নারী ও পুরুষের সেক্স ভাবনায় মিথ বনাম রিয়েলিটি
ডা. অপূর্ব চৌধুরীপ্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
একটা কথা চালু আছে, men talk about sex a lot, but women desire it often! পুরুষ সেক্স নিয়ে কথা বলে বেশি, কিন্তু নারী এটি করতে চায় বেশি।
সেক্স একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। সেক্স ড্রাইভ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমাদের জন্ম ও অস্তিত্ব এই সেক্স প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ঘটে। বুঝে হোক, না বুঝে হোক, সমাজে দশজনের সাথে চলতে হলে সেক্স ডিজায়ারকে সকলেরই দমন করে চলতে হয়। নাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
একদিকে সেক্স ড্রাইভ প্রক্রিয়া যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সমাজে সামষ্টিক চলার জন্যে সেক্স ডিজায়ারের দমন প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক। দুটোর মাঝপথে তৈরি হয় একটি গোপন জগৎ। প্রত্যেকের আছে তাই সেক্স সিক্রেট। এটিও স্বাভাবিক। কিন্তু যত বেশি প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে জানা যাবে, তত বেশি তার নিয়ন্ত্রণ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
অস্বাভাবিকতার জন্ম হয় অজ্ঞতা থেকে। পুরুষ ও নারীর সেক্স চিন্তার গড়পড়তায় তেমন মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সারাদিনে যতক্ষণ জেগে থাকে, আট ঘণ্টা ঘুমের সময় বাদ দিয়ে বাকি ১৬ ঘণ্টায় মেয়েরা গড়ে ১৮ বার সেক্স নিয়ে চিন্তা করে। সে হিসাবে প্রতি ৫২ মিনিটে একবার।
পুরুষদের সেক্স চিন্তা নিয়ে বাজারে অনেক মিথ আছে। বয়সভেদে কিছু পার্থক্য থাকে। মোটামুটি প্রাপ্তবয়স্ক হলে ছেলেরা দৈনিক গড়ে ৩৪ বার সেক্স নিয়ে চিন্তা করে। প্রতি ২৮ মিনিটে একবার। তাহলে বাস্তবতা হলো, গড়ে মেয়েরা প্রতি ঘণ্টায় সেক্স নিয়ে একবার চিন্তা করলে একই সময়ের মধ্যে ছেলেরা করে মাত্র দুইবার।
নারী ও পুরুষের এই সেক্স চিন্তার পার্থক্যের কারণ একটি ক্যামিকেল। টেস্টোস্টেরোন। মানুষের শরীরে সেক্স অনুভূতি তৈরির জন্যে দায়ী এই হরমোন। অনেকে মনে করে, টেস্টোস্টেরোন শুধু পুরুষের দেহে তৈরি হয়। এটি ভুল। পুরুষ ও নারী, দু’পক্ষের শরীরেই টেস্টোস্টেরোন তৈরি হয়। এবং এই টেস্টস্টেরোনই মূলত দু’পক্ষের সেক্স ড্রাইভের জন্যে দায়ী।
নারীর ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরোনের পাশাপাশি ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক আরো দুটো হরমোন কাজ করে। সেক্স ড্রাইভের বাইরে নারীর দেহে হরমোন দুটোর অন্য অনেক কাজ আছে। পুরুষের দেহে টেস্টোস্টেরোনের নরমাল লেবেল ২৮০ থেকে ১১০০ ng/dL। নারীর শরীরে টেস্টোস্টেরোনের স্বাভাবিক পরিমাণ ১৫ থেকে ৭০ ng/dL।
পুরুষের দেহে তিনশো ng/dL এর কম হলে লো টেস্টোস্টেরোন লেভেল ধরা হয়। নারীর ক্ষেত্রে সেটা ২০ এর কম হলে। দু’ক্ষেত্রেই স্বাভাবিকের চেয়ে টেস্টোস্টেরোন কম থাকলে সেক্স ড্রাইভে সমস্যা দেখা দেয়। গড়ে নারীর দশ গুণ বেশি টেস্টোস্টেরোন পুরুষের শরীরে তৈরি হয়।
আসলে নারীর শরীরে যে সামান্য টেস্টোস্টেরোন তৈরি হয়, সেটা তৈরি হয়ে দ্রুত শরীরের একটি প্রক্রিয়ায় ইস্ট্রোজেন নামক একটি হরমোনে পরিণত হয়, এবং এই ইস্ট্রোজেন হরমোনটি নারীর সেক্সের জন্যে দায়ী। পুরুষের দেহে তৈরি হওয়া বিপুল পরিমানের টেস্টোস্টেরোন শুধু টেস্টস্টেরোনই থাকে।
পুরুষের টেস্টোস্টেরোন বের হয় টেস্টিস থেকে, সেখানে আবার পুরুষ ডিম স্পার্ম তৈরি হয়। তেমনি নারীর টেস্টোস্টেরোন তৈরি হয় ওভারি থেকে, ওখানে নারীর ডিম্ ওভাম তৈরি হয়।
এখানে মজার একটি ফ্যাক্টস আছে। এত কম টেস্টোস্টেরোন নিয়ে পুরুষের সমান নারীর সেক্স ডিজায়ার কোথা থেকে আসে তাহলে? এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের সেক্স তাড়নার পেছনে অন্যতম একটি কারণ বেশি কাজ করে, সেটি এই টেস্টোস্টেরোন হরমোন। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে হরমোন ছাড়াও সেক্সের কারণ প্রায় শতেক ধরনের। এই জন্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সেক্স ডিজায়ারের বৈচিত্র্য ও গভীরতা অনেক বেশি।
পুরুষের সেক্স ড্রাইভ অনেকটা সরাসরি প্রকাশ পায়, কিন্তু নারীর সেক্স ড্রাইভের অনেকগুলো লেয়ার থাকে, যা একই সাথে ডিজায়ারকে আড়ালও করে, চারপাশে অস্পষ্ট করে তোলে এবং পুরুষের টার্ন অন যতটা স্ট্রেইট হয়, সে তুলনায় নারীর টার্ন অন অনেক কমপ্লিকেটেড এবং অনেকগুলো আবেগের এবং কারণের সমন্বয়ে হয়। নারীর সেক্স প্যাটার্নকে লেটুস পাতার সাথে তুলনা করা হয়। একটি পাতার নিচে আরেকটি পাতা। অনুভূতির দরজা এভাবে ভিতরে যেতে থাকা।
টেস্টোস্টেরোনের এই তাড়নার কারণে সাময়িক নিবারণের জন্যে ৭৮% পুরুষ নিয়মিত মাস্টারবেশন করে, কিন্তু নিয়মিত মাস্টারবেশন করে এমন নারীর সংখ্যা ৪০% মাত্র। নারীদের সেক্স তাড়না ও সাময়িক নিবারণের বড় অংশ ফ্যান্টাসি ও ইমাজিনেশন জুড়ে থাকে। সেক্সে নারীর বৈচিত্র্য নারীকে বহুগামীও করে। নারীদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে সমকামিতা বেশি। এমনকি পুরুষের দ্বিগুণ নারীর বাই সেক্সচুয়াল টেন্ডেন্সি।
পুরুষের সেক্স ড্রাইভের ধরন যতটা স্ট্রেইট, মেয়েদের ধরন তেমন নয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে সেক্স হলো talk first, connect middle, and have sex last. কাউকে পছন্দ করলে, ভালো লাগলে, তাকে ভালোবাসুন, পরস্পরকে শ্রদ্ধা করুন, আপনাকেও তার ভালো লাগে কিনা সেটিও মাথায় রাখুন। তারপর দুজনের শরীর কথা বলে উঠলে সঠিক চাবি দিয়ে তালাটি খুলুন।
সেক্স অপরাধ নয়, কিন্তু জোর করে কাউকে সেটি করতে বাধ্য করা অপরাধ। সেক্স ভাবনা অপরাধ নয়, কিন্তু সেই ভাবনাকে ঘিরে অন্যের ক্ষতির ভাবনা কিংবা ক্ষতির বাস্তবায়ন করা অপরাধ।