দুপুরবেলার গল্প

প্রাচ্য তাহের

প্রকাশিত : নভেম্বর ০৩, ২০১৭

হাত কাঁপছে রঞ্জুর।
খিলখিল হাসি। খিলখিল হাসি।
এ এক রহস্য বিন্দির। হাসির আড়ালে কী যেন লুকিয়ে সে রাখে, খুব ভেতরে। ধরাছোঁয়ার বাইরে অদ্ভুত রকমের সম্পর্কের খানিক তলানি। হতেও পারে, নাও পারে। হলেও ক্ষতি নেই, নাও হলে ক্ষতি নেই।
হাত তবু কাঁপছে রঞ্জুর।
সে তাকায়। বিন্দির দিকে নয়, বিন্দির পেছনে আমগাছটার দীর্ঘ হয়ে শুয়ে থাকা ছায়ার দিকে। অসহায় সেই চোখের চেয়ে থাকা।
তুই ছ্যামড়ি বজ্জাদ।
ভেংচি কাটে বিন্দি। হাসে আবারও। খিলখিল।
রাগ ধরে রঞ্জুর। তবে ভালোও আবার লাগে। চিবুকের ধারালো উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে
পড়ছে বিন্দির চারদিকে। সে ধারে ভেতরটা কেটে কেটে রক্ত বের হচ্ছে, টের
পায় রঞ্জু। রক্তাক্ত হতে হতে তার ইচ্ছে হয়, এবার একটু ছুঁয়ে দেয়া যাক বিন্দিকে।
এক পা এগোয় রঞ্জু। বিন্দি থমকায়। দুই পা এগোয় রঞ্জু। বিন্দি পিছোয় এক পা।
ডেকে ওঠে কোথাও ঘুঘু। চরাচর ঝলসাচ্ছে কেবল রোদের রঙে। শরশর পাতার শব্দ থেকে থেকে চারদিকে, আর সবই চুপচাপ।
কোমরে এক হাত রেখে বিন্দি দাঁড়িয়ে আছে আমগাছটার গায়ে ঠেস দিয়ে। চেয়ে আছে রঞ্জুর দিকে। রঞ্জু চেয়ে আছে খড়ের গাদার পাশে ঘাস খাওয়া গরুটার দিকে। কী এক পাখি এসে বসে আছে গরুটার পিঠে। খেয়াল নেই গরুটার, নিজের মনে ঘাস খেয়ে যাচ্ছে। আর পাখিটাও সেয়ানা যেমন, নিরিখের চোখে চেয়ে থাকে রঞ্জুর দিকে।
মন খারাপের মতো এক অবসাদ জড়িয়ে ফেলছে তার শরীর, মনে হতে থাকে রঞ্জুর। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুখ ফেরায় বিন্দির দিকে। আচল খসিয়ে ফেলেছে বিন্দি। কী যেন উঠেছিল আচলে। ফেড়েঝুড়ে ঢেকে নেয় শরীর। রহস্য ঘেরা চোখে তাকায়। ঠোঁটে ফিচকে হাসি।  
ফের হাত কাঁপছে রঞ্জুর। টের পাচ্ছে বুকের কাঁপুনি। ঘাড় কাৎ করে সে, তবে এই তোর খেলা।
ইস।
কাছে আয়।
ভেংচি কাটে বিন্দি। হাসে, চিলতে হাসি।
তুই কী রে...
হেসে ওঠে বিন্দি এবার। গলা খুলে হেসে ওঠে সে। হাসির দমকে শরীর কেঁপে কেঁপে ওঠে। খসে যায় ফের আচল। আচল টেনে ঠিক করতে করতে সে বলে, তুমি পাগল হইছ।
আর তুই পাগলী।
তা তো হইছিই। তুমি পাগল আর আমি পাগলী, হি হি হি...
দৌড়ে ছুটে আসে রঞ্জু। এসেই কাঁধ ধরে বিন্দির। হাসি থেমে যায় বিন্দির। চমকে ওঠে সে। আশপাশে তাকায়। ভীতি ছড়িয়ে পড়ে চোখমুখে। কাঁধ ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে। পারে না। আরেক হাত দিয়ে দুগাল চেপে ধরে রঞ্জু, কী এমন ভয় তোর।
ভয় নাই। ছাইড়া দ্যাও।
আজাইড়া।
হ আজাইড়া, ছাইড়া দ্যাও।
যা ছেমড়ি, তাকে ছেড়ে দেয় রঞ্জু। ছেড়ে দিয়ে নেমে যায় গাঙের ঢালু ধরে। সেদিকে চেয়ে থাকে বিন্দি। রোদের রঙ পড়ে চকচক করছে গাঙের পানি। ছোট ছোট ঢেউ নেই। তারমানে থির হয়ে আছে বাতাস। পাড় ঘেঁষে পানির রঙ সবুজ আর ছায়া ছায়া। গাছের ছায়া। লতা আর পাতার ছায়া। ঘরবাড়ির ছায়া। বিন্দিরও ছায়া।
বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইল সে। রঞ্জু নেই, তাকে আর দেখা গেল না। চট করে ঢালু বেয়ে নেমে পড়ল সে। দাঁড়ালো এসে ঘাটলায়। ডেকে উঠল হঠাৎ পাখি। শিস দেয়ার মতো সে ডাক।
আরেকবার।
ওপর দিকে চেয়ে খুঁজল পাখিটাকে, পেল না। আছে কোথাও পাতার আড়ালে। না পেয়ে সেও দিল এক শিস। আর তখন পাখিটাও দিল আরেক শিস। আর এরপর শিস দিতে দিতে পানিতে নেমে পড়ল বিন্দি। আচল খুলে ভেসে উঠল পানির ওপর। সে সাঁতরে যেতে লাগল মাঝ বরাবর। মাঝগাঙে পৌঁছে কয়েকটা ডুব দিয়ে ফিরে এলো আবার। ঘাটলায় বসে আচল দিয়ে ডলে তুলল পায়ের ছাতা, ঘাড়ের ছাতা। তারপর বুক পানিতে নেমে এসে ধুয়ে নিল শাড়ি। ডুব দিয়ে উঠে এলো শাড়ি শরীরে জড়িয়ে।
উঠোন পেরোতে গিয়েই সে থ। বারান্দায় পড়ে আছে মা। গালের পাশ দিয়ে গ্যাজলা নামছে গড়িয়ে। দুহাত ছড়ানো দুদিকে। ছুটে এলো সে। বুঝল, অজ্ঞান হয়ে গেছে। এ রকম হয়। প্রায় প্রায়ই এ রকম হয়। কিছু সময় চেয়ে রইল সে। পাথরের মতো ভার শরীরে এখন। হাহাকার ছড়িয়ে পড়ল বুকের খুব ভেতরে। কোথাও ডেকে উঠল পাখি। ভেজা আঁচল দিয়ে আলগোছে মুছে দিল সে মায়ের মুখ। তারপর উঠল।
বালতি খালি। পানি নিয়ে এলো গাঙ থেকে। কলাপাতা কেটে নিয়ে এলো একটা। ঘর থেকে বালিশ এনে মাকে শোয়ালো উঠোনের দিকে মাথা দিয়ে। পানি ঢালতে লাগল মাথায়। সাড় নেই মায়ের। বুক ওঠা-নামা করছে কেবল। কী খেয়াল হতে আঙুল দিয়ে দেখল মুখের ভেতর, ঠিক, দাঁত লেগে গেছে। ছাড়বে কিছু সময় পর, সে জানে, তবু খুব একা একা মনে হতে লাগল তার। এই মুহূর্তে মা নেই। সে যদি এখন মরেও যায়, কেউ নেই দেখার।
সে একা। কান্নার মতো একটা ঢেউ উঠল বুকের ভেতর। আর তখন বেড়ার কাছ ঘেঁষে একটা ছায়া দীর্ঘ হয়ে এগিয়ে এলো। চোখ ফেরাতে দেখল, জামালের মা। একহাতে শাড়ি-শায়া পুটলি করে ধরে আরেক হাতে গুল নিচ্ছে দাঁতে। পিচিৎ করে থুতু ফেলে সে দেখল মাটিতে পড়ে থাকা জমিলাকে। দাঁত ডলতে ডলতে এবার জিগেশ করল, ফিট হইছে ফের?
বিন্দি কথা বলে না। পানি ঢালে।
দাওয়ায় এক পা রেখে খুঁটি ধরে দাঁড়ায় জামালের মা। বিন্দির দিকে একটু ঝুঁকে বলল, বালো কতা তরা তো কানে তুলিস না। কইলাম, মীরের বাড়ি নিয়া যা। জ্বীনের পানিপড়া খাইলে কই যায় এইসব ফিট ব্যারাম। তর বাপরেও বোঝায় কার সাধ্যি।
বিন্দি চুপচাপ। তার ভালো লাগে জামালের মায়ের এই দাঁড়িয়ে থাকা। হাহাকার নেই আর চারদিক। মানুষ আছে একজন। মানুষের কথা আছে। মানুষের শব্দ আছে। বিন্দি কেবল একবার চোখ তুলে তাকায় জামালের মায়ের দিকে। মুখে কিছু বলে না।   
আর দাঁড়ায় না জামালের মা। নেমে যায় ঢালু বেয়ে গাঙের দিকে।
রোদ পড়ে এলো হঠাৎ। ছায়া ছায়া এখন চারদিক। পানি ঢালতে ঢালতে বিন্দি চোখ বুলিয়ে নিল উঠোনে। বাতাসের বাউড়ি উঠল উঠোন ঘেঁষা কাঁঠালগাছটার নিচে। ধুলো উড়িয়ে নিয়ে মিলিয়ে গেল গাঙের দিকে। গাছের পাতা শরশর কেঁপে উঠল। নির্জনতা চারদিকে। হাহাকারের মতো নীরবতা।
চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল যেন কেউ। মুখ ফিরিয়ে বিন্দি দেখল ঠোঁট কাঁপছে মায়ের। পানি ঢালা বাদ দিয়ে মায়ের আচল দিয়েই মুছিয়ে দিল মাথার পানি। ভেতর থেকে কাঁথা এনে ঢেকে দিল বুক অবধি।
বেলা গড়িয়ে গেছে। রোদের রঙ এখন নরম। ভেজা হাওয়া দিচ্ছে গাঙের ওদিক থেকে। কাপড় বদলে নিল সে এবার। কড়কড়ে ঠা-া ভাতের ভেতর থেকে সেদ্ধ আলু বের করে ভর্তা করে ফেলল। মায়ের জন্য আদ্দেক রেখে ভাত খেয়ে উঠল সে।
মায়ের কোনও সাড় নেই। ঘুমোচ্ছে। ডেকে খাওয়াবে কিনা ভাবল একটু, আবার মনে হলো, থাক, ঘুম থেকে উঠলে খাইয়ে দেবে। খুঁটিতে ঠেস দিয়ে বসে রইল বিন্দি। মায়ের মুখের দিকে তাকালো। তাকালো উঠোনে, যেখানে রোদ আর ছায়ার খেলা। পাখি ডেকে উঠল পায়খানার পেছন থেকে। কুটুম পাখি। তাকালো মায়ের মুখে, চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপছে তার। কুটুম পাখি কেন ডাকবে ভেবে সে কিছু পেল না। কেউ তো আসবে না, সে জানে। মা আর সে, এইভাবে তাদের দিন, এইভাবে তাদের রাত। আর কিছু নেই। কেউ নেই। তবে আছে, উঠোনে কোনও কোনও দিন একটা কী দুটো পাখি এসে বসে। কথাটতা হয় তার সঙ্গে। সব দিন যে হয় তা নয়। মন খারাপ হয়ে যায় বিন্দির।   
আবার কুটুম পাখির ডাক। উঠোনে নেমে দাঁড়ায় সে। পায়খানার চালার ওপর বাঁশঝাড়ে চোখ ঘোরায়, পায় না কিছু। ঘরের পেছন দিয়ে বেরিয়ে আসে বাইরে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে ঘাস মরে যাওয়া সরু মাটির রাস্তায়।
দূরে মাইকের আওয়াজ। কী সব মার্কা মার্কা বলে যাচ্ছে। আর ঘরঘর।
ভাঙাচোরা ইটদালানের বুনিয়াদি স্কুল ঝিমোচ্ছে দুপুরের রোদে। পাশাপাশি পাঁচটে ঘর, একটার ছাড়া বাকিগুলো হাঁ হয়ে খোলা। দরজা নেই, জানলাও। দরজা যে ঘরটায়, এখন ব্র্যাকের স্কুল। বারান্দায় কাদের একটা বকন বাছুর তিড়িং বিড়িং লাফাচ্ছে। স্কুল মাঠের একদিকে ছাপড়া মসজিদের সামনে ভোটের ঘর। তিনদিকে দড়ি বেঁধে বানিয়েছে, ওপরে টিনের চাল। দড়ির সঙ্গে নৌকো মার্কা। বাতাসে উলট-পালট খাচ্ছে নৌকো। বেঞ্চ আর দুটো টুল, আর কিছু নেই ঘরটায়। সন্ধের দিকে বড় বড় দুটো কেতলি আসে, অনেকগুলো কাপ আসে। লোকজন আসে। চা খায় আর গল্প করে। ভোটের গল্প। হাসিনা-খালেদার গল্প। বিন্দি জানে।
একদিন তাকে ডেকে বশির ভাই চানাচুর দিয়েছিল। ছোট ছোট নৌকো মার্কা দিয়েছিল অনেকগুলো। হেসে বলেছিল, তোর মারে কোস নৌকো মার্কায় য্যান ছাপ্পর মারে। বিন্দি ঘাড় নেড়ে বলেছিল, আমরা তো নৌকো মার্কাই।
মাইকের আওয়াজ কাছাকাছি শোনা যাচ্ছে। এরা ধানের শিষ। মাইকে ঘরঘর হচ্ছে আর বলছে, ধানের শীষে দিলে ভোট শান্তি পাবে দেশের লোক। ভোট ভোট ভোট চাই, ধানের শিসে ভোট চাই।
বকনা বাছুর ভোটের ঘরে এসে ঢুকেছে। ইস, দড়ি না ছিঁড়লে হয় এবার। খুব লাফাচ্ছে। বিন্দি এগিয়ে এলো, এই... এই...
কড়কড়ে রোদের দুপুর। ঝিমধরা নির্জনতা ছড়িয়ে আছে চারদিকে। আর খা খা শূন্যতা। হঠাৎ হঠাৎ ছুটে আসা ঝিরঝির বাতাসে ফরফর শব্দে দুলছে দড়িতে ঝোলানো ভোটের মার্কার কাগজ। বেঞ্চের ওপর আরামসে শুয়ে ছিল এক কুকুর। মুখ তুলে দেখল বিন্দিকে। এরপর লাফ দিয়ে নেমে গা ঝেড়ে নিল। ছুটল এরপর।
ফরফর... ফরফর...
বাতাসে কাঁপছে নৌকা মার্কা। বিন্দি বিড়বিড় করতে থাকে, নৌকা মার্কা জিতেই যাক... নৌকা মার্কা জিতেই যাবে...
টুলের ওপর বসল বিন্দি। দেখল, তার সাথে তার ছায়াটা দীর্ঘ হয়ে ছড়িয় পড়েছে ভোটের ঘরের সামনে। কী যেন ভাবনা এলো তার। রাতের বেলায় এই ছায়াটা যাই কই? ঘুমোতে যায়? কই যে এ ব্যাটার বাড়িঘর... এইসব ভাবনা দুপুরের সুনসান নীরবতার ভেতর তাকে নিয়ে খেলতে লাগল।
রোদের তাপ বাড়ছে। ঝিম ধরে আছে দুপুর। লোকজন নেই চারদিকে। এমনিতে এপাড়ার পুরুষ-নারী সবাই ভোরে উঠে কাজে চলে যায়। ফেরে সেই বিকেলে। যারা কাজ পায় না, আলসের মতো ঘরে শুয়েবসে তারা কাটাই। কয়েক ঘর মাত্র পরিবার নদীর পাড়ে সরকারি জমিতে। সরকারি হলে হবে কী, এলাকার শহিদ নেতা সবার কাছ থেকে কাগজে সই আর টাকা নিয়ে জমিতে বাড়ি তুলতে দিয়েছে। শহিদ তো সরকারি লোক, সে সরকারি দল করে।
ক্রিং... ক্রিং...
চমকে উঠে বিন্দি দ্যাখে, মসজিদের পাশের রাস্তা দিয়ে একটা ভ্যান আসছে। ভ্যানের ওপর কী রে ওইটা? বিন্দির কেন যেন মনে হয়, একটা মানুষের লাশ। গা ছমছম করে ওঠে তার। দুপুরের নির্জনতা আরো নির্জন হয়ে তার মেরুদ- হিম করে দেয়।
ভ্যানটা এগিয়ে আসে। ভোটের ঘরের কাছাকাছি এসে বিন্দিকে দেখে থামে ভ্যানঅলা। বিন্দি দেখতে পায়, চাটাই দিয়ে মোড়া মানুষের লাশ। পা দুটো ভ্যানের পেছনে ঝুলছে। ধুলোমাটি মাখানো। ঘিরঘিন করছে মাছি।
চোখ সরিয়ে নেয় বিন্দি। তার কী রকম যেন লাগে। কী রকম ভয়ের এক গন্ধ তার নাকে এসে ঝাপটা মারে।
কও তো বেটি, এহানে সফদার ফহিরের বাড়ি কুনডা?
কেঁপে ওঠে বিন্দি। কাঁপা কাঁপা চোখে তাকালো ভ্যানঅলার মুখের দিকে। দরদর করে ঘামছে বুইড়া লোকটা। কপাল বেয়ে গড়িয়ে নামছে ঘাম। গামছায় কপালের ঘাম মুছে সে আবার জিগেশ করল, এহানে সফদার ফহিররে চেন? গোপালগঞ্জে গেছিল ইটভাটায় কাম করতে?
বিন্দি ওপর-নিচে মাথা নাড়ায়। অনেক দূর থেকে ভেসে আসে ভোটের মাইকের শব্দ। কুকুরটা আবারো ফিরে এসেছে। লাশের পায়ের দিকে উবু হয়ে বসে সে ঘেউ শব্দে একবার ডাকল। এরপর উদাসীন হয়ে বসে থাকল।
বিন্দির খুব ইচ্ছে হলো, আরও একবার লাশের পা দুটো সে দ্যাখে। কিন্তু তাকায় না। কাঠ হয়ে যায় তার দেহ। গলার ভেতর শুকিয়ে যাচ্ছে।
তার বাড়িডা কুনডা?
বিন্দি কথা বলে না। মুহূর্তের দেয়ালে যেন সে আটকে গেছে। বের হতে পারছে না। স্থির হয়ে বিন্দি চেয়ে থাকে বুড়োর মুখের দিকে।
তার বাড়ির লোকজনরে তুমি চেননি? ও মাইয়া...
বিন্দি জবাব দিল না। তবে আঙুল তুলে দেখালো নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা কয়েকটা কুঁড়েঘর।
ভ্যানঅলা বলল, যাও তো বেটি, তার বাড়ির কাউরে অহন এট্টু ডাইকা দ্যাও। যাগো লাশ তাগো হাতে তুইলা দিয়া আমি যাই গিয়া।
হেঁচকি ওঠে বিন্দির। পরপর কয়েকবার। ঠেসে আসে বুকের ভেতর। থত্থর লাফাতে থাকে হৃদপি-। আর তখন নদীর পাড়ের কোনো গাছ থেকে ভেসে আসে কুটুম পাখির ডাক। কী যেন সম্মোহন রয়েছে এই ডাকে। পায়ে পায়ে বিন্দি সেদিকে হাঁটতে লাগল। আর তার পেছনে দীর্ঘ হয়ে হাঁটতে থাকে তার ছায়া।