ফারহানা শিমু
ফারহানা শিমুর ছয়টি কবিতা
প্রকাশিত : জানুয়ারি ৩১, ২০২১
উড়নচণ্ডি
মনে হয় আবার উড়নচণ্ডি হই
সারাদিন ঘুরে বেড়াই তোমার সাথে।
টিএসসি, কলা ভবন, শাহবাগ...
দুপুরে হাকিম চত্বরের খিচুড়ি, চায়ের আড্ডা।
বিকেলটা ঝাল ঝাল ফুচকা,
কিংবা ঝালমুড়ির আড্ডায় কথার ফুলঝুড়ি।
মনে হয় সব ভুলে আরেকটাবার উড়নচণ্ডি হই
রিকশার হুড ফেলে ঘুরি সারা শহর।
বৃষ্টিতে ভিজে চপচপ হয়ে শিল্পকলার সামনে
টং দোকানে দাঁড়িয়ে রং চা খাই।
মনে হয় আরেকটাবার উড়নচণ্ডি হই
গান আর কবিতার আসর মাতাই,
চারুকলার সেই পণ্ডে বসে ছবি আঁকি।
সন্ধে হলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে আড্ডা দিই।
রাতভর তোমার গান শুনি।
মনে হয় আরেকটাবার উড়নচণ্ডি হই
বাংলা একাডেমির একুশের বইমেলা,
লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে
তোমার হাত ধরে ঘুরে বেড়াই,
কবিতা আর আড্ডায় মাতি।
কী হবে এত দায়িত্ব নিয়ে?
এখন আর দায়িত্ব নিতে ইচ্ছে হয় না,
ইচ্ছে হয় বেহিসেবি হই,
থাকবে না কোনো রাঁধাবাড়ার চিন্তা,
থাকবে না সংসার পুতুলখেলা।
জীবনটা হোক না আজ বহমান সময়ের স্রোত।
বন্দি
তুমি আমার বন্দি দিনের অব্যক্ত অনুভূতি
তুমি আমার অলিখিত গল্প ও কবিতা।
তুমি আমার অজানা গোপন ব্যথা,
অলস দুপুরে হঠাৎ বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে আসা দৃষ্টি।
তুমি আমার বন্দি জীবনের নিভু নিভু প্রদীপ।
তুমি আমার ভীষণ আপন বাস্তবতার কল্পকথা।
তুমি আমার বন্দি দিনের অব্যক্ত অনুভূতি
তুমি আমার অলিখিত গল্প-কবিতা।
একলা রাতে
তোমার এখন কেমন কাটে
একলা রাতে একা একা?
সন্ধ্যা নামার সময়টাতে
কে এখন হয় তোমার পথে সাথি?
কার হাতের আঙুলের ফাঁকে এখন
তোমার আঙুল খেলা করে?
কোন মানুষীর চোখের মাঝে
স্বপ্নগুলো নতুন রঙে সাজে?
রাত্রি যখন খুব গভীর হয়
কার সাথে এখন তুমি গল্প করো?
স্বপ্নগুলো এখন কার আঙিনায়
নতুন করে খেলা করে?
একলা রাতে একা একা
তোমার এখন কেমন কাটে
রাত্রি যখন গভীর হয়?
কার ললাটে নতুন করে
এখন তুমি চুম্বন আঁকো?
সীমান্ত
সীমান্ত তুমি চাইলেই আমাদের গল্প হতো।
কিন্তু হলো না!
কেন? কিসের অভাব ছিল?
কলম না কালির?
তোমার অভাব ছিল খুব বেশি।
একটা ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা
তোমার অপেক্ষাদের অভাবে,
তোমার প্রশস্ত বুকের অভাবে।
তুমি চাইলেই পিচঢালা রাস্তা একটা কবিতা হতো।
শব্দের অভাবে তাও হলো না।
তুমি চাইলে নির্ঘুম রাত একটা গান হতো
হলো না তোমার দেয়া অবহেলার কারণে।
সীমান্ত তুমি চাইলেই আমাদের প্রেম হতো,
একটা ছোট গল্প হতো কিংবা ছন্দহীন কবিতা
তা না হলেও গান হতে পারতো!
হলো না, কিছু অনুভূতির অভাবে।
থমকে গেলাম তুমি আর আমি,
থামিয়ে দিলাম আমাদের চলার গতি।
জীবন রাস্তায় ধুলোজমা চিরকুট
রয়ে গেল ডায়েরীর পাতার ভাঁজে।
আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করার অধিকার হারালাম
আজ থেকে বছর দশেক পরে,
কেমন আছো সীমান্ত? বিয়ে করেছো?
আজকাল আমায় মনে পড়ে গভীর রাতে?
জানো তো, তুমি আমি ছাড়াও
সবাই জেনে গেছিল আমাদের প্রেম হবে না,
গল্প, কবিতা কিংবা গানও হবে না, হবে না কিচ্ছুতেই!
শুধু ভালো লাগা জমে থাকবে ধুলো পড়া স্মৃতির পাতায়।
জানান দেবে আমরা ছিলাম স্মৃতির পাতা জুড়ে!
অপ্রয়োজনীয় অনুভূতির লিস্টে!
সীমান্ত, তুমি চাইলেই আমাদের প্রেম হতো,
একটা ছোট গল্প হতো কিংবা ছন্দহীন কবিতা
তা না হলেও গান হতে পার তো।
সুব্রত
পাগলামি ছেড়ে খাও,
তুমি বড় ছোট্টটি নও,
ছোট হলে তাও মেনে নেয়া যেত।
তাই বুঝি?
আমি না হয় ছোটই থাকলাম,
তোমার আদরটুকু পেতে।
কিন্তু সুব্রত, এই পাগলামিতেও সুখ আছে
তুমি কি জানো?
এই যে চারদিকে মৃত্যু মৃত্যু খেলা শুরু হয়েছে
তার মাঝে আমি যদি তোমার জন্য একটু পাগলামি করি
তাতে কি খুব ক্ষতি হবে?
এই মৃত্যু মৃত্যু খেলা আমার আর ভালো লাগছে না।
আর তুমিও এ ক’দিনে কেমন যেন পাল্টে গেছ!
আগের মতো ফোন দিয়ে আদর দাও না, খুনশুটি করো না,
শুধু বকো, ফোনও ধরো না...
আমার যে কষ্ট হয়, তুমি বোঝো?
আচ্ছা, তুমিও কি মৃত্যু খেলায় মেতেছ সুব্রত?
যে, এমন করে দূরে ঠেলেছ, আড়াল করেছ নিজেকে।
আমার সত্যি এই মৃত্যু মৃত্যু খেলা আর ভালো লাগছে না,
হাঁপিয়ে উঠেছি সুব্রত...
কবে শেষ হবে এই খেলা?
কবে আবার ফিরবে তুমি আমার সেই দুষ্টু লক্ষ্মীমন্ত সুব্রত হয়ে
সুব্রত...
প্রেয়সী
তুমি যদি আমায় কথা দাও
আমি যেমন আছি তেমনি আমাকে
ঘুরতে নিয়ে যাবে দূরে কোথাও
তবে শুধু তোমার প্রেয়সী হবো আমি।
যদি তুমি কথা দাও আমায়,
ফাগুনের প্রথম প্রহরে হলুদ শাড়ি
লাল চুড়ি সুন্দরী রমণীদের
মাঝে তুমি শুধু আমাকেই দেখবে।
শুধু তখনই আমি তোমার প্রিয়া হবো।
যদি কথা দাও তুমি আমায়,
শ্রাবণের ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে শাড়ি
যখন লেপটে থাকবে আমার অঙ্গে,
তখন তুমি অবাক দৃষ্টিতে শুধু
আমায় দেখো,
তাহলেই আমি তোমার প্রিয়া হবো।
যদি তুমি কথা দাও আমায়,
আমি যখন তোমার সামনে আসবো
আমায় চোখের কাজল, কপলে টিপ,
ঠোঁটে রং মেখে চুল বেঁধে নিজেকে
সুন্দর করার প্রতিযোগিতায় নামতে হবে না।
তবেই তোমার প্রেমিকা হবো আমি।
যদি তুমি আমায় কথা দাও,
তোমার কোনো বন্ধুর সাথে তুলনা করে
আমাকে নিজের কাছে হেয় করবে না।
তাবেই আমি শুধু তোমার প্রেয়সী হতে পারি।
যদি তুমি আমাকে কথা দাও,
হঠাৎ কখন রাস্তা পার হবার সময়
বিচলিত হয়ে হয়ে আমি থমকে দাঁড়াই,
তুমি আমাকে না বকে আলতো হতে
আমার হাতটি ধরে পাড় নিয়ে যাবে
আকাশের সীমানায়
তাহলেই শুধু আমি তোমার প্রিয়া হবো।
যদি তুমি আমাকে কথা দাও,
আমার শরীরে ভাঁজ পড়লে,
রেশমী চুলগুলো ঝড়ে গেলেও
তুমি অন্য মেয়েদের মতো আমাকে
যদি তুমি সাজতে না বলো
তবেই শুধু আমি তোমার প্রিয়া হবো।
যদি তুমি আমাকে কথা দাও,
আমার সব সুখ হয়ে দুঃখগুলোকে
দূরে সরিয়ে দেবে তোমার ভালোবাসায়
তাহলেই তোমার প্রিয়া হবো আমি।
যদি তুমি আমাকে কথা দাও,
আমাকে দেয়া কথাগুলো তুমি
কখনো ভুলে যাবে না,
তাহলেই আমি তোমার প্রিয়া হবো।
আর নয়তো তুমি একজন পুরুষ হয়ে থাকবে,
কখনো আমার ভালেবাসার মানুষ হতে পারবে না।
কবি পরিচিতি: ১৯৮২ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। প্রকাশিক কবিতার বই, প্রতীক্ষা ও আকাশের সীমানায়।