জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুই নেই, মৃত্যুবার্ষিকী আসবে কোথা থেকে

সাঈফ ইবনে রফিক

প্রকাশিত : অক্টোবর ২৩, ২০১৭

১.
বরিশাল শহরজুড়ে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি করতেন কবি জীবনানন্দ দাশ। একবার সিএন্ডবি রোড ধরে হাঁটতে হাঁটতে তিনি পৌঁছালেন কালু খার বাড়ির সামনে। চারদিকে সবুজ একটা মিথিক্যাল ফ্লেবার দেখে অপরূপ সুন্দর জায়গাটার নাম দিলেন ‌অলকানন্দা। স্থানীয়রা সেটাকে আলেকান্দা বলা শুরু করলো। বরিশাইল্যা ধ্বনি বিপর্যয়ে অলকানন্দা হয়ে গেলো আলেকান্দা। প্রচণ্ড দুঃখে প্রথমে বরিশাল ছাড়লেন জীবনানন্দ দাশ। কলকাতায় গিয়েও বরিশাইল্যাদের এই আচরণ ভুলতে পারলেন না। এক থোকা ডাব হাতে আনমনে ট্রামলাইন ধরে হাঁটতে থাকলেন। এরপর এক বিরল দুর্ঘটনা। কলকাতায় শত বছরের ট্রাম চলার ইতিহাসে একটি মাত্র দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনা ঘটেছে, মাত্র একজনই মারা গেছে। তিনি আর কেউ নন, কবি জীবনানন্দ দাশ। তার মৃত্যুর জন্য কি তবে বরিশাইল্যা উচ্চারণ বিভ্রাটই দায়ী?
(এই ঘটনার কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই, স্রেফ গুজব বলে বাতিল করে দিন)

২.
(তবে এটা ভাবার মতো, গবেষণার অবকাশ আছে)
লাবণ্য দাশ। জীবনানন্দ দাশের সহধর্মিনীকে আমি সাদামাটা কবিতাবিমুখ গৃহিণী মনে করেছিলাম। ২০০৪ সালে জীবনানন্দ দাশের ওপর ডকুমেন্টারি নির্মাণের সময় চক্ষু ছানাবড়া করা এক তথ্য পেলাম। তথ্যটা দিয়েছিলেন জীবনানন্দ দাশের প্রতিবেশী প্রয়াত মোশাররফ হোসেন নান্নু ভাই। তিনি জানালেন, মুনসি গ্যারেজ এলাকায় জীবনানন্দ দাশের বাড়িতে ৪৩-৪৪ সালের দিকে একবার পুলিশ এসেছিল। লাবণ্য দাশের ট্রাংক থেকে উদ্ধার করেছিল নিষিদ্ধ ‘লাল বই’। নান্নু ভাইয়ের মতে, আধুনিকা স্মার্ট লাবণ্য দাস ইংরেজি শিক্ষায় এতোটায় মগ্ন ছিলেন যে বাংলা সাহিত্য তার কাছে খ্যাত লাগতো। ইয়েটস পড়া তরুণীর কাছে জীবনানন্দও ম্যাড়ম্যাড়ে লাগতো!

৩.
(আরেকটি বিস্ফোরক তথ্য)
বিএম স্কুলের পাশে এখন যেখানে কাঞ্চন পার্ক, সেখানে একটা লাশকাটা ঘর ছিল। ক্লাস সিক্স-সেভেনের মিলু তখনও জীবনানন্দ দাশ হয়ে ওঠেননি। ফুটবল খেলতে পছন্দ করতেন, তবে দৌড়াতে পারতেন না বলে তাকে গোলকিপার রাখা হতো। বল গোললাইনের বাইরে রাস্তার ওপারে পার্ক এলাকায় ঢুকলে সেটা তাকেই কুড়িয়ে আনতে হতো। লাশকাটা ঘরের পাশ থেকে একা বল কুড়িয়ে আনতে আনতেই সেই ‘লাশকাটা ঘর’ কবির মনোজগতে ঢুকে পড়ে। যে জীবনানন্দকে চেনে, সেই চেনে তার লাশকাটা ঘর!