তানিম কবিরের গল্প ‘ফাইয়াজের আম্মু’

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯

তখন মূল প্রেমের পাশাপাশি এক বেটির সঙ্গে সিটিসেল টু সিটিসেল ফাউ ফাউ কথা হইতো। বেটিরও ঘর সংসার ছিল, আমারও প্রেম পিড়িতি ছিল, ফলে আমাদের মধ্যে কথা হইত এমনই মাঝেমাঝে আর এতই সংক্ষিপ্তসারে যে, যেন আমরা খুবই প্রয়োজনীয় ব্যাপারে না সারলেই নয় টাইপের কোনো আলাপ সাইরা নিতেছি।

যেমন, ফাইয়াজের আম্মু আমাকে বিকাল তিনটার দিকে ফোন কইরা বলতো, আপনি টিভি দেখতেছেন? আমি হয়তো যদি দেখতেছিলাম, বললাম, হ্যাঁ। জানতে চাইতো কোন চ্যানেল? কারণ তারপর উনিও ওই চ্যানেল দেখবেন, হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারতেছিলেন না, কিংবা কিছু কিনতে গিয়া আমাকে লটারির ঘুরন্ত বাকসো জ্ঞান কইরা আৎকাই জিগ্যেস করলো, লাল না হলুদ?

আমি হয়তো লাল বলে দিলাম, এরকম। একরাতে আমি যখন মূল প্রেমের সঙ্গে ডিজুস টু ডিজুস ফোনে কথা বলতেছি, ফাইয়াজের আম্মু তখন সিটিসেল টু সিটিসেল কল দিয়া বসলে, মূল প্রেমকে আমি বললাম, রাখো তো দেখি বাসার সবাই এতো রাতে উঠে গেল কেন দেখে আসি। ফাইয়াজের আম্মু জিগ্যেস করলো, ঘুমাই গেছিলেন?

আমি বললাম, না বই পড়তেছিলাম, মোবাইল সাইলেন্ট ছিল তো, টের পাই নাই। তারপরই ধড়ফড় করে উঠে ফাইয়াজের আম্মু নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করলো, আমি একটা খারাপ স্বপ্ন দেখছি, এখন ভয় পাচ্ছি, এই বলে। আমি জানতে চাইলাম, কী দেখলেন স্বপ্নে? কিন্তু ফাইয়াজের আম্মু সেসব আর মনেই করতে চাইলেন না। বিপরীতে জিগ্যেস করলেন, এখন কী করা যায়? ভয় পেয়ে জেগে উঠে আর ঘুম না আসা রাতে কী করতে হয়?

আমি বললাম, লেখালেখি করতে পারেন।

আচ্ছা, বলে ফাইয়াজের আম্মু ফোন রেখে দিলেন।

তারপর মূল প্রেমকে বলতে হলো, ছোটবোনের জ্বর আসছে। ওর মাথায় পানি দেওয়ার এন্তেজাম করতে সবাই জেগে উঠছে। সেক্ষেত্রে আজকে আর কথা না বলে ছোটবোনের সেবা শুশ্রূষায় সামিল হতে বলে মূল প্রেম যখন ঘুমিয়ে পড়লো, আমি হয়ে পড়লাম বেকার। আমারও যেহেতু বলতে গেলে ঘুম না আসা রাত, আমি ফোন করে ফাইয়াজের আম্মুকে বলতে চাইলাম, লেখালেখিতে ডিস্টার্ব করলাম না তো আবার! কিন্তু ফাইয়াজের আম্মুর মোবাইল বললো বন্ধ।

আমি ভেবেই পেলাম না এতো রাতে আর অবন্তিও জেগে আছে কিনা। অবন্তির না ছিল ডিজুস, না ছিল সিটিসেল, যে কারণে ও মূল প্রেম হইতে পারে নাই। বাট সে ছিল আগে থেকেই আমূল প্রেম, যেটা আসলে মূল প্রেমের চাইতেও বড় কিনা সে ব্যাপারে জিগ্যেস করলে ফাইয়াজের আম্মু ছিল মন্তব্যহীন।