দরবেশ মালেক দিদারের কিস্সা
আবু তাহের সরফরাজপ্রকাশিত : জুন ১৮, ২০১৮
দিনের আলোর মতো মিথ্যে প্রতিশ্রুতি
মালেক দিদার নামাজের মধ্যে যখন পড়তেন, ইয়্যাকা না-বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন, তখন থত্থর করে তিনি কাঁপতে থাকতেন। শিষ্যেরা প্রতিদিন দ্যাখে, কিন্তু কেউ কিছু জিগেশ করতে সাহস পায় না।
তবে একদিন এক শিষ্য কৌতূহল চেপে আর রাখতে পারলেন না। জিগেশ করে বসলেন, হুজুর, সূরা ফাতেহার বিশেষ একটি আয়াত নামাজের মধ্যে যখনই আপনি পড়েন, আপনাকে কাঁপতে দেখি। এর কারণ কি?
মালেক দিদার বললেন, দ্যাখো, নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, হে আল্লাহ, আমি একমাত্র আপনারই ইবাদত করছি, আর আপনারই সাহায্য চাচ্ছি। আসলেই কি তা আমি চাচ্ছি?
শিষ্যের মুখে কোনো কথা এলো না।
মালেক দিদার বললেন, এ বাক্যটি যদি কোরআনের না হতো, কিছুতেই আমি এটি পড়তাম না। এত দিনের আলোর মতো মিথ্যে এক প্রতিশ্রুতি। মুখে আমি বলছি, আমি একমাত্র তার কাছেই সাহায্য চাচ্ছি, কিন্তু বাস্তবে তো আমি মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নেই। তাদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশাও করি। আমি তো সরাসরি এক মিথ্যেবাদী। তাই নামাজে দাঁড়িয়ে আমি কাঁপতে থাকি, ভয়ে।
কৌশল কি একে অন্যকে বলে দেব
দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে একটু সুস্থ হলেন মালেক দিদার। মাংস খেতে খুবই ইচ্ছে হলো তার। দুর্বল দেহ নিয়ে তিনি বাজারে এলেন। মাংস কিনে বেরিয়ে গেলেন। মাংস-দোকানি জানতো, দরবেশ মাংস খান না। কী রকম খটকা লাগল তার। কর্মচারীকে তাই পাঠালো মালেক দিদারের পিছু পিছু।
কর্মচারী পিছু নিল। কিছু দূর গিয়ে নির্জন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লেন মালেক দিদার। থরের মধ্যে থেকে মাংস বের করে অনেকক্ষণ ধরে শুকলেন। এরপর দৃঢ় স্বরে বললেন, রে আত্মা, গন্ধ শুঁকেই তুপ্ত থাকো। এর বেশি আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
এসময় পথ দিয়ে এক ভিখিরি যাচ্ছিল। মালেক দিদার মাংসের থলে তাকে দিয়ে দিলেন। এরপর হাঁটা ধরলেন। কর্মচারী এসে দোকানিকে জানালো। পরদিন দোকানি গিয়ে হাজির হলো দরবেশের বাড়িতে। তাকে দেখে মালেক দিদার জিগেশ করলেন, তোমার কি কিছু পাওনা আছে?
দোকানি বলল, না হুজুর। আমি শুধু একটি কথা জানতে এসেছি।
দিদার জিগেশ করলেন, কি কথা?
দোকানি বলল, শুনেছি, চল্লিশ বছর আপনি মাংস না খেয়ে আছেন। কেন আছেন?
দরবেশ জবাব দিলেন, তোমার মাংসের কারবারে যেরকম কিছু কৌশল আছে, আমার জীবনের কারবারেও সেরকম কিছু কৌশল আছে। আমরা কি আমাদের কৌশল একে অন্যকে বলে দেব?
দোকানি মাথা নিচু করে ফেলল। এরপর ফিরে গেল।
জেগে ঘুমালে কে জাগাবে
ভাড়াটে বাসায় থাকেন মালেক দিদার। বাসার সামনেই এক ইহুদির বাড়ি। সে ছিল মুসলিম বিদ্বেষী। করল কী, দিদারের দরজার কাছাকাছি সে পায়খানা তুলল। পায়খানার গুমুত মালেক দিদারের ঘরের পাশের ড্রেন দিয়ে বয়ে যেত। দুর্গন্ধে বাতাস সমসময় ভারি হয়ে থাকে।
মালেক দিদার জানেন, ইহুদি লোকটি ইচ্ছে করেই একাজটি করছে। ব্যাপারটা নিয়ে তাকে বলতে যাওয়া মানে বিবাদে জড়িয়ে পড়া। তাই তিনি চুপচাপ রইলেন।
একদিন বাসা থেকে বের হতেই তার সাথে লোকটির মুখোমুখি দ্যাখা হয়ে গেল। ইহুদি জিগেশ করল, আমার পায়খানার কারণে আপনার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
বলেই চোরাহাসি হাসল সে। দিদার তা দেখলেন। বললেন, সমস্যা তো হচ্ছেই। তবে কী আর করার। প্রতিদিন যতটা পারি, ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে নেই।
লোকটি অবাক হলো। বলল, এতো খুবই নোংরা কাজ। এতদিন ধরে আপনি এটি করছেন, একবারও তো মুখ ফুটে কিছু বলেননি।
মালেক দিদার জবাব দিলেন, বললেও আপনি শুনতেন না। যে মানুষ জেগে ঘুমায়, তাকে কে জাগাবে?
আর কিছু না বলে লোকটি ঢুকে গেল ঘরের ভেতর। মালেক দিদারও বেরোলেন বাইরে। ফিরে এসে দেখলেন, পায়খানা নেই। জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে।
সমানে সমান
এক নাস্তিক একদিন ধরল মালেক দিদারকে। আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ দিন। বিনীতভাবে দিদার বললেন, দেখুন, বিষয়টি এরকমে নয়। আপনার ইচ্ছে হলে বিশ্বাস করুন। ইচ্ছে না হলে অবিশ্বাস করুন। প্রমাণ দেখে যে বিশ্বাস তৈরি হয়, তা কোনো খাবার দেখে স্বাদ চেখে দেখার মতো। আর প্রমাণ দেখে বিশ্বাস তৈরি হলে, সেখানে ব্যক্তির কোনো কৃতিত্বও থাকে না। পরম সত্তার অস্তিত্ব নিজের অস্তিত্বের মধ্যে তালাশ করে নিতে হয়।
নাস্তিক তবু নাছোড়বান্দা। সে বলল, এসব ভুজুং ভাজুং কথা। আপনি তো দরবেশ। দেখি তবে আপনার কেরামতি। তবেই বুঝব, আপনার মধ্য দিয়েই তিনি অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছেন।
দুজনের এই কথাবার্তা এতক্ষণ শুনছিলেন মালেক দিদারের কয়েক শিষ্য। হুজুরকে তারা বললেন, লোকটা বেশি বাড়াবাড়ি করছে। তাকে একটা কিছু প্রমাণ দেখিয়ে দিন হুজুর।
মালেক দিদার বললেন, ঠিকাছে। তবে আগুন জ্বালাও। আগুনের ওপর আমরা দুজন হাত রাখবো। যার হাত পুড়বে, সে নত হবে।
জ্বালানো হলো আগুন। তার ওপর হাত রাখলেন দুজন। বেশ কিছু সময় তারা ধরে রইলেন হাত। কারো হাতই পুড়ল না।
হতবাক হয়ে গেলেন শিষ্যেরা। বারবার তারা তাকাতে লাগলেন হুজুরের দিকে। মালেক দিদারও ঠিক স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। শিষ্যদের দিকে চেয়ে তিনি বললেন, তোমরাই এখন রায় দাও, কে কার কাছে নত হবে।
শিষ্যেরা সমস্বরে জবাব দিলেন, আপনারা দুজনই ঠিক পথে আছেন। সমানে সমান।
বিমর্ষ হয়ে গেলেন মালেক দিদার। মাথা নিচু করে বসেই রইলেন তিনি।
গভীর রাত।
ঘরের মধ্যে সেজদায় নত হয়ে আছেন মালেক দিদার। বিড়বিড় করছেন। ভেদ বলো হে প্রভু। নাস্তিক-আস্তিক কীভাবে সমান হয়, ভেদ বলো প্রভু...
রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়। হঠাৎ তিনি শুনতে পেলেন, ব্যাকুলতা কেন দরবেশ, ওঠো। তোমার সাথে তার হাত থাকায় আগুন তাকে পোড়ায়নি। নাস্তিক আলাদাভাবে হাত রাখলে ঠিকই পুড়ত।
ইশারা
দীর্ঘদিনের ইচ্ছে, কোনো ধর্মযুদ্ধে অংশ নেবেন মালেক দিদার। কিন্তু সে সুযোগ আর তিনি পান না। তবে একদিন পেলেন। মানসিকভাবে তিনি তৈরিও হলেন। কিন্তু বিধি বাম! ধর্মযুদ্ধের আগের রাতে কঠিন জ্বরে পড়লেন তিনি। কী আর করা, বিছানায় শুয়েই তাকে থাকতে হলো।
দুর্বল হয়ে গেল শরীর।
আর মালেক দিদার শুয়ে শুয়ে শরীরকে ধিক্কার দিতে লাগলেন। এসময় এক শিষ্য এলেন তাকে দেখতে। সালাম জানিয়ে বললেন, ধর্মযুদ্ধে মুসলমানেরা পরাজিত হয়েছে। কাফেররা তাদের বন্দি করে প্রতিদিন দুবেলা করে শুওরের মাংস আর মদ খাওয়াচ্ছে।
কেঁপে উঠলেন মালেক দিদার। কথা বলতে পারলেন না।
যাকে তালাক দিয়েছি কীভাবে তাকে আলিঙ্গন করি
বসরা নগরীর এক ধনীলোক মারা গেলেন। তার ধনসম্পত্তির মালিক হলো তার একমাত্র অবিবাহিত মেয়ে। সে ছিল রূপসী কোনো নদীর মতো। লাবণ্যে ঢলঢল তার দেহ। একদিকে সম্পত্তি, আরদিকে রূপের আগুন, ভাবনায় পড়ল মেয়েটি।
লোকমুখে সে মালেক দিদারের নানা গল্পকথা শোনে। শুনতে শুনতে সে সিদ্ধান্ত নিল, এই মানুষকেই বিয়ে করা যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। মেয়েটি দূত পাঠালো মালেক দিদারের কাছে।
দূতকে দিদার জবাব দিলেন, দ্যাখো ভাই, পৃথিবীকে আমি তালাক দিয়ে দিয়েছি। এখন তুমিই বলো, যাকে তালাক দিয়েছি, কীভাবে তাকে আবার আলিঙ্গন করি?
দুর্বল বুড়ো এবং আজদাহা সাপ
বিরাট মাহফিল। লোকে লোকারণ্য। বক্তব্য দেয়ার জন্যে মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন মালেক দিনার। এমন সময় দর্শকদের ভেতর থেকে বয়স্ক এক লোক বলে উঠল, আপনার বক্তব্যের আগে আমার একটি প্রশ্নের জবাব দিন।
মালেক দিনার বিনীতভাবে বললেন, জি বলুন।
লোকটি বলল, প্রায় দশ বছর আগে আপনাকে মাতাল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। দয়া করে বলবেন কি, ওই অবস্থা থেকে কীভাবে আপনি আজকের অবস্থায় এলেন?
মাথা নিচু করে মালেক দিনার কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইলেন। এরপর মাথা তুলে বললেন, ঠিক বলেছেন, আমিই সেই ব্যক্তি। শুনুন তাহলে আমার কাহিনি। এক কদরের রাতে মদের দোকান বন্ধ ছিল।
দোকানিকে অনুরোধ করে এক বোতল মদ কিনলাম, শর্ত হলো বাসায় খেতে হবে। ওখানে বসে খাওয়া চলবে না। বাসায় ঢুকলাম। ঢুকেই দেখি, স্ত্রী নামাজ পড়ছেন। আমার ঘরে গিয়ে বোতলটা টেবিলের ওপর রাখলাম। আমার তিন বছরের মেয়েটা দৌড়ে এলো। টেবিলে ধাক্কা খেল, ঝাঁকি খেয়ে বোতলটি পড়ে ভেঙে গেল। এ দৃশ্য দেখে আমার অবুঝ মেয়েটি খিলখিল হাসতে লাগল। এখন কী আর করার! ভাঙা বোতল ফেলে দিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরের বছর আবারও লাইলাতুল কদর এলো। ঠিক আগের বছরের মতোই দোকানির শর্তে রাজি হয়ে আমি মদ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বোতলটা টেবিলে রাখলাম। হঠাৎ টেবিলের ওপর বোতলটার দিকে আমার চোখ স্থির হয়ে গেল। তিন মাস হলো আমার মেয়েটি মারা গেছে। বোতলটা বাইরে ফেলে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। মদ আর খাওয়া হলো না। স্বপ্নে দেখলাম, বিরাট আজদাহা এক সাপ আমাকে তাড়া করছে। প্রাণ মুঠোয় নিয়ে আমি ছুটছি। এমন সময় দেখলাম বৃদ্ধ একজন মানুষকে। তিনি বললেন, আমি খুবই দুর্বল এবং ক্ষুধার্ত। এ সাপের সাথে আমি পারবো না। তুমি এই পাহাড়ে উঠে যাও।
আমি পাহাড়েই উঠতে শুরু করলাম। উঠে দেখি দাউদাউ আগুন জ্বলছে। পেছনে চেয়ে দেখি এগিয়ে আসছে সাপটি। আমি ডানদিকে ছুটলাম। কিছুটা এগোলেই দেখলাম, স্নিগ্ধতায় ঘেরা চমৎকার একটি ফুলের বাগান। বাগানে বাচ্চারা খেলছে। বাগানের গেটে দারোয়ান। আমাকে দেখতে পেয়ে সে বাচ্চাদের ডেকে বলল, দ্যাখো তো বাচ্চারা, এ লোকটিকে চেনো কীনা। একে সাপটা খেয়ে ফেলবে, নয়তো আগুনে ফেলে দেবে। বাচ্চারা ছুটে এলো আমার দিকে। তাদের মধ্যে আমার মেয়েটাও রয়েছে। মেয়েটা এগিয়ে এসে আমাকে ডানহাতে জড়িয়ে ধরে, বাঁহাতে সাপটাকে একটা ধাপ্পর দিল। সাপটা মাথা নিচু করে চলে গেল। ভারি অবাক হয়ে গেলাম আমি। জিগেশ করলাম, মা সাপটা তোমার ধাপ্পর খেয়ে চলে গেল কেন?
আমার মেয়েটা জবাব দিল, আমি জান্নাতের অধিবাসী। জাহান্নামের সাপ জান্নাতিদের দেখলে ভয় পায়। আচ্ছা আব্বা, তুমি কি ওই সাপটাকে চিনতে পেরেছো?
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, না তো মা।
মেয়েটি বলল, ও হচ্ছে তোমার নফস। নফসকে এত বেশি খাবার দিয়েছো যে সে এমন শক্তিশালী হয়েছে। সে তোমাকে জাহান্নাম পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে এসেছে।
আমি জিগেশ করলাম, বলতো মা, আসতে পথে এক দুর্বল বৃদ্ধ আমাকে এপথ দেখিয়ে দ্যান। তিনি কে?
মেয়েটি বলল, ও আচ্ছা, তাকেও তুমি চেনোনি? সে হচ্ছে তোমার আত্মা। তাকে তো কখনও খাবার দাওনি। তাই না খেতে পেয়ে সে কোনোমতে বেঁচে আছে। এই বলেই আমার মেয়েটি হেসে উঠল খিলখিল...। হঠাৎ আমার মেয়েটাকে আমার মেয়ে বলে চেনাই যায় না। ধড়ফড় ঘুম ভাঙে আমার। সেদিন থেকেই আমি আত্মাকে খাবার দিয়ে যাচ্ছি, আর নফসকে খাবার দেয়া একদম বন্ধ করে দিয়েছি। এখনও চোখ বুজলে আমি সেই স্বপ্নদৃশ্য দেখতে পাই। ঝকঝকে। দেখতে পাই আত্মারূপী সেই বুড়োকে। আহা, কত দুর্বল ছিল সে!
বলতে বলতে ঝরঝর কেঁদে ফেললেন মালেক দিদার।
সুখি কে
মালেক দিদার এলেন রাবেয়া বসরির বাড়িতে। দেখলেন, ব্যবহারের জন্য দু’চারটে মামুলি জিনিস ছাড়া তার ঘরে আর কিছু নেই। টুকটাক নানা কথাবার্তার ফাঁকে তিনি রাবেয়াকে বললেন, আপনার তো অনেক ধনী ভক্ত আছেন। যদি অনুমতি দেন তো, তাদের কাছ থেকে আপনার দরকারি কিছু জিনিসপত্র আমি এনে দিতে পারি।
রাবেয়া বললেন, আমার ও আমার বন্ধুদের জীবিকা কে দেন?
মালেক দিদার জবাব দিলেন, আল্লাহ।
রাবেয়া বললেন, তিনি আমাকে যখন দিচ্ছেন না তখন তারই দেয়া দান আরেকজনের কাছ থেকে আমি আবার কেন দান নেব? আর আমি যদি দরকার মনে করি, তবে আমারই উচিত তা আয় করে নেয়া। কিন্তু আমার যা আছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট। জগতে এই সন্তুষ্টি যার থাকে, সে সুখি। এর বাইরে আর কোনো মানুষ সুখি নয়।
আমি বেঁচে থাকি নিন্দা-প্রশংসার মাঝামাঝি
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন মালেক দিদার। একটু অন্যমনস্ক ছিলেন। হঠাৎ এক নারীর গায়ে একটু ধাক্কা লাগল। মুহূর্তে তেড়ে উঠল নারীটি, ইতর... অসভ্য...। মালেক দিদার বিনীতভাবে বললেন, মাগো, বিশ বছরের মধ্যে আমার আসল নামে কেউ ডাকেনি। আপনিই প্রথম ডাকলেন। আমি কী ধরনের মানুষ, হয়তো আপনিই তা জানতে পেরেছেন। আমায় ক্ষমা করুন।
এই বলে তিনি হাঁটতে আরম্ভ করলেন। তার পিছু পিছু এক লোক এলো। একটু এগিয়ে লোকটি মালেক দিদারকে সালাম জানিয়ে জিগেশ করল, জনাব, ওই নারীটির সাথে যে বিনয় আপনি দেখালেন তা বোঝার ক্ষমতা তো তার নেই। তাহলে আপনার বিনয় কী কাজে এলো?
মালেক দিদার বললেন, ওই নারীর কাছ থেকে আমি শিখলাম যে, মানুষ নিন্দা-প্রশংসা দুটোই করবে। নিন্দুকেরা সর্বোচ্চ নিন্দে ছড়াবে। আর প্রশংসাকারীরা সর্বোচ্চ প্রশংসা করবে। আমি বেঁচে থাকি নিন্দা-প্রশংসার মাঝামাঝি। আমার এ অবস্থাই আপনার কাছে বিনয় মনে হয়েছে।
সূত্র: তাজকেরাতুল আউলিয়া