সংগৃহীত

সংগৃহীত

পূর্ণদৈর্ঘ্য জীবনের সিনেমা চলছে

রিফাহ সানজিদা

প্রকাশিত : এপ্রিল ০৭, ২০১৮

চারদিকে এত হিংস্রতা। এত নষ্টামি, এত ষড়যন্ত্র, আর নোংরামি । এর ভেতরে লাল-নীল সপ্ন গুলো আর হলুদ ফুলের মত প্রেমগুলো উড়ে যেতে থাকে দূরে !

 

শূন্য দৃষ্টি তে শীতের রিক্ততা গ্রীষ্মেও তখনো জেঁকে বসতে থাকে । ভয়ঙ্কর সুন্দর স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠার পর মন খারাপ করা বিকেলে চারদিকে শুধু শুন্যতা থাকে কেন ? চারদিক থেকে ভেসে আসা দূর-দূরান্তের সব শব্দ খালি ঘরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে আর কোথাও কেউ নেই, কোথাও কেউ নেই । এমন সব দিন নিয়েই কি হুমায়ূন আহমেদ ভেবেছেন ! সবুজ পাতার কাছে বসা হয়নি অনেকদিন । 

 

অনেকদিন বৃষ্টি ও ছুঁয়ে দেখা হয়না, রিকশায় ঘুরে বেড়ানো হয়না, চোখ বন্ধ করলে সাদা জোনাকি দেখা যায়না, চারপাশের বীভৎসতা নতুন রঙ নিয়ে চোখের কালো রঙ কে ভয়ংকর রঙে রাঙিয়ে যায় ! চোখ খুলে এইসব দেখা ভয়ের ,তার চেয়ে ভয় এইসব দিবাস্বপ্নের ! যেনো সবাই আমরা গৃহবন্দী । আমাদের জীবন একদিন জাফর ইকবালের লেখা কোনো এক সায়েন্স  ফিকশন (নাম মনে আসছে না এই মুহূর্তে) এর মত হয়ে যাবে- যেখানে একটা দেশে সব মানুষষ-কে ভার্চুয়াল করে দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছিলো, সেখানে সব আইন করে নিষিদ্ধ করে দেয়া হত, যেমন- ফুলের রেণু ক্ষতিকর তাই সব ফুল মেরে ফেলা হোক! সেখানে কোন প্রেম ছিলো না, আবেগ ছিলো না, সৌন্দর্যের পিপাসা ছিল না, সবাই একেক টা কম্পিঊটার দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেখানে, আসলেই এখনি বা কতটুকু নিজের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হই! ক্ষমতাবানরাই তো আমাদের ভালো-মন্দ ঠিক করে দেয় ! মাঝে শুধু শুধু আবেগ-ভালবাসা-মায়া-মমতা আছে বলে ভয়ঙ্কর মানসিক চাপে আছি ! কিছু না করতে পারার অসহায়ত্বে প্রতি মুহূর্তে মরে যাচ্ছি ! দিন-রাত-বিকেল শুধু ডিপ্রেশনের তালে ছুটছে, একঘেয়ে কল-কল শব্দে ।

 

রাত নামলে দেখি- বিয়েবাড়িতে আলোর ঝলকানি। মেঘ গর্জে কখন জানি ঝুম বৃষ্টি শুরু হল... সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঘোড়ার গাড়ীর ঘোড়া দুটো ভিজছে, কোন প্রতিবাদ নেই, বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবার উৎকণ্ঠা নেই, ভীষণ মন খারাপ করা দৃশ্য! এর ভেতরে ও বেঁচে থাকি শ্যাওলার মতো, অন্ধকারে, ছায়ায়, সব বিপদ কেটে যাবার পর বেরিয়ে আসবো ভেবে। অন্ধকার তিমিরে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা কেউ টের পাচ্ছি না তবু ! কি এক বিভীষিকা। একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা চলছে, দর্শক কেবল চুপচাপ দেখেই যাচ্ছে। কেউ কথা বলতে পারে না, কেউ আবেগের দৃশ্য দেখে কাঁদে না। কেউ ভালো হিরোর কাজে হাত-তালি দিচ্ছে না। কি যে হয়েছে, কে জানে ! এই সিনেমার নাম জীবন, এত দীর্ঘ দৈর্ঘ্যের সিনেমা এক জীবনে দেখে শেষ হয় না।