পর্যটন উন্নয়নে জলাভূমি রক্ষা
ছায়াবীথি শ্যামলিমাপ্রকাশিত : জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
নদী ও মানুষের সম্পর্ক সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই। সভ্যতার শুরু থেকেই দেখা যায়, যেখানে নদী, সেখানেই মানুষ বসতি গড়ে তোলে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নদী যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, একইভাবে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নেও নদীর ভূমিকা অপরিসীম। পর্যটন শিল্প সমগ্র বিশ্বের নদী এবং পানির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বর্তমানে পর্যটনের নতুন নতুন ডাইমেনশন তৈরি হচ্ছে। যেমন: ইকোট্যুরিজম, নদী ভিত্তিক পর্যটন, দুঃসাহসিক পর্যটন ইত্যাদি। এ জাতীয় পর্যটন উন্নয়নের জন্য পানিই হচ্ছে মূল কেন্দ্র। কিছু কিছু দেশে পানিনির্ভর পর্যটন কর্মকাণ্ড পরিচালিতে হচ্ছে। যেমন: নদীতে প্রমোদ ভ্রমণ বা নৌবিহার, সমুদ্রে প্রমোদ ভ্রমণ বা সী ক্রুজিং, স্কুবাডাইভিং, স্নোরকেলিং, সার্ফিং, র্যাফটিং, বোট রোয়িং, সমুদ্রে মাছ ধরা এবং তা অবলোকন, আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড এক্টিভিটিজ, প্যারাগ্লাইডিং, প্যারাসেইলিং, বার্ড ওয়াচিং ইত্যাদি।
পর্যটনের প্রধান আকর্ষণগুলো নদী নির্ভর। যেমন: হাওর, বাওর, সমুদ্র, নদী, সমুদ্র তীর, ম্যাংগ্রোভ বন ভ্রমণ ইত্যাদি। প্রশান্ত অথবা আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে সী ক্রুজিং, মেডিটেরিয়ান সাগর অথবা অন্যান্য সাগর এবং বিভিন্ন প্রধান প্রধান নদী যেমন আমাজান, নীল নদ, রাইন নদী, চাওপ্রিয়া নদীতে নৌবিহার সত্যই মনমুগ্ধকর। অনেক উন্নত দেশ রয়েছে যেগুলো রাজধানী গড়ে উঠেছে সমুদ্র তীর, নদী বা জলাভূমির নিকট। কাশ্মীরের ডাল লেক, কেরালার নদী এবং খাল, ইন্দোনেশিয়ার বালি, জাপানের ওকিনাওয়া, মালদ্বীপ, ফিজি, হাওয়াই, গাম্বীয়া, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, মরিশাস, ওয়াশিংটনের মোজেস খাল ইত্যাদি হলো বিশ্বের নামকরা পর্যটন কেন্দ্র। এসব এলায় বছরের সবসময়ে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।
আগে পর্যটন জলাভূমি কার্যক্ষমতা ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং উপস্থাপন অথবা তদারকির কার্যক্রম তেমন গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি। কিন্তু কালের বিবর্তনে পর্যটন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যা বিভিন্ন দেশে উন্নীত হয়েছে সেখানে নদী, সাগর, হাওর এবং অন্যান্য জলাভূমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ হচ্ছে নদীমাতৃক এবং জলাভূমির দেশ। এ দেশে রয়েছে টাংগুয়া হাওর এবং হাকালুকি হাওর (উভয়টি রামসার সাইট), বাইক্ষার বিল ইত্যাদি। এই হাওরের পানি শান্ত এবং স্নিগ্ধ এবং তার তীরগুলো সবুজ বেষ্টিত। এখানে ভ্রমণকারীরা আসে পানি দেখতে এবং তাজা মাছের স্বাদ নিতে। কিছু কিছু ট্যুর অপারেটরেরা এখানে নৌবিহারের অফার দিয়ে থাকে। অনেক বিদেশি পর্যটক টাংগুয়া হাওরকে তাদের জীবনের বিশেষ অভিজ্ঞতা বলে স্বীকার করেছেন।
বাংলাদেশ শত শত সর্পিলাকার নদী ও খালের জন্য বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। এটি আরও বিখ্যাত নৌবিহারের জন্য। বাংলাদেশে রয়েছে বিখ্যাত নদী যেমন- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কুশিয়ারা ইত্যাদি। অনেকের মনে আছে হয়তো, ৪৯তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (CPA) সম্মেলন ২০০৩ সালে ঢাকা, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে অনেক বিভিন্ন দেশের সাংসদ, মাননীয় মন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। তাদের জন্য বাংলাদেশ আয়োজন করেছিল ঢাকা টু চাঁদপর নৌবিহারের। তারা এই নৌবিহার খুব উপভোগ করেছিলেন এবং তাদের আনন্দিত অনুভূতির কথাও তারা সেসময়ে ব্যক্ত করেছিলেন। পানি, হাওর এবং জলাভূমি বাংলাদেশের পর্যটন উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করতে পারে। যেহেতু নদীর দু’ধারে হাজার হাজার গ্রাম এবং স্থানীয় বাজার গড়ে উঠেছে তাই এখানে নৌবিহার খুবই জনপ্রিয়। পর্যটকরা নদীর পাড়ের দিগন্তবিস্তৃত শস্যাদি অবলোকন করতে পারে। তারা মাঠে কর্মরত স্থানীয় লোকদেরকে অবলোকন পারে। এছাড়া ইলিশ মাছ ধরার দৃশ্য পর্যটকদের কাছে একটি প্রধান আকর্ষণ।