ফরিদ সুমন

ফরিদ সুমন

ফরিদ সুমনের পাঁচটি কবিতা

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৯, ২০২১

যুদ্ধ-টুদ্ধ গোল্লায় যাক

এই যে তোমার পায়ের
লাজরাঙা এই আভাটুকুই
আমাকে ঋদ্ধ করেছে;
করেছে পুরুষ ও যোদ্ধা।

নুপূরলতার পুষ্পশোভায়
ঠোঁট রাখলেই হয়ে উঠি
রঙ ঝিলমিল;
উড়নচণ্ডি প্রজাপতি।

আজকে নাহয় পিঠের ওপর
দীঘল চুলের রূপকথাটা মেলে দিও
যুদ্ধ-টুদ্ধ গোল্লায় যাক;
এবার আমি কবি হবো।

চন্দ্রিমার আয়তন

একেকটি বিস্মিত রাত
কতখানি চন্দ্রিমা ধরে রাখে;
ভেবে ভেবে জোছনা ফুরালো আমার
কেটে গেল অথৈ বর্ষামাস।
স্বনামে চিঠিও লিখেছি তারার কাছে
কোথা থেকে কোথা গেল সেই মৃদু জিজ্ঞাসা
পথঘাট ভুলে সেও কি বিবাগী নাকি?
তুরুপের শেষ তাস চলে গেছে হাত ছেড়ে
প্রতীক্ষাস্নাত চোখেরা তবুও পলক ফেলে না।
নিশিরাতে আকূল হলে মনের ময়না
আবছায়া পাহাড়ের কোলের কাছে
কুয়াশামগ্ন বালিশে আমারও ঘুম আসে না।

জোছনার বনে সাপ

আমি সজ্ঞানে একটা স্বপ্ন দেখেছি কাল
ওটা কি স্বপ্ন ছিল?
বুঝিবা মাটির টানে নতমুখী ঝুরির ভিড়ে
এ আমার নিশীথের অনুতাপ।
প্রকাণ্ড বটের বয়েসী ছায়ার নিচে
কোত্থাও তুমি নেই
ঘুমহীন জোছনার বনে নারী থাকে না
সাপ থাকে, সাপ।
আর
পূর্ণিমা রাতে মুদ্রাহীন জেগে থাকতে থাকতে
তন্দ্রাব্যাকুল শিশিরের কণাগুলো হয়ে যায়
বিষের নহর।

লোকটা পরিব্রাজক হতে পারে

এই যে, যাকে আপনারা এখানে বসিয়ে রেখে গেছেন
সে এখানকার নয়।
অত্র রাজ্যের কোনো বালামে তার নাম-সাকিন পাওয়া যায়নি।
নতমস্তকে বসে থাকা লোকটা দাবিও তুলেছে অদ্ভুত এক;
তার নাকি বুকের ভেতর জেগে আছে রাজার হৃদয়! কী পরিহাস!
নুলো ভিখিরির পোশাকে মৃত আগ্নেয়গিরির খুঁটিনাটি আঁকা আছে তাই
পরিব্রাজক ভাবা যেতে পারে লোকটাকে। তার কপালের শ্রান্ত রেখায়
অজস্র মৃত নদী, বেশুমার বনভূমি আর আহত পাখিদের নাম।
প্রখর কাঁধের দিকে চোখ ফেরালে আপনারা সহজেই দেখতে পাবেন
জলাশয়, নগর এবং প্রত্নসম্পদের দায়ে বন্দরের প্রাচীরে জমে থাকা
সভ্যতার রক্তনিশান। লোকটার বেয়াড়া বয়ান, কিছুই যায়না বোঝা
তাই চলুন তাকে পরিব্রাজক ধরে নিয়ে বাকি কথাটুকু বলি;
অবধারিত মৃত্যুদণ্ড জেনেও কোনোপ্রকার মুক্তির আকুতি ছাড়া
লোকটা শুধুই ধোঁয়া-ওঠা ভাত খেতে চাইছে
আর শুকনো ঠোঁটের খরা ও মহামারী দেখিয়ে বলছে,
আমি ক্ষুধা, জরা ও মৃত্যুকে জয় করতে চেয়েছিলাম।

শেষ বিকেলের চিঠি

তোমার তিলোত্তমা কাঁধে
শেষ কবে রোদ উঠেছিলো মনে আছে?
বোশেখের হাওয়া এসে কোনো রাতে কাঁপিয়েছে
লাজের প্রদীপ; পথ ভুলে ফিরে গেছে চেনা মধুকর।
এত যে শ্রাবণ গেল, শেষ হলো এত হেমন্ত দিন;
আকাশের নীল ছুঁয়ে এত করে সাঁতরালো মেঘ তবু
শেষ কবে উড়েছিল হৃদয়ের কোমল সারস।
সবুজের বুক চিরে কবে জানি ছুটেছিল রুপালি নদী
কোন সাঁঝে জ্বলেছিল বোকা বোকা জোনাকির দল।
মনে আছে? সিঁথির আলপথে হেঁটেছিল সিঁদুর কখন।
শিশিরের সংস্রবে শেষ কবে ভিজেছিল বনভূমি
বেলাশেষে ভিজেছিল দুজনার নয়ন যেমন।