
প্রাত্যহিক জীবনের দলিল ‘জোনাকি মানব’
মাররুয জাহরানপ্রকাশিত : জুন ২০, ২০১৯
মহাত্মন খনাকে কে না চেনে! তার একটি বিখ্যাত বচন হলো—
মাটিতে খাঁটি
সোনাতে আধা
শাড়ি কেনে গাধা।
বচনটির মানে হলো, আপনি যদি বাকি জীবন একটা খুঁটি হিসেবে সঞ্চয় করার ইরাদা রাখেন, তবে জমি কেনাটাই উত্তম। জমিজমার কথা উঠলেই মনে পড়ে দলিলের কথা। দলিল ছাড়া জমি কিনে খনার বচন প্রতিষ্ঠিত করলেও কোনো লাভই হবে না। কারণ জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সত্যতা প্রমাণ করে দলিল। ‘জোনাকি মানব’ বইটির লেখক অঞ্জন হাসান পবন বারবার একটি কথা উল্লেখ করছেন যে, ‘জোনাকি মানব’ নাকি জীবনের দলিল। তারমানে কী ‘জোনাকি মানব’ বইটিতে এমন কিছু ব্যাপার আছে যা জীবনের সত্যতা প্রমাণ করে ঠিক জায়গাজমির দলিলের মতো? চলুন খতিয়ে দেখা যাক।
প্রথমত, বইটি একটি অতিপ্রাকৃত ঘটনাকে ঘিরে। পৃথিবী অত্যন্ত রহস্যময় জায়গা। অনেক গবেষণাই বলছে, পৃথিবী আর বেশিদিন টিকবে না। অর্থাৎ পৃথিবীর আয়ু ক্রমেই কমে আসছে। অথচ এখনো পৃথিবীর অনেক রহস্য, রহস্যই রয়ে গেল। এরমধ্যে অতিপ্রাকৃত ঘটনা বা Supernatural phenomenon অন্যতম, যার বহু প্রমাণ আছে। তবুও রহস্য উদঘাটন সম্ভব হচ্ছে না। ‘জোনাকি মানব’ বইটি আপনাকে দেখাবে জোনাকি মানব সংশ্লিষ্ট এমনই এক অতিপ্রাকৃত ঘটনা যা আপনাকে আপনার অজান্তেই ভাবিয়ে তুলবে যে, ‘আসলেই কী এমনটা হওয়া সম্ভব? যদি তা সম্ভব না-ই হয়, তবে কেন সম্ভব নয়?’
এই যে আপনি ভাবছেন, ভাবনা থেকে আপনার কৌতূহল জাগ্রত হচ্ছে, আপনি বিভিন্ন সাইটে সার্চ করছেন, আপনি কিন্তু জানতেও পারছেন না যে, আপনার মস্তিষ্কের বাম অংশটি উন্নত হচ্ছে। ‘জোনাকির মানব’ এর প্রধান চরিত্র রিফাতের অনেক গভীর ভাবনাযুক্ত কিছু প্রশ্ন আপনাকে তার মতো করে ভাবতে শেখাবে। আপনি বইটি পড়ার পর খেয়াল করবেন, আপনারও রিফাতের মতো জগতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ঘটনা খুঁটিয়ে দেখতে এবং তাদের নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে। একদিন আবিষ্কার করবেন, রিফাতকে কপি করতে গিয়ে আপনি হয়ে উঠেছেন অনুসন্ধিৎসু মনোভাবের একজন মানুষ। বইটিতে উঠে এসেছে সমাজের কিছু নিকৃষ্ট বাস্তবতা।
পিতামাতা হারা সন্তানের অবহেলিত জীবনযাপন, সমাজের নিম্নশ্রেণির পেশার মানুষের জীবনধারা, পথশিশুর জীবিকার্জন, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের প্রতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিসহ আরো বেশ কয়েকটি কঠোর বাস্তবতা। আরো রয়েছে জাগতিক উপাদান। যেমন, টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়ি, জমি-জমা ইত্যাদির প্রতি লোভের বশবর্তী মানুষের কার্যকলাপসহ জঘন্য কিছু বাস্তব ঘটনার প্রতিচ্ছবি। আছে অত্যন্ত সুন্দর অথচ নির্মল একটি প্রেম কাহিনি। আছে সহোদরের প্রতি গভীর ভালোবাসার অত্যন্ত আবেগময় একটি চিত্র। আছে পিতার উপর অভিমানি এক পুত্রের জীবনী। যে কিনা এতটাই অভিমানি যে, বাবার দেয়া নামটি পর্যন্ত মুখে আনতে চায় না। অথচ একদিন সেই নামটিই সগর্বে উচ্চারণ করেছিল।
আরেকটি মেসেজ বইটি আমাদের দেয় যা হলো, আমরা যা দেখি বা যা শুনি তা সবসময় সত্য নয়। যতক্ষণ না আমরা সেই মানুষটির সাথে খোলাখুলি আলোচনা না করছি ততক্ষণ পর্যন্ত সেই মানুষটির উপর মিছে অভিমানে কোনো লাভ তো নেই, বরং ভয়ানক দূরত্ব সৃষ্টি হবে। ঘটনার সত্যতা চাপা পড়ে যাবে, মধ্যস্থকারী পার পেয়ে যাবে এবং অভিমানের পাহাড় ভাঙতে হয়তো একজীবনও কম পড়ে যাবে।
তো কয়টি বিষয় পেলাম বইটিতে? শিক্ষণীয় অংশ, মানবীয় অংশ, আবেগময় ঘটনা, ভ্রাতৃপ্রেম, কঠোর বাস্তবতা, সমাজের অন্ধকার দিক যেগুলো নিঃসন্দেহে একটি জীবনের সত্যতার প্রমাণ দেয়। তারমানে জোনাকি মানব বইটি যে আসলেই জীবনের দলিল তা প্রমাণিত। লেখকের উক্তি তো তাহলে সত্য প্রমাণিত হলো। আমি তো পারলাম না লেখকের উক্তি মিথ্যে প্রমাণ করতে। আপনি একবার পড়ে দেখতে পারেন আর চেষ্টা করে দেখতে পারেন লেখককে মিথ্যে প্রমাণ করা যায় কিনা।
‘জোনাকি মানব’ এর প্রচ্ছদশিল্পী আহমেদ ইউসুফ। প্রকাশনী: দেশ পাবলিকেশন্স। মুদ্রিত মূল্য: ২০০ টাকা। পৃষ্ঠা: ৯৬