ফরিদ সুমন

ফরিদ সুমন

ফরিদ সুমনের ৩ কবিতা

প্রকাশিত : মে ১০, ২০২৩

সহস্র রজনীর খুনোখুনি

 

চলে যাব বলে মনস্থির করলাম। দেখি, এক প্রৌঢ় যুগল
বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে হাসছে আর পরষ্পরের গায়ে ঢলে পড়ছে।
যেন বাদামের খোসা ছাড়ানোর মতো আনন্দের কাজ
পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। পাশেই সিঁড়ির ওপর নত চোখে
বসেছে মাঝ বয়েসী নির্লিপ্ত দম্পতি। ওদের চোখের নিচে
অবসন্ন বিকেল লেগে আছে গাঢ় হয়ে। এভাবে দুটো যুগলের চোখ-মুখে
মেঘ ও রোদের যৌথ ভূমিকা আমাকে ভাবিয়ে তোলে;
তখনই কাঁধের পাশে হেসে ওঠে অদেখা চিত্রকর।
গুপ্ত ঘাতকের মতো সে ফের আসে। সহস্রাব্দজুড়ে শুয়ে থাকা
হৃদয়ের নিথর মমির পাশে রোজ সে গুচ্ছগুচ্ছ গোলাপ রেখে যায়।
চিত্রকরের হাসিতে প্রৌঢ় দম্পতির বয়েস কমতে কমতে তারা একসময়
পানকৌড়ি হয়ে উড়ে যায়। মাঝ বয়েসী নারী ও পুরুষের নির্লিপ্ত বিকেল
ততক্ষণে বরফ হয়ে গেছে এবং আমি—
যেহেতু চলে যাব বলে মনস্থির করেছি, মমির ভেতর থেকে উঠে
এক পশলা স্নিগ্ধ জীবনের দিকে ক্রমাগত হাঁটতে থাকি।
এদিকে...
আমার ছন্দাক্রান্ত পায়ের নিচে রাতভর অজস্র গোলাপ খুন হয়ে যায়।

 

ভিজে যাওয়া গান

 

ভেজা ভেজা চাঁদ ভেজা ফুটপাথ
মেঘের আদর ভেজা জৈষ্ঠ্যের রাত
বালিশের ওম কদমের ঘ্রাণ
কাঁঠালচাঁপার গাছ বুনো মৌতাত

 

কফি পেয়ালায় কাঁপা কাঁপা ঠোঁট
হৃদয় বুঝেছে আজ হৃদয়ের চোট
ভাঙা বুকশেলফ লুকোনো চিঠি
ধুলো জমা ফ্রেম চেনা খুনসুটি।

 

রূপকথা রাত চুপকথা রাত
আদুরে মেঘের জলে ভেজা ফুটপাথ
পর্দার পিঠ জানলার মুখ
মুক্তো দানার গায় হাওয়ার অসুখ

 

ভেজা ল্যাম্পপোস্ট টুপটাপ জল
চুপচাপ অভিমান মন ছলছল।
একা বোকা ব্যালকনি ভেজা ক্যাকটাস
রিনিঝিনি বৃষ্টিমাতাল বাতাস।

 

ফায়ার প্লেসের ধারে প্রার্থনা স্নিগ্ধ রাত

 

আজকাল বড় দ্রুত পূর্ণিমা আসছে
একটার পর একটা, গায়ে গায়ে লেগে যাচ্ছে
জরা-ব্যাধি-মৃত্যুর মতো শ’য়ে শ’য়ে রাত
মিছিলে মুখর হচ্ছে শোকের সেতার।

 

তুমি চাইলে বুলবুল পাখিটাকে গলা টিপে হত্যা করতে পারো
অথবা খুলে দিতে পারো স্ফটিক আকাশ। সেই বুলবুল, যে কিনা
তোমাকে; হিম হয়ে যাওয়া জনপদের আঁধারে
অপেক্ষায় থাকা প্রেমিক ও হত্যাকারী সবাইকে— সমানে
ভালোবেসে ছিল।

 

তোমার ঘরের ছাদে সেঁটে দিতে পারো তারার মজলিস
অথবা যদি মনে করো, আলোতে দম আটকে যাচ্ছে বড়
দুঃখের বুদবুদ উড়িয়ে ঘর কালো করে দাও, তারপর
ফায়ার প্লেসের গভীরে সরসী চোখের তীর ছোঁড়ো
দেখবে, দপ করে নিভে যাচ্ছে আগুন, সেই সাথে উত্তাপ।

 

অজস্র তোতাপাখির মধ্যে দুয়েকটাকে তুমি দেখবে
খুব চঞ্চল। ওরা বাতাসের মধ্য থেকে বাজিয়ে তুলতে পারে
সমুদ্রের গর্জন। ওদের লেবুপাতার মতো নরম সবুজ ডানা
দুপুর ভেদ করে সঞ্চারিত হয় নীল থেকে নীলিমায়।
ওরা অন্যদের থেকে কিছুটা কোমল, প্রার্থনা স্নিগ্ধ।

 

চাইলে বিছানার চাদরে একঝাঁক ক্যামেলিয়া
ফুটিয়ে তুলতে পারো। অনায়াসে।
ঘুমের মন্ত্রে পাপড়ির অসুখ ভিজিয়ে নেওয়া খুব সহজ।

 

চোখের নৈরাজ্য ঘষে ঘষে হাতের তালুতে পড়তে পারো কিনা
কত মানুষ ফুলের দোকানকে কসাইখানা বানিয়েছে কতবার।

 

নিজের সাথে দর কষাকষি করে কেউ জিতে আসতে পারেনি।

না তুমি

না তোতাপাখি
দেয়ালে লেপটে থাকা ছোপছোপ ব্যাধি
তোমাদের কারো জন্যে নয়।