দ্যা গ্রেট থিফ
পর্ব ১
মুনতাসির মামুনপ্রকাশিত : মে ০৪, ২০১৮
কী অস্থির ঝড় দেখসিস! পুরাই মাথা নষ্ট... কত্ত দিন পর বল তো! ওই কই যাস?
ক্যামেরাটা লিয়ে আসি। এই বালের শহরে তো বৃষ্টি আহেই না!
অ, নিচের থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে আসিস। আমার টেবিলের ওপর আছে।
অকা... সিঁড়ি বেয়ে দুপদাপ করে নামতে লাগলো অনন্ত। ওদের ফ্ল্যাটটা তিন তলায়। এই চারতলা বিল্ডিংয়ের দুটো তলা নিয়ে থাকে ওরা কয়েকজন। সবাই ওদের ডিপার্টমেন্টের ছাত্র। বিভিন্ন ব্যাচের। কয়েকজন থাকে নিচতলায়, আর অনন্তরা তিন তলায়।
বাসার দরজার লকে চাবি ঘোরাতে গিয়ে দেখলো, দরজা আগে থেকেই খোলা। বিড়বিড় করে গাল দিল, শালারা দরজাটাও বন্ধ করতে পারে না!
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। দরজা দিয়ে ঢুকতেই প্রথম রুমটা ওর। ফ্যামিলি বাসা থাকলে এটাকে অবশ্য ড্রইং রুম বলা হতো। বিছানাটা মেঝেতেই করে নিয়েছে ও। তোষক বিছিয়ে। নিচু হয়ে বিছানার চিপা থেকে ক্যামেরাটা তুললো। নেড়েচেড়ে দেখলো একবার, হ্যাঁ, রিল ভরাই আছে। ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে রুম্মনের রুমে ঢুকলো। ওদের পুরো বাসার সবচেয়ে গোছানো রুম এটা। রুম্মন বেশ গোছানো স্বভাবের। ওর রুমের মেঝেতে কখনো ধুলোর স্পর্শ পাওয়া যায় না। প্রচুর সিগারেট টানলেও ছাই সবসময় অ্যাশট্রেতে ফেলে। সেই অ্যাশট্রেও দিনে একবার পরিষ্কার করে। টেবিলের বইগুলোও বেশ গোছানো। প্রতিটা কোর্সের বইখাতা আলাদা আলাদাভাবে সাজানো। টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে পকেটে পুরলো অনন্ত। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে মূল দরজার দিকে এগোলো। নিজের বিছানার দিকে তাকিয়ে কেন যেন তার মধ্যে অস্বস্তি কাজ করতে লাগলো, কী একটা যেন মিস করে যাচ্ছে। ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিয়ে দরজার খুলে বেরোলো, ঝড় থেমে যাওয়ার আগে ছাদে গিয়ে ছবি তুলতে হবে... ফিরে এসে না-হয় ভেবে দেখবে, কী তাকে ভাবাচ্ছে। দরজা লাগিয়ে সিঁড়িতে পা রাখা মাত্রই ওর মাথায় ঝট করে একটা সম্ভাবনা খেলে গেল। দরজার দিকে আবার ফিরে গেল ও। নিজের বিছানার পুরোটা হাত দিয়ে আঁতিপাতি করে কী যেন খুঁজতে লাগলো। বিছানার তোষক ওল্টালো। টেবিলের বইপত্র সরাতে লাগলো অস্থির ভাবে। এতক্ষণে বুঝতে পারলো, কী মিস করে গেছিলো ও। বিছানার দিকে আরেকবার অসহায় চোখে তাকালো অনন্ত।
আপনি বলতে চাচ্ছেন, আপনার ল্যাপটপ হারানোর এখনো একদিনও পূর্ণ হয়নি, আর আপনি সেটার জন্য একটা জিডি করবেন? অনন্তর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার।
দেখেন,আমি ওটা গতকাল থেকে আজকে এখানে আসার সময় পর্যন্ত তন্ন তন্ন করে খুঁজছি। বাসায় কোথাও থাকলে এতক্ষণে ঠিক পেয়ে যাইতাম। ওটা হারায় নাই, চুরিই হইছে। অসহায়ের মতো জবাব দিল অনন্ত।
দ্যাখেন,আমার তো জিডি এন্ট্রি করে নিতে কোনো সমস্যাই নাই। কিন্তু আমি বলি কি, আপনারা আগে নিজেরাই আরেকটু ভালো করে খুঁজে দ্যাখেন। কারণ আমরা ইন্ভেস্টিগেশন শুরু করলে আপনার বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীদের ক্রমাগত জেরা করে যেতে হবে। তখন আবার আপনারা বলবেন, এটা হ্যারাসমেন্ট!
আমরা এখন জিডিটা করে গেলে আপনারা কখন আপনাদের কাজ শুরু করতে পারবেন বলে মনে হয়? বন্ধুর সাহায্যে এগিয়ে এলো রুম্মন।
আসলে,আমাদের কাজ তো আর একটা না... একসাথে হাজারটা কাজ হ্যান্ডেল করতে হয়। আপনার মতো সমস্যা আরো হাজার জন নিয়ে আসে। এক এক করে সেগুলো হ্যান্ডেল করি আমরা।
তাহলে তো জিডি করে কোনো লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ এই সময়ে ওটা যত হাতবদল হবে যে, পরে আর খুঁজলেও হদিস পাওয়া যাবে না। তাহলে আমরা বরং উঠি, বাসায় গিয়ে খুঁজি। না পেলে ওটা গেছে বলে ধরে নিতে হবে... আর কী করা... চল অনন্ত। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রুম্মন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউই এই কাজগুলো করে থাকে। দ্যাখবেন, আপনার বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যেই কেউ হয়তো এটা করেছে। ভাগ্য ভালো হলে হয়তো পেয়েও যাবেন।
দেখা যাক... ধন্যবাদ।
শালার এই চ্যাটের দ্যাশে কোনো কিছুতে কোনো সিস্টেম নাই... থানার কম্পাউন্ড থেকে বেরিয়ে ঝাল ঝারলো রুম্মন। অরা কি আর গুরুত্ব দিবো, মারাটা তো খাইছি আমি। পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে নিল রুম্মন। ক্যাম্পাসের দিক চল, নাকি?
হঅ, ক্লাস আছে দেড়টায়। রুমে ফিরে ঘুম দিতে হইবো একটা। হাত ঘড়িতে চোখ বুলালো অনন্ত, এই মামা, ক্যাম্পাস যাবা? একটা রিকশা থামালো রুম্মন।
খবর শুনে ক্যাম্পাসের ‘শিকারি’ খ্যাত, নারী সমাজের হার্টথ্রুব পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চি উচ্চতাবিশিষ্ট তরুণ যুবা দীপন আহাদ ওরফে দীপু বলে উঠল, বলিস কী!
হঅ, ম্যানার নাই কোনো শালাদের।
তো, এখন কী করবি, ভাবছিস? অবশ্য তোর জন্য এটা কোনো লস না, বড়লোক বাপ... দুইদিন পরেই আরেকটা পেয়ে যাবি।
পাবো তো অবশ্যই, যদিও স্টোরেজে অনেক কিছু ছিল, ছবি-গেমস। কথা সেটা না। কথা হচ্ছে, বন্ধু-বান্ধবের কেউ কেন এই কাজটা করবে? সেটাই জানতে চাই আমি। নাইলে এই কয়েকমাসে কি আমি কম জিনিস হারাইছি! এটা বের করার জন্য যার কাছে যাওয়ার লাগে, আমি যামু।
মানলাম, তুই অনেক কিসু হারাইছিস। এজন্য তুই বাইরের কারো হেল্প নিবি?
কী খবর ভাই? মহিবুল্লা ভবনের দিক থেকে হেলেদুলে ভুড়ি নাচিয়ে আসতে দেখা গেল ডিপার্টমেন্টের চটিয়াল খ্যাত (!) রাশেদকে।
চলবে