পূর্ণেন্দু পত্রীর তিনটে কবিতা

প্রকাশিত : মার্চ ১৯, ২০২১

কবি, ঔপন্যাসিক ও চিত্র-পরিচালক পূর্ণেন্দুশেখর পত্রীর আজ মৃত্যুদিন। ৬৬ বছর বয়সে ১৯৯৭ সালের মার্চ ১৯ তিনি মারা যান। ১৯৩১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার নাকোলে তার জন্ম। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিশেবে তার লেখা তিনটে কবিতা পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

কথোপকথন ১

তোমার পৌঁছুতে এত দেরি হলো?
পথে ভিড় ছিল?
আমারও পৌঁছুতে একটু দেরি হলো
সব পথই ফাটা ।
পথে এত ভিড় ছিল কেন?
শবযাত্রা? কার মৃত্যু হলো?

কথোপকথন ২

: এত দেরি করলে কেন? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
– কী করবো বলুন ম্যাডাম? টিউশনি শেষ করে বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। আমার জন্যে তো আর গেইটের বাইরে মার্সিডিজ দাঁড়িয়ে থাকে না যে, ড্রাইভারের কুর্নিশ নিতে নিতে হুট করে ঢুকে পড়বো। তাই ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, কাদা-জল ভেঙে, গরিবের গাড়ি মানে দু’পায়ের উপর ভরসা করেই আসতে হয় আপনার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে। তবে আজ রিকশায় করে এসেছি, নইলে একেবারে কাকভেজা হয়ে যেতাম। রিকশা খুঁজে পেতেই যা দেরি হলো।
: ইস্ বেশ ভিজে গেছ দেখছি। কাছে এসো তো, রুমাল দিয়ে মুছে দিই।
– ওহো, আমি তো ভেবেছিলাম তোমার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেবে। ঠিক আছে, রুমালই সই।

কথোপকথন ৩

তোমার বন্ধু কে? দীর্ঘশ্বাস?
আমারও তাই।
আমার শূন্যতা গণনাহীন।
তোমারও তাই?
দূরের পথ দিয়ে ঋতুরা যায়
ডাকলে দরোজায় আসে না কেউ।
অযথা বাঁশি শুনে বাইরে যাই
বাতাসে হাসাহাসি বিদ্রুপের।
তোমার সাজি ছিল, বাগান নেই
আমারও তাই।
আমার নদী ছিল, নৌকা নেই
তোমারও তাই?
তোমার বিছানায় বৃষ্টিপাত
আমার ঘরদোরে ধুলার ঝড়।
তোমার ঘরদোরে আমার মেঘ
আমার বিছানায় তোমার হিম।