নীল বিদ্রোহ এবং নীলদর্পণ নাটক: ভিন্ন দৃষ্টিতে

পর্ব ৩

রাহমান চৌধুরী

প্রকাশিত : মে ২৯, ২০২১

নীলদর্পণের দ্বিতীয় সাফল্যটি আরো বৃহত্তর। নাট্যকার এই নাটক রচনার মধ্যে দিয়ে আর একটি কাজ করলেন, বাংলার বুদ্ধিজীবীদের একাংশকে টেনে আনলেন কৃষকদের পক্ষে। পূর্বেই বলা হয়েছে, যখন ইংরেজরা পর্যন্ত নীলচাষীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে তখন বাঙালী বুদ্ধিজীবীরা দূরে সরে ছিলেন। কৃষকদের সাথে বিচ্ছিন্নতাবোধে ভুগেছেন। সেই সময়ে নীলদর্পণ হয়ে দাঁড়াল গোটা জাতির হতাশা-আক্ষেপ ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে ঘৃণার দলিল। মহাবিদ্রোহে যে বুদ্ধিজীবীরা মুক হয়েছিল নীলবিদ্রোহের পর নীলদর্পণকে ঘিরে রুদ্র রোষে ফেটে পড়ল সেই বুদ্ধিজীবীদের একাংশ।

উৎপল দত্তের ভাষায়, বুদ্ধিজীবীর মোহভঙ্গ একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। দীনবন্ধুর ব্যক্তিত্ব দ্বারা নয়, ঘটনা পরাম্পরায় ঘটেছিল তা। নীলচাষ চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন নীরব। চাষীদের পক্ষে তো ছিলেনই না, বরং কখনো কখনো নীলকরদের পক্ষাবলম্বনকারী হিসেবে দেখা গেছে তাঁদের। শিক্ষিতদের মধ্যে হরিশচন্দ্র তখন বাংলার চাষীদের একমাত্র আপনজন। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় শুধু সংবাদ ছেপেই ক্ষান্ত ছিলেন না, সরাসরি নীলকরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। নীল চাষীদের সংগঠিত করা এবং আদালতে তাদের মামলা পরিচালনা করায় সহায়ত করেন। হরিশচন্দ্রের সহযোগী হিসেবে আর একজন যোদ্ধাকে পাওয়া গিয়েছিল তিনি হলেন শিশির ঘোষ।

বঙ্গদেশে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ প্রভৃতি বহু দিকপাল আবির্ভূত হয়েছিলেন, সমাজ সংস্কারের নতুন আদর্শ স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু নিজ শ্রেণির বাইরে যেতে পারেননি। মহাবিদ্রোহের সময় যেমন ঠিক তেমনি একইভাবে নীলবিদ্রোহ থেকে দূরে অবস্থান করছিলেন। দ্বারকানাথ ছিলেন নীলচাষের বড় একজন সমর্থক। দ্বারকানাথ শিল্পপতি, তিনি জমিদারের বেগার খাটার চেয়ে নীলকরের হয়ে কাজ করাটা কৃষকের জন্য লাভজনক মনে করেছিলেন। রামমোহনের মতো তিনি মনে করতেন নীলচাষ বাংলার ভাগ্য ফিরাবে। কিন্তু দ্বারকানাথের ছেলে ও নাতীরা ইতিহাসের নিয়মে নীলদর্পণ প্রকাশিত হবার পর নীলচাষের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। ইংরেজ শাসন সম্পর্কে মোহমুক্তি শুধু যে দীনবন্ধু মিত্রের ঘটেছিল তা নয়, বাংলার বুদ্ধিজীবীরা বেশ ব্যাপকভাবে নীলবিদ্রোহের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন, নীলকরদের অত্যাচার এবং সাহেবদের বিচার ব্যবস্থার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

নাটকের বিষয়বস্তুর মধ্যে শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, যেভাবে কৃষকদের শত্রু বা প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাতে করে বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখে লজ্জা পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কৃষকদের সাথে তাদের বিচ্ছিন্নতা তাদের নতুন ভাবনায় উদ্দীপ্ত করেছে। বিশেষ করে একদল ইংরেজ পাদ্রী ও আমলা নীলবিদ্রোহে কৃষকদের পক্ষ নেওয়ায় তাদের মনে নিজেদের সম্পর্কে ধিক্কার জেগেছে। তাঁদের মানসিকতায় পরিবর্তন এনেছে। যেখানে ম্যাজিস্ট্রেট এশলে ইডেন এবং খোদ গভর্ণর গ্র্যাণ্ট নীলকরদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন, সেখানে বাংলার বুদ্ধিজীবীদের দূরে সরে থাকা সম্ভব ছিল না। বাংলার ইংরেজদের এক অংশ নীলকরদের বিরোধিতা করেছিল ব্রিটিশ শিল্পপতির স্বার্থে। কারণ বাংলা থেকে ব্যাপক পরিমাণ নীল রপ্তানীর ফলে বহু ইংরেজের ব্যবসা ধ্বংস হতে বসেছিল। ইংল্যান্ডের সংসদের এ নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল।

বাংলার বুদ্ধিজীবীরাও সেই বিরোধিতায় অংশ নেয়। নিজেরা এও অনুভব করতে পেরেছেন, বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন ছাড়াই কৃষকরা ইংরেজদের বাধ্য করেছে নীলচাষ বন্ধ করতে। নিজেরা সেই আলোড়নকারী ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারেননি সেটাও তাদের অহংঙ্কারে লেগেছিল। নীল বিদ্রোহ এবং নীলদর্পণ নাটকের বিভিন্ন রকম ঘটনার ধাক্কায় বুদ্ধিজীবীদের মানস পাল্টায় যা পরে তাঁদেরকে ধীরে ধীরে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের দিকে নিয়ে যাবার পথ প্রস্তুত করে।  

দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক সর্বপ্রথম ঢাকা নগরীতেই মঞ্চস্থ হয়। নীলদর্পণ নাটক আঠারশো ষাট সালে লেখা হয় এবং ঢাকাতে আঠারশো একষট্টি সালে তা প্রথম মঞ্চায়িত হয়। পরের দুই বছর বিপুল উদ্দীপনার সাথে ঢাকার বিভিন্ন পাড়ায় নাটকটি অভিনীত হতে থাকে। নীলদর্পণ নাটক সমগ্র বাংলাদেশে জাতীয় জাগরণের এক অপূর্ব সাড়া ফেলে দিয়েছিল। ঢাকার রঙ্গভূমিতে পুনঃপুনঃ এই নাটক অত্যন্ত সাফল্যের সাথে অভিনীত হওয়ায় নীলকরদের অসহনীয় অত্যাচার সম্বন্ধে জনসাধারণের চক্ষু খুলে গেল এবং তাতে করেই বাংলার একপ্রান্ত থেকে আর একপ্রান্ত পর্যন্ত জাতীয় আন্দোলনের ঢেউ লাগে।  নীলদর্পণ নাটক কলকাতায় প্রথম ন্যাশনাল থিয়েটার কর্তৃক মঞ্চস্থ হয় আঠারশো বাহাত্তর সালে। দর্শনীর বিনিময় হার রাখা হয় এক টাকা এবং আট আনা। পরবর্তীতে আঠারশো তিয়াত্তর সালের জুন মাসে কলকাতার হিন্দু ন্যাশনাল থিয়েটার ঢাকায় নীলদর্পণ নাটকটি মঞ্চস্থ করে। পত্রিকার বিজ্ঞাপন অনুযায়ী ঢাকার দর্শনীর হার ছিল চার টাকা, দুই টাকা, এক টাকা এবং আট আনা। লক্ষ্যণীয় ঢাকার দর্শনীর হার ছিল উচ্চ।    

নীলদর্পণ নাটকের ব্যাপক প্রভাব সম্পর্কে শিবনাথ শাস্ত্রী লিখেছেন, ‘নাটকখানি বঙ্গ সমাজে কি মহা উদ্দীপনার আবির্ভাব করিয়াছিল, তাহা কখনও ভুলিব না। আবাল বৃদ্ধ বনিতা আমরা সকলেই ক্ষিপ্তপ্রায় হইয়া গিয়াছিলাম। ঘরে ঘরে সেই কথা, বাসাতে বাসাতে তার অভিনয়। ভূমিকম্পের ন্যায় বঙ্গদেশের সীমা হইতে সীমান্ত পর্যন্ত কাঁপিয়া যাইতে লাগিল। এই মহাউদ্দীপনার ফলস্বরূপ নীলকরের অত্যাচার জন্মের মত বঙ্গদেশ হইতে বিদায় লইল।’ শিবনাথ শাস্ত্রীর বক্তব্য যথার্থ নয়। যদিও মম্মথ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী উদ্ধৃতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘একটি জাতির জীবনে একটিমাত্র নাটক কতদূর প্রভাব বিস্তার করতে পারে, কাম্য ফলকে কতো অনিবার্য করে তুলতে পারে, একটি নাটক কেমন করে অর্থ ও অস্ত্রসজ্জিত অত্যাচারী শাসককে পরাভূত করতে পারে নীলদর্পণ প্রসঙ্গে শ্রদ্ধেয় শিবনাথ শাস্ত্রী মহাশয়ের এই সাক্ষ্য স্মরণীয়।’

নীলচাষ রোধে নীলদর্পণ নাটকের কোনো ভূমিকা নেই যা শিবনাথ শাস্ত্রী বলছেন। কারণ নীলবিদ্রোহ সংগঠিত হবার পরই নীলদর্পণ নাটক রচিত হয়। ঢাকার বাইরে কোথাও বাহাত্তর সালের আগে এই নাটক মঞ্চস্থ হয়নি। কলকাতার ন্যাশনাল থিয়েটার এই নাটক মঞ্চস্থ করে আঠারশো বাহাত্তর সালে। তার বহুপূর্বেই নীলচাষ বন্ধ হয়। নীলচাষ বন্ধে কোনো কৃতিত্ব তাই নীলদর্পণ নাটকের নেই। বরং বলা যায় নীলচাষ বন্ধ হয়ে গেল, নীলবিদ্রোহ সফলতা লাভ করল কিন্তু নীলদর্পণ নাটকে দেখা যাবে সে-সব ঘটনার বিন্দুবিসর্গ নাই।

নীলদর্পণ নাটকের গল্প কিভাবে আগাচ্ছে দেখা যাক। স্বরপুরগ্রামের বাসিন্দা গোলকচন্দ্র বসু সম্পন্ন গৃহস্থ। তিনি বয়সে প্রবীণ এবং অত্যন্ত নীরিহ প্রকৃতির লোক। তার পৈত্রিক জমিজমা যা আছে তাতে সারাবছর সংসার ভালোভাবে চলে যায় এবং অতিথি সেবাও চলে। স্ত্রী, দুই পুত্র এবং দুই পুত্রবধূ নিয়ে তাঁর সংসার। কিন্তু নীলকরদের অত্যাচারে সে এবং গ্রামের অন্যান্যরা অতিষ্ঠ হয়ে আছে। নীলকরদের নির্দেশে গত বছর সে পঞ্চাশ বিঘা জমিতে নীল চাষ করতে বাধ্য হয়। নীলকররা গত বছরে পাওনা টাকা শোধ না করেই এইবছর ষাট বিঘা জমিতে নীল চাষ করার হুকুম দিয়েছে। শুধু তাই নয়, যে পুকুরে গৃহের মেয়েরা স্নান করে সে পুকুরের পাড়েও নীল চাষ করার নির্দেশ রয়েছে। নীলদর্পণ নাটকের এই বক্তব্য মিথ্যা নয়। নীলকররা কিভাবে জোর করে চাষীদের দিয়ে নীলচাষ করায় তার একটি মর্মস্পর্শী বিবরণ তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার আটাশি সংখ্যায় পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, নীল চাষ করা চাষীদের ইচ্ছা নয়, বলপূর্বক তাদের দিয়ে এ কাজ করানো হয়। নীলকররা নীলবীজ বপন করার জন্য চাষীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভাল ভূমি নির্দিষ্ট করে দেয়। কখনো কখনো এমনও ঘটে, চাষী ধান চাষের জন্য কোনো উৎকৃষ্ট ক্ষেত্রসমূহ সুচারুরূপে কর্ষণ করে রেখেছে, নীলকরের লোকরা এসে সেখানে জোর করে নীলের বীজ বপন করে যায়।

নীল উৎপাদন করার পরেও চাষীর নিস্তার নেই। নীলকর সাহেবরা তাদের ন্যায্য দামের অর্ধেক প্রদান করতেও রাজী হয় না। নীলকুঠিতে যখন চাষী নীল নিয়ে আসে তখনও তাদের পীড়ন করা হয়। পঁচিশ মন নীল খাতায় পাঁচ মন লেখা হবে এই ভয় দেখিয়ে কুঠির দেশীয় ভদ্রলোক আমলারা টাকা আদায় করতে ছাড়ে না। পল্লীগ্রামে নীলকুঠির সাথে সংশ্লিষ্ট ভদ্রলোক আমলাদের এক-একটা অত্যাচারী গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, গ্রামের শান্ত ও নিরীহ লোকজন তাদের সাক্ষাৎ যমদূত মনে করে। প্রভাকরের সংবাদ থেকে বোঝা যায় নীলকুঠির দেশীয় কর্মকতারাও কম নিষ্ঠুর নয়। তারাও নীলকরদের পক্ষে প্রজাদের উপর নানারকম অত্যাচার চালায়।

নাটকে দেখা যায় গোলক বসুর প্রতিবেশি নিম্নবিত্ত সাধুচরণের অবস্থা আরো খারাপ। ধান চাষ করার জন্য তার ভ্রাতা রাইচরণ যে জমিটুকু চাষ করেছিল নীলকুঠির আমিন নিজে এসে সেই উৎকৃষ্ট জমিতে নতুন করে দাগ দিয়ে নীল চাষ করবার হুকুম দিয়েছে। রাইচরণ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এবং নীলকরদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলায় কুঠির লোকরা সামান্য পরে এসে দুভাইকে ধরে নিয়ে যায়। সাধুচরণ যতো নিজের সমস্যা বোঝাতে চায় নীলকর উড তা বুঝতে নারাজ। সাধুচরণ বলে নীলকরদের সাথে তার বিরোধ করার ইচ্ছা ও ক্ষমতা কোনোটাই নেই। কিন্তু ধান চাষ না করে শুধু নীল চাষ করলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। বাঙালী দেওয়ান উডকে উস্কে দেয় সাধুচরণের বিরুদ্ধে এবং আমিন বলে, বেটা সাহেবের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করতে চায়। সাধুর কোনো কথা উড শোনে না। নীলকুঠিতে অভুক্ত রাইচরণকে উড নিজ হাতে চাবুক মারে। রাইচরণ ভাইকে বলে, দাদা যা বলছে লিখে দে, ক্ষুধায় নাড়ী ছিঁড়ে পড়ছে। নবীনমাধব খবর পেয়ে সাধুচরণ-রাইচরণের হয়ে উড সাহেবকে অনুনয় করতে আসে। সাহেব নবীনকে নিজের চরকায় তেল দিতে বলে সাধুচরণকেও চাবকাতে শুরু করে। উড নবীনকেও গালাগাল করতে ছাড়ে না। দেওয়ান নবীনকে মানসম্মান নিয়ে চলে যেতে বলে। নবীন বাধ্য হয়ে ফিরে আসে। উড দুভাইকে দিয়ে যা খুশি লিখিয়ে নেয়।

নবীনমাধব গোলকচন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র, সে পিতার বাধ্যগত। সে নীলকরদের সাথে বিরোধে লিপ্ত হতে চায়, মামলা মোকদ্দমায় যেতে চায় কিন্তু নির্বিরোধ এবং নীলকরদের ভয়ে ভীত পিতার নির্দেশে তা করতে পারে না। নীলকুঠির দেওয়ান গোপীনাথ নীলকরদের বোঝায়, নবীন নীলকুঠির প্রধান শত্রু; কারণ সে নীলকরদের বিরুদ্ধে চাষীদের দরখাস্ত লিখে দেয়, মোক্তারদের এমন পরামর্শ দেয় যে হাকিমের রায় কৃষকদের পক্ষে যায়। নবীন গরীবদের রক্ষক হয়েছে। নীলকররা তাই নবীনকে উচিৎ শিক্ষা দেবার জন্য তার পিতা গোলকচন্দ্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। নীলকররা স্থানীয় চাষীদেরকে কুঠিরে ধরে এনেছে গোলকচন্দ্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে। মুসলামান তোরাপ সাক্ষ্য দিতে রাজী হয় না। ভিন্ন একজন চাষী বলে, সাহেবদের লাথি আর  চাবুকের বাড়ি খেয়ে সে স্বাক্ষী দিতে রাজী হয়েছে। নইলে গোলকবাবুর নুন তো সেও খেয়েছে কিন্তু সাহেবেদের অত্যাচারের ভয়ে স্বাক্ষী না দিয়ে উপায় কি? তোরাপ বলে সে জীবন গেলেও গোলকচন্দ্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা স্বাক্ষী দেবে না। রাইয়তদের একজন দুঃখ করে স্থানীয় ভাষায় যা বলে তার অর্থ, খোদ গভর্নর যেখানে নীলকরের জামাই সেজে ভোজসভায় উপস্থিত হয় সেখানে কৃষকদের ন্যায়বিচার পাবার কোনো উপায় নেই।  
সামান্য পরেই চাবুক হাতে বের হয়ে আসে নীলকর রোগ সাহেব। তোরাপ মিথ্যা স্বাক্ষী দিতে রাজী নয় জেনে রোগ তাকে চাবকাতে থাকে। তোরাপ মারের হাত থেকে বাঁচার জন্য চালাকি করে স্বাক্ষী দিতে রাজী হয়, পরে নীলকুঠির বন্দীদশা থেকে পালিয়ে আসে। নীলদর্পণ নাটকের দুই ইংরেজ নীলকর চরিত্র বঙ্গ নাট্যশালায় বুর্জোয়া সমাজের, সাম্রাজ্যবাদের প্রথম প্রতিনিধি। দীনবন্ধু তাদের দানবীয় চেহারাই নাটকে তুলে ধরেছেন। চলবে

নীলদর্পন নাটকের পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ অতিথি হিসেবে দেয়া লেখকের বক্তব্য