সংগৃহিত

সংগৃহিত

নীতিকথা দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ সম্ভব নয়

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৫, ২০১৮

ছবিটা ভারতের সুরাত অঞ্চলের। ১১ বছরের মেয়েটির লাশে আশিটিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অভিযোগ, টানা আট দিন ধরে ধর্ষণের পর ঘাড় মটকে তাকে খুন করা হয়েছে। এবিভিপির নেতা জাড়িত, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই দাবি করেছে অনেকে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের বান্দরবান জেলায় সেটেলার বাঙালিদের দ্বারা এক ত্রিপুরা জাতিসত্তার নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন গতকাল, ১৪ এপ্রিল। যারা দাবি করছে, বিচার করে এ ব্যাধি দূর করা সম্ভব নয়, তারা সম্ভবত মানব সভ্যতার ইতিহাস ভুলে গেছে। মানুষ শুরু থেকেই উন্মাদ। মানব সভ্যতা মানেই যুদ্ধ আর দমন-পীড়ন। যে জাতি যত দমন করার ক্ষমতা দেখিয়েছে, তারা তত বড় সভ্যতা গড়েতে সক্ষম হয়েছে। মানুষ বর্বর, তাই মানুষ আদালত, সংবিধান, জেল, জরিমানার নিয়ম করেছে দেশে দেশে।

মানুষের এই স্বভাবজাত দমনের চিন্তাধারা, পুরুষতান্ত্রিকতার সাথে যতই যুক্ত হয়েছে, পুরুষ দিনকে দিন ততই শক্তি প্রয়োগের নিয়মে জড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে শিশু আর নারী বেশি নিপীড়িত। সাধারণ অর্থে ধর্ষণ তারই একটা উদাহরণ। এখানেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এর থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা কি?

যারা দাবি করছে, মানুষের চিন্তাধারা বদলাতে হবে, তাদের দাবিই যথার্থ। কিন্তু সেটা আদৌ সম্ভব কীনা, তা দীর্ঘ গবেষণার বিষয়। পুঁজিবাদের উপর দাঁড়িয়ে থাকা যুদ্ধবাজ-দুনিয়ায় মানুষ তার দমনের চিন্তা থেকে কোনোদিনই হয়তো বেরিয়ে আসতে পারবে না। ইতিহাস তো এমনই বলছে। সেক্ষেত্রে সমাজ বদালানোর দীর্ঘ গবেষণা জারি থাক। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ন্যায় বিচারই একমাত্র রাস্তা। তার জন্য দরকার ভয়ানক মাত্রার কঠোর আইন। কঠোর আইন ছাড়া ধর্ষণ বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব। অন্তত ভারতীয় উপমহাদেশে, যেখানে এখনো ধর্মীয় প্রশ্নে নারীদের আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে আগে নারী-শিশু এমনকি পুরুষের জন্যও সুরক্ষা আইন জরুরি। পরে অন্য চিন্তা।

তাই হতাশ হবার চেয়ে জরুরি কাজ, কঠোর আইনের দাবি তোলা। শুধু ব্যক্তির জন্যই নয়, বরং একইসাথে ধর্ষণের সাথে যদি রাজনৈতিক দল জড়িত থাকে। অর্থাৎ ধর্ষককে তার দল বাঁচানোর চেষ্টা করে। তাহলে সে দলকে রাষ্ট্রীয় আইনেই নিষিদ্ধ করারও আইন হওয়া উচিত। আর এসব দাবির জন্য রাস্তায় আন্দোলন ছাড়া পথ নাই। যারা বিচার দাবি করবে, তাদের সাথে রাস্তায় দেখা হবে।

লেখক: কলামিস্ট, কার্টুনিস্ট ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র