প্রণব আচার্য্যর ৫ কবিতা
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২০
তোমার নাম
কখনও জানতে চাইনি তোমার নাম—তোমার কি নাম আছে?
নাকি একটি রিমলেস চশমার কাছে চলে গেছে দৃষ্টি ও ভঙ্গি
সমস্ত দুপুর হাই-তোলা ভাতঘুমের মতো ভেঙে ভেঙে পড়ছে
একটি গান বহু পুরোনো নির্জনতা থেকে ক্রমেই ফিরে আসছে
আমরা এইসব ভঙ্গি নকল করে পৌষপূর্ব বৃষ্টিতে ভিজতে পারি
এ বৃষ্টি শেষে জমিয়ে শীত নামবে, তুমি ও আমি শেষবারের
মতো এই বৃষ্টিতে নামসংক্রান্ত জটিলতার সমাধান বের করবো
ওগো পচা মাছ, ফুলে ফুলে ওঠো কেন?—পৃথিবীর কোন গ্রামে
উনুনে মাছ চাষ হয়, সবজি চাষ হয়; কানকো ভর্তি এত হিংসা?
বরং স্নানে আসো, স্নাতক হও— পায়ের পাতায় জলের ঢেউ—
অথবা এইদিকে সেই গান এসে ফিরে গেছে, কেউ মনে রাখেনি
শীতকাল
প্রহরে প্রহরে শীতকাল। তুমিও কি ফিরবে না পৌষঋতু বলে?
আমারও আছে জল তরঙ্গায়িত হিমে। নিহারধূসর দিনে
পথ চেয়ে চেয়ে হয়েছি নিরোদ। ফিরবে না এই দিন, এ ঝরে
যাওয়া পাতা এলোমেলো পতনের পর শুধু মর্মরিত হবে
বৃক্ষের গান সে শুনেছিল বলে চাদর-আদরে বসে তোমার
উষ্ণতা খোঁজে। দূরে কত কোলাহল, কত মানুষের ভিড়
চারিদিকে ব্যাকুল ধীবরের গান; তবু প্রহরে প্রহরে শীতকাল।
অসহ্য এ শুষ্ক দিন, ধুলো কুয়াশা রুদ্ধ করে রেখেছে চোখ
ঠোঁট ও ত্বকের থেকে খসে পড়ে ধীরে বনজ স্পর্শমালা...
কোথাও কি কেউ নেই— বুঝদার কেউ— রাতের কর্কট হাসি
শোনে না কি কেউ? শুধুই খোয়ার সকাল ফিরে ফিরে আসে।
চুম্বনঘোর
শাওয়ার কখনো মিথ্যা বলে না— প্রতিদিনই তার আষাঢ়
মেটালিক মেঘ ওড়ে অতিদূরে, নামে সংলাপ অঝর
দুইবার চেইন টেনে তুমি দাঁড়িয়েছ একবার
অলস পাখির চোখে রাখ মাছরাঙা ভীতি
হয়তো বৃষ্টিবিভূঁই; পিঁপড়ে ও পায়রা বোঝাই
হয়তো রেলগাড়ি থেমেছে কেশগুপ্ত স্টেশনে
এই বুঝি আবার ঝরবে ছায়া চৌম্বক আলোয়
এই বুঝি মুছে গেল মগ্নসুদিন—
কেউ কি তবে এখনো সত্য বলে, রহস্যের ভোরে
ঝিরঝির শব্দে পেতে আছো কান কার চুম্বনঘোরে?
পুড়ে যাওয়া ঘন বন
এক.
ক্রমশ বৃষ্টি নামছে। আকাশের পাত্রে অগণন ফুল কাঁদে;
কান্নার ভেতরে ক্রমশ নেমে আসে কসমিক রাত।
বৃষ্টিফোঁটার মতো ফুটছে ঘন বন, নক্ষত্রের ধূলা-বালির
ছায়ার লেজ ধরে আমরাও পৌঁছাবো পরমার্থের দিকে
বাতাসের গ্র্যাভেটি টেনে নিয়ে যাচ্ছে তোমার ঠোঁট
দুই.
মধ্য আকাশের কথা ভাবুন একবার; পরিধির পায়চারি ভাবুন
শুনুন আর্কিমিদিস, একবার চুমু খাবেন আমার প্রেমিকাকে
তার স্তনে মুখ রেখে ঘুমের আওয়াজ শোনে ঘন হরিতকি বন
আমি সেই ঘুমঘ্রাণ ভালোবেসে ফেলি, জলে ভেসে ইউরেকা বলি
লোকজ জ্যামিতি ফুঁড়ে ঘনায়মান পাতাগুলি ছাই হয়ে উড়ে যায়
ময়ূরসাজ
কোন মুদ্রায় নাচছো তুমি? ধীর লয়ে নামছে বৃষ্টি এই দেশে
যে রীতি বেঁচে ছিল বিন্দুসার প্রাসাদে, অসহায় গৌড়ে
লক্ষণাবতী শুনেছিল যে রাগিণী, তুমি সে ভারত দেশের
নক্ষত্রগুলো ফুঁ’তে উড়িয়ে দাও— আলতা-ঘুঙুরে নমিত জল
কারা পয়ারপূর্ব পৃথিবীর অমিত্র
কোন মুদ্রায় বাঁচবে তুমি? কোন ভঙ্গিতে নামছে বৃষ্টি—
তুলে ধরো কল্যাণী হাত।
মাধুরী মেশাও নাচে, এই রাতে; শিকারিরা রেখে গ্যাছে
তূণ ও বর্শাগুলো— মৃগবনে জমেছে ভোজ
ছায়াময়, বৃষ্টি নেমেছে— শোনও। থেমেছে ময়ূরসাজ