অ্যারিস্টটল ও প্লেটো

অ্যারিস্টটল ও প্লেটো

নাটক ও নাট্যকলা: দীর্ঘ পথ চলা

পর্ব ২

রাহমান চৌধুরী

প্রকাশিত : জুলাই ২০, ২০২০

গ্রীসে দেখা যায়, সে সময়কার গণতন্ত্রীরা ধর্মকে তাদের শাসন ব্যবস্থার ভিত্তি দৃঢ় করার কাজে লাগায়। ধর্ম ও রাষ্ট্রনীতির মাঝে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে শোকগাথা নাটক এক অপূর্ব মাধ্যম হিসাবে গৃহীত হয়। বিশেষ করে য়্যারিস্টটলের ‘কাব্যতত্ত্ব’ তার নিদর্শন। য়্যারিস্টটল চেয়েছিলেন নাটককে মানুষের নীতিবোধ নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করতে আর প্লেটো মারমুখো ছিলেন নাট্যকারদের ওপর। নাট্যকারদের সাথে প্লেটোর ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না, বিরোধটা ছিল দার্শনিক। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে রাজনৈতিক। প্লেটোর চিন্তায় দার্শনিকরা শাসন করবে, সৈনিকরা যুদ্ধ করবে আর শ্রমজীবীরা করবে উৎপাদন। তিনি এই ব্যবস্থার নড়চড় চাইতেন না। নাটকের নানা বক্তব্যের মধ্যে সেই ব্যবস্থার নড়চড় হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। প্লেটো বিশ্বাস করতেন, শিল্প যা-হোক একটা কিছু শিক্ষা দেয়, আর সেটা কুশিক্ষাও হতে পারে। প্লেটোর লেখায় বারবার এ কথা এসেছে যে, শিল্প যেহেতু আনন্দ দেয়, তার পক্ষে কুশিক্ষা দেয়া আরো সহজ। প্লেটো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন না। নাটক সেই গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছিল। সেজন্যই তিনি নাটক পছন্দ করতেন না। তবে নৃত্য পছন্দ করতেন। নৃত্যের পক্ষে তিনি মত রেখেছেন অথচ নাট্যকারদের নির্বাসন দিতে চেয়েছেন।

নৃত্যে যার আপত্তি নেই তিনি নাটক নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন কেন? নৃত্য হচ্ছে শারীরিক, নাটক মনস্তাত্ত্বিক। মানুষ নৃত্য করুক তাতে রাষ্ট্র আপত্তি করবে না, করবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু মানুষ নাটকের মাধ্যমে প্রচলিতকে ভাঙতে চেষ্টা করুক রাষ্ট্র তা চাইতে পারে না। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কোনো-না-কোনোভাবে শ্রেণি থাকে, আর সে শ্রেণি সবসময় নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়। বিশেষ করে শাসকশ্রেণি সর্বদাই নিজের স্বার্থ রক্ষায় বদ্ধ পরিকর। সেজন্য রাষ্ট্র থাকলেই আমলাতান্ত্রিকতা থাকবে। কেননা রাষ্ট্র আমলাতান্ত্রিক সংগঠন, আর আমলাতন্ত্র গণতন্ত্রের শত্রু। প্লেটোর ছাত্র য়্যারিস্টটলও গণতান্ত্রিক ছিলেন না। তিনিও জনগণের শাসন চাননি, শাসন চেয়েছেন কতিপয়ের। তিনি জানতেন, নিষিদ্ধ করে দিলেও নাটক থাকবে কেননা মানুষের প্রাথমিক প্রবৃত্তিগুলোর একটি হচ্ছে অনুকরণ প্রবণতা। সেই অনুকরণ থেকেই নাটকের জন্ম। সেজন্য তিনি নাটককে বাদ দিতে চাননি। রাষ্ট্রের পক্ষে নাটককে কাজে লাগাতে চেয়েছেন। তিনি নাটককে রাষ্ট্রের পক্ষে কাজে লাগাবার তত্ত্বই প্রচার করেছেন তাঁর কাব্যতত্ত্বে। বিয়োগান্ত নাটক বা শোকগাথা নিয়ে সেখানে তার আলোচনা। কাব্যতত্ত্ব আজও নাটকতত্ত্ব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু দখল করে রয়েছে। কাব্যতত্ত্ব রচনার দুই হাজারের অধিক সময়কাল পর বিশ্বে সাড়াজাগানো নাট্যতত্ত্বের আলোচনাটি হচ্ছে ব্রেশটের নাট্যচিন্তা। য়্যারিস্টটল নাট্য আলোচনা গ্রন্থের নাম কাব্যতত্ত্ব রাখলেন কেন? কারণ নাট্যকারদের তখন ‘কবি’ বলা হতো, নাট্যকাররা যা সৃষ্টি করতেন তা ছিল কবিতা বা কাব্য।

নাটকের কাব্য বা শিল্পগত দিক ছাড়াও তার যে একটি ব্যবহারিক বা উদ্দেশ্যগত দিক আছে প্লেটো এবং য়্যারিস্টটলের বক্তব্যে তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। ফলে ‘শিল্প শুধু শিল্পের জন্য নয়’ কিংবা ‘নাটক শুধু নাটকের জন্য নয়’ প্রাচীনকাল থেকেই নাট্যকার এবং শিল্পীরা সে নীতি মেনে চলে এসেছেন। নাটকের যে একটি ব্যবহারিক দিক আছে তা নিয়ে প্রাচীনকালে অন্তত কোনো বির্তক ছিল না। প্রশ্নটি ছিল সে ব্যবহারিক দিকটা কী হতে পারে কিংবা নাটককে কী ধরনের কাজে লাগানো যায়। চিন্তারক্ষেত্রে গ্রীসের স্বর্ণযুগে নাটকের যে বিকাশ সেটা মূলত ঘটেছিল নগররাষ্ট্র এথেন্সে। গ্রীসের স্বর্ণযুগ বলা হলেও সেটা ছিল দাসযুগ। কিন্তু জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা, নাট্যচর্চা আর রাষ্ট্রচিন্তার জায়গায় বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে তখন গ্রীস। সেখানে নাটকের দর্শক হিসাবে বহু মানুষের উপস্থিতি নাটককে করেছে গৌরবময়, নাটকের অভ্যন্তরে এনে দিয়েছিল প্রাণবন্ততা। প্রাচীন এথেন্সের গণতন্ত্র ছিল ইহজাগতিক, নাটকও ছিল তাই। চিন্তার মুক্তিসাধন করা, অবিচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনমত জাগ্রত করা; এ সবই ছিল তখন গ্রীক নাটকের লক্ষ্য। বিশেষত গ্রীক শোকগাথা নাটক জীবনের শাশ্বত ও বিশ্বজনীন রূপই তুলে ধরে। নাটকের ক্ষেত্রে একটি প্রধান চরিত্রের ওপর সমস্ত দৃষ্টি একান্তভাবে নিবদ্ধ না রেখে যদি গোটা নাটকটাকে পূর্ণমাত্রায় অনুভব করা যায় তাহলে এই বোধ জন্মায় যে শোকগাথা নাটক কোনো একক ব্যক্তির জীবনের ঘটনা নয়। শোকগাথা নাটক একটি জনসমষ্টির সামাজিক জীবনের সংকটের অভিজ্ঞতা। যথার্থ শোকগাথা নাটকের জন্য তাই একটা সমাজের অবস্থিতি প্রয়োজন।

প্রাচীন শোকগাথা নাটক এই অনুভব জাগায় যে মানুষ বা মানুষের সামাজিক গোষ্ঠী এক বিরাট বিশ্বের অংশ। সেই বিশ্বের গতি-প্রকৃতি বা নিয়মের বহুকিছুই মানুষের অজানা। মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এক রহস্যময় নিয়তি মানুষকে অনেকটা স্বাধীনতা দিয়েও, মানুষের কৃতকর্মের দায় মানুষের কাঁধে চাপিয়ে পরিণামে মানুষকে ধ্বংস করে। সেজন্য শোকগাথা নাটকে মানুষের আক্ষেপ ধ্বনিত হয়, প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় চাপিয়ে দেয়া বিশ্ববিধানের বিরুদ্ধে; বিধাতার বিচার করতে উদ্যত হয় মানুষ। নাটকের আবরণটাই সেখানে ধর্মীয় মাত্র। প্রাচীন গ্রীসের নাটকে দেবদেবীরা মানুষের চতুষ্পার্শ্বেই রয়েছে, তারা নিয়ন্ত্রণ করছে মানুষের ভাগ্য। মানুষও সবসময় লড়ছে সেই ভাগ্যের বিরুদ্ধে। চিরন্তন মানুষের ছবি সেটা; মানুষ পরাজয় মানে না, সে দুঃখ ও বিপর্যয়ের সঙ্গে অনিবার সংগ্রাম করে চলে। গ্রীক বিয়োগান্ত নাটক তাই বলছে, ভাগ্য অমোঘ হতে পারে তবে তার বিরুদ্ধে সংগ্রামেই বীরত্ব। লড়াইটা মানবিক, তাই সম্পূর্ণ ইহজাগতিক। লড়াইয়ের ক্ষেত্রটা সেখানে ভিন্ন, লড়াইটা অনিবার্য কিন্তু ঘৃণার প্রকাশ ততোটা নেই। কারণ গ্রীক শোকগাথা নাটকে নেই কোনো খলচরিত্র। গ্রীক শোকগাথা নাটকে তাই যে দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষ দেখা যায় তা ভালোর সঙ্গে মন্দের দ্বন্দ্ব ততোটা নয়, যতটা এক ভালোর সঙ্গে আরেক ভালোর সংঘর্ষ। বিয়োগান্ত নাটকের পরিণামে তাই নেমে আসে বিরাট শোকের ছায়া। পরবর্তী যুগের বিয়োগান্ত কাহিনি পারস্যের ‘সোহরাব-রুস্তম’; পিতা-পুত্র না জেনেই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং পুত্র প্রাণ দেয় পিতার হাতে। সৎ এবং অসৎ মানুষের দ্বন্দ্ব এখানে ছিল না। দ্বন্দ্ব ছিল বীরত্বের দম্ভের সঙ্গে পিতার পরিচয়ের। পুত্র আসলে পিতার সন্ধানে বেড়িয়েছিল কিন্তু বিরাট বীর রুস্তমের অহঙ্কারে পিতা-পুত্রের মধ্যে স্বাভাবিক পরিচয় ঘটলো না, যুদ্ধ এবং মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিচয় হলো দুজনের। পিতার হাতে পুত্রের মৃত্যুকে ঘিরে নেমে এলো শোকের ছায়া। রুস্তমের বীরত্বের অহঙ্কার তার সর্বনাশ ডেকে আনলো।

গ্রীসের বিয়োগান্ত নাটক মানুষের মনে নানা প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে। বিয়োগান্ত নাটক জানতে চায়; মানুষের স্বরূপ কী, মানুষের যথার্থ পরিচয় কী? মানুষ কি অদৃষ্টের ক্রীড়নক মাত্র, নাকি মানুষের নিজেরও কিছু করবার ক্ষমতা আছে? বিয়োগান্ত বা শোকগাথা নাটকের চরিত্র এভাবেই নিজের স্বরূপ, নিজের যথার্থ পরিচয় জানতে উদগ্রীব ছিল। প্রশ্ন তোলাটাই সেখানে প্রতিবাদ। মানুষ নিয়তির কাছে প্রশ্নহীনভাবে নিজেকে সমর্পণ করতে চায় না, মানুষের জাগতিক ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ সেটা। মানুষে মানুষে সম্পর্কের ব্যাপারটাও সেখানে স্পষ্ট। মানুষের দুঃখভোগ বা যন্ত্রণা শোকগাথা নাটকের বিষয় নয়, শোকগাথা নাটকের বিষয় হলো এক বিশেষ ধরনের কর্ম থেকে সঞ্জাত দুঃখ বা যন্ত্রণা; এর দ্বন্দ্বে মানুষের সত্তা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। হেগেলের মতে মানবসত্তারই এক অংশের সাথে আরেক অংশের বিনাশকারী সংঘর্ষ, এটাই হলো শোকগাথা নাটকের আসল তত্ত্ব বা ঘটনা। কিন্তু বহু মানুষকে ঘিরে এবং সমাজ-রাষ্ট্রকে ঘিরে ব্যক্তির এই অন্তর্দ্বন্দ্ব। শাসক আর সাধারণ মানুষের চিত্রও সেখানে অঙ্কিত। প্রত্যেক বিয়োগান্ত নাটকেই কোনো-না-কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব বা একটা সংঘর্ষ থাকেই, সে সংঘর্ষ ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির কিংবা রাষ্ট্রের সাথে ব্যক্তির কিংবা নাগরিকের সাথে নাগরিকের। কিন্তু রাষ্ট্র সেখানে সবসময়ই উপস্থিত, সংঘর্ষটা তৈরি হয় রাষ্ট্রকে ঘিরেই। শাসকরা কখনও শোকগাথা নাটকের ঘটনার বাইরে থাকতে পারে না। ইডিপাস বা গ্রীসের যে-কোনো বিয়োগান্ত নাটকই হতে পারে তার উদাহরণ।

ইডিপাস গল্পে দেখা যায় নিয়তির অমোঘ পরিণাম। ব্যক্তির যন্ত্রণা বা নিয়তি নাটকের মূল কথা কিন্তু জনগণ ও শাসকের প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই এসে যায় সেখানে। শাসক সম্পর্কে ইডিপাস নাটকে বলা হয়, ‘দম্ভ থেকে জন্ম নেয় দুর্বিনীত শাসক। শক্তিতে দম্ভ হয় আরো স্ফীত, দম্ভ তাকে নিয়ে যায় জীবনের সর্ব্বোচ্চ চূড়ায়; তারপর পতন।’ দম্ভ বড় অপরাধ এবং তার পরিণাম নিদারুণ পতন; ইডিপাস নাটকের এ বক্তব্য শাশ্বত। আবার নগরীর কল্যাণের জন্য সাহস প্রদর্শন অন্যায় নয়। ইডিপাস নাটকে তাই বলা হচ্ছে, ইশ্বর যেন সেই উদ্যমী সাহসকে তিরস্কৃত না করে পুরস্কৃত করেন। সেখানে আরো বলা হচ্ছে মানুষের কল্যাণে বা স্বদেশের কল্যাণে যে এগিয়ে যায়, মানুষের সাথে দেবতার সংঘাতের দিনেও সে শ্রেষ্ঠ। মানুষ যখন মানুষের ভাগ্য পাল্টাতে লড়াই করে, তাকে শোকগাথা নাটকে এভাবেই সম্মানিত করা হয়েছে। নাটকে একথা বলা হচ্ছে যে, নগরকে রক্ষা করার জন্য এক অসামান্য বীরপুরুষের প্রয়োজন, অগ্রণী নেতার প্রয়োজন। পাশাপাশি রাষ্ট্রের নাগরিকদেরও সমালোচনা করা হয় এই বলে যে, সুবিধাভোগী জনম-লী সত্যের অনুসন্ধানের দায় নিতে চায় না, অজ্ঞানের নিরাপদ আশ্রয়ে শান্তশিষ্ট হয়েই থাকতে চায় কিন্তু তারা আবার বীর নেতাকেও চায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো এই, বিয়োগান্ত নাটকের স্রষ্টা ইস্কাইলাস ও ব্যঙ্গধর্মী নাটক বা কমেডির স্রষ্টা য়্যারিস্টফেনিস উভয়ে যথেষ্ট পরিমাণে উদ্দেশ্যমুখী ছিলেন। স্মরণ রাখতে হবে, তখন কবিরাই ছিলেন নাট্যকার। খ্রীস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের এথেন্সে ইস্কাইলাস ও ইউরিপিডিস একমত হয়েছিলেন যে, যিনি যথার্থ কবি তিনি মানুষের মনকে উন্নত করেন এবং নীতিবোধ জাগ্রত করেন। কবি তাঁর কল্পনা শক্তি ও রচনা কৌশল দ্বারা শ্রোতাদের মনকে জ্ঞান ও ধর্মের পথে পরিচালিত করেন।

ইস্কাইলাস, গ্রীক নাট্যকারদের মধ্যে যিনি ছিলেন সর্বপ্রথম, তিনি ধর্মের চেয়ে রাজনীতিকেই নাটকে প্রধান করে তুলেছিলেন। নির্দিষ্ট কারণেই পৃথিবীর প্রথম শোকগাথা নাটকের রচয়িতার জন্মের সাথে রাজনৈতিক ঘটনার ঘূর্ণাবর্তের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্তি অবধি ইস্কাইলাস বড় হয়ে উঠেছেন পারস্য আর গ্রীসের মধ্যকার যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যে। সেজন্য তাঁর শোকগাথা নাটকে বিষয়রূপে স্থান পেয়েছে যুদ্ধ ও নিয়মনীতি। চারশো নব্বই খ্রীস্টপূর্বে তিনি রচনা করেন প্রথম নাটক দ্য সাপ্লিয়ান্টস। বিশাল পারস্য বাহিনীর বিরুদ্ধে ম্যারাথনের প্রাঙ্গণে সাহসী গ্রীক-এথেনীয়দের মরণপণ সংগ্রাম তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল এই নাটক রচনায়। বিশাল সাম্রাজ্যশক্তির বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র একটি জাতির টিকে থাকবার লড়াইকে নাটকের বিষয়বস্তু করে তুললেন তিনি। ইস্কাইলাসের পারসিক নাটকটি রচিত হয়েছিলো স্যালামিসের নৌযুদ্ধে গ্রীকদের কাছে পারস্যদের পরাজয়কে কেন্দ্র করে। নাট্যকার নাটকটিকে গ্রীক বিজয়ের গাথা করে তোলেননি। বরং পারস্য বাহিনীর পরাজয়ের কারণগুলোকেই বিশ্লেষণ করেছেন। নাটকে ইস্কাইলাস দেখিয়েছেন ইতিহাস কোনো কাল্পনিক বিধান মেনে চলে না, চলে বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। নাটকে ঘটনাকে বিশ্লেষণ করার দায় নাট্যকাররা সেই অতীতকাল থেকেই পালন করে আসছিলেন। ইস্কাইলাস নাটকের বিষয়বস্তুকে যেভাবে বিশ্লেষণ করেন, পরবর্তীকালে সেটাই হয়ে উঠেছিলো মার্কসীয় রাজনৈতিক নাট্যকারদের প্রধান দাবি। নাট্যচর্চার প্রথমদিকে বিশ্লেষণের মাপকাঠিটি ছিল ভিন্ন, সেখানে রাজনৈতিক শোষণের বাইরে ন্যায়-অন্যায় বা নৈতিকতার ব্যাপারটি প্রাধান্য পেয়েছিল। ইস্কাইলাসের নাট্যরচনার প্রায় দু-আড়াই হাজার পর রাজনৈতিক নাটক সমাজবিশ্লেষণে শ্রেণীদ্বন্দ্বের প্রশ্নটি সামনে এনেছিল। ইস্কাইলাস, ইউরিপিডিস আর য়্যারিস্টোফেনিস নাটক নিয়ে যা বলে গেছেন দু-আড়াই হাজার বছর আগে, তা মনে বর্তমান যুগের সত্য। চলবে