পড়ো তোমার প্রভুর নামে
রিফাত বিন সালামপ্রকাশিত : আগস্ট ১৩, ২০১৯
কোরআনের প্রথম শব্দ, ইকরা অর্থাৎ `পড়ো`। এই `পড়া` মানে গবেষণা, সমাজ-মানুষকে বোঝার চেষ্টা করা যাতে সমাজে ইনসাফ কায়েম থাকে। কোরআন মানে পঠিতব্য আর তিলাওয়াত মানে অধ্যয়ন। তাহলে এই সংখ্যাগুরু মুসলমানের দেশের অবস্থা এমন কেন?
২০১৮ সালে ‘অমর একুশে বইমেলা’য় ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রয় হয়েছে। যা ২০১৭ সালের চেয়ে ৫ কোটি টাকা বেশি ছিল। অথচ প্রতি বছর কুরবানির হাটে একেক অঞ্চলে এরচেয়ে বেশি টাকার গরু-ছাগল বিক্রি হয়। কয়েক হাজার কোটি টাকার বাজার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের পরিমাণ ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। মোট বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫.০৪ শতাংশ! অথচ এদেশের একেক প্রজেক্টে যে দুর্নীতি হয় তা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আরো ১০টা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি সম্ভব। ১০টা না হলেও ১টা ঠিকঠাক আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা সম্ভব।
ধর্মীয় দর্শনকে মনজগত থেকে বিতাড়িত করে ঠেলতে ঠেলতে বস্তুজগতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই এখন ধর্ম মানে নামাজ-টুপি-বোরখা। কিন্তু এলাকায় সুদের ব্যবসা রমরমা, কুরবানি মানে গরু-ছাগল, মাদ্রাসা মানে দান বক্স। মসজিদ মানে `মসজিদ কমিটি` আর টাইলস-এসির ব্যবস্থা করা। পাঠাগার আছে এমন মসজিদের চেয়ে, এসি-টাইলস আছে এমন মসজিদের সংখ্যা বেশি। মসজিদ-মন্দিরের আলাপ বাদ দিলে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানচর্চা কেন্দ্রগুলোর অবস্থা ভয়াবহ।
পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে এই রাষ্ট্র আরো হয়তো ১০০ বছর এভাবেই টিকে থাকবে। আমরা পাকিস্তান থেকে মুক্তি পেয়েছি এই বয়ান দিয়ে আর ১০০ বছর লাফাবো। অথচ আমরা নিজেরাই আরেকটা পাকিস্তান। সিরাজ সিকদাররা আরো আগেই এই আলাপ তুলেছিলেন, সেই ৭২ সালেই। সেই আলাপগুলো নতুন করে পড়া উচিত সকলের। ‘গরু কাটা ভালো না খারাপ’ এই প্রশ্নে আসার মতো অবস্থায় এখনো পৌঁছাতেই পারি নাই আমরা।
লেখক: কবি ও কার্টুনিস্ট