জুনান নাশিত

জুনান নাশিত

জুনান নাশিতের ৫ কবিতা

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০

মাধবী মুকুট

ডুবন্ত সূর্যের কাঁধে অচেনা নদীর স্রোত!

আমার দু’চোখে দিগন্ত উৎসব
দৃষ্টির তালুতে রক্তবর্ণ ঘোর
আমি দাঁড়ালাম তোমার নিঃসঙ্গ তর্জনির কাছে
স্বাদ গন্ধহীন সময়ের মতো নিঃশব্দে
তুমি ক্লান্ত জলাশয়ে মেলে দিলে বিভীষিকা রাত
ভেজা ভেজা দীর্ঘশ্বাসে জুড়ে দিলে অতিবৃষ্টির ধার।

আমি ঠায় দাঁড়িয়ে তোমার তর্জনির কাছে
কাছাকাছি, তবু দুজনের মাঝে গ্রহান্তরের ঢেউ

গভীর ঘন রাতে
তুমি তর্জনি ঢেকে দিলে মাধবী মুকুটে।

এন্টি থিসিস

ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণগুলো নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা শেষে তুমি হেলান দিলে পাহাড়ের গায়ে। চিরকুটে আলোর চোখ তোমাকে দেখালো পাতাঝরার মোহনীয় রূপ। চাঁদের শরীর থেকে খোয়া গেছে বোতাম সদৃশ ভাবনার বিন্দু বিন্দু ঘাম, সে কথা রটে গেল বন থেকে বনান্তরে। লোকালয় জুড়ে শুধু খয়েরি তাপ। শালিকের বিমূর্ত চিৎকার।
ব্যাকুলতা নিয়ে তুমি উঠে দাঁড়ালে
স্ক্রিনশর্টে তুলে নিতে চাইলে পৃথিবীর বুড়িয়ে যাওয়ার সবগুলো ধাপ
পাতাঝরা সময় আর নদীদের স্বপ্ন হারানোর ফাঁদ।
তুমি এসব রুলটানা দাগে বর্ডারিং করে দিলে। চূড়ার ভূমিতে অনুদঘাটিত ঘ্রাণের মঞ্জুরি তোমাকে তাড়া দিল। তুমি পৌঁছে যেতে চাইলে জীবন সমান উচ্চতায়। পাহাড়কে টেনে নিতে চাইলে সবুজ তারাখসা ওই দূর আকাশের সীমানায়....

আকাশ তখন সমুদ্রের বুকে আসঙ্গ আলিঙ্গনে
দুজনের স্বপ্নভজন যেন পৃথিবী বদলের রূপকথা
সন্ধ্যার আরতি মায়ার মতো তুলসি তলায় ঝরে,
দোল খায় ঢেউয়ে ঢেউয়ে ছন্দে ছন্দে
চরাচর জুড়ে অন্ধকার নামে, তুমি দাঁড়িয়ে পাহাড়কে আড়াল করে
জল ও জোছনার বিশুদ্ধ সংরাগে ঝড় ওঠে
ঘূর্ণাবর্তে উড়ে যায় থিসিস এন্টি থিসিসের সকল নমুনাপত্র।

দূরের বৃষ্টি

দূরের বৃষ্টিতে ছুটে গেল কাকভেজা জীবনের তীর
মধ্যাহ্ন বিষাদ ছেড়ে ঝরে গেল এলোমেলো ভোর
প্রাচীন ব্যর্থতা ঘুরে ফিরে আসে, বসে দিকচিহ্ন পাড়ে
বহুকাল ধরে ডাকে, বলে আয় দেব তোকে মায়া ভরা
ঘোরের ঘূর্ণিতে ঢাকা একফালি আয়ুর সংসার।
আমি হাঁটি অতি ধীরে যাপিত চিত্রের বোঝা কাঁধে নিয়ে
পায়ে পায়ে সুরখোয়া রাত নামে
ছুটে চলি আলোর কাফেলা ছেড়ে  
রাত শেষে দূরের বৃষ্টিতে ছায়া রেণু মাখামাখি
বিন্দুতে সন্ধিতে।

তর্জনি, রক্ত আর শরৎবিলাস

আমার ডানহাতের তর্জনির রক্তে ভিজে গেল
তোমার কপাল, নাক, তোমার দুঠোঁট, বুকের জমিন আর নাভিমূল
তুমি স্থির, অকম্পিত যেন ধূসর গতির এক শব্দলেখা
বসে আছ অসীম উপান্তে
দূর মরীচিকা ছেড়ে সুদূরের কাছে।

আমার নিঃশ্বাসে ওড়ে বিপন্ন ধূলিচিত্রের ঝাঁক
দেখেও দেখোনি,
বোঝনি কতটা তীক্ষ্ণতায় আহত হয়েছি বহুবার
কেঁদেছি, কেঁপেছি,
তর্জনি হারিয়ে ছুটে গেছি রুদ্ধশ্বাস!

অথচ অনড় তুমি!
ছুঁতে চাও মেঘ ঘন শরৎ বিলাস।

মায়া

অন্ধকারে নামে গোপনে গোপনে,
ছুঁয়ে দেবে তাকে?
ওই দূর মেঘ গড়াবে পাহাড়ে
দিন শেষে ঝরে যাবে অলোক-দূরের বনে
আমি জানি তুমিও জেনেছো শেষে
তবু কান্না এত?

গতির প্রহরে দিক বদলের প্রেম
মেনে নিয়ে কষ্টগুলো উড়ে যায়
মৌন জোনাকির বেশে।