
‘নরওয়েজিয়ান উড’ হচ্ছে সরলতার বিরলতা
মৃদুল মাহবুবপ্রকাশিত : জুন ১৪, ২০১৯
হারুকি মুরাকামির ‘নরওয়েজিয়ান উড’ পড়ে দুই-তিন দিন ভাবছি। নানা বিষয় নিয়েই ভাবাবে এই বই। খুবই প্লেন একটা টেক্সট। সাহিত্যের যে ঠাট, শব্দ বাক্যের যে কলা কৌশল উপন্যাসে সাধারণত থাকে তার তেমন কিছু নাই এই বইয়ে। বইটা শেষ করার পর একটা বইয়ের কথা মনে এসেছে। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের `চতুষ্কোণ`। কেন মনে হয়েছে তার ব্যাখ্যামূলক কোনো যুক্তি নাই আমার। এক অর্থে এই মনে হওয়াটা অমূলক। আবার অমূলক না যেহেতু আমার কোর মেমরি থেকে মানিক উঠে আসছে তার `চতুষ্কোন` বই হাতে। এই চিন্তার তেমন কোনো গুরুত্ব আমি দিচ্ছি না আপাতত। তবে কারণটা খুঁজছি।
খুব সাধারণ ভাষার একটা উপন্যাস, বিরল মাত্রায় জনপ্রিয়, ১৯৮৭ এ প্রকাশিত, মিলিয়ন মিলিয়ন বিক্রি এখন অবধি। সেই গানই বিখ্যাত হয় যে গান সহজেই সবাই গাইতে পারে। ‘নরওয়েজিয়ান উড’ তেমনই সরল গান যা সবাই যাপন করতে পারে। অতি চেনা সব গল্প। যে জীবনের গল্প এটা, সে জীবন অনেকই যাপন করে। এই সমস্ত সত্য মানুষ আর মানুষীর জীবন আমি দেখেছি। এবং উপন্যাসের নায়ক তোরু ওয়াটানবির যে জীবন তা অনেকেই যাপন করতে চায়। ফলে জীবনের সাথে সমদোলায় এই উপন্যাস দুলে ওঠে। সেই কারণে এই বই পড়ার সময় মনে হবে, পাঠক তার অভ্যস্থ পাঠের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে।
এই সরল গল্প যে কেউ লিখতে পারে। লেখাও হয় সমাজে। এমন বহু গল্প উপন্যাস আছে সব ভাষায়। কিন্তু তা ‘নরওয়েজিয়ান উড’ হয়ে ওঠে না। কেন? কারণ জীবনের প্রতিটা গল্পের যে বিটারসেন থাকে তা ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা সব উপন্যাসে থাকে না। ঘটনার ব্যাখ্যার এমন বিস্ময়কর অনুভূতি অভাবনীয়। উপন্যাসটি ঘটনায় সরল, তবে ঘটনার গভীরে দেখানোর যে স্বচ্ছতা তা ব্যাপক বিরল। ‘নরওয়েজিয়ান উড’ হচ্ছে সরলতার বিরলতা।
এমন সাদামাটা একটা গল্পের উপর জীবনের যে অসীম গভীর বেদনা আঁকা যায়, তা এই বই না পড়লে জানতামই না। ভাষা কৌশল প্লট এগুলো এই উপন্যাস জন্য জরুরি কিছু ছিল না। জীবনের সূক্ষ্মতা পরিমাপের যে ডিটেইলিং এর মধ্যে আছে, তাই একে আলাদা করে দিয়েছে। আমি একটু বেশি বয়সেই বইটা পড়লাম। আমার মত, ২৫ বছর বয়সের মধ্যে এই বই ছেলেমেয়েদের পড়া উচিত। কেন বললাম তা ২০-২৫ বছরের বালক-বালিকারা পড়লে বুঝবে। জীবনের ঘটনাগুলোকে সূক্ষ্মভাবে দেখার জন্য একটা আতশ কাঁচ আপনি অর্জন করবেন মনের মধ্যে।
লেখক: কবি