নাঈমুল হাসান হিমেলের খুদে গল্প ‘ছেলেটি এসেছিল’

প্রকাশিত : জুন ২০, ২০২৩

ছেলেটি এসেছে...

 

তার আসার কথা ছিল। যেহেতু সে এসেছে, তাই তার প্রস্থানটাও নিশ্চিত। চিরন্তন সত্য।

 

ছেলটির হাবভাব একটু অন্য রকম। ঠিক স্বাভাবিক নয় । হয়তো তার জন্য এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতি তাকে এভাবেই চালনা করছে।

 

প্রকৃতির বিরুদ্ধে কেউ নয়। যাকে যে চরিত্রে প্রেরণ করেছে তার সেই চরিত্রে অভিনয়।


ছেলেটা একটা সমস্যা নিয়ে এসেছে। সে বলছে, আমি তাকে দেখছি। ছেলেটা বলার সময় তোতলাচ্ছে, সব সময় না। যখন কোনো বিশেষ বিষয়ের কথা বলছে, তখনই সে তোতলাচ্ছে।

 

তার বাঁ হাত কাঁপছে। বারবার ওপরের দিকে তাকাচ্ছে। স্বরের ওঠানামায় চোখের অস্থিরতায় এক অদ্ভুত আবহের সৃষ্টি হয়েছে।

 

জানালার পর্দাটায় উত্তরের শীতল বাতাস ধাক্কা দিচ্ছে আর আলোটা মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে। নির্ভয়ে ছেলেটা অবলীলায় তার কথা বলে যাচ্ছে।

 

আমি শুনছি। সর্বাঙ্গ সজাগ করে শুনছি। আর চোখের সামনে একটা চিত্র এঁকে নিচ্ছি। এটাই আমার কাজ।

 

আমার রুমটা একটা মাঝারি ধরনের কক্ষ। উত্তরে একটা জানালা আর একটি মাত্র দড়জা। সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের ওপরের তলায় হওয়ার আলো-বাতাস বেশ করে আসে। একটা শীতলতা কাজ করে মনে।

 

আলো মানুষের ভয়কে দূর করে সজীব রাখে। মানসিক সমস্যা নিয়ে মানুষ আসে এই ঘরে। তার মনমতো বলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ আবার কতটা একদমই গুরুত্বহীন। আমি শুনি শুনতে হয়।

 

মানুষের মনের কথা জমতে জমতেও মানুষ ক্লান্ত হয়। ক্লান্তি মানুষকে দুর্বল করে আর দুর্বল মানুষ অসুস্থ হয়। সে ক্লান্তি দূর করতেই আমার কাছে বলে। আমি শোনার আগ্রহে চোখে মুখে একটা অবাক বিস্ময় নিয়ে বসে থাকি। আমার বিস্ময়ে শ্রোতারা আরও বলার আগ্রহ পায়। বলতেই থাকে আর আমি শুনতেই থাকি।

 

বিভিন্ন কথা মনের কথা বিভিন্ন সমস্যার কথা তেমন এক অদ্ভুত ক্লান্তির কথাই বলতে এসেছে ছেলেটি। এই ছেলেটির সাথে আমার কোথায় যেন একটা মিল রয়েছে। তার গল্পের কোনো এক চরিত্রটা যেন আমায় টানছে। আমায় আচ্ছন্ন করে রাখছে। আমি শুনছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। হাহাকারে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলছি। মনে হচ্ছে, এক আমিই যেন বলছি। বলতে বলতে একটা ঘোরে চলে এসেছি।

 

ছেলেটা উঠে দাঁড়াল। বড় কাচের জানালাটা খুলে আমায় আসতে বলল। আমি উঠে আসলাম। জানালার পাশে নিচের রাস্তায় জ্যাম আর ক্ষুদ্র প্রাণের চলন। চোখটা হঠাৎ একটা অতি ক্ষূদ্র প্রাণের ওপর দৃষ্টি দেয় সাদা আর কিছু লাল ফুল হাতে গাড়ির পাশে পাশে ছুটে চলছে সে।

 

হ্যাঁ, ওই মেয়েটিই তো। আমি চিনতে পেরেছি আমার গাড়ির ভারি চাকার নিচে পিষ্ট হওয়া সেই মেয়েটি। আমার যে তার সাথে অনেক কথা। তাকে আমার বলতে হবে... আমার যে বলতে হবে। আমার যে মেয়েটির কাছে যেতে হবে।

 

ছেলেটি একটু মুচকি হেসে জানালাটা বন্ধ করে চলে আসে। ছেলেটি তার কাজ শেষ করে চলে যায় নতুন কাজের সন্ধানে। তার যে সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই। তার যে অনেক কাজ। অনেক জীবিত অতৃপ্ত আত্মাকে পরাধীনতার দাসত্ব থেকে বের করতে হবে...