পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ
নাহিদ এনামপ্রকাশিত : মে ২৫, ২০১৯
পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোট আছে প্রায় ২০ থেকে ২৩% এর মতো। টানা বামপন্থী ক্ষমতার লাগাম টানার পেছনে রাজনৈতিক যে গবেষণা তৃণমূল কংগ্রেস চালিয়েছিল সেই গবেষণায় ধরা দিয়েছিল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। অর্থাৎ মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে গেলে একমাত্র এবং অন্যতম উপায় হিসেবে তারা আবিষ্কার করেছিল মুসলিমদের ওই রিজার্ভ ভোট। যদি মুসলিমদের ভোটগুলি বাগে আনা যায় তাহলে বিধানসভার চেয়ার দখল করা যাবে, এটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। কারণ বাকি যে ৮০% থেকে ৭৭% মেজরিটি হিন্দু ভোট থাকবে সেগুলি তৃণমূল, কংগ্রেস, বামজোট ও বিজেপি— এই চারভাগে ভাগ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যারা মুসলিমদের ভোটগুলি বাক্সে আনতে পারবে তারাই জয় পাবে।
ঠিক এ সূত্র ধরেই মমতা ব্যানার্জি এবং তার দল তৃণমূল কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করে। মজার বিষয় এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি হয় মুসলিম তোষণ করে এবং হিন্দুদের দূরে ঠেলে। মমতা ব্যানার্জি বিধানসভা নির্বাচনে জয় পাবার আগে ও পরে আজ অব্দি সেখানকার মুসলিম ভোট ধরে রাখার জন্য সবধরনের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিগৃহীত পশ্চিম বাংলার হিন্দু সম্প্রদায়। এমন কি দু বছর আগে সেখানে একযোগে অন্তত অর্ধশতাধিক মন্দির ভাংচুরের মতো অভূতপূর্ব ঘটনাও ঘটেছে।
এই যে মমতা ব্যানার্জির মুসলিম প্রীতি, এটা কিন্তু মুসলিমদের ভালোবেসে নয়। এমন কি তাদের মঙ্গলের জন্যও নয়। বরং এই মুসলিম প্রীতি শুধুইমাত্র ভোট ধান্দা করার জন্য। এটা প্রমাণ হবে যদি আপনি হিসেব করেন সে ক্ষমতায় এসে মুসলিমদের কল্যাণের জন্য কি কি করেছে এমন তথ্যে। মমতা ক্ষমতায় এসে কেবল মাদ্রাসা বাড়িয়েছেন মসজিদের ইমামদের বেতন স্কেল চালু করেছেন, এছাড়া কিছুই করেননি। এতে করে ধর্মান্ধ মুসলিম সমাজ আরো খুশি হয়ে মমতার আরো বড় ভক্ত হয়েছে। অথচ সমাজ রাষ্ট্রে মুসলিমদের গুরুত্ব বাড়াতে এগুলি কোনো কাজেই আসবে না।
মমতা ব্যানার্জি যদি পশ্চিমবাংলা মুসলিমদের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ বৃদ্ধি করতেন, চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ তৈরি করে দিতেন— তাহলেই কেবল মুসলিমদের জন্য একটি পোক্ত অগ্রগতি সাধিত হতো। কিন্তু এমন কিছুই করেননি তিনি, কেবলই তাদের মাথায় হাত রেখে সাম্প্রদায়িক চেতনার শক্তি যুগিয়ে গেছেন। যে শক্তিবলে মেজরিটি হিন্দুরা আতঙ্কিত হয়েছে নিজেদের অপাংক্তেয় ভাবতে শুরু করেছে।
ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যেমন অগ্রগতি সাধিত হয়েছে সেভাবে পশ্চিমবাংলায় উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি তিনি। বরং পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের অনেক উগ্রবাদী সন্ত্রাসী জঙ্গির আশ্রয়স্থল হয়েছে পশ্চিমবাংলার বহু তৃণমূল নেতারা। বাংলাদেশের সিংহভাগ জামায়াত শিবির সন্ত্রাসীরা পশ্চিমবাংলায় আশ্রয় গড়ে তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের কাছে। মোট কথা, নোংরা রাজনীতি ছাড়া পশ্চিমবাংলার মঙ্গলের তেমন কিছু দেখাতে পারেননি তিনি। যে প্রত্যাশায় তাকে জনতা নির্বাচিত করেছিল।
মমতার ভোটলোভের এই প্রক্রিয়ার ফলে পশ্চিম বাংলা হিন্দু সম্প্রাদায়ের ভেতর মমতা ঠেকানো মনোভাব তৈরি হয়েছে। তারা বিকল্প খুঁজেছে। কিন্তু বিকল্প হিসেবে বামজোটকে খুঁজে পায়নি তারা। দীর্ঘ সময় ক্ষমতা চালিয়ে পশ্চিম বাংলার বাম দলগুলির অবস্থা এতটা ক্লান্তিতে ভরা যে, কেউ তাদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিলেও বলবে আমরা পারবো না বাবা, তোরাই ক্ষমতা চালা। এমতাবস্থায় পশ্চিমবাংলার হিন্দু সম্প্রদায় মমতাকে রুখে দিতে একমাত্র বিকল্প হিসেবে পেয়েছে বিজেপিকে, তাই শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে তাদের ভোটগুলি ওই চারভাগে ভাগ না করে বিজেপিকে দিয়েছে অনেকেই। এরফলে বিজেপি যখন পশ্চিমবাংলায় শক্ত অবস্থান পোক্ত করে নিয়েছে তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই এটাকে আরো তরান্বিত করে বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবাংলা দখলের দিকে এগিয়ে যাবে। খুব অল্প সময়ের ভেতর পশ্চিমবাংলায় একজন বিজেপি নেতাকে ফোকাসে আনা হবে, যাকে আগামীর মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে।
ব্যক্তিগত রাজনৈতিক পর্যালোচনা থেকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবাংলার মসনদে বসতে যাচ্ছে বিজেপি। এবং বিজেপির এই জয়ে সিংহভাগ কৃতিত্ব থাকবে মমতা ব্যানার্জির মুসলিম ভোটলোভের সাম্প্রদায়িক এবং নোংরা রাজনীতির। পশ্চিমবাংলার ঐতিহাসিক প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি হত্যা করেছেন মমতা ব্যানার্জি।