সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

পুরস্কার ফেরত দেওয়ার কারণ জানালেন জাকির তালুকদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৯, ২০২৪

কথাসাহিত্যিক ও কবি জাকির তালুকদার বাংলা একাডেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন। ২০১৪ সালে প্রাপ্ত এই পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ায় বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে চাঞ্চল্য তথা কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে? ঠিক কী কারণে জাকির তালুকদার পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন, এই প্রশ্ন এখন জনমনে।

অবশেষে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) এক ফেসবুক পোস্টে পুরস্কার ফেরত দেওয়ার কারণ জানিয়েছেন বরেণ্য এই সাহিত্যিক।

দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টে জাকির তালুকদার লেখেন, বাংলা একাডেমির সমস্যা এবং কার্যক্রম নিয়ে ১০ বছরে তিনজন মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। কখনো একা, কখনো আরো কয়েকজন লেখক-কবির উপস্থিতিতে। তাদের দুজন প্রয়াত। একজন বর্তমানের ডিজি। তারা কেউ সমস্যাগুলোকে অযৌক্তিক বলেননি। কিন্তু প্রতিকারের চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়নি।

বাংলা একাডেমির গণতন্ত্রের জন্য কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন খুব দরকার উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ২৫ বছর ধরে নির্বাচন দেওয়া হয় না। নির্বাচিত সদস্যের পক্ষে সম্ভব কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় জোরালো ভূমিকা রাখা। কিন্তু সেই সুযোগ বন্ধ করে রেখেছে বাংলা একাডেমি। পছন্দের লোকদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি তৈরি করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে মহাপরিচালকসহ একাডেমির কর্মচারি-কর্মকর্তারাই সর্বেসর্বা। তারাই নির্ধারণ করেন একাডেমির আলোচনা অনুষ্ঠানগুলিতে কাদের কাদের ডাকা হবে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দই মানদণ্ড তাদের। সেইসাথে তল্পিবাহকতাই বিশেষ গুণ। মেধা বা যোগ্যতা নয়।

খ্যাতিহীন মেধাবীদের পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমি দিনের পর দিন ফেলে রাখে জানিয়ে জাকির তালুকদার লেখেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে পাণ্ডুলিপি চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করেছেন একাডেমির কর্মকর্তা। বছরে একবার বার্ষিক সাধারণ সভায় সদস্যরা কিছু দাবি বা সংস্কার প্রস্তাব করার সুযোগ পান। কোনো কোনো প্রস্তাব গৃহীতও হয়। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নিত হলো কি না, তা পরের বছরের সাধারণ সভায় জানানো হয় না। আসলে সেগুলো হিমঘরেই পড়ে থাকে।


বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রদানের গতবাধা কিছু প্যাটার্ন রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন জাকির। তিনি লেখেন, গত কয়েক বছর ধরে পুরস্কারের একটি প্যাটার্ন লক্ষ করা যাচ্ছে। যেমন কয়জন আমলা পাবেন পুরস্কার, বাংলা একাডেমির অন্তত একজন কর্মকর্তা পাবেন পুরস্কার, আর মহাপরিচালকের ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ পাবেন পুরস্কার। নিশ্চয়ই যে কোনো পেশার লেখক পুরস্কার পেতে পারেন। কিন্তু যখন পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকের চাইতে অধিকতর যোগ্য লেখককে বাদ দিয়ে পুরস্কারটা তাকে দেওয়া হয়, তখন তার সমালোচনা হবেই। অথচ একাডেমি কোনো সমালোচনায় কান দেয় না। আত্মসমালোচনা করে না। সেইসাথে দেখা যাচ্ছে কোনো কবি বা লেখকের কাজের ক্ষেত্র বাদ দিয়ে তাকে অন্য ক্যাটেগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। এগুলো সবই ভব্যতার ব্যত্যয়।


প্রায় এক যুক পরে পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ ব্যাখা করে তিনি লেখেন, ১০ বছর আমি কী করেছি? আলোচনা করেছি, সভা-সমাবেশে এসব কথা বলেছি, পত্রিকায় লিখেছি, ফেসবুকে লিখেছি অনবরত। প্রতিবাদের সর্বশেষ ধাপ পুরস্কার ফেরত দেওয়া। আমার মতো একজন লেখকের এর চেয়ে বেশি আর কোনো সামর্থ্য নেই।