাবে তাদের বিচার করবে সেটাই বড় কথা। টিকতে হবে কর্ম দিয়েই,যার যা কর্ম তার তা ফল লাভ হবে। যারা সত্যিকারের নাট্যচর্চায় নিজেদের নিবেদিত করতে চান, পুরান সবকিছু ঝেড়ে ফেলে তাদেরকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। সকল জনবিচ্ছন্ন নাট্যচর্চার ভবিষ্যত হবে দর্শক শূন্য মিলনায়তন। সৃষ্টিশীল কর্ম ছাড়া নাটক আগাতে পারবে না। সৃষ্টিশীল কর্ম মানে কিছু সস্তা শ্লোগান নয়। উঁচুমানের নাট্যসাহিত্য ছাড়া নাট্যশিল্প দাঁড়াতে পারে না, তার সঙ্গে প্রথম দরকার হবে বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়। নাটকের দর্শক হবে বৃহত্তর সাধারণ জনগণ। মন্ত্রণালয়ের ভিক্ষার উপর নির্ভর না করে, নাট্যচর্চা টিকিয়ে রাখার জন্য দর্শকের উপর নির্ভর করতে হবে। দর্শক পেতে চাইলে ‘মন্ত্রাস’ ও ‘রিজওয়ান’র মতন দুর্বোধ্য নাটক করলে চলবে না, দরকার হবে ‘নৃত্যপুরাণ’র মতন উত্তেজনাপূর্ণ নাটক।
ফাঁকিবাজি করলে লাভ নাই, নিজেকে বিরাট কিছু প্রমাণ করতে চাইলে লাভ নাই। নাটকের গল্প, চরিত্র সংলাপ দর্শকের ভালো লাগতে হবে। টাকা বেশি খরচ করে দুর্বোধ্য নাটক করলে বেশি দর্শক আসবে না, শহুরে ভণ্ড কজন ভদ্রলোক তা দেখে হাততালি দিতে পারে মাত্র। দর্শক প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করে নাটকে সহজবোধ্য এবং উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার জন্য। দর্শক বসে থাকবে দ্বন্দ্ববহুল চরিত্রের নানা বৈপরীত্য বুঝবার জন্য। বিশ্বের বড় নাট্যকাররা, বিভিন্ন নাট্যদল সেভাবেই সাফল্য পেয়েছে।
লেখক: সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ