ছবি- রিফাত বিন সালাম
প্রেমের স্বাধীনতা
কালকেতুপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৮
`প্রেমের স্বাধীনতার` ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট আর কোনো লিঙ্গ নির্দেশিত সূচকের প্রচলন আইনত রাখলেন না। নারী পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে যে তুমুল তর্কের বাতাবরণ আমাদের মধ্যে সারাক্ষণ থাকে তার একটা আইনগত সমাধান হাজির হলো ৩৭৭ ধারা বিলোপের মধ্যে দিয়ে। এতে আপ্লুত হওয়ার জায়গা যেমন আছে তেমন কিছু বাড়তি আশারও উদ্রেক হয় মনে। আমরা `প্রেমের স্বাধীনতা` বলতে অনেক কিছুই বুঝতে পারি, কিন্তু আমাদের বোঝা গুলো আরও নিবিড় ভাবে জুড়ে আছে সমাজের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে বা আরও স্পষ্ট করে বললে সামাজিক উৎপাদনের কোন গোষ্ঠীর মধ্যে আমাদের অবস্থান সেই নিরিখে। অর্থাৎ যে `স্বাধীনতা` সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় আমাদের দিলেন সেই `স্বাধীনতা` উপভোগের মতো অবস্থা সব স্তরের (উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত সব গোষ্ঠী) সমান ভাবে আছে তো!
ভারতীয় সংবিধনে বহু ধরনের আইন বর্তমান। খুব সাম্প্রতিক একটি ঘটনা উল্লেখ করলে আমার আলোচনাটা স্পষ্ট করা সম্ভব। ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা, ছত্তিসগড় জুড়ে চলছে পাত্থালগাড়ি আন্দোলন। সংবিধানের আইন অনুসারে আদিবাসীদের যে অধিকার ও ভারতবর্ষে আদিবাসীদের বাস করার যে স্বকীয়তা স্বীকার করা হয়েছে তাই পাথরের লম্বা ফলকে লিখে আদিবাসী গ্রাম গুলোর বাইরে জনগণ পুতে দিচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে এই `সাংবিধানিক` আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের পুলিশ ধরপাকড় করছে ও মিথ্যা মামলাতে জেলে পুড়ে দিচ্ছে। আমাদের দেশে জমিদারি বিলোপ আইন আছে কিন্তু বহালতবিয়তে চলছে জমিদারি রাজ, আবার বিয়ে করার ক্ষেত্রে ধর্ম বা বর্ণের কোনো বাধা থাকা সাংবিধানিক ভাবে উচিৎ না কিন্তু এই অসম-ধর্মের বিয়ে বা প্রেমের ক্ষেত্রে নৃশংস আক্রমণ নেমে আসছে, আবার আমাদের দেশে নির্দিষ্ট শ্রম আইন আছে কিন্তু সেই দেশেই শ্রমিকদের ইউনিয়ন গড়ার দাবীতে আন্দোলন করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
তাহলে `স্বাধীনতার`- প্রশ্নটা আইনের মধ্যে নিশ্চয় নেই আছে সেই আইন কোন শ্রেণী স্বার্থে তৈরী আর কোন শ্রেণী সেই আইন দিয়ে অন্য শ্রেণীকে দমন করছে সেই প্রশ্নের মধ্যে।
তাই শারীরিক এবং মানসিক ভাবে নারী/পুরুষ ও প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষের উৎপাদনে সমান অধিকার স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত একটা আইন কতখানি `প্রেমের স্বাধিনতা` দেবে সেটা প্রশ্নচিহ্নের মধ্যে থাকছে। অর্থাৎ সামন্তীয় উৎপাদন সম্পর্ক যে উপরিকাঠামো নির্মাণ করেছে সেটা ভেঙে বাইরে আসার সাথে নিপীড়িত শ্রেণীর `প্রেমের স্বাধীনতা` সম্পর্কিত। পেটি বুর্জোয়াসুলভ `প্রেমের স্বাধীনতা`-র মধ্যে শুধুই ঐ আইনের জায়গাটা থাকা স্বাভাবিক কিন্তু সমাজের বলপূর্বক ওলটপালট না হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের `প্রেমের স্বাধীনতা` একটা গালগল্পের মতই থেকে যাবে।