পদার্থবিজ্ঞানী সতেন্দ্রনাথ বসুর আজ জন্মদিন
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : জানুয়ারি ০১, ২০২৫
পদার্থবিজ্ঞানী সতেন্দ্রনাথ বসুর আজ জন্মদিন। ১৮৯৪ সালের ১ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার গোয়াবাগান অঞ্চলে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের পাশে ২২ নম্বর ঈশ্বর মিত্র লেনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মারা যান ১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি।
তার পরিবারের আদি নিবাস ২৪ পরগণার কাঁড়োপাড়ার সন্নিকটে বড়োজাগুলিয়া গ্রামে। তার বাবা সুরেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন পূর্ব ভারতীয় রেলওয়ের হিসাবরক্ষক এবং মা আমোদিনী দেবী ছিলেন আলিপুরের মতিলাল রায়চৌধুরীর কন্যা। সত্যেন্দ্রানাথ বসু সাত ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন।
তিনি ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী। তার গবেষণার ক্ষেত্র ছিল গাণিতিক পদার্থ বিজ্ঞান। আইনস্টাইনের সমসাময়িক বিজ্ঞানী ছিলেন সত্যেন বোস, তারা একসাথে গবেষণা করেন বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয় নিয়ে, যা সাড়া পড়েছিল গোটা দুনিয়ায়। তার যে আবিষ্কারে বিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়েছিল তাহলো, বোসন কণা।
এই বোসন কণার সাথে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও অনেক মৌলিক বিষয় যুক্ত করেন, যার নামকরণ করা হয়, বসু-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন। হিগসবসোন কণা আবিষ্কারের পর তার নাম নিয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী সত্যেন্দ্রনাথ কর্মজীবনে যুক্ত ছিলেন তিনটি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা, ঢাকা ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মাদাম কুরী প্রমুখ মনীষীর সান্নিধ্য পেয়েছেন। আবার অনুশীলন সমিতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগও রাখতেন তিনি।
তিনি শুধুমাত্র বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রবল সমর্থকই ছিলেন না, সারা জীবন ধরে তিনি বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ধারাটিকেও জারি করে গেছেন। এই প্রসঙ্গে তার অমর উক্তি, “যারা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা হয় না, তারা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।”
বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান পরিচয় নামের একটি পত্রিকাও প্রকাশ করেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন নিরলস, কর্মঠ ও মানবদরদী মনীষী। বিজ্ঞানের পাশাপাশি সঙ্গীত ও সাহিত্যেও ছিল তার আন্তরিক আগ্রহ ও বিশেষ প্রীতি। এক কথায় তিনি ছিলেন একজন মানবিক মানুষ।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আইনস্টাইন আমাদের কাছে যতটা পরিচিত, সত্যেন্দ্রনাথ বসু ততটা পরিচিত নন। আমাদের প্রজন্ম দূরের আইনস্টাইকে চেনে কিন্তু কাছের সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে চেনে না। এর কারণ প্রচারমাধ্যমে আইনস্টাইন সুযোগ পেয়েছেন সত্যেন্দ্রনাথ বসুর চেয়ে বেশি। এছাড়া স্বদেশি বিজ্ঞানসাধকের প্রতি আমাদের উৎসাহ খুবই কম। এটা আমাদেরই দীনতা।
জাতি হিসেবে আমরা কখনই নিজেদের মেধাকে মূল্যায়ন করতে শিখিনি। তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের কিছু কিছু বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান আইনস্টাইনের অবদানের চেয়ে বেশি।