সংগৃহিত

সংগৃহিত

দ্য গ্রেট থিফ

পর্ব ২

মুনতাসির মামুন

প্রকাশিত : মে ০৭, ২০১৮

“আর খবর!অনন্তর ল্যাপটপ যে চুরি হইসে,শুনসিস?”হড়বড় করে উঠলো দীপু।

“নিউজ ফিড,মাই ডে...সবই তো এটা প্রচার করে ভাসায় দিছেন,না জাইনা উপায় কী!”

“অনন্ত তো কারো হেল্প নিতে চাচ্ছে ওটা খুঁজার জন্য,বাইরের লোক না হলে ভালো হয়,বাইরের কারো ইনভলভমেন্ট না থাকাই ভালো...যেহেতু,কাজটা নিজেদের কারোরই করা বলে মনে হচ্ছে।”

“কন কী!আপনাগো কেউরে আপনের সন্দেহ হইতাছে?”

“হয়তো,হয়তো না...আমি শিওর হইবার চাইতেসি।” দীপু এবার বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

 

গড়পড়তা বাংলাদেশীদের চেয়ে একটু বেশিই উচ্চতা ওর।মাথায় অবিন্যস্ত ঘন কালো চুল।মুখ ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।ওর দেহের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো ওর চোখ জোড়া,ক্যামন যেন মায়ার আবেশ মাখানো ও দুটিতে...যার আমোঘ টানে যেকোনো নারী নিজেকে বিলিয়ে দিতে উন্মুখ হয়ে থাকে।

চায়ের স্টলের দিকে এগিয়ে গেল ও।ফিরে এলো একটা কেকে কামড় বসাতে বসাতে।

“আমি উঠবোরে,টায়ার্ড লাগিচ্ছে ”। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছলো অনন্ত।

“খাঁড়ান, আপনার রিকয়ারমেন্ট অনুযায়ী এরকম একজন মনে হয় আছে।”বলে উঠলো রাশেদ।

“কার কথা বুলছিস?”ওর দিকে তাকালো দীপু।

“ ‘তার’ কথা।”ইঙ্গিতপূর্ণভাবে চোখ নাচালো রাশেদ।

“ তার কথা মানে?” “ঐ যে ফরায়েযীর ঘটনার সময় কাজ করলো যে...।”

“কোনটারে...ও,হ্যাঁ,এইবার বুঝছি।” মাথা ঝাঁকালো দীপু।

“তোরা তোদের চ্যাটের আলোচনা কর,আমি গেলাম।” বিরক্ত হয়ে হ্যারিস রোডের দিকে হাঁটা দিল অনন্ত।

“চারুকলা ঘুইরা আসি,চলেন,ভাই...।”প্রস্তাব রাখলো রাশেদ।

“আমার তো বউ আসবেরে।”

‘তাইলে থাকেন,আমি উঠলাম।”বেঞ্চ ছাড়লো রাশেদ।

“ঐ,দাঁড়া।” পেছন ফিরতেই দেখলো,অনন্ত আবার ফিরে এসেছে। “তোরা কার কথা কচ্ছিলি রে?”

দীপু আর রাশেদের মধ্যে ঝট করে চোখাচোখি হল,তারপর ওরা মুচকি একটা হাসি দিল একসাথে,” ‘তার’ কথা।”

 

প্রায়ান্ধাকার একটা ঘর।তাতে একটা তেল চিটচিটে বেডশিট বিছানো বিছানা।এলোমেলো ভাবে কয়েকটা বালিশ ছড়ানো।বিছানার ওপরে একে অন্যকে আস্বাদন করতে থাকা দুটো ঘর্মাক্ত নর-নারীর দেহ।ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস আর মৃদু গোঙ্গানির শব্দ ঘর জুড়ে।এরকম একটা কাম ঘন পরিবেশের প্রতি ভ্রুকুটি প্রদর্শন করতেই কিনা কে জানে,বালিশের পাশে রাখা ফোনটা কর্কশ ভাবে বেজে উঠলো।বিরক্ত হয়ে সঙ্গীনির ওপর থেকে নিরাভরণ পিঠের নিচ থেকে হাতটা বের করে ফোনটা রিসিভ করলো যুবকটি।

“★★★র পোলা,ফুন ★★★র আর টাইম পাও না!” ওপাশ থেকে কিছু বলা হল।

“না,আমি কোনো কাম-টাম করার পারুম না অখন...ক্যাম্পাস আসুম না আইজ।” ওপাশ থেকে আবার কিছু কথা।

“★★ খাও তুমি শালা!” লাইনটা কেটে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে সঙ্গীনির দিকে মুখটা ঘুরিয়ে আনলো সে,মেয়েটা ঠোঁটে একটা আবেশের হাসি ঝুলিয়ে রেখে ওর চুলগুলো নিয়ে খেলা করছে হাত দিয়ে।রেশমের মতো কোঁকড়া চুল একটা চোখের ওপরে পড়ে চোখটা ঢেকে দিয়েছে মেয়েটার।ঠোঁটের ওপর একটা কালো তিল।সঙ্গীনির মাথাটা এক হাতে পেছন থেকে ধরে তিলটার ওপর ঠোঁট নামিয়ে আনলো সে।তারপর দমবন্ধ করা একটা দীর্ঘ চুমু খেয়ে বালিশের নিচ থেকে কিছু একটা বের করে ছিঁড়ে ফেললো।সেই ছেঁড়ার শব্দ পেয়ে তার সঙ্গীনি একবার মুচকি হেসে তৃতীয়বারের জন্য প্রস্তুুত হলো। যুবকের কাঁধ খামচে ধরলো সে,”গিভ মি দ্যাট লিটল ডেইথ অ্যাগেইন!”

“মুর্গী মিসৌরীর কথা কচ্ছু তুই?” “হঅ,ওরে কইলে একবার চেষ্টা লিয়ে দেখতি পারে...।” বেঞ্চের ওপর পা তুলে দিয়ে এক হাতে মাথার চুল টানতে লাগলো অনন্ত।

মুর্গী মিসৌরি ওরফে মান্নান মিসৌরী ওদের ব্যাচেরই ছাত্র।তবে,গত বছর পরীক্ষা পুরোপুরি না দেয়ার কারণে ফেল করে ওদের পরের ব্যাচের সাথে আবার ক্লাস করছে।ও যেন কেন পরীক্ষা দেয়নি,সেটা এখনো ভালো করে বুঝে উঠতে পারেনি অনন্ত।এমন না যে ওর প্রিপারেশন খারাপ ছিল,দুটো পরীক্ষা দেয়ার পরেই পরের পরীক্ষাগুলো থেকে ওর কোনো খোঁজ নেই।পরে জানা গেল,ও নাকি সুন্দরবন ঘুরতে গিয়েছিল পরীক্ষা দিতে ভালো না লাগায়! ডিপার্টমেন্টে ‘পরিচিতি’ পর্বের দিন বড় ভাইয়েরা ওকে মুরগি করে বসিয়ে রেখেছিল জামরুল তলায়।আর সেখান থেকেই ওর নাম হয়ে গেল মুর্গী মিসৌরী।

“পরে কাহিনী ছড়ায়া বেড়াইবো নাতো আবার!”উৎকন্ঠার স্বর অনন্তর গলায়।

“মনে হয় না।”দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বললো রাশেদ।

“তাইলে,ওরে একটা কল দেই।” নিচুস্বরে ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো রাশেদ।

“অয় তো ক্ষেইপা গেল,মনে হয় ‘বার্গার’ খাইতে ব্যস্ত।সুমস্যা নাই,পরে নিজেই ফুন দিবো অয়।

”ফোনটা কান থেকে নামাতে নামাতে অনন্তর দিকে ইঙ্গিত পূর্ণ ভাবে চোখ টিপলো রাশেদ। “

‘বার্গার’ খাইতে ব্যস্ত মানে?”অবাক হল অনন্ত।

“হাতের চায়ের কাপের মুখটা একবার জিভ দিয়ে লেহন করলো রাশেদ,”মেয়নেজ দেয়া বার্গার।”

 

চলবে..