অলঙ্করণ: রিফাত বিন সালাম

অলঙ্করণ: রিফাত বিন সালাম

পিডিবির নতুন নাটক, সাত হাজার কোটি বনাম ষাট কোটি!

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৮, ২০১৮

রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি কিভাবে জনগণের জীবনে সংকট তৈরি করে, সম্প্রতি পিডিবি`র নতুন নাটকে সেটা আরো স্পষ্ট হল। একের পর এক রাষ্ট্রীয়-দুর্নীতির কারণে ডুবতে বসেছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানও ডুবছে অর্থাৎ জনগণের পয়সা চলে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় লুটেরাদের হাতে, এসব পয়সা আর কোনো দিনও ফেরত আসবে না, অতীতে সে প্রমাণ পাওয়া গেছে বহুবার।

 

৬০ কোটি টাকার অভাবে তেল কিনতে পারছে না পিডিবি, সম্প্রতি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এমন একটা সংবাদ শিরোনাম রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরো স্পষ্ট করেছে।

 

দেশের গণমাধ্যম বলছে, "বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংকে টাকা রেখে বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। জমা রাখা টাকা ফেরত পাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়েও মিলছে না আমানতের টাকা। ফলে চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দরকারি জ্বালানি তেল কিনতে প্রয়োজনীয় অর্থ না পেয়ে সংকটে পড়েছে পিডিবি। শিগগিরই টাকা না পেলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।" (২৬ এপ্রিল ২০১৮  অথচ চলতি বছরের শুরুর দিকের চিত্র ছিল একেবারে অন্যরকম। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, গণমাধ্যমের দেয়া তথ্য মতে, "দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় সাত হাজার ৭০০ কোটি টাকা ফেলে রেখেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এই টাকা টাকা ব্যাংকে ফেলে রেখে দুই থেকে তিন শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের একটি পর্যালোচনায় পিডিবির আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে এই প্রশ্ন উঠেছে। মোট সাত হাজার ৭৩৪ কোটি টাকার মধ্যে ঢাকার পিডিবি সদস্য (অর্থ পরিদফতর)-এর অধীনে রয়েছে ৫ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। বাকি অর্থ বিভিন্ন বিতরণ জোনের অধীনে ব্যাংক হিসেবে পড়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।"

 

উপরের দুটি তথ্য থেকে এটা পরিষ্কার পিডিবি`র যে পরিমাণ জমা টাকা আছে তা দিয়ে চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো সংকট হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু পিডিবি বারবার সংকটের কথা বলছে, ভয় দেখাচ্ছ, কারণ তার পিছে জনগণের পয়সা হাতিয়ে নেয়ার নতুন ধান্দা আছে। বছরের পর বছর এভাবে ব্যংকে টাকা ফেলে রাখাটা উদ্দেশ্যমূলক। তারা লোকসানের নাটক দেখাচ্ছেন। একদিকে পিডিবি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় বারবার বলছে তারা লোকসান দিচ্ছে অথচ অন্যদিকে ব্যাংকে পড়ে আছে অলস টাকা। একদিকে বেশি সুদে ঋণ নিয়ে প্রকল্প করছে ঠিক অন্যদিকেই কম সুদে নিজেরদের টাকা ফেলে রেখেছে। অলস টাকা ব্যাংকে না রেখে বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পে পিডিবি যদি খরচ করতো তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজনই পড়তো না, একই সঙ্গে মাত্র ৬০ কোটি টাকার জন্য বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তীব্র হওয়ারও আশঙ্কাও থাকতো না।

 

শান্তিনিকেতন/২০১৮