বই ছাপতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ গাছ
এস এম শাহরুখ পিকলুপ্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে টিভি চালু করে, রিমোটের কান মলে মলে হাজির হলাম প্রখ্যাত একটা বাংলা নিউজ চ্যানেলে। সেখানে সুন্দরী এক উপস্থাপিকা ও সঙ্গের আলোচক একুশে বইমেলা নিয়ে বাতচিত করছে। এরই ফাঁকে ফাঁকে বইমেলার ভিডিও ফুটেজ দ্যাখানো হচ্ছিলো। তাদের আলোচনায় শুনলাম, বইয়ের মুদ্রণ, গ্রাফিক্স, প্রচ্ছদ ইত্যাদির অনেক উন্নতি হয়েছে। মানুষজন ঝাপিয়ে পড়েছে বই কিনতে। ঘটনা কি আসলেই তাই?
চার-পাঁচ বছরে আমি এক গাদ্দি বাংলা বই কিনেছি, বাংলাদেশি ও পশ্চিম বাংলার লেখকদের। আমার অভিজ্ঞতা কিন্তু খুব একটা ভালো না। সুন্দর শাদা শাদা কাগজে বইগুলো দেখতে ভালো লাগে। বইয়ের পাতাগুলো চোখ টানে। সৌন্দর্য ওখানেই শেষ। শত শত ভুল বানান, অসমাপ্ত বাক্য, মোবাইলের কল-ড্রপের মতো হঠাৎ হঠাৎ শব্দ-ড্রপ, যার ফলে লেখকের কথা উদ্ধার করতে জান বেরিয়ে যায়। অনেক কষ্ট করে অর্থ উদ্ধার করতে হয়।
এছাড়া শব্দের বানানের বিভিন্নতাও চালু রয়েছে। বাংলা একাডেমির চালু করা বানান ভাষাকে সহজ করেছে হয়তো, কিন্তু একইসঙ্গে চিরায়ত কিছু বানান নতুন রীতিতে অন্যরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এতে পাঠকের মাঝে কনফিউশান সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে ক্রমেই বই-বিমুখ বাঙালির বই-বিমুখতা আরও বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বাংলা বানানের ওপর রীতিমতো স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে। যার যা ইচ্ছা মনগড়া বানানে লিখে যাচ্ছে। এতে মানুষ যে ফেসবুক পোস্ট পড়া বন্ধ করছে তা নয়, ছাপার অক্ষরে ভুল বানান ও ছাপার ক্ষেত্রে প্রুফ রিডিংয়ে অদক্ষতা, অলসতা, যেনতেন প্রকারের ভাব, কম্পোজের ক্ষেত্রে কাজে ফাঁকি ইত্যাদি পাঠককে কাগজের বই থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
শুধু শুধু বইগুলো ছাপতে গিয়ে অকাতরে হাজার হাজার নিরীহ গাছ অকালে প্রাণ দিচ্ছে। আমার মতো বেকার হেতু বইপোকা মানুষ যতটা কষ্ট করে বইয়ের অর্থোদ্ধারের চেষ্টা করি, তা অনেকেই করবে না। যেখানে কীনা স্মার্টফোনে কত শত সুন্দরী মেয়ের `নিখুঁত` ছবি দ্যাখা যায়। বইয়ের শিল্পটা ধসে পড়ার ক্ষেত্রে বইয়ের ছাপার মান বজায়ের বেলায় এ অবহেলা গতি দেবে। এমনিতেই ট্যাবের কাছে এ শিল্প অবধারিত মার খাবে, খাচ্ছেও।
আমার এ অভিযোগ ঢালাওভাবে করছি না। অনেক বই-ই প্রায় নির্ভুল্ভাবে হাতে আসে, কিন্তু তারা বইয়ের বাজারে সংখ্যালঘিষ্ঠ। আর সেই যে বাংলা চ্যানেলের দুজনের আলোচনার কথা বলছিলাম, তাদের বই ও বইমেলা নিয়ে গদ্গদ বাতচিত শুনে এটাই মনে হলো যে, তারা নিজেরা খুব একটা কাগজের বই পড়ে বলে মনে হয় না। তারা সাজগোজ করে বইমেলায় যায় টো টো করতে আর ফুচকা খেতে।
ঢাকা
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮