ধর্ম নিয়ে কপটতা
বৈতরণী হকপ্রকাশিত : মে ০১, ২০১৮
শাকিব খান আর বিদ্যা সিনহা মীম অভিনীত নতুন একটি সিনেমার গানের প্রথম লাইন হচ্ছে, তোর রিস্কি রিস্কি চাউনিতে হুইস্কির ফ্লেভার আছে। গানের কথা নিয়ে আমার মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। আমার কথা এই গান নিয়ে নয়, একটু অন্য দিকে যাব।
২০১১ সালের ৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতো আমি লন্ডনে আসি। বাংলাদেশ বিমানে এসেছিলাম। কানায় কানায় ভরা থাকে ফ্লাইটটি। স্বাভাবিকভাবেই বেশির ভাগ যাত্রী সিলেটের মানুষ। এদের মধ্যে অধিকাংশ বয়সে বৃদ্ধ। ইউকের তীব্র শীতের সময় তারা বাংলাদেশে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
যাই হোক, আমার পাশে ছিলেন এক বয়স্ক খালাম্মা। খালাম্মা একটু পর পর সিটের সামনে চিপা জায়গায় শুয়ে পড়ছিলেন। তার হাতব্যাগেই কাঁথা আর বালিশ এনেছিলেন। আমার পা রাখতে খুব সমস্যা হচ্ছিল। ফ্লাইটে আর কোনও জায়গা না থাকায় আমাকে অন্যখানে স্থলাভিষিক্ত করা যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় কেবিন ক্রু বারবার উনাকে সিটে বসতে বললেও উনি তুই তুকারি করে বিদায় দিচ্ছিলেন। এমনকি সিট বেল্ট আটকানোর সংকেত আসলেও উনি উঠছিলেন না।
এরপর এক সময় উনি ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম থেকে উঠে শুরু করলেন উনার জীবনের গল্প। যদিও আমি তেমন আগ্রহী ছিলাম না। খালাম্মা চল্লিশ বছরের উপর থাকেন ইংল্যান্ডে। উনি বোরখা সেলাই করে স্বামীকে রেস্টুরেন্ট খুলতে সাহায্য করেছিলেন। উনাদের সাতটা কি আটটা সন্তান আছে, সবাই এ দেশেই থাকে। সেবার খালাম্মা বাংলাদেশে গিয়েছিলেন এই জেনে যে, উনার প্রায় আশি বছরের বৃদ্ধ স্বামী সিলেটের মৌলভীবাজারে নিজের মেয়ের থেকে কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে মধুচন্দ্রিমাতে আছেন। এই খালাম্মার মতো এমন কাহিনি অহরহ হয়ে থাকে এখানে।
দেশে গরিব ঘরের মেয়েদের বিয়ে করা এসব এক পা কবরে যাওয়া প্রবাসী বৃদ্ধদের একটা শখ বলা যায়। কিছুদিন আগে শুনলাম, এক বৃদ্ধ সিলেটি রেগুলার চেক আপ করার জন্য থাইল্যান্ড যাচ্ছেন। কারণ এখানে সরকারি চিকিৎসা, বেশ সময় অপেক্ষা করতে হয়ে। আসল কথা হলো, চাচা যাচ্ছেন ইন্দোনেশিয়া। সেখানে উনি দুই সপ্তাহ থাকবেন একটি বিয়ে করে। হালালভাবে আমোদফূর্তি করে আসার আগে মেয়েটিকে তালাক দিয়ে আসবেন। বিভিন্ন মুসলিম দেশে পরহেজগার পুরুষ জাতির জন্য এমন হালাল ফূর্তির ব্যবস্থা থাকে। আসেন বলি মারহাবা!
শুরুতেই হারাম পানীয়ের নাম নিয়ে শুরু করেছিলাম। আমাদের দেশ থেকে যারা কোনো রকম লেখাপড়া ছাড়াই অনেক আগে এ দেশে এসেছিলেন, তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোর পথচলা, যেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে তারা বড় বেশি আল্লাহ ভীরু, মসজিদ মাদ্রাসার জন্য কতই না দান করেন। ব্যাপার হলো, প্রায় সব রেস্টুরেন্টেই তারা মদ বিক্রি করেন। কারণ ক্রেতাদের চাহিদা, জীবিকার জন্য হুইস্কি বিক্রি করে জাহান্নামে যাওয়ার রিস্কটা নিয়েই নেন তারা। আর মনে হয়, তাই মসজিদ বানাতে টাকা খরচ করেন আল্লাহর রাগ কমানোর জন্য।
এই যুগে মদ বিক্রি আর ফূর্তি হালালীকরণ নিয়ে লেখার কোনো মানেই নাই। তবে আমার কাছে যেটা কষ্ট লাগে সেটা হলো, হিপোক্রেসি। ধর্ম মানলে সেটা এক ব্যাপার, কিন্তু নিজেদের সুবিধা মতো ধর্ম সাজায় নিলে তো বিপদ! বাকিদের কাছে এগুলোর কথা কোনো ব্যাপার না হলেও আমি নিতে পারি না এমন অরাজকতা। কারণ দেখি তো, ঘুরেফিরে এসব লোকরা মেয়েদেরকেই অবদমন করে রাখতে চায় আর মূলভিত্তি ধরে সেই ধর্মকেই।