ফারুক ইমনের ৪ কবিতা
প্রকাশিত : জুলাই ০২, ২০২২
শবনম আমার অসুখ হইছে
উদাসি বানাইয়া দিয়া গেছো,
এহন খালি ছলাত ছলাত
শব্দ করে বুকের সমুদ্দুর!
আন্ধার একখান মেঠোপথ,
জবানে কই,
মুক্ত চুম্বন ছাড়া আর
করি নাই কোনও অপরাধ!
তবু চুপ হয়ে গেলে
জ্বলে আমার ঠিকই জ্বলে!
আমি অবোধ,
একটু কাছে দাড়াও
আমার সহ্য হয় না রোদ।
যে কথা মাটি জানে
আর সব শীত, সব কোয়াসা বাতাস,
বৃষ্টি এলে হারিয়ে যাবে।
সব ধুলো বালি সাগরে পথ
খুঁজবে। আমি কিন্তু নিরন্তন
এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি। জোনাকিরা,
কোকিলেরা আমায় রোজ বসন্তে দেখে,
দেখা হয় আমাদের- শীতের সাথে
রোদের সাথে, তীব্র তাপদাহের সাথে
মিতালী হয়নি! আমরা কেবল
মাটির সাথে সম্পর্ক করতে
পেরেছিলাম। মাটিকে ভালোবেসে,
মাটির ভালোবাসা নিয়ে আমরা
এতকাল ঠায় দাঁড়িয়ে। দিনমান
সাপেদের ষড়যন্ত্র দেখি, শীত ঘুম দেখি, দেখি এতসব
তাসের ঘর দোয়ার।
তবে আমরা নিশ্চিত, মাটির কাছে,
আমরা মাটির কাছে সব কথা খুলে
বলেছি।
তুমি, তুমি কোনদিন জানতে পারবে,
জেনে নিও, আমাদের অভিমান,
ভালোবাসার সান্ধ্য পুঁথি।
আমাদের বেদনা, বিদ্রোহ।
মানুষের প্রাণ
হিম হিম কোনও রাতে কেউ কেউ ডানা মেলে
উড়ে উড়ে গহীন আকাশচারী হয়ে উঠে, কপাটগুলো
খুলতে থাকে, বহু পুরাতন প্রাচীন
এরপর প্রসূতি নারীদের পাখায় ভর করে নামে শীত
পালকে অকপট লেগে থাকে আকাশগঙ্গার নিষ্পাপ হিম
যত বেদনা করুণার মতো ঢেলে দিয়ে শুদ্ধ পিতা হয়ে উঠতে চায় পুরুষ
জানাতে চায় তার পাপহীন সময়ের ইতিহাস
কটাক্ষের মতো একটা প্রদ্বীপ জ্বলে
পুড়ে পুড়ে শেষ তার অশেষ জ্বালানি
নীল নীল আবহে একটা মুখস্ত ক্ষুধা ঘুরে বেড়ায়, বয়ে বেড়ায় একটা নগরীর ভার
একটা পরিশিষ্ট নেই বলে একটা বইয়ে জঙ জমে লাঙলের ফলার মতো
খুব সদ্য তাদেরকে ফুলের রেণুর মতো লাগে
জেগে ওঠা চরে হেঁটে ফেরা সারসের ঠোঁটের তাচ্ছিল্যে সে বলে,
যে দেখেনি কোনও দিন মেঠোপথ সোত এই বদ্বীপের প্রাণ নয়।
নেমে আসা শীত পৃথিবীতে দিকে দৌড়ে যায় একেকটা শহরে, একেকটা গ্রামে
দেবতার মতো লেপে যায় মানুষের খুব কাছ দিয়ে
আর একদিন জ্যৈষ্ঠের মতো লেপ্টে থাকে মানুষের কলিজায়, অনেক যুগ-কাল
ভরপুর লোকগাথা হয়। প্রাণ হয় মানুষের।
নাগরিক মেয়ে
নাগরিক মেয়ে,
হাসলে কেন
আমার চোখে চেয়ে।
শালিক বসলে ডালে,
আমি ডাকি পাখির তালে তালে;
হেরে গেছি,
জিতে গেছি,
তুমি ছড়িয়ে গেছো ভুবনে-
পাতালে।
বোকা হাসি হাসি সন্ধ্যা সকালে,
আমি ডাকি পাখির তালে তালে;
মরে গেছি,
বেঁচে আছি,
তুমি ছড়িয়ে গেছো,
আমার ভুবনে-পাতালে।