বামিয়ানের বৌদ্ধমূর্তি

বামিয়ানের বৌদ্ধমূর্তি

তালেবানরা বিরাট সন্ত্রাসী, তাদের যেন আর কোনো পরিচয় নেই

পর্ব ৬

রাহমান চৌধুরী

প্রকাশিত : আগস্ট ৩১, ২০২১

যখন বিগত শতকের ছিয়াশি সালে মাখমালবাফ ‘সাইক্লিস্ট’ ছবিটি বানাচ্ছিলেন, তখন আফগান মাদকজগৎ সম্পর্কে তার অনেক ধারণা জন্মে। সত্যি বলতে, চোরাচালানি ছাড়া অন্য কেউ আফগানিস্তানে বিনিয়োগের ঝুঁকি নেয় না। ফলে আফগানিস্তান যে সমস্যায় জর্জরিত তার সমাধান আরো কঠিন হয়ে পড়ে। পকিস্তানের একটা মরুভূমি অঞ্চল থেকে আফগানিস্তানের সীমান্ত পর্যন্ত চলে মাদকের হস্তান্তর। সেগুলি চলে যায় আরো বিভিন্ন দেশে। মাখমালবাফ সেবার সাধারণ বাসে করে যাচ্ছিলেন। প্রথমে বুঝতে পারেননি বাসের ছাদ মাদকদ্রব্যে ঠাসা। রাস্তা ছেড়ে বাসটি চলছিল বিস্তীর্ণ খোলাময়দানের মাটি কাদার ওপর দিয়ে। নরম মাটিতে চাকা দেবে যাচ্ছিল অনেক সময়। কিছুদূর চলার পর বাসটা থামলো এক জায়গায় মরভূমির মাঝখানে। সেখানে তখন একদল মটরসাইকেল আরোহী এসে চালককে নামতে বললো। সামান্য কিছু কথাবার্তার পর এক বস্তা টাকা নিয়ে এলো এবং চালককে সাথে নিয়ে গুণতে লাগল। দুজন মটরসাইকেল আরোহী এসে বাসটা দখল করে নিল। চালক আর তার সহকারী টাকা নিয়ে মটরসাইকেলে করে চলে গেল। নতুন চালক জানিয়ে দিল, এই বাস এবং তার ভিতরে যা কিছু আছে তার মালিক এখন সে। বাসের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরাও যেন বিক্রি হয়ে গেল। কয়েক ঘণ্টা পরপর এরকম হাত বদল চলতে থাকলো। বুঝতে পারা গেল, পথের একেকটি অংশ একটি নির্দিষ্ট দলের নিয়ন্ত্রণে এবং যতবার বাসটি বিক্রি হলো, ততবার এর দাম বাড়লো। প্রথম ছিল এক বস্তা টাকা, তার পরের বার সেটা বেড়ে হলো দুই বস্তা, আরো পরে তিন বস্তা।

বাসটির পাশে পাশে একটা কাফেলাও যাচ্ছিল, যারা দুশোটা ভারী মেশিন গান তাদের উটের পিঠে করে বয়ে বেড়াচ্ছিল। মাখমালবাফ তাদের অস্ত্রের বিক্রির জায়গাগুলিতেও গিয়েছিলেন। ঝোলায় ভরে গুলি বিক্রি চলছে যেন ওগুলো সীমের বিচি। দাড়িপাল্লায় কিলোগ্রাম হিসেবে গুলি ওজন হচ্ছে এবং বিক্রি হচ্ছে। যদি এমন সুযোগ না থাকে দুনিয়ায় মাদক ব্যবসা চলবে কী করে। সন্ধ্যার পর সীমান্তের নিকটবর্তী গ্রামগুলি ফাঁকা হয়ে যায়। চোরাচালানিদের ভয়ে গ্রামবাসীরা অন্যত্র পালিয়ে যায়। মাখমালবাফকেও তারা পালাতে বলেছিল। রাত্রির অন্ধকারে রাস্তাগুলি প্রস্তুত হয়ে থাকে চোরাচালানের কাফেলা পারাপারে জন্য। প্রত্যক্ষদর্শীরা মাখমালবাফকে জানিয়ে ছিল, কাফেলাগুলি গঠিত হয় পাঁচ থেকে একশো জনকে নিয়ে, যাদের বয়স বারো থেকে ত্রিশের মধ্যে। প্রত্যেকের পিঠে থাকে একটি করে মাদকের বস্তা এবং কেউ কেউ কাফেলাকে রক্ষা করার জন্য বহন করে চলে হাতচালিত রকেট লাঞ্চার, কালাশনিকভ এবং অন্যান্য অস্ত্র। মাদক উৎপাদন থেকে তখন আফগানিস্তানের উপার্জন পাঁচ কোটি ডলার, কিন্তু এর আসল দাম আটশো কোটি ডলার। বাকিটা চলে যায় অন্যদের হাতে। দুনিয়ার বাকি অংশে পরিবহন ব্যয়সহ এর মূল্য হয়ে দাঁড়ায় একশো ষাট গুণ বেশি। ধরা যাক, আফগানিস্তানথেকে তাজাকিস্তানে যে দামে হেরোইন ঢোকে, বিক্রি হয় তার দ্বিগুণ দামে। একই সময়ে নেদারল্যান্ডসের মাদক ব্যবহারকারীরা তা কিনছে একশো ষাট গুণ থেকে দুইশো গুণ দামে। যখন হেরাতে আফিমের দাম পঞ্চাশ ডলার, তখন ম্যাসাদে দুইশো পঞ্চাশ ডলার। ডলারগুলো এসে জমে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন মাফিয়াদের হাতে যারা ওইসব দেশের রাজনীতিতে প্রভাব রাখে। মাদকের অর্জিত টাকা আফগানিস্তানে পায় স্থানীয় মাফিয়ারা আর অস্থায়ী সরকারগুলি। জনগণ এর ভাগ পায় একটুকরো রুটি হিসেবে।

যখন রাশিয়ানরা চলে যায় তারপর তালেবানদের আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ইতিবাচক শক্তি হিসেবে। সোভিয়েত আগ্রাসনের আগে একজন আফগান ছিল কৃষক। সোভিয়েত হামলার পরপর নিজের উপত্যকা বাঁচাতে একজন আফগান হয়ে উঠলো মুজাহিদ। বিদেশি শক্তির হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে সংগঠন এবং দল তৈরি হলো। সাধারণ একজন কৃষক থেকে একজন আফগান যে নিজের স্বাধীনতার জন্য, বিদেশি শক্তিকে হটিয়ে দেবার জন্য মুজাহিদ হলো, সে অপরাধ তবে কার? সোভিয়েত আগ্রাসনের পর সেসব আফগানরা আর কৃষিকাজে ফিরলো না। কারণ দীর্ঘসংগ্রামের ভিতর দিয়ে সে তখন ভিন্ন এক মানুষ। নিজের পরিচয় তখন হয়তো সে খুঁজে ফিরছে। নিজের যোদ্ধা পেশাতেই যেন সে স্বস্তি পাচ্ছিল, নতুন পেশাই তার কাছে ততদিনে আবেদনময় আর সমৃদ্ধির মনে হলো। ততদিনে আবার তালিবানদের আগমন ঘটেছে। খুব স্বাভাবিক যে, তালিবানরা নিজে নিজে বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না, তাদের দারিদ্রের কারণে। পুরো রাষ্ট্রের অর্থনীতির অবস্থাটা তো বলাই হয়েছে এরই মধ্যে। নতুন করে পাকিস্তানের সমর্থন পেল তারা। কিন্তু ইরানের সমর্থন আর পেল না। মার্কিন শক্তির কাছে সাম্যবাদী সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভাঙার প্রশ্নে বিশ্বে পাকিস্তানের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর পশ্চিমা গণমাধ্যমে আফগান যোদ্ধারা যেমন হারালো তাদের নায়কোচিত অবস্থান, পাকিস্তান হারালো তার যুদ্ধনৈতিক গুরুত্ব এবং কর্মহীন হয়ে পড়লো। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর পাকিস্তানের সামরিক তৎপরতার চাহিদা ফুরিয়ে গেল পশ্চিমের কাছে।

পাকিস্তান তখন তালিবানদের মদদ জোগালো আফগানিস্তানের উপর প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রণ রাখতে। গৃহযুদ্ধের পর যখন আফগান জনগণের নাভিঃশ্বাস দশা, তখন তারা চাইছিল এক নিরাপত্তার জগৎ। বহু মানুষ আফগান ছেড়ে পালিয়েছে ক্ষুধার নিবৃত্তি আর নিরাপত্তা জন্য। সে পালানোটা সহজ ছিল না। যদি তেহরানে পালাতে চায় একটি পরিবার তার জন্য দরকার হয় বহু টাকা। সে টাকা তাদের হাতে থাকে না। নিরানব্বই শতাংশ আফগান পরিবারগুলি এত বিরাট অঙ্কের টাকা দিতে পারে না বলে, দেখা গেল হয়তো তেরো-চৌদ্দ বছরের এক জোড়া বালিকাকে জিম্মি হিসেবে রাখা হয়। পরিবারের বাদবাকিদের গলিপথে চালান করে দেয়া হয় তেহরানে। যতদিন না পরিবারটি কাজ খুঁজে পায় এবং ধার শোধ করতে না পারে, মেয়েগুলিকে ধরে রাখা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই দেনা শোধ হয় না। ফলে বিপুল সংখ্যক আফগান বালিকা সীমান্ত এলাকাগুলিতে জিম্মি হয়ে থাকে অথবা চোরাচালানির রক্ষিতায় পরিণত হয়। সে এলাকার এক কর্মকর্তা মাখমালবাফকে গোপনে জানিয়েছিলেন, সে অঞ্চলের কেবল একটা শহরেই বালিকা জিম্মির সংখ্যা আনুমানিক দাঁড়াবে চব্বিশ হাজার। ফলে আফগানদের বিচার করার আগে বিশ ত্রিশ বছর আগের এই ঘটনাগুলি জানা দরকার। রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকেই এর আরম্ভ। কিন্তু এই মানুষগুলির কষ্টে কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। যারা বোরকা নিয়ে সমালোচনা করে, তাদের পাওয়া যায়নি আফগান মানুষের পাশে তাদের ভয়াবহ দুর্দিনে। বরং জাতিসংঘসহ শক্তিমানরা তাদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছিল অর্থনৈতিক অবরোধ। তেইশ বছরের ধারাবাহিক যুদ্ধে যাদের প্রায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল, নতুন করে তাদের উপর চাপানো হয়েছিল অবরোধ। সারা পৃথিবীর তথাকথিত প্রগতিশীলরা তখন তালেবানদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, আফগান নারীর মুক্তির জন্য মায়াকান্না কাঁদছে। পাশাপাশি একই সময়ে যখন লক্ষ লক্ষ শিশু না খেয়ে মারা পড়ছে, পশ্চিমা জগৎ তখন নীরব। কিন্তু সারা পৃথিবীতে তখন ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ছে তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে কেন তারা বামিয়ানে বুদ্ধের মূর্তি ধ্বংস করলো।

সাইয়ীদ রাহমাতুল্লাহ্ হাশেমী, যিনি ছিলেন তালেবান সরকারের ভ্রাম্যমাণ দূত, তিনি লস এঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বামিয়ানে বৌদ্ধমূর্তি ভাঙা সম্পর্কে জবাবটা দিয়েছিলেন সুন্দরভাবে। তিনি বলেন, ‘সারা দুনিয়া যখন অর্থনৈতিক অবরোধ করে আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছে, তখন আমাদের অতীত নিয়ে দুর্ভাবনা করার অধিকার তাদের নেই। আমি সদরদপ্তরে যোগাযোগ করেছি, আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছি, কেন তারা মূর্তি ভাঙতে চায়। আমি উলামাদের পর্ষদ প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি যিনি সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন। তিনি আমাকে জানালেন, ইউনেস্কো এবং আরেকটা বেসরকারি সংগঠন এসেছে সুইডেন বা নরওয়ে থেকে, যারা চান বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বামিয়ানের মূর্তি মেরামত করতে। আফগান নেতৃবৃন্দ তাদেরকে অনুরোধ করলেন, যাতে টাকাগুলি মূর্তি মেরামতে খরচ না করে বাচ্চাদের জীবন রক্ষার্থে খরচ করা হয়। কিন্তু সেইসব ভদ্রলোকরা বললেন, না এই টাকা হচ্ছে মূর্তির জন্য। ফলে আফগানের লোকরা সত্যি সত্যি ক্ষেপে গেল। তারা বললো, যদি আমাদের বাচ্চাদের বিষয়টা তোমরা গুরুত্ব না দাও তাহলে এই মূর্তিগুলো আমরা ভেঙে দেব।’ হাশেমী তারপর বিশ্ববিদ্যায়ের উপস্থিত শ্রোতাদের প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনারা এই অবস্থায় পড়লে কী করতেন? যদি আপনাদের চোখের সামনে বাচ্চারা মারা যেত, যদি আপনাদের বিরুদ্ধে অবরোধ থাকতো, আর যারা অবরোধ দিয়েছে তারাই অবরোধের ভিতরে মূর্তি রক্ষা করতে চলে এসেছে।’

সাইয়ীদ হাশেমী বলেন, ‘কফি আনানকে তো আপনারা চেনেন, জাতিসংঘের মহাসচিব। যিনি কখনো শিশু মৃত্যু নিয়ে গা করেননি, শরণার্থীদের প্রসঙ্গে একটা কথা বলেননি, আফগানিস্তানের দরিদ্র মানুষের দুঃখবেদনায় মাথা ঘামাননি, তিনিও ঐ অঞ্চলে গেছেন মূর্তিগুলো রক্ষার কারণে। এটা সত্যি সত্যি পরিহাসের। এই লোকগুলোর শিশুদের নিয়ে মাথাব্যথা নেই, যারা মারা যাচ্ছে তাদের নিয়ে মাথাব্যথা নেই, বিদেশি হস্তক্ষেপের ব্যাপারেও মাথাব্যথা নেই; তাদের মাথাব্যথা শুধু মূর্তিগুলি নিয়ে। এবং আমি নিশ্চিত যে, তারা আমাদের ঐতিহ্যের ব্যাপারেও খুব বেশি চিন্তিত নন। তাদের চিন্তা শুধু তাদের পিকনিক নিয়ে। হয়তো বা মূর্তিগুলো সামনে থাকলে ওখানে তাদের একটা ভালো পিকনিক স্থান হবে।’ কত দুঃখে সেদিন হাশেমী সে কথাগুলি বলেছিলেন। বুদ্ধের মূর্তি তখনো ভাঙা হয়নি। ভাঙার সম্ভাবনা জানা গেল মাত্র। তালেবান সরকার তারপরেও ব্যাপারটা নিয়ে দেনদরবার করেছিলেন, নিজেদের দেশের শিশুগুলিকে বাঁচাবার জন্য। কিন্তু দাতারা তাতে কান দেননি। মাখমালবাফ লিখেছিলেন, বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তি যা সম্প্রতি গোটা বিশ্বের অনুভূতি চাগিয়ে তুলেছে এবং শিল্প-সংস্কৃতির সকল সমর্থকদের ক্ষেপিয়ে তুলেছে বিধ্বস্ত মূর্তি রক্ষায়, কিন্তু কেবল জাতিসংঘের হাইকমিশনার ওগাতা ছাড়া আর কেউই কেন মারাত্মক দুর্ভিক্ষে ধুঁকে ধুকে মরা দশ লাখ আফগানের জন্য দুঃখ প্রকাশটুকু করলেন না? কেন এই মৃত্যু এবং তার কারণগুলি নিয়ে একটা কথা পর্যন্ত বললেন না? বুদ্ধমূর্তি ভাঙায় সবার এত কান্নাকাটি কীসের, যখন আফগানদের মৃত্যু ঠেকাতে কিছুই শোনা যাচ্ছে না? আধুনিক দুনিয়ায় কি তবে মানুষের চেয়ে মূর্তি বেশি দরকার?

কী অবাক লাগে বিশ্ব সভ্যতার দিকে তাকালে, সব কিছু দেখছে এক চোখ দিয়ে। বরং মোল্লা ওমর তখন, রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে মানুষটা একচোখ হারিয়ে ছিলেন, ঘটনাটাকে দুচোখ দিয়ে দেখতে পেরেছিলেন। কারণ তার কাছে বামিয়ানের মূর্তির চেয়ে তার দেশের শিশুদের বেঁচে থাকাটা আগে জরুরি ছিল। নিজদেশের শিশুদের জন্য তার মনপ্রাণ কেঁদেছিল। বামিয়ানের মূর্তি রক্ষকদের বলেছিলেন, তাদের খরচ থেকে একটা কিছু অংশ দেয়া হোক দেয়া হোক শিশুদের রক্ষা করার জন্য। কিন্তু তারা স্পষ্ট না বলেছিলেন। মোল্লা ওমর তখন মূর্তি ভাঙার নির্দেশ দেন। সত্যিই কি মূর্তিগুলি আসলে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন সেই মানুষগুলি, যারা টাকা নিয়ে তা রক্ষা করতে গিয়েছিলেন? নাকি বিশ্বের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলেন তালিবান সরকারকে? না হলে যখন তাদের হুমকি দেয়া হলো, শিশুদের জন্য টাকা না পেলে মূর্তি ভেঙে ফেলা হবে, তখন তারা শিশুদের জন্য কিছু টাকা দেবার ব্যবস্থা নেননি কেন? মাখমালবাফ লিখেছেন, আমি এখন এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, বুদ্ধের মূর্তি কেউ ভাঙেনি, এটা নিজেই ভেঙে পড়েছে লজ্জায়। আফগানিন্তানের প্রতি তাবৎ বিশ্বের অজ্ঞতার লজ্জায়। এর বিশালতা যে কোনোই কল্যাণ করলো না এটা জেনে সে ভেঙে পড়েছে। বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি পাথর হয়ে যায়নি, বিপর্যয়ের বিরাটত্বে তিনি লজ্জায় ভেঙে পড়লেন। রুটির অভাবে মরা একটা জাতির সামনে বুদ্ধের ক্ষুধা-তৃষ্ণাহীনতা আর শান্তভাব লজ্জা পেল এবং তিনি ভেঙে পড়ে গেলেন। এই দারিদ্র, অজ্ঞতা, নিপীড়ন আর মৃত্যুহারের সবটুকু দুনিয়াকে জানাতে ভেঙে চুরমার হলেন বুদ্ধ। কিন্তু উদাসীন মানবতা কেবল শুনলো বুদ্ধমূর্তি বিনাশের শব্দ। আফগানিস্তানের মতো একটা দুর্ভাগা দেশের প্রতি দুনিয়ার অবহেলার চেয়ে কি তালিবানদের মূর্খতা ও মৌলবাদ বিশ্বের জন্য বেশি ক্ষতিকর? চলবে