লেখক

লেখক

নজরুল ইসলামের ভ্রমণগদ্য ‘ভেনিস ভ্রমণে কিছু অভিজ্ঞতা’

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩

এড্রিয়াটিক অঞ্চলে ১১৮টি দ্বীপ নিয়ে ভেনিস অঞ্চল। আমি বিস্তারিত কিছু লিখব না। কারণ, গুগলে এসব তথ্য রয়েছে। আমি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কিছু লিখব। বিশেষত যারা বাংলাদেশ কিংবা আমেরিকা থেকে বেড়াতে আসবে, তারা এতে উপকৃত হবে।

 

ক. এয়ারপোর্টে ও Beyond: Venice এয়ারপোর্ট একটা দ্বীপের ওপর। নেমে কেউ ট্যাক্সি খুঁজবেন না। কারণ এখানকার বাহন Water Taxi, প্রাইভেট কিংবা পাবলিক। এয়ারপোর্টের সাথে অন্য কোনো দ্বীপের সরাসরি ভূমি যোগাযোগ নেই। সব কিছু পানি পথে।

 

খ. কেথায় থাকবেন? যদি আপনি খোদ ভেনিস শহরে থাকতে চান, সেটাই ভালো। তবে হোটেলগুলো ৫ তারা হলেও মান নিম্ন এবং কক্ষগুলো খুব ছোটো। এমন কি বিলাসবহুল সুইটগুলোও। আমি এক ইতালীয় আমেরিকান বন্ধুর উপদেশে ঠিক পাশের দ্বীপ মোড়ানো দ্বীপে রুম নিয়েছি। নাম Hyatt Centric Murano, যার সব কিছু অত্যন্ত বিলাসবহুল এবং উচ্চ মানের। এখানে প্রতিরাতে $৩৭৫ ডলারে বিশাল বিলাসবহুল সুইট পাওয়া যায়। খোদ ভেনিসে তা পাওয়া যায় না। আসা-যাওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টা জলট্যাক্সি আছে যাতে মাত্র ১৫ মিনিট লাগে। ভাড়া ৯ ইউরো। আমরা Unlimited ticket কিনেছি আসা০যাওয়ার জন্য। দুজনের ৭০ ইউরো লেগেছে দুই দিনের জন্য।

 

গ. কি দেখবেন: দেখার শেষ নেই। ভেনিসে নামামাত্র চারদিকের জলধারা দৃষ্টি কেড়ে নেবে। মন জুড়াবে। San Marco Square, গনডোলা চড়া, গ্লাস ফ্যাক্টারি দেখা। অত্যন্ত উচ্চ মানের গ্লাস শো পিস, গয়না দেখা, কেনা, রাতে জাহাজে Dinner cruise। সব কিছুর জন্য অগ্রিম বুকিং দরকার, নয়তো জায়গা নেই। আর নীরব খাল পাড়ে হাঁটাও এক বিনোদন।

 

ঘ. এখানে ৩৫০০০ বাঙালি আছে। যারা মূলত Service, Hospitality sector এ কাজ করে। দেখা হলে খুব আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে। আমার অভিজ্ঞতা সীমিত। তবে বিনা দ্বিধায় বলতে পারি, বেড়িয়ে যান ভেনিস। ভালো লাগবে। মনে থাকবে চিরদিন।

 

ভেনিসের একমাত্র পরিবহন ব্যবস্থা
ওদের ব্রুচিউর এর লেখা আছে, জলট্যাক্সি হলো ভেনিসের নিউইয়র্কের সাবওয়ের মতো। এই শহর কি করে তৈরি করা হয়েছে তা সবাই গুগল করে পড়ে নেবেন। পঞ্চম শতাব্দীর বিজ্ঞান আজকের বিজ্ঞানের চেয়ে অনেক এগিয়ে, তা জেনে মোহিত হবেন। আমাদের হোটেলের নিচেই আমাদের জলট্যাক্সি স্টেশন। আমরা সারা দিন ভিন্ন ভিন্ন দ্বীপে যাই এই বাহনে চড়ে। কাল ভেনিস ছেড়ে চলে যাব। শরীর আর বয়স, দুটোই প্রতিকূলে। তবে ইউরোপের সব জায়গার মধ্যে ভেনিস সব চেয়ে ভালো লেগেছে।

 

ফাইনালি ডানা ইসলাম ইজ স্মাইলিং
ভেনিসে এসে এক রেস্টুরেন্টে দেখি, সবাই বাঙালি স্টাফ। ডিনুর সেকি আকুতি। এক ওয়েটারকে বলল, ভাইরে আমাকে একটু ভাত দিবেন?
বিলাসী ইটালিয়ানো রেস্টুরেন্টের সেই বাঙালি স্টাফ এত সদয়, প্রায় আধঘণ্টা সময় নিয়ে বিশেষভাবে ভাত রান্না করে, সাথে চিংড়ি ভাজি করে ডিনুকে এনে দিলেন। সাবাশ বাঙালি।

 

যদি বেচে থাকি, আবার আসিবো ফিরে। তবে এ বছরের বাকি যেসব প্ল্যান তা হলো: মেকিক্সো, বাহামা, ডোমিনিকা, মরক্কো, দুবাই (মোটেও পছন্দ নয়, তবে ট্রানজিটের সুবিধাজনক হওয়ায় বারবার যাই) ও সৌদি আরব। গিন্নি তৃতীয়বারের মতো ওমরাহ করছেন। আবার হজ্বও করেছেন। আমাকে সাথে টেনে নিয়ে যান। আমি অবশ্য ফরজের চেয়ে সুন্নত পুরো করতে বেশি আগ্রহী। মানে, শাদি নম্বর ১, ২, ৩, ৪...

 

এরপরের প্ল্যান হচ্ছে, মরক্কো, পাকিস্তান (লাহোরের নাল্লি বিরিয়ানি খেতে) আর প্রাণের বাংলাদেশ। ঢাকা পৌঁছেই সোজা নাজিরা বাজার, হাজীর বিরিয়ানি খেতে।

 

লেখক: নিউইয়র্ক প্রবাসী কার্ডিওভাস্কুলার সার্জন এবং উর্দু কবি