তানজিনা ফেরদৌস
তানজিনা ফেরদৌসের ৩ কবিতা
প্রকাশিত : জুলাই ১৫, ২০২৪
সমগোত্রের শোক
তোমার চেয়ে বেশি দুঃখি গাছেরা
মানুষ হারিয়ে তোমার ভাষা অভিমানে মূক হয়ে যায়।
অথচ গাছেদের রোজকার নিরীহ শ্লোক
তোমাকে ছুঁতে পারে না—
একবার না হয় মানুষ ভুলে গাছেদের কথা ভাবো!
গাছ কিভাবে নীরবে সয়ে যায় মরা পাতার লিরিক
ঝরাপাতার ক্রন্দন, ফুল-ফলের অকাল পতন!
আর কতটা যন্ত্রণার ওই কাঠবিড়ালির মর্জি।
যে ইচ্ছে হলে গাছের বুকে দাঁড়িয়েই ঠোকর দেয় হৃদয়ের গহিনে।
তবু বলবে জানি—
গাছেরা এতকিছু হারিয়েও বর্ষায় আবার লালাভ রঙে সাজে
ফিরে পায় সতেজ প্রাণ…
দুঃখ সিথানে না পোষে— জেনে নিও
তোমাকে সাজাতেও কোনো হেমন্তের কুহেলিকা জ্যোৎস্নার আবিরে পরিপাটি হচ্ছে রোজ।
দুরুহ সূত্র
জলের জ্যামিতির সূত্র বুঝি
বুঝি আতশবাজির ঝলকানিতে ছিটকে পড়া আনন্দ।
স্বরলিপির আরাধনা বুঝি
সারেগামাপা ছেড়ে প্রথম গানের তাল
কতটা মায়াময় হয়, তাও বুঝি।
ভালোবাসা বুঝি
যেভাবে কোকিল ভালোবেসে তা দেয় কাকের ডিমে।
দিনরাত তপস্যা বুঝি
যেভাবে দুর্দিনে বিধাতাকে খোঁজে কাণ্ডারি।
সেই শৈশবের খুশির মতোই কাঠবাদাম, করমচা, বকুলের ফল কুড়িয়ে
কোচড়ে না গুঁজে যৌবনে আমি কেবল উপচে পড়া প্রতিশ্রুতি গুঁজে রাখি মনের ভাঁজে...
তারপর সবকিছু বুঝেও আমি বুঝি না মনুষ্য গৃহ্যসূত্র!
আর কীভাবে মানুষ বেমালুম ভুলে যায় মনের ভাঁজে গুঁজে দেওয়া প্রতিশ্রুতি।
বর্ণচোরা
রোজকার মতোই আজও ওই পথ দিয়ে আসছিলাম।
ডানে তাকাতেই দেখলাম সেই সবুজে ঘেরা চিরচেনা পথ
যে পথে হাত ধরে হাঁটার কথা ছিল দুজনের।
ঠিক এ পথেই মাথায় লাল রঙের মুকুট পরে
দাঁড়িয়ে আছে কৃঞ্চচূড়া গাছেরা।
ওরা কিভাবে কথা রাখে?
কৃঞ্চচূড়ার কষ্ট আর ভালোবাসার রঙ কী লাল!
কৃঞ্চচূড়ারা গাছের কথা রেখেই কী লাল রঙে ফোটে?
ওই যে পথটি সেও তো কথা রেখে
বুকে আশ্রয় দেয় ঝরে পড়া কৃঞ্চচূড়াদের।
কিন্তু কথা রাখেনি সে...
এ পথে হাতে হাত রেখে হাঁটার কথা
চোখে চোখ রেখে বোঝার ব্যথা
আর মন ভুলানো কথা
যেগুলো আশ্বাস ছিল।
তবে তার রঙ কী কৃঞ্চচূড়ার চেয়েও রঙিন
নাকি সে বর্ণচোরা?