মীর হাবীব আল মানজুর
পরিবেশে প্রাণের সঠিক বাস্তুসংস্থান
মীর হাবীব আল মানজুরপ্রকাশিত : এপ্রিল ২৫, ২০২৪
পরিবেশ ইত্যকার ঝামেলায় পার্মা কালচার, আদিকৃষি, নয়াকৃষি ও কৃষির নানারকম বিষমুক্ত ও জমির উপযোগিতা অনুযায়ী যে এক্টিভিটি চলতেসে, পুরা দুনিয়ার মানুশ সে দিকে আস্তে আস্তে ঝুকতেসেন। বড় বড় এগ্রিকালচারালিস্ট, এগ্রিকালচারাল ফিলোসফাররা অনেকরকম কৃষির সিস্টাম আবিষ্কার করসেন, করতেসেন ও তাদের ইন্টেলেকচুয়াল কথাবার্তার ভিতর দিয়া মানুশ প্রভাবিত হইতেসে। যেটার এইম হইল, এই কৃষির ভিতর দিয়া পরিবেশ, মাটি, মানুশ ও জান বিষ ও আধুনিক চাষের সর্বগ্রাস থেকে মুক্ত হবে, পরিবেশে প্রাণের সঠিক বাস্তুসংস্থান তৈয়ার হবে।
একইসাথে রিওয়াইল্ডিংয়ের ধারনাও ছড়ায়ে পড়সে কার্বন এমিশানের হাত থেকে দুনিয়ারে বাচাইতে, অনেক বিলুপ্ত হইতে যাওয়া জংলিজানোয়ার সংরক্ষন করতে, নেচারের সাথে মানুশরে আরো বেশি কানেক্টেড করতে। বিদেশের বড় বড় জমিদাররা নিজেদের অনেক বড় বড় জায়গা ছাইড়া দিয়া সেখানে পুনরায় বন তৈয়ার ও জংলিজানোয়ারের ভয়হিন একটা স্পেস করে দিতেসেন।
যেমন আয়ারল্যান্ডের একটা বিখ্যাত ফ্যামিলি, ডানসানি ফ্যামিল। এদের ১৭তম পুরুষ হচ্ছে, র্যান্ডেল প্লাংকেট। উনার মালিকানায় ছিল প্রায় ১৭৫০ একর, এখান থেকে প্রায় ৭৫০ একর রিওয়াইল্ডিংয়ের জন্য ছেড়ে দিসেন। অইটায় অসুস্থ প্রানি এনে ছাড়েন, কোনো প্রানি যেন কেউ শিকার না করতে পারেন, সেজন্য পাহারা দেন।
এখন মজার বিষয় হচ্ছে, জার্মানির একজন পার্মাকালচারালিস্টের ব্যাপারে প্রতিবেদন দেখতেসিলাম। যিনি গাজর, সব্জিসহ নানা রকম জিনিস উৎপাদন করেন। উনি বলতেসেন, আমার ব্যবসায় প্রায় ৮০% লাভ হয়। একে ত আমার উৎপাদন খরচ অনেক কম, বাড়তি কোনো সার দেয়া লাগে না, মই দেয়ার ঝামেলা নাই, তারুপর আমার প্রোডাক্ট যেহেতু অর্গানিক, ফলে বাজারের নরমাল শব্জি থেকে কয়েকগুণ দামে সেল করতে পারি।
আবার রিওয়াইল্ডিংয়ের সুত্র ধইরা ইংল্যান্ডের এক বড় এস্টেটওয়ালারে দেখলাম, সে প্রায় ৩৫০০ একর জায়গা নিয়া একটা ওয়াইল্ড ফার্ম গইড়া তুলসে। যেখানে গরু, ভেড়া, ছাগল, ঘোড়াসহ নানান জানোয়ার দিয়া তার ব্যবসা। এগুলা এই বড় জায়গায় আজাদির সাথে চইরা বেড়ায়া খাইতেসে দাইতেসে, কোনো বাড়তি খরচ লাগতেসে না। এগুলা সেল করে উনার লাভ হইতেসে প্রচুর। উনি এক অর্থবছরের হিসাব দিতেসিলেন যে, অই বছর তার এক মিলিয়ন ডলার প্রফিট হইসে। শুধু জানোয়ার দিয়াই তার ব্যবসা না, বরং ইকোফ্রেন্ডলি ফার্ম কেমন হইতে পারে, এইটারে ইকো ট্যুরিজমে ঢুকায়ে মানুশরে বন ঘুরায়াও একটা ভালো প্রফিট হয়।
উনাদের ইন্টারভিউয়ের শেষের দিকে আশংকা জাহের করতেসিলেন যে, ওয়াইল্ড ফার্মের প্রফিটের এই অবস্থা দেখে বড় বড় এস্টেট কোম্পানি ধুমায়া জায়গা কিনা রিওয়াইল্ডিং শুরু করসে এমন সিস্টামে, যেইটায় রিওয়াইল্ডিংয়ের যেই মাকসাদ সেইটাই ব্যহত হইতেসে, আরো বেশি পরিবেশের উপর ঝামেলা বাড়তেসে।
আমি নিজেও একজন ন্যাচারাল এগ্রিকালচার, ওয়াইল্ড ফার্মিংয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহী হয়া উঠা লোক। বলতে গেলে রিওয়াইল্ডিং, ওয়াইল্ড ফার্মিং, ন্যাচারাল এগ্রিকালচার এখন আমার স্বপ্নের মতো ব্যাপার, আমি দুনিয়ারে একটা ফার্ম হিসাবে কল্পনা করতে খুবই আরাম পাই। মোহাম্মাদপুরে কোনো গাছপালাআলা জায়গা, কোনো আর্কিটেকচারাল সুন্দর স্পেস দেখলে আমি অইখানে ভেড়া বা ছোট ফার্মের কথা ভাবতে থাকি।
এখন এই পুরা ব্যাপারটা নিয়া আমাদের কয়েকটা ভাবনার দিক আছে। মাসানুবু ফুকুওকাদের মর্ডান ন্যাচারাল এগ্রিকালচার, যেইটা নিজের খাদ্য নিজের উৎপাদন ভাবনা, কৃষিতে ন্যাচারাল সাইকেলগুলারে ঠিকঠাক রাইখা বায়োডাইভারসিভ এপ্রোচ নেয়া, মাটি, পরিবেশ, বীজ সংরক্ষণ করার জায়গা থেকে দরদি হওয়া। শুধু মাসানুবু না, ভারতের সুভাষ পালাকারসহ আরো অনেক কৃষি দার্শনিকরাও অনেক পদ্ধতির কথা বলতেসেন।
এই জায়গা থেকে বিল মলিসন, ডেভিড হলগ্রামদের পার্মাকালচারের ম্যানুয়াল তৈয়ার করা। ভারতে, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ থেকে শুরু কইরা সারা দুনিয়ায় এগুলার চর্চা শুরু হইসে বড়সড়ভাবে।
এদের কাজের ব্যাপারে সন্দেহ রাখার অবকাশ কম, এদের ভিতর দারুন আন্তরিকতা ছিল, আগের জায়গা থেকে নতুন পদ্ধতির দিকে সফরের কোশেশ ছিল। এমনকি মাসানুবু ত কমিউনিটির সাথে রিলেশন জোরদারের ব্যাপারে পরিষ্কার ভাবসেন।
কমিউনিটির অন্য লোকজনের সাথে প্রয়োজনের জিনিস বিনিময়ের ভিতর দিয়ে পুজির চারদিকব্যাপী আগ্রাসন কমায়া আনার লড়াইয়ের এসেন্সই ছিল মুলত তার কাজে।
এখন বাংলাদেশের জায়গা থেকে দেখতেসি আমরা অনেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠি তৈয়ার হইসে, হইতেসে, যারা কৃষি পণ্যেরে অর্গানিক কইরা সেল করার দিকে মনোযোগি হইতেসেন। নিজেরা কখনো উৎপাদন করতেসেন, কখনো সংগ্রহ করতেসেন, কখনো অন্য জায়গা থেকে আইনা সেটারে কিছুটা আগপিছ কইরা বিক্রি করতেসেন। এখন এই অর্গানিক প্রোডাক্টগুলার ক্ষেত্রে কে কী করতেসেন, এইটা প্রথম কোশ্চেন!
অর্থাৎ অর্গানিক করার ক্ষেত্রে যে যে নিয়ম মানা দরকার, সেগুলা আদৌ ফলো করতেসেন কি না! যেমন দেখা যাচ্ছে, ব্রয়লার মুরগি কমার্শিয়ালি যেভাবে পালে, অমন পুরা সেটাপ কইরা একটু উঠানে অদের হাটার ব্যবস্থা কইরা দিয়াই তারে অর্গানিক বলা হইতেসে। এই যে অর্গানিক হওয়ার জরুরিয়াত, এইটার মার্কেট ভ্যালু ত তৈয়ার হইসে। এখন এই ভ্যালুরে কে কীভাবে ইউজ করতেসেন? বেশিরভাগ লোকই এইটার নাম ড্রপ কইরা নিজের আখের গুছাইতেসেন, এর ফলে বিশাল বড় একটা মার্কেট তৈয়ার হইসে।
আমাদের মোহাম্মাদি হাউজিংয়েই দুই তিনটা দোকান হইসে রিসেন্ট, যারা নামের সাথে সাব টাইটেল দিসেন, অর্গানিক শপ। কিন্তু এখানে একটা প্রোডাক্ট অর্গানিক হওয়া উঠার যে যে শর্ত, সেগুলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুব কমই এপ্লাই করা হইতেসে। এই প্রোডাক্টগুলা কিংবা যে কৃষি সেইটার যেহেতু ভ্যালু এখন হাই, ফলে এ নতুন বড় মার্কেটের যে ভোক্তার ক্লাস সেইটাও ইকোনমিক্যালি বড়লোকদের। কারণ, নরমালি আনঅর্গানিক যে প্রোডাক্ট, সেইটার যে দাম, তার চে কয়েকগুণ বেশি হইতেসে অর্গানিক প্রোডাক্টের দাম।
বাংলাদেশে গণমানুশের যে আয়, তা দিয়া অর্গানিক প্রোডাক্ট কনজিউম করার এবিলিটি তাদের নাই। এখন একটা ব্যাপার বোঝার চেষ্টা করি, একটা প্রোডাক্ট, যেইটার ভ্যালু হাই, নানারকম ইন্টেলেকচুয়াল বিজ্ঞাপনের ভিতর দিয়া গুরুত্বও তৈরি হইসে, এইটার গাহেক বড়লোকেরা, এইটা আসলে যাবে কই? এইটার মুল কন্ট্রোল যাবে পুজিপতিদের হাতে। অলরেডি যাওয়া শুরু করসে। যারা আন্তরিক হয়াও এই কাজগুলা করতেসেন, তারাও যেহেতু ম্যাস পিপলের উপর নির্ভর কইরা বিজনেস চালাইতে পারতেসেন না, ফলে খুব শিজ্ঞির এইটার প্রোডাকশান ও গাহেক দুইটাই হবে পুজির লোকেরা।
মুল কথায় আসি। যদি কৃষির জায়গা থেকে পরিবেশ, দুনিয়া, মাখলুকাত ইত্যকার টেনশন থেকে আমরা একটা বেটার জায়গায় যাইতে চাওয়ার আগ্রহে অর্গানিক ব্যবস্থার দিকে যাই, তাহলে সব বিবেচনা কইরা দেখতেসি এইটা গণমানুশরে বিচ্ছিন্ন কইরা ফেলতেসে। গণমানুশ বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যাপার ইনসাফের প্রশ্নে পুরা দুনিয়ারে আর কতটুক বেটার অবস্থায় নিয়া যাইতে পারবে?
এখন তাহলে আমাদের ভাবতে হবে, এইটার ইউটিলিটির সাথে সবরকমের মানুশ কিভাবে সম্পৃক্ত হইতে পারবে! কিভাবে পুরা ফিকির, এক্টিভিটিরে আমরা দুনিয়ার মাখলুক ও পরিবেশের জন্য ফলদায়ক কইরা তুলতে পারব, তাইলেই মেবি আমাদের এই পুরা সিস্টামটা রেভুলেশন আকারে আমাদের জন্য উপকারি কইরা তুলতে পারব।
লেখক: কবি
লেখকের বানানরীতি অবিকৃত রাখা হয়েছে