ফরহাদ মজহার
ফরহাদ মজহারের গদ্য ‘ছাত্ররাই জনতার প্রতিনিধি, আর কেউ নয়’
প্রকাশিত : আগস্ট ০৭, ২০২৪
দেখুন, এটা পরিষ্কার বোঝার চেষ্টা করুন, হাসিনার পদত্যাগ ও পলায়নকে গণঅভ্যুত্থানের বিজয় বলে না। সেটা ছিল বিজয়ের লক্ষণ মাত্র। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের বিজয় নয়। ব্যক্তি সরেছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থাই অটল ও অক্ষত রয়েছে। এখন তারাই সকল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাদের বেদিতে ছাত্রনেতৃত্বকে বলি দেবেন না। শুধু ছাত্ররাই ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি। আর কেউ নয়। এই সত্য প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করুন। তাই বারবার ছাত্রনেতৃত্বকে রক্ষার কথা বলে যাচ্ছি।
গণঅভ্যুত্থানের বিজয় তখনই হয়েছে যদি বোঝা যেত ছাত্র-জনতার নেতৃত্বের নির্দেশে বা তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার ঘোষিত হয়েছে। সেটা হয়নি। সেই বিজয় মূহূর্ত আমরা অর্জন করতে পারিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন বিপ্লবী সরকার ঘোষণার সঠিক ক্ষেত্র ছিল শহিদ মিনার বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ। গণভবন বা ক্যান্টনমেন্ট নয়। কিন্তু কিছু মূর্খ, গণবিরোধী এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার সুবিধাভোগীর পরামর্শে ছাত্র নেতৃত্বকে গণভবনে নিয়ে যাওয়া হলো, তাদেরকে সংবিধান, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বোঝানো হলো।। বোঝানো হলো বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনেই ক্ষমতা হস্তান্তর হবে।
ফ্যাসিস্ট শক্তি সংবিধানের দোহাই দিয়ে গণক্ষমতাকে আবার ফ্যাসিস্ট ক্ষমতা অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট সংবিধান ও রাষ্ট্রের অধীনস্থ করে ফেলল। আমরা কলার খোসা হাতে ফিরে এলাম। শিখুন, প্লিজ।
দেখুন, রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রনেতৃত্বের প্রতি অনুগত ছিল। কারণ গণশক্তির প্রতি তারা নতজানু থাকতে বাধ্য। কিন্তু হাসিনার পলায়নের পরপরই জনগণকে সাবধান করা উচিত ছিল যে, পদত্যাগ মানে পতন নয়। আমরা পতন চাই। কিন্তু অনেকের আর তর সইছিল না। তারা সাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নামে ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার হাতে জনগণের ক্ষমতা তুলে দিতে তৎপর হয়ে উঠল।
এখন যখন ক্ষমতার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ কর্মসূচি দিচ্ছে। সেই অধিকার তাদের আছে। কিন্তু যারা ছাত্রদের ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রশক্তি ও ব্যবস্থার প্রতিনিধিদের কাছে নিয়ে গিয়ে তাদের অনুমতিক্রমে সাংবিধানিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের চেষ্টা করেছেন, তাদের জবাবদিহি করতে হবে, তারা কেন এই ষড়যন্ত্র করেছেন। তার আইনি কিম্বা রাজনৈতিক যুক্তি কি? আমাদের বোঝান, সামনে আসুন, ষড়যন্ত্র করবেন না। জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। কেন রাজপথে গড়ে ওঠা জনগণের ক্ষমতা বা গণশক্তিকে ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হলো?
জনগণকে বোকা ভাববেন না। এইজন্যই পদত্যাগ আর পতনের পার্থক্য আপনাদের বোঝাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। প্লিজ, বোঝার চেষ্টা করুন ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ক্ষমতা আগের মতোই বিদ্যমান। এখন ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিদের তাদের সঙ্গেই কথা বলার জন্য তাদের কাছে যেতে হচ্ছে। এখনো ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং তার সহযোগীরাই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
১. অথচ গণভবন রক্ষা না করা, রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা না করা, ভাঙচুর লুটতরাজের জন্য সারাদেশ অরক্ষিত রাখল কে? এইসব পাহারা দেবার দায়িত্ব ছিল কার?
২. হাসিনা যাদের কাছে পদত্যাগ করেছে তারা নৈরাজ্য, ধ্বংস, উচ্ছৃঙ্খলতা, পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ, আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘর পোড়ানো বন্ধ করলো না কেন? আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার দেখুন। এখন এর কি উত্তর দেবেন আপনারা?
দ্রুত নিজেদের আবার সংগঠিত করুন। বলুন, আমরা পদত্যাগ না, পতন চাই। ফ্যাসিস্ট শক্তি ও ব্যবস্থার পতন হয়নি, এইটুকু কাণ্ডজ্ঞান থাকলে বুঝুন এবং দ্রুত জনগণকে সচেতন করুন।
লেখক: কবি ও বুদ্ধিজীবী