পদার্থজগতের দরজা ‘পদার্থের পরিমাপ’
আবু তাহের সরফরাজপ্রকাশিত : জুলাই ১১, ২০২৪
আমরা বসবাস করছি পদার্থজগতে। জীবন চলার পথে প্রতিমুহূর্তে পদার্থের সঙ্গেই আমাদের বেঁচে থাকা। আর তাই, জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পদার্থের পরিমাপ করতে হয় আমাদের। কিন্তু পরিমাপের কতখানি জ্ঞান আমাদের রয়েছে? বলতে কি, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের পরিমাপ বিষয়ে যে জ্ঞান তা খুবই ভাসা-ভাসা। জীবনযাপনের নানা মুহূর্তে অন্যের কাছ থেকে দেখে ও শুনে শেখা। অথচ পরিমাপের সূক্ষ্ম জ্ঞান না থাকলে পদার্থজগতের বৈচিত্র্য কোনোভাবেই বুঝে ওঠা সম্ভব নয়।
মুশকিল হচ্ছে, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকে পদার্থের পরিমাপ বিষয়ে পুরোপুরি ধারণা পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায় তা বিচ্ছিন্ন ও ত্রুটিপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের বোঝার উপযোগী ভাষায় গুছিয়ে পরিমাপের পাঠ সেখানে দেয়া নেই। আমার কন্যা ছায়াবীথি শ্যামলিমাকে পাঠ্যবিজ্ঞান বইটি পড়াতে গিয়ে বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তুললো। অন্তর্জাল প্রযুক্তির এই যুগে খুব সহজেই যে কোনো বিষয়ের বই খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু আমি পেলাম না। তবে কি পরিমাপের ওপর কোনো বই বাংলাদেশে লেখা হয়নি?
হয়তো ৩০-৪০ বছর আগে হয়েছিল, পরে আর পুনর্মুদ্রণ করা হয়নি। তাই হয়তো অন্তর্জালে পাচ্ছি না। পরিমাপের খুঁটিনাটি নানা বিষয় অন্তর্জালে সার্চ দিলে কি পাওয়া যায়? যায়-ই তো। কিন্তু কতটুকু পাওয়া যায়? পরিমাপ বিষয়ক নানা তথ্য লিখে গুগোলে সার্চ দিলাম। দেখলাম যে, যেসব ফলাফল দেখাচ্ছে সেসব ফলাফল তথ্যগতভাবে বিচ্ছিন্ন ও অগোছালো। কোনো কোনো ফলাফলে ভুলভ্রান্তিও রয়েছে। আবার, অনেক তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে উপায় কী!
এই ভাবনা আমাকে প্ররোচনা দিল যে, স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে পদার্থের পরিমাপ বিষয়ে জ্ঞান পেতে পারে, এমন একটি বই কি আমি লিখতে পারি না! এর আগেও তো ছোটদের উপযোগী কয়েকটি বিজ্ঞান বিষয়ক বই লিখেছি। ভাবনা দ্বারা প্ররোচিত হয়েই আমি লিখতে আরম্ভ করলাম পদার্থের পরিমাপ। খুদে পাঠকদের বোঝার উপযোগী ভাষায় লিখতে চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস, বইটি শ্যামলিমার মতো স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পদার্থের পরিমাপ ভালোভাবে বুঝতে সহায়ক হবে।
কেবল ছোটরাই নয়, বড়রাও এই বই পড়ে পরিমাপ বিষয়ে বিশদ ধারণা পাবেন। বইয়ের পাঠ বুঝতে গণিতের প্রাথমিক জ্ঞান থাকা দরকার। তা না থাকলে গাণিতিক সূত্রগুলো বোঝা সম্ভব হবে না। বইটি যেহেতু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বোঝার উপযোগী ভাষায় লেখা, সে কারণে খুদে শিক্ষার্থী যাতে আনন্দের সঙ্গে পাঠ বুঝে উঠতে পারে, সেদিকে খেয়াল রেখে বিষয়ভিত্তিক উদাহরণ ও অলংকরণ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে রয়েছে অনুশীলনী। এজন্য যে, খুদে শিক্ষার্থী কী শিখল, কতটুকু শিখল— অভিভাবকরা যেন তা যাচাই করে দেখতে পারেন।
যেহেতু এই বইটি পাঠ্যপুস্তক নয়, সেহেতু এখানে কোনো সাজেশন নেই। একটি বিষয় বাদ দিয়ে আরেকটি বিষয় পড়ার সুযোগও নেই। এই বই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য নয়, এই বই শেখার জন্য। যার ভেতর জানার আগ্রহ নেই, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াই যার লক্ষ্য, এই বই তার জন্য নয়। তবে এটাও ঠিক যে, স্কুলের বিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে এই বইয়ের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের বিশেষ সহায়ক হবে। আমি চাই, বইটিতে যে যে বিষয় লেখা হয়েছে, সেসব বিষয় খুদেগুলো ভালোভাবে বুঝে উঠুক।
এই বোঝার মধ্যদিয়ে তারা প্রকৃতির ভাণ্ডারে লুকিয়ে থাকা রহস্য একটু একটু করে উদ্ঘাটন করতে শিখবে। বুঝতে পারবে, প্রকৃতি প্রকাণ্ড বৃহৎ একটি বই। আমাদের চোখের সামনে খোলা রয়েছে এই বইয়ের প্রতিটি পাতা। মানে, প্রকৃতির প্রতিটি জিনিসই এই বৃহৎ বইয়ের এক একটি পাতা। এসব পাতায় কী লেখা রয়েছে, তা পড়তে হলে শিখতে হবে প্রকৃতির ভাষা। বিজ্ঞান হচ্ছে প্রকৃতির সেই ভাষা। বিজ্ঞানভিত্তিক যে কোনো বই পড়া মানে প্রকৃতিকে পাঠ করা। আমাদের দেশে উচ্চতর ডিগ্রিধারী অসংখ্য মানুষ আছেন, কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ খুঁজতে চোখে টেলিস্কোপ লাগাতে হবে।
শিক্ষার উদ্দেশ্য ডিগ্রি অর্জন করে ভালো চাকরি পাওয়া নয়, শিক্ষার উদ্দেশ্য বিশ্বজগৎকে জানা ও বোঝা। এই বোঝার ভেতর দিয়েই মানুষ আবিষ্কার করতে পারে তার নিজের অস্তিত্ব। বিজ্ঞান বিষয়ে আমার লেখালেখির উদ্দেশ্য আসলে এটাই। বিশ্বজুড়ে যা-যা রয়েছে, সবকিছুই আমার পাঠশালা। প্রকৃতিকে পাঠ করতে এই পাঠশালার আমিও একজন শিক্ষার্থী। প্রতিমুহূর্তে নানাভাবে শিখে চলেছি। এই শিখে ওঠার মধ্যদিয়ে মহাবিশ্বের রহস্য যতটুকু বুঝতে পারি, বই লিখে ছোটদের সঙ্গে ততটুকু ভাগ করে নিই। এই-ই আমার আনন্দ!
‘পদার্থের পরিমাপ’ বইয়ের ভূমিকা
ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ২৬৪ পৃষ্ঠার বইটির দাম ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন অনন্ত আকাশ। বইটি পেতে অর্ডার করুন https://www.rokomari.com/book/423350/podarther-porimap?fbclid=IwZXh0bgNhZW0CMTAAAR29xZNipK_SHuoEpt_t6a6Eem4-Ohtjc3v0TCOHiw7wvJfEURFfJQTFZHY_aem_VdN3F-PoORulIxOK3rp1sg