প্রেমকাহিনি

উপন্যাস ৩

বিবি সাজদা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ১১, ২০২১

শুনেছি ফাইজারের রাজা কায়েস মালিক লুচ্চা প্রকৃতির। সেই লুচ্চা রাজাই কথা নেই বার্তা নেই অতর্কিত পথিমধ্যে হামলা চালালো। রাজা দামহুরিয়াত সেই যে ঘোড়া থেকে পড়ে কুপোকাত, দুটো বর্শার আঘাতেই বেঘোরে প্রাণ হারালো। আমার মনে হলো, ওর মাথাটা কেটে এনে ওই বেশ্যাদুটোর কাছে পাঠাই।

এখন আমার কি হবে? কায়েস মালিক নিশ্চয় আমাকে যুদ্ধবন্দি করবে, তারপর কি করবে? কয়েকদিন শয্যাসঙ্গী করে তারপর চিরজীবনের জন্য নিশ্চয় হেরেমে অস্পৃশ্য করে রাখবে অথবা কোনো আমিরকে উপহার দেবে। কিন্তু ওই হারামজাদার যে চরিত্রকীর্তন শুনেছি, এক সেকেন্ডের জন্যও ওকে আমি সহ্য করবো না।

আমি রানী বাওবিহাতবি, রূপেগুণে অনন্যা। শাস্ত্র পড়েছি এগারো বছর। আমি এত সহজে ভণ্ড রাজার বশ মানবো না। হারামজাদা কায়েস মালিক, তোকে আমি আমার পোষা কুত্তীর সাথে সঙ্গম করাবো। তুই নিশ্চয় ভেবেছিস, তোর ঘোড়ার কাছে যেভাবে আমার ঘোটকী আত্মসমর্পন করবে আমিও তা করবো? কখনোই না। বরং আমি তোর মাথাটা চিবিয়ে খাব। এখন আমার দরকার সময় এবং ধৈর্যের।

কায়েস মালিকের আদেশে দামহুরিয়াতের মৃতদেহ কাক শিয়ালের জন্য রেখেই আমাকে আমার প্রাসাদে ফিরতে হলো। এখন নিশ্চয় কায়েস মালিক আসবে এখানে আমার রূপসুধা পান করতে। দখলে নেবে আমার পুরো রাজ্য। আমি সুলতানকে আদেশ করলাম আমার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আলিয়ারকে ডাকতে।

আলিয়ার আসলে তাকে বললাম এমন এক পানীয় বানাতে যা খেলে পুরুষের পুরুষত্ব নাশ হয়, স্নায়ু অকেজো হয়। আলিয়ার দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে সুলতানের সাথে গাছগাছড়ার সন্ধানে বের হলো। আমার ব্যক্তিগত দাসী রুকাইয়া। রূপেগুণে অনন্যা। তাকে বললাম আমাকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করে দিতে।

গোলাপ চন্দনে স্নান করে আমাকে সাজালো এক মনোহর রূপে। আমার মতো করে রুকাইয়াকেও সাজতে বললাম। তারপর তার মুখের উপর মসলিনের ঘোমটা টেনে আমার কক্ষে বসিয়ে রাখলাম। আমি আমদরবারে চলে আসলাম। এসে কার্পেটের উপর বসে বিলাপ করতে থাকলাম। এসময় আলিয়ার আর সুলতান এলো।

সুলতান! আমার সুলতান! তোমার জন্য জিন্দেগি বরবাদ করতে পারি। আলিয়ারের তৈরি পানীয় আমি খাসদরবার, আমদরবার এবং আমার কক্ষের সূরাপাত্রে রাখলাম। রুকাইয়া কিছুটা ভয় পেয়ে গেছিল। আমি তাকে কথা দিলাম, ও বেঁচে ফিরলে আমি ওকে আমার দশখানা গ্রাম তালুক দেব।

প্রহরী চিঠি নিয়ে আসলো। তাতে কায়েস মালিকের সিলমোহর।

ওগো রূপবতী, আমাকে কি প্রাসাদে বিনাবাধায় ঢুকে তোমার আতিথেয়তা গ্রহণ করতে দেয়া হবে নাকি আমাকে জোর করে প্রাসাদে ঢুকে তোমার পাছায় চাবুক দিয়ে মারতে মারতে বের করে আনতে হবে?

শুয়োরের বাচ্চা! কতবড় আস্পর্ধা। একজন নারী সম্পর্কে এত নিচ বক্তব্য। দাঁড়া তুই, সবুর কর। আমি আলিয়ার এবং সুলতানকে প্রাসাদের পিছনের গুপ্তদেয়ালে লুকিয়ে থাকতে বললাম যতক্ষণ আমি না বলি। আলিয়ার আমার বন্ধু, বুদ্ধিদাতা ও সৎলোক। আর সুলতান আমার প্রাণপ্রিয়। আমি চাই না, এই বিশৃংখলায় থেকে ওদের কোনো ক্ষতি হোক। লুচ্চা কায়েসকে শায়েস্তা করার জন্য রুকাইয়াই যথেষ্ট। চলবে