বই পড়াই আমাদের নিয়তি
প্রাচ্য তাহেরপ্রকাশিত : জানুয়ারি ২৮, ২০১৮
বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকুই বা আমরা জানি? নিজেকে ও এই জগৎকে জানার আগ্রহ মানুষের চির দিনের। এ আকাঙ্ক্ষা কীভাবে মানুষ মেটাতে পারে? বলা হয়, এজন্য ভ্রমণ করো, নইলে বই পড়ো। দুনিয়া ভ্রমণের ফুরসত আর অর্থ কোথায়? সুতরাং বই পড়াই যে আমাদের নিয়তি!
আজকের দিনে প্রযুক্তির কল্যাণে অন্যান্য জিনিসের মতো বইও সহজলভ্য হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বই বিনামূল্যে না পেলেও ইন্টারনেটে টাকা দিয়ে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের নিত্যসঙ্গী মোবাইলেও বই পড়া যাচ্ছে। কিন্তু এরপরও পড়ার অবস্থা কেমন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমাদের পাঠাভ্যাস কমার জন্য হয়তো ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি এককভাবে দায়ী নয়। তবু এগুলো যে অন্যতম কারণম সেটা সবাই বলবেন। পাঁচ-ছয় বছর আগেও অনেকেই হয়তো বিনোদনের উপায় হিসেবে বই পড়েছে। এখন সে জায়গাটা অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক কিংবা ইন্টারনেট দখল করে নিয়েছে। এছাড়া টিভি চ্যানেলসহ বিনোদনের আরও নানা উপকরণ মানুষের হাতের মুঠোয় এসেছে। অনেকেই সেগুলোতে ঝুঁকছে।
কারও কারও ক্ষেত্রে এসব নেশাও হয়ে গেছে। এসব কেবল পাঠাভ্যাসের ওপরই প্রভাব ফেলে না, বইয়ের ওপরও প্রভাব ফেলছে। এ সময়ে লেখকরা বই লিখলে প্রকাশকরা ছাপতে চায় না। ছাপলেও অনেক সময় পারিশ্রমিক দিতে চায় না। একই কারণে আমরা দেখছি, প্রকাশকরা লেখক নন এমন লেখকের বইও টাকা দিয়ে ছাপছে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে তাকালে আমরা দেখি, একাডেমিক মূল বইয়ের চেয়ে এখন নোট-গাইড-শিটের প্রাধান্যই বেশি। শ্রেণিকক্ষের তুলনায় যেমন প্রাধান্য কোচিং-প্রাইভেটের। যেখানে শিক্ষাব্যবস্থায় জ্ঞানার্জনের তুলনায় পাস আর ভালো রেজাল্টই মুখ্য, সেখানে আমাদের পাঠাভ্যাস কেমন হবে তা বলাই বাহুল্য। অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পরও এখন পড়তে হয়। তবে সেটা চাকরির পড়া। এখন অনেক লাইব্রেরিতে গেলেই আশ্চর্যজনকভাবে নজরে পড়বে চাকরিপ্রার্থীদের ভিড়।
আজকের ইন্টারনেট দুনিয়া বলেই নয়, বাঙালির পাঠাভ্যাস নিয়ে অনেক আগ থেকেই সমালোচনা রয়েছে। সুসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর বই কেনা প্রবন্ধে এ বিষয়ে চমৎকারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এরপরও আশান্বিত হওয়ার অনেক বিষয় রয়েছে। এখনও আমরা পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার কথা শুনি, অনেক জায়গায় নানা উদ্যোগে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা হয়েছে, হচ্ছে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিজুড়ে বইমেলা হয় এবং সে উপলক্ষে হাজার হাজার বই প্রকাশ হয়। এখনও সংবাদপত্রে পাঠকরা লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখে।
আমরা জানি, এ আবেদন চিরন্তন। হয়তো পাঠাভ্যাস কমা-বাড়া নিয়ে কথা হতে পারে, কিন্তু বইয়ের আবেদন অস্বীকার করা যাবে না।